চট্টগ্রামে মেট্রোরেল : সম্ভাবনা ও কিছু ভাবনা
গত ৪ জানুয়ারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় বন্দরনগরী চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। সেখানে মেট্রোরেলের রুটও বলে দিয়েছেন। চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এটি চলাচল করবে। নিঃসন্দেহে এটি একটি যুগোপযোগী ও প্রশংসনীয় সিদ্ধান্ত।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রাম শহরের গুরুত্ব ও ব্যস্ততা বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে কর্ণফুলী টানেল ও মিরসরাই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ শেষ হয়ে গেলে চট্টগ্রাম শহরের উপর বাড়তি মানুষের চাপ সৃষ্টি হবে সেটা সহজেই অনুমেয়। ফলে এখন থেকে বাড়তি জনসংখ্যার চাপ ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
বিজ্ঞাপন
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মেট্রোর যে রুট পরিকল্পনা করে নির্দেশনা দিয়েছেন, তা যেকোনো বিবেচনায় চট্টগ্রাম শহরের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।
চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে বড় সমস্যা এর উত্তরাংশের সঙ্গে দক্ষিণাংশের সংযোগের তেমন বড় কোনো রাস্তা নেই। শহরের ঠিক পেটের মধ্যে আড়াআড়ি রেলওয়ের ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে রেলওয়ের কারখানা, দুটো স্টেশন ও আবাসিক এলাকা। এর কারণে শহরটা দু’ফালি হয়ে গেছে।
এসব বিবেচনায় আশির দশকের শেষের দিকে যখন নতুন রেল স্টেশন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তখনই বলা হয়েছিল তা কুমিরা বা ফৌজদারহাট সরিয়ে নিতে। কিন্তু তৎকালীন সরকার সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য তা শহরের আরও প্রাণকেন্দ্রে নিয়ে আসে। ফলে মূল শহরের কিছু অঞ্চল রেল স্টেশনের জন্য ঢাকা পড়ে গেছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মেট্রোর যে রুট পরিকল্পনা করে নির্দেশনা দিয়েছেন, তা যেকোনো বিবেচনায় চট্টগ্রাম শহরের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।
এসব কারণে চট্টগ্রাম নগরী কালুরঘাট থেকে কাঠগড় পর্যন্ত বিস্তৃত সিডিএ এভিনিউর উপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল। এই একটা রাস্তা পুরো শহরের পরিবহন ব্যবস্থার মেরুদণ্ড স্বরূপ।
এই রাস্তা সংযুক্ত করেছে শহরের প্রধান তিনটি শিল্পাঞ্চলকে। এর ভার কিছুটা কমানোর এবং বহন ক্ষমতা কিছুটা বাড়ানোর লক্ষে একাধিক ফ্লাইওভার তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এটা দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়। বরং উত্তর-দক্ষিণের সংযোগ বাড়ানোর জন্য আরেকটি বিকল্প পথ তৈরি করা জরুরি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশিত মেট্রোরেল হতে পারে সেই বিকল্প রুট। তবে মেট্রোরেল যদি সিডিএ এভিনিউ ধরেই করা হয় তাহলে বিকল্প রুট তৈরির যেকথা বলা হলো সেটা আর হবে না। বরং চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে বন্দরের সঙ্গে সংযোগের যে রেললাইন আছে তা ব্যবহার করা হয় তাহলে ঢাকা ট্রাংক রোড ও কর্ণফুলী নদীর মধ্য দিয়ে একটি মসৃণ যোগাযোগ ব্যবস্থা সৃষ্টি হবে।
বন্দর রেললাইনের পাশ ধরে মেট্রোরেলের লাইন তৈরি করা হলে ভূমি অধিগ্রহণের ঝামেলা থাকবে না। পাশাপাশি মেট্রোরেল তৈরির সময় সড়কে যানজটের সৃষ্টি হবে না। সাধারণত রেললাইনের পাশে ও নিচে ইউটিলিটি সার্ভিসের লাইন টানা হয় না। তাই এসব অপসারণের উটকো ঝামেলা পোহাতে হবে না। সব বিবেচনায় এই রুটটি হতে পারে চট্টগ্রামবাসীর জন্য সবচেয়ে কার্যকর।
মেট্রোতে বসে লোকজন কর্ণফুলীর অপরূপ শোভা দেখতে দেখতে মোহনায় গিয়ে উপস্থিত হবে। পর্যটন এলাকা পতেঙ্গা এবং শিল্পাঞ্চল চট্টগ্রাম ইপিজেড ও কেইপিজেডের সঙ্গে মূল শহরের যোগাযোগ অনেক সহজ হবে।
নগরীর গুরুত্বপূর্ণ আগ্রাবাদ দেওয়ানহাট মোড় হয়তো মেট্রোরেল স্টেশন স্পর্শ করবে না। কিন্তু এসব মোড় থেকে স্টেশনগুলো খুব একটা দূরে হবে না। ফলে ব্যস্ত মোড়ে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে না।
নগরবাসীর যোগাযোগ আরামদায়ক করার পাশাপাশি এটি হবে পর্যটন শিল্প বিকাশের সহায়ক। পুরো রুটটি হবে কর্ণফুলী নদীর তীর ধরে।
মেট্রোতে বসে লোকজন কর্ণফুলীর অপরূপ শোভা দেখতে দেখতে মোহনায় গিয়ে উপস্থিত হবে। পর্যটন এলাকা পতেঙ্গা এবং শিল্পাঞ্চল চট্টগ্রাম ইপিজেড ও কেইপিজেডের সঙ্গে মূল শহরের যোগাযোগ অনেক সহজ হবে। এটি কর্ণফুলী টানেল ব্যবহারকারী যাত্রীদের চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশকে আরামদায়ক করে তুলবে।
প্রথম পর্যায়ে এয়ারপোর্ট থেকে স্টেশন পর্যন্ত মেট্রোরেল করা হলে দ্বিতীয় পর্যায়ে তা কোতোয়ালীর মোড়, চকবাজার, বহদ্দারহাট হয়ে অক্সিজেন পর্যন্ত বিস্তৃত করা যায়। এতে চট্টগ্রাম শহরের মূল দুটো বাস টার্মিনালের সঙ্গে রেল স্টেশন এয়ারপোর্ট ও বন্দরের সহজ সংযোগ সৃষ্টি হবে।
রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের মানুষ এতে উপকৃত হবে। এছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুসারে কর্ণফুলী নদীর চরে ৭৩ একর জায়গার উপর ‘মিনি সেক্রেটারিয়েট ফর চট্টগ্রাম’ শীর্ষক চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন যে প্রকল্প হাতে নিয়েছে সেটার সঙ্গে চট্টগ্রাম শহরের সহজ যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
জয়দীপ দে ।। কথাসাহিত্যিক