২৬/১১ : সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের নাম ধারণ করেছে পাকিস্তান
বলিউড খ্যাত শহর মুম্বাই। কী নেই, ভারতের গর্ব মুম্বাইয়ে। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের মোহনীয় বর্ণিলতায় সারা বছর তারকা হোটেলগুলো টইটম্বুর থাকে। ২৬ নভেম্বর ২০০৮। সন্ধ্যা নামতেই একদল মানুষ ঊর্ধ্বগতিতে ছুটছেন বাসা-বাড়ির দিকে। বাস, ট্রাম, ট্রেন ভর্তি। অন্য কিছুর দিকে তাকানোর ফুরসৎ কারো নেই। আরেকদল মানুষ ইতিমধ্যে হোটেল-রেস্তোরাঁ আর ক্যাফেতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়েছেন। দিনের ক্লান্তি দূর করতে ঠাণ্ডা-গরম পানীয়তে ঠোঁট ভেজাতে শুরু করেছেন কেবল। কেউ বুঝতে পারেননি তাদের জন্য কত বড় ভয়ঙ্কর কিছু অপেক্ষা করছে।
মাথায় বড় বড় এন্টেনা লাগিয়ে যারা সর্বত্র টিকটক করেন তাদের কোনো খবর নেই। রাত ৯.৩০। নাইটকুইন তখনো পরিস্ফুটিত হয়ে পূর্ণ ডানা মেলতে পারেননি। হঠাৎ করেই যেন মুম্বাইয়ের আকাশ ভেঙে পড়ল, বিনা মেঘে বজ্রপাত আর কি। কী হলো, জানতে বুঝতেই সময় চলে যাচ্ছে, এক মিনিট যেন হাজার মিনিটের সমান। কিছু বুঝে ওঠার আগেই রক্তের স্রোতে ভাসছে মুম্বাইয়ের রাজপথ। জানা গেল, বিখ্যাত তাজ হোটেল, ক্যাফে লিওপোল্ড, ওবেরিও ট্রাইডেল্ট হোটেল ও রেল স্টেশনসহ ছয়টি জায়গায় একযোগে সন্ত্রাসীরা আক্রমণ চালিয়েছে। নৃশংস বর্বরতায় নিরীহ নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করছে। সম্পূর্ণ নিরপরাধ মানুষকে কারা, কেন হত্যা করছে?
বিজ্ঞাপন
চেঙ্গিস খানের বর্বরতাও যেন এদের কাছে কিছু নয়। কিছু সময়ের মধ্যে হুশে আসে মুম্বাই নিরাপত্তা বাহিনী, ৬টি আক্রান্ত স্থল চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে, আক্রমণকারী সন্ত্রাসীরা বুঝতে পারে তাদের আর পালাবার পথ নেই।
শুরু হয় দুই পক্ষের স্নায়ুযুদ্ধ। তাজ হোটেলে অনেক বিদেশি পর্যটক রয়েছে, আক্রমণকারীদের প্রধান টার্গেট এটি। এরকম পরিস্থিতিতে সর্বক্ষেত্রে যা হয়, সন্ত্রাসীদের দ্রুত হত্যা বা গ্রেফতার এবং একই সঙ্গে নিরীহ জিম্মি হওয়া মানুষের জীবন রক্ষা, বিপরীতমুখী এই দ্বন্দ্বমূলক লক্ষ্য আইনে নিরাপত্তা বাহিনীকে অতিরিক্ত সতর্ক হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। ফলে সংগত কারণেই সময় গড়িয়ে যাচ্ছিল। ডাকা হয় এলিট কমান্ডো বাহিনী, ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (এনএসজি)। শুরু হয় অপারেশন ‘ব্ল্যাক টর্নেডো’।
২৬/১১ ঘটনার অন্তত তিন বছর আগে থেকে বেশ কয়েকবার হেডলি আমেরিকান পাসপোর্টে মুম্বাই আসে। ঘুরে ঘুরে উপযুক্ত টার্গেট ঠিক করে, সবগুলো টার্গেটর ভিডিও করে, যার ওপর ভিত্তি করে পরিকল্পনা হয়...
৬০ ঘণ্টার মাথায় ২৯ নভেম্বর আনুমানিক সকাল ৯ টায় সবকিছু শান্ত, নীরব, নিস্তব্ধ হয়ে যায়। মোট ১০ জন সন্ত্রাসী ৬ ভাগে ৬টি জায়গায় একযোগে আক্রমণ করে। গোলাগুলিতে ৯ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়। আজমল আমির কাসাব নামের একজন জীবিত গ্রেফতার হয়। এবারই প্রথম যে, একজন সন্ত্রাসী স্পটে ধরা পড়ে, যে একজন পাকিস্তানি নাগরিক। এর আগে এবং পরে অনেকবার পাকিস্তানি সন্ত্রাসীরা ভারতের অভ্যন্তরে আক্রমণ চালিয়েছে, তাতে সন্ত্রাসীরা আত্মঘাত হয়েছে, আর নয় তো অন দ্যা স্পট গোলাগুলিতে নিহত হয়েছে।
তাজ হোটেলসহ ৬টি আক্রমণ স্থলে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ মোট ১৬৬ জন নিহত হয়। আক্রমণের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতিতে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত একজন আমেরিকান নাগরিক, যার ছদ্মনাম ডেভিড হেডলি এবং মূল নাম দাউদ জিলানী, অন্যতম প্রধান ভূমিকা রাখেন। সে আমেরিকার ড্রাগ ইনফোর্সমেন্ট এজেন্সির গুপ্তচর হিসেবে কাজ করার সুযোগে পাকিস্তানে আসে। কাজ করতে গিয়ে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সঙ্গে সংযোগ হয় জিলানীর। আর জিহাদি উন্মাদনা দেখে আইএসআই তাকে রিক্রুট করে এবং লস্কর-ই-তাইয়েবার সঙ্গে কাজ করার জন্য।
২৬/১১ ঘটনার অন্তত তিন বছর আগে থেকে বেশ কয়েকবার হেডলি আমেরিকান পাসপোর্টে মুম্বাই আসে। ঘুরে ঘুরে উপযুক্ত টার্গেট ঠিক করে, সবগুলো টার্গেটর ভিডিও করে, যার ওপর ভিত্তি করে পরিকল্পনা হয় এবং পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশের কোনো এক গোপন স্থানে সন্ত্রাসী দল প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও আক্রমণের রিহার্সাল করে।
আমেরিকার আদালতে জবানবন্দিতে হেডলি স্বীকার করে এই কাজের জন্য তিনি পাকিস্তান আইএসআই অফিসার মেজর ইকবালের কাছ থেকে ২৮৫০০ ডলার পায়। এছাড়া ২৯৫০০ ডলার হেডলি পায় লস্কর-ই-তৈয়বার ডেপুটি হেড সাজিদ মজিদের কাছ থেকে, যিনি সাজিদ মীর হিসেবে পরিচিত।
জিয়া উদ্দিন আনসারী নামের একজন ভারতীয় জিহাদি ২০০৬ সালে প্রথম পাকিস্তানে পালিয়ে যায়, পরে ২০১২ সালে সৌদি আরব থেকে ভারত তাকে ফেরত আনতে সক্ষম হয়। আনসারীর স্বীকারোক্তি অনুসারে মুম্বাই আক্রমণের জন্য সমস্ত অস্ত্র-গোলাবারুদ দেয় আইএসআই। সে আরও জানায়, ঘটনার সময় করাচিতে অবস্থিত লস্কর-ই-তৈয়বার কন্ট্রোলরুম থেকে আইএসআই অফিসারই অপারেশন নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে।
পাকিস্তানের ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির সাবেক প্রধান তারিক খোসা ২০১৫ সালে ৩ আগস্ট পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক ডন পত্রিকায় একটি উপ-সম্পাদকীয় লেখেন। তাতে তিনি আইএসআইয়ের কথা এড়িয়ে যায় তবে স্পষ্টভাবে বলে, ১০ জন সন্ত্রাসীই লস্কর-ই-তৈয়বার সদস্য। তারিখ খোসা তার লেখায় উল্লেখ করেছে, করাচিতে কোথায় আক্রমণকারীদের প্রশিক্ষণ হয়েছে, কন্ট্রোল রুমে কোথায় এবং কোন জাহাজে করাচি থেকে তাদের মুম্বাইয়ের নিকটবর্তী জনসীমানায় আনা হয়েছে।
আনসারীর স্বীকারোক্তি অনুসারে মুম্বাই আক্রমণের জন্য সমস্ত অস্ত্র-গোলাবারুদ দেয় আইএসআই। সে আরও জানায়, ঘটনার সময় করাচিতে অবস্থিত লস্কর-ই-তৈয়বার কন্ট্রোলরুম থেকে আইএসআই অফিসারই অপারেশন নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে।
লস্কর-ই-তৈয়বা নেতা হাফিজ সাইদ, নাফিউর রহমান লাখভিসহ যারাই এই মুম্বাই বর্বরতার জন্য দায়ী তাদের বিচার পাকিস্তানের করা উচিত বলে মতামত দিয়েছে তারিখ খোসা। কারণ তিনি বলেছে, পাকিস্তানের নাম ব্যবহার করে এই জঘন্যতম অমানবিক নৃশংসতা চালানো হয়েছে। ভারতের আদালতে আজমল কাসাব ও আমেরিকার আদালতের ডেভিড হেডলির স্বীকারোক্তি মোতাবেক অপারেশন পরিচালিত হয়েছে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জামাত-উদ-দাওয়া ওরফে লস্কর-ই-তৈয়বার সরাসরি তত্ত্বাবধানে, আর অস্ত্র, গোলাবারুদ ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে আইএসআই।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সকলেই জানেন, মাওলানা হাফিজ সাঈদের নেতৃত্বাধীন লস্কর-ই-তৈয়বা এবং মাওলানা মাসউদ আজহারের নেতৃত্বাধীন জইশ-ই-মুহম্মদ, দুটি সন্ত্রাসী সংগঠন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্ধিত অংশ।
২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বাই আক্রমণ ভারতের অভ্যন্তরে তাদের প্রথম আক্রমণ নয়। ১৯৯৩ সালের ১২ মার্চ মুম্বাইয়ের ১২ স্থানে একযোগে বোমা বিস্ফোরণ ঘটে, তাতে ২৫৭ জন নিরীহ মানুষ মারা যায়। শোনা যায়, এই আক্রমণের গডফাদার দাউদ ইব্রাহিম এখন করাচিতে বসবাস করছে।
২০০১ সালের ১৩ ডিসেম্বর জইশ-ই-মুহম্মদের সন্ত্রাসীরা দিল্লিতে ভারতের পার্লামেন্ট ভবনে আক্রমণ চালায়। ২০১৬ সালের ২ জানুয়ারিতে জইশ-ই-মুহম্মদের সন্ত্রাসীরা পাঞ্জাবের পাঠান কোটে ভারতীয় বিমান ঘাঁটির অভ্যন্তরে প্রবেশ এবং প্রায় তিনদিন পুরো বিমান ঘাঁটিকে জিম্মি করে রাখে। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল নিরঞ্জন কুমারসহ বেশ কয়েকজন নিহত হয়। আক্রমণকারীর ৬ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়।
২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জম্মু-কাশ্মীরের উরিতে লস্কর-ই-তৈয়বার সন্ত্রাসীরা আক্রমণ চালায় এবং তাতে ১৯ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়। আবারও ২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারিতে জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামাযতে জইশ-ই-মুহম্মদের সন্ত্রাসীরা আক্রমণ চালায় এবং ভারতে ৪০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়। এর পাল্টা হিসেবে ভারতীয় বিমানবাহিনী খাইবার পাখতুনখাওয়ায় অবস্থিত জইশ-ই-মুহম্মদের প্রশিক্ষণ ঘাটিতে বিমান আক্রমণ চালায়।
পাকিস্তান শুধু ভারত নয়, বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও জঙ্গি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। যার প্রমাণ হিসেবে বলা যায়, ২০১৫ সালে ঢাকাস্থ পাকিস্তানি দূতাবাসের ২জন কর্মকর্তা জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকার কারণে বহিষ্কৃত হয়।
পারমাণবিক শক্তির অধিকারী দুই দেশ আবার একবার পরিপূর্ণ যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে চলে আসে। কিন্তু শেষপর্যন্ত উভয় দেশের নেতৃত্বের শুভবুদ্ধির কারণে যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব হয়। পাকিস্তান এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ১৯৪৭ সাল থেকে চালিয়ে আসছে। যার ফলে তিনবার দুই দেশের পরিপূর্ণ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। প্রতিটি যুদ্ধই পাকিস্তান প্রথম শুরু করেছে।
১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পারমাণবিক বোমা প্রস্তুত করা শুরু করে, যার ভয়াবহতায় ১৯৯৯ সালের ৪ জুলাই আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে রীতিমতো বকাবকি করেন, যার উল্লেখ আছে হুসেন হাক্কামির লিখিত ‘পাকিস্তান বিটুইন মস্ক অ্যান্ড মিলিটারি’ গ্রন্থের ২৫৩ পৃষ্ঠায়। বইয়ের একই পৃষ্ঠায় উল্লেখিত আছে, তখন আমেরিকা একটি খসড়া বিবৃতি দেয়, তাতে বলা হয় পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ওলামা বিন লাদেন ও তালেবানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভারত ও আফগানিস্তানে সন্ত্রাসী তৎপরতায় জড়িত।
উল্লেখিত বইয়ের ১৮৪ পৃষ্ঠায় হোসেন হাক্কানির বক্তব্যে বোঝা যায়, আজ বিশ্বব্যাপী যে ইসলামিষ্ট উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠন গড়ে উঠেছে তার ব্রিডিং গ্রাউন্ড হিসেবে কাজ করছে পাকিস্তান। ভারতের সঙ্গে যা কিছু ঘটে তাতে পাকিস্তান সবসময় কাশ্মীর ইস্যুকে সামনে আনে। ব্রিটিশের ভারত স্বাধীনতা আইন, হরিসিংহ কর্তৃক স্বাক্ষরিত ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার দলিল, কাশ্মীরের জনপ্রিয় অবিসংবাদিত নেতা শেখ আব্দুল্লাহ কর্তৃক উক্ত সংযুক্ত দলিলের প্রতি পূর্ণ সমর্থন এবং ১৯৪৮ সালের ২১ এপ্রিল গৃহীত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব নম্বর ৪৭-এর মর্মার্থ অনুসারে সম্পূর্ণ কাশ্মীর ভারতের অংশ।
ভারতকে চিরস্থায়ী শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করার মাধ্যমে রাষ্ট্রের মধ্যে সেনাবাহিনীর সুপ্রিমেসি প্রতিষ্ঠা হওয়ায় পাকিস্তানের গণতন্ত্র কখনই প্রসারিত হয়নি। ফলে ভয়াবহ দরিদ্রতা ও উগ্রবাদের কবলে পড়ে পাকিস্তান আজ একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। পাকিস্তানের সাধারণ বৃহত্তর মানুষ কষ্টে আছে। ৫০ বছরের মাথায় এসে পাকিস্তান আজ বাংলাদেশ থেকে সবকিছুতে পিছিয়ে পড়েছে।
পাকিস্তান শুধু ভারত নয়, বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও জঙ্গি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। যার প্রমাণ হিসেবে বলা যায়, ২০১৫ সালে ঢাকাস্থ পাকিস্তানি দূতাবাসের ২জন কর্মকর্তা জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকার কারণে বহিষ্কৃত হয়। ২০০৪ সালে একুশে আগস্টের আক্রমণেও পাকিস্তানি সন্ত্রাসীরা জড়িত। অথচ প্রতিহিংসা ও ধর্মীয় উগ্রবাদিতা বাদ দিয়ে পাকিস্তানের মধ্যে শুভবুদ্ধির উদয় হলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আসিয়ানের চেয়েও দক্ষিণ এশিয়া অত্যন্ত শক্তিশালী অর্থনৈতিক জোট হতে পারতো। তাতে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তিত হতো। পাকিস্তানের কারণেই সার্ক এখনো ভেন্টিলেশনে।
২০০৪ সালের কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে সব সদস্য দেশ একমত হয়ে সার্ক দেশসমূহের মধ্যে কানেক্টিভিটি জোরদার করার জন্য প্রত্যেকটি দেশের মধ্যে পারস্পরিক রোড ও রেল সংযোগ স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে পাকিস্তান বেঁকে বসায় সিদ্ধান্ত আর চূড়ান্ত হতে পারেনি। সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে পুরো দক্ষিণ এশিয়ার চেহারা বদলে যেত। সুতরাং সার্ক মুখ থুবড়ে পড়ার জন্য পাকিস্তানই মূলত দায়ী।
আফগানিস্তানে উগ্রপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তালেবান আবার ক্ষমতা দখল করেছে। তালেবান আইএসআইয়ের প্রক্সি ছাড়া অন্য কিছু নয়। ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় আবার চরম অশান্তি বার্তা বইছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী একাত্তরের চরম লজ্জাজনক পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে আছে। কিন্তু সেই ক্ষমতা তাদের আর নেই। তাই পরোক্ষভাবে জঙ্গি-সন্ত্রাসী লেলিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ ঘটানোই তাদের উদ্দেশ্য। সে কারণে ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন মুম্বাইয়ের বর্বরতম আক্রমণ চালায়। তাতে প্রতিহিংসা চরিতার্থ হলেও পাকিস্তানের কোনো লাভ হয়নি। বরং উপমহাদেশের সংহতি, শান্তি ও নিরাপত্তার বিরুদ্ধে চরম কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছে মাত্র। আর সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের নাম ধারণ করেছে পাকিস্তান।
মেজর জেনারেল মোহাম্মাদ আলী শিকদার (অব.) ।। রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক