আমার গ্রাম, আমার শহর
আমাদের গ্রামবাংলা আসলেই বদলে যাচ্ছে। শহরের সাথে গ্রামের সর ধরনের সংযোগ বাড়ছে। রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, ডিজিটাল সেবা, আর্থিক সেবা, শিক্ষা-স্বাস্থ্য-পুষ্টি সেবা এবং প্রশাসনিক সেবার পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। গ্রামের কৃষি ব্যবস্থা আধুনিক ও বহুমাত্রিক হচ্ছে। কৃষি উৎপাদন অসাধারণ গতিতে বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে গ্রামের মানুষের আয়-রোজগার।
কোটির উপর গ্রামীণ মানুষ এখন বিদেশে। তারা নিয়মিত অর্থ পাঠাচ্ছেন গ্রামে। শহরে কাজ হারিয়ে অনেকেই গ্রামে ফিরে গেছেন। গ্রাম তাদেরও বিমুখ করেনি। কৃষির পাশাপাশি অকৃষি খাতে আয়ের সুযোগ করে দিচ্ছে তাদের গ্রামবাংলা। গ্রাম থেকে অনুরূপ কোটি খানেক মানুষ (তাদের অর্ধেকের মতো নারী) গার্মেন্টসসহ রপ্তানিমুখী শিল্পে কর্মরত। এরা সবাই শহর থেকে গ্রামে টাকা পাঠাচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
ডিজিটাল অর্থায়নের সুযোগ বেড়ে যাওয়ার কারণে খুবই দ্রুত শহর থেকে গ্রামে টাকা যাচ্ছে। তাছাড়া গ্রামে প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ এখন ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে আর্থিক সেবা পেয়ে থাকে। সব মিলিয়ে গ্রামীণ অর্থনীতিতে টাকার লেনদেন বেশ সচল। আর তাই গ্রামীণ আয়ের ষাট শতাংশের বেশি এখন কৃষির সাথে সম্পর্কিত এবং অন্যান্য অকৃষি খাত থেকে উৎসারিত হচ্ছে। আর মোবাইল প্রযুক্তি সেবা বেড়ে যাওয়ায় অর্থের পাশাপাশি গ্রাম, শহর এবং বিদেশের মাঝে নিরন্তর ভাবনার আদান প্রদান হচ্ছে। ভালো এবং মন্দ—দুই ধরনের চিন্তা ভাবনারও লেনদেন হচ্ছে।
ডিজিটাল অর্থায়নের সুযোগ বেড়ে যাওয়ার কারণে খুবই দ্রুত শহর থেকে গ্রামে টাকা যাচ্ছে। তাছাড়া গ্রামে প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ এখন ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে আর্থিক সেবা পেয়ে থাকে। সব মিলিয়ে গ্রামীণ অর্থনীতিতে টাকার লেনদেন বেশ সচল।
গ্রামীণ সংস্কৃতিতে এসব ভাবনার আদান প্রদানে বিরাট প্রভাব পড়ছে। গ্রামেও এখন কফি শপ ও বিউটি পার্লার গড়ে উঠেছে। প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রগুলোতে গভীর রাত পর্যন্ত মানুষ আড্ডা মারেন চা ও কফি শপে। দেশ-বিদেশের খবর ও বিনোদন উপভোগ করেন দল বেঁধে।
বিদ্যুৎপ্রাপ্তির কারণে গ্রামীণ নারীর জীবনেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। তারাও টেলিভিশন দেখছেন। ফেসবুক ব্যবহার করছেন। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার সুযোগ বেড়েছে। তাদেরও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এসেছে। গ্রামে এখন প্রচুর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আর অবকাঠামো উন্নয়নে আর্থসামাজিক সংযোগ তথা কানেক্টিভটি তো বেড়েই চলেছে।
গ্রামগুলোও ধীরে ধীরে নগরায়ণের পরশ পাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালে তার দলের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ ভাবনাকে যুক্ত করেন। দ্রুত পরিবর্তনশীল গ্রামেও যেন শহরের সেবাগুলোকে পরিকল্পিত উপায়ে দেওয়া যায় সেই উদ্দেশ্যেই তিনি এই অগ্রসর চিন্তার অবতারণা করেন।
আমাদের শহরগুলো খুবই অপরিকল্পিত উপায়ে গড়ে উঠছে। একমাত্র, রাজশাহী ছাড়া ঢাকাসহ আমাদের সবগুলো বড় শহরই খুবই অপরিকল্পিত ভাবে বেড়ে উঠছে। তাই গ্রামবাংলাও যেন এমন অপরিকল্পিত ও অপরিচ্ছন্ন নগরায়ণের শিকার না হয় সেকথা মনে রেখেই তিনি এমন সুদূরপ্রসারী ভাবনার অবতারণা করেছেন। তিনি তো তার জায়গা থেকে নীতি-লক্ষ্য বলে দিয়েছেন। এখন পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন মন্ত্রণালয়গুলোর কাজ হচ্ছে, কাঙ্ক্ষিত সেই পরিবর্তনকে বাস্তবে রূপান্তরিত করা।
‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ নীতি ভাবনায় জোর দিয়ে বলা হয়েছে—সংবিধানের ১৬ অনুচ্ছেদে গ্রামবাংলায় সুদূরপ্রসারী পরিবর্তনের যে অঙ্গিকার করা হয়েছে তা বাস্তবায়নই সরকারের লক্ষ্য। ঐ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, গ্রামে কৃষি বিপ্লবের পাশাপাশি বিদ্যুতায়ন, কুটির ও অন্যান্য শিল্পের উন্নয়ন, শিল্প, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় এমন পরিবর্তন আনতে হবে যাতে করে গ্রাম ও শহরের বিভাজন ঘুচে যায়। গ্রামীণ মানুষের জীবনের মানেও এমন পরিবর্তন আনতে হবে যে, দেশের সকল মানুষই যেন একই রকম সুযোগ-সুবিধা পান।
বঙ্গবন্ধুর দেওয়া এই অঙ্গীকারের ভিত্তিতেই বাংলাদেশের গ্রামের অবকাঠামো ও পরিষেবা উন্নয়নের জন্য পরিকল্পিত উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে ঐ নির্বাচনী ইশতেহারে। দ্রুত পরিবর্তনশীল গ্রামবাংলায় কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের জন্য এরই মধ্যে যথেষ্ট পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। সেসব পরিকল্পনার মধ্যে উন্নত সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, সুপেয় পানির সরবরাহ, আধুনিক জনস্বাস্থ্য পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন ও জ্বালানি সরবরাহ, উচ্চ গতি সম্পন্ন ইন্টারনেট সেবা, নিত্য ব্যবহার্য আধুনিক পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে।
গ্রাম পর্যায়ে বিদ্যুতের ঘাটতি মেটাতে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট গড়ে তোলা হবে। গ্রামীণ পরিবহন কাঠামো সুবিন্যস্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ওয়ার্কশপ গড়ে তোলা হবে। কৃষি যন্ত্রপাতির মেরামত কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। স্থানীয় তরুণদের প্রশিক্ষণ দিয়ে গ্রামীণ উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা হবে। অকৃষি খাতের উন্নয়নেও হালকা-ম্যানুফ্যাকচারিং সুবিধা গড়ে তোলা হবে। এসব গড়ার জন্য যে অর্থায়নের প্রয়োজন হবে সেদিকেও নজর দেওয়া হবে।
অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, গ্রামে কৃষি বিপ্লবের পাশাপাশি বিদ্যুতায়ন, কুটির ও অন্যান্য শিল্পের উন্নয়ন, শিল্প, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় এমন পরিবর্তন আনতে হবে যাতে করে গ্রাম ও শহরের বিভাজন ঘুচে যায়।
বাস্তবে আমরা পরিকল্পিত সেই গ্রামবাংলাকে কতদূর গড়ে তুলতে পেরেছি? এ প্রশ্নের উত্তরের জন্য নিচের তথ্যগুলোর দিকে নজর দিতে পারি—
১. শহরের সেবাসমেত পরিকল্পিত গ্রামবাংলা গড়ে তোলার জন্য দেড় লক্ষ কোটি টাকার প্রাথমিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। এলজিইডির তত্ত্বাবধানে আগামী ৬ বছরে এই অর্থ ব্যয় হবে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে পনেরোটি আদর্শ গ্রাম তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
২. বিশ্বব্যাংক মনে করে, বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে জিডিপির অন্তত ৪.৫ শতাংশ খরচ করতে হবে। এর একটা বড় অংশ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় করতে হবে।
৩. রাস্তাঘাট উন্নয়ন এই অবকাঠামো উন্নয়নের বড় অংশ হতে পারে। পাকা রাস্তা তৈরিতে বাংলাদেশের অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। গত দশ বছরে পাকা রাস্তা উন্নয়নে বিপ্লব ঘটে গেছে। ২০১১ সালে গ্রামে প্রতি ১,৩৬৯ জন নাগরিকের জন্য এক কিলোমিটার পাকা রাস্তা ছিল। আর এখন প্রতি ৮৮৭ জনের জন্যই এক কিলোমিটার পাকা রাস্তা আছে।
৪. এলজিইডির তথ্যমতে, ৮৭,২২৩টি গ্রামের মধ্যে ৭০ হাজার গ্রামের সংযোগ বেশ ভালো। এসব গ্রামের ৮৪ শতাংশ মানুষ সব ঋতুতে ব্যবহার করা যায় এমন সড়কের ২ কিলোমিটারের মধ্যে বাস করেন। চলমান অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বাংলাদেশ ৯০ শতাংশ মানুষকে এই যোগাযোগ সেবা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে চর, হাওর ও উপকূলে এই হারে যোগাযোগ সেবা দিতে হলে বিশেষ পরিকল্পনা ও অর্থায়নের দরকার হবে।
৫. আজকের দিনে ডিজিটাল সংযোগও সমান গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামেগঞ্জে তথ্য প্রযুক্তি সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণে সরকার মনোযোগ দিচ্ছে। তাই গ্রামেও এখন ফোর-জি সেবা মিলছে। ২ কোটি ১০ লক্ষ মানুষ এই সেবা পাচ্ছেন।
গ্রামীণ জীবনে শহরের সেবা দিতে হলে সুপেয় পানি এবং আধুনিক স্যানিটেশনের বিকল্প নেই। গ্রামে এখনো মাত্র অর্ধেকের মতো মানুষকে সুপেয় পানি এবং ৪১ শতাংশ মানুষ উন্নত স্যানিটেশন সেবা পাচ্ছে। দ্রুতই এসব সেবাকে আরও প্রসারিত ও গভীরতর করার সুযোগ রয়েছে।
৬. বিটিআরসির তথ্যমতে, মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের প্রায় ৩৫ শতাংশই গ্রামে বাস করেন। ২০২০ সালের পর এক বছরেই এই ব্যবহারকারী ১৯ শতাংশ বেড়েছে। গ্রাম ও শহরের মধ্যে এই সেবার ঘাটতি মেটাতে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অঙ্গিকার করেছে।
৭. সরকার গ্রামেও ই-সেবা ও ই-ব্যবস্থা প্রসারে আট হাজারেরও বেশি ডিজিটাল সেবা কেন্দ্র গড়ে তুলেছে। এসব কেন্দ্রে পনেরো হাজার ক্ষুদে উদ্যোক্তা (অর্ধেকের বেশি নারী) তিনশরও বেশি সরকারি ও বেসরকারি ই-সেবা (ই-ব্যাংকিং ও ই-বাণিজ্যসহ) দিয়ে থাকেন। ২০১৯ সালের পর এ যাবৎ এই সেবার পরিমাণ ২৭.৩৮% বেড়েছে। গেল বছর বেড়েছে প্রায় ৯%। একটি ডিজিটাল কেন্দ্রের অবস্থান যেকোনো গ্রামবাসীর তিন কিলোমিটারের মধ্যে।
৮. গ্রামীণ ‘গ্রোথ সেন্টার’ বা হাট বাজারগুলোই আগামী দিনের শহর। এসব কেন্দ্রকে পরিকল্পিত উপায়ে গড়ে তুলতে পারলে পরিচ্ছন্ন ও সবুজ নগরায়ণের বড় ভিত্তি তৈরি করা সম্ভব হবে। আমাদের এখন দুই হাজারের মতো এমন প্রবৃদ্ধি কেন্দ্র রয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমরা যদি একশটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের আশেপাশের এমন কেন্দ্রগুলোকে পরিকল্পিত উপায়ে গড়ে তুলতে পারি তাহলে সবুজ গ্রামীণ-নগরায়ণের দারুণ উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারি। বিশেষ বিশেষ এলাকায় বিশেষ বিশেষ পণ্য ভিত্তিক শহর-উপশহর গড়ে তুলতে পারি।
৯. ৮৮ শতাংশ গ্রামে বিদ্যুৎ সেবা পৌঁছে গেছে। শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে। বিচ্ছিন্ন এলাকাসহ সেচ ব্যবস্থায় সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহে আমরা মনোযোগী হতে পারি।
১০. গ্রামীণ জীবনে শহরের সেবা দিতে হলে সুপেয় পানি এবং আধুনিক স্যানিটেশনের বিকল্প নেই। গ্রামে এখনো মাত্র অর্ধেকের মতো মানুষকে সুপেয় পানি এবং ৪১ শতাংশ মানুষ উন্নত স্যানিটেশন সেবা পাচ্ছে। দ্রুতই এসব সেবাকে আরও প্রসারিত ও গভীরতর করার সুযোগ রয়েছে।
১১. গ্রামের ছেলেমেয়েদের কারিগরি ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ বাড়াতেই হবে। গ্রামের মাত্র নয়-দশ শতাংশ তরুণরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। প্রশিক্ষণধর্মী ও বাস্তবসম্মত উচ্চশিক্ষা দিতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে কমিউনিটি হাসপাতালগুলোকে কেরালার মতো আধুনিক করে গড়ে তুলতে হবে।
১২. গ্রামে প্রতিদিন শহর থেকে মোবাইলে ও এজেন্ট আর্থিক সেবায় অর্থ যাচ্ছে। আর্থিক সেবার পরিমাণ, বিশেষ করে স্কুল ব্যাংকিং সেবা বিপুল হারে বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
এতক্ষণ ধরে গ্রামে শহরের মতো সেবার কিছু তথ্যের কথা উল্লেখ করলাম। সময় এসেছে আরও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করার। গ্রামীণ অবকাঠামো (তথ্য প্রযুক্তিসহ) উন্নয়নের জন্য জিডিপির প্রায় দুই শতাংশ বরাদ্দের দাবি রাখে।
আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে মাত্র ২৩,৪০০ কোটি টাকার বরাদ্দ রয়েছে গ্রামীণ উন্নয়ন ও সমবায়ের জন্য। অন্যান্য খাত মিলে এডিপির বিরাট অংশ গ্রামীণ উন্নয়নে ব্যয় করলে এবং গ্রামগুলোতে শহরের সেবা পৌঁছাতে পারলে সারা দেশটাই উন্নত ও পরিকল্পিত সবুজ নগরায়ণের ছোঁয়া লাগবে।
স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে সেজন্য অর্থবহ সমন্বয় ও সহযোগিতা থাকাটা খুবই জরুরি। একটু নীতি সচেতন ও সক্রিয় হলে নিশ্চয় এ স্বপ্ন পূরণে আমরা সফল হতে পারি বলে আমি বিশ্বাস করি।
ড. আতিউর রহমান ।। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর