বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও আজকের বাংলাদেশ
বাঙালি জাতিসত্তার হাজার বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে একথা অনুধাবন করা যায় যে, বাঙালি পরিশ্রমী জাতি, সংগ্রামী জাতি, বাঙালি সহজ, সরল, উদার, অধিকার বঞ্চিত-অত্যাচারিত-নিপীড়িত এবং সর্বংসহা। তবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি জাতিসত্তাকে মূল্যায়ন করলে বাঙালির নতুন পরিচয় পাওয়া যায়। আর তা হলো—বাঙালি বিপ্লবী, বিদ্রোহী, অদম্য এবং বিজয়ী। বাঙালির এই নবতর পরিচয় ও বিজয়ী-সত্তার দূত হলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১০ জানুয়ারি ২০২২ বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সুবর্ণজয়ন্তী। ১৯৭২ সালের এই দিনে যখন তিনি ফিরে এলেন তার প্রিয় মাতৃভূমিতে, যখন তাকে বহনকারী ব্রিটিশ বিমানের দরজা খুলে গেল, তিনি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সমবেত বাঙালির উদ্দেশ্যে হাত নাড়লেন, মুখে ভুবন ভোলানো হাসি, মাথার ওপরে দিগন্ত-বিস্তৃত আকাশ যেন নুয়ে গেছে মহামানবের কাছে।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে পূর্ণতা পেয়েছিল বাঙালির ত্যাগ, বাঙালির স্বাধীনতা, বাঙালির বিজয়, বাঙালির স্বপ্ন। স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। এই এগিয়ে যাওয়ায় উন্মোচিত হয়েছে অমিত সম্ভাবনার দিগন্ত।
১৯৮১ সালের দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ার পথে ঠিক সেই সময় তাদের একজন নতুন রাষ্ট্রপ্রধান হন রোনাল্ড রিগ্যান (Ronald Reagan)। রোনাল্ড রিগ্যান যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন তিনি তার নেতৃত্ব, প্রজ্ঞা, জ্ঞানের মধ্য দিয়ে আমেরিকার ভঙ্গুর অর্থনীতিকে আবার মজবুত ও শক্তিশালী করে তুললেন। তার অর্থনৈতিক নেতৃত্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের এত বেশি আস্থা তৈরি হলো যে, আজকের দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং উন্নত বিশ্বের যেকোনো জায়গায় অর্থনীতি সম্পর্কে পাঠদান করতে গেলে একটা অধ্যায় পড়ানো হয়, সেটা হচ্ছে রিগ্যানোমিক্স (Reaganomics)।
...তিনি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সমবেত বাঙালির উদ্দেশ্যে হাত নাড়লেন, মুখে ভুবন ভোলানো হাসি, মাথার ওপরে দিগন্ত-বিস্তৃত আকাশ যেন নুয়ে গেছে মহামানবের কাছে।
রোনাল্ড রিগ্যান রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে তার এক বক্তৃতায় বলেছেন, ‘টু ট্রাস্ট টু হোল্ড অ্যা ভিশন ইজ ভেরি এসেন্স ফর লিডারশিপ’। অর্থাৎ, আমরা যারা রাজনীতি করি, আমাদের নেতৃত্বের মূল শক্তি, নেতৃত্বের মূল সফলতা কোথায়? যেখানে আমরা আমাদের অনুসারীদের স্বপ্ন, তাদের আশা, আকাঙ্ক্ষা, অভিপ্রায় বুঝতে পারব, আমাদের হৃদয়ে ধারণ করতে পারব এবং একটি সামগ্রিক স্বপ্ন হিসেবে সকলের কাছে প্রতিষ্ঠিত করতে পারব।
এ কথাটা এ জন্যই বললাম, ১৯২০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করলেন, তিনি ধীরে ধীরে বড় হতে থাকলেন, স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন, বিশ্বাস করতে শুরু করলেন এবং তিনি বাঙালির যে লাঞ্ছনা, বঞ্চনা, বাঙালির স্বাধীনতা, নিজের জীবনকে নিজে নিয়ন্ত্রণ করা, নিজের জীবনকে নিজে নিয়ন্ত্রণ করার যে স্বপ্ন সেই স্বপ্নকে ধারণ করতে শেখালেন। ধারণ করতে পারতেন বলেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হলেন।
আরও পড়ুন
বঙ্গবন্ধু যখন বক্তৃতা করতেন তখন বাংলার মানুষ তাকে দেখে সাহস ফিরে পেতেন। এই বিশ্বাস তিনি নিজ যোগ্যতায় অর্জন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর মতো বাঙালিও বিশ্বাস করা শুরু করল, তারা শাসিত হবে না, নিজেরাই শাসন করবে। এই বিশ্বাসে সাড়ে সাত কোটি বাঙালি মিলিত হয়ে দেশ স্বাধীন করল।
৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচন, ৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধে আমরা জয়ী হয়েছি। ৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পরও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৯৬-এর নির্বাচনে আমরা জয়ী হয়েছি। আবার ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনেও আমরা জয়ী হয়েছি।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে পূর্ণতা পেয়েছিল বাঙালির ত্যাগ, বাঙালির স্বাধীনতা, বাঙালির বিজয়, বাঙালির স্বপ্ন।
এখন আমরা উন্নয়নের ইতিহাস লিখব। সেই ইতিহাসকে আমরাই ধারণ করব। মার্টিন লুথার কিং বলতেন, পৃথিবীর সকল মানুষ একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি, সকলের শরীরে একই রঙের রক্ত বহমান। মানুষে মানুষে পার্থক্য করার অধিকার সৃষ্টিকর্তা মানুষকে দেয়নি, তা শুধু সৃষ্টিকর্তা নিজে করতে পারেন। তিনি বলতেন, আমি বিশ্বাস করি একদিন এই দেশের মানুষকে তার গায়ের রঙ দিয়ে বিবেচনা করা হবে না। একদিন এই দেশের মানুষকে তার শিক্ষা, যোগ্যতা দিয়ে বিবেচনা করা হবে।
আরও পড়ুন
আমরা সে রকমই একটি বাংলাদেশ চাই। যেখানে বৈষম্য থাকবে না, থাকবে না জাতিগত-ধর্মীয় ভেদাভেদ। আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি চাই, যেখানে হিংসা, অসততার কোনো জায়গা নেই, দুর্নীতির জায়গা নেই। যে রাজনীতিতে শুধু জনগণের ঐশ্বর্য, স্বপ্ন, জনগণের ভালোলাগার জায়গা আছে।
মার্টিন লুথার কিং লাখ লাখ কৃষ্ণাঙ্গ মানুষকে যে আশার বাণী শোনাতেন সেই আশার বাণী আমরাও শুনতে চাই, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। আমরা সবাই এক হলে এই দেশ উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছাবে নিশ্চিত।
রাশেক রহমান ।। আওয়ামী লীগ নেতা