রাজনৈতিক সম্প্রীতির দেশ!
প্রায় ভুলে গেছে সবাই। এইতো আর কয়দিন, পুরোটা ভুলে যাবে। চোখ কুঁচকে ভাবার চেষ্টা করবে কী যেন হয়েছিল? প্রতিবছরই হয়, ভুলে যায় সবাই, আবারও হয়, এবারও তাই হবে। কিন্তু এবারের ঘটনা এত সরল নয়। কেবল কিছু হামলা, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য অথবা লুট অথবা অনুভূতি এইসবে আটকে থাকা ঘটনা নয়, ঘটনা বড়। বেশ বড়ই। বলছিলাম মন্দিরে কোরান রাখাকে কেন্দ্র করে ১৮ জেলায় সাম্প্রদায়িক হামলার কথা।
প্রথমে ভাবা হয়েছিল, এটি ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাত। ক্ষুব্ধ ধার্মিকরা এই তাণ্ডব চালিয়েছে। কিন্তু সবগুলো হামলায় দেখা গেছে, ১৫ থেকে ২৫ বছরের কিশোর যুবকদের, যাদের অনুভূতি নিয়ে, অন্তত ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে এত উত্তেজিত বা এত উগ্র হওয়ার কথা নয়।
বিজ্ঞাপন
যাদের সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাওয়ার কথা সেই ইসলামী সমমনা দল বা সংগঠন বা ছাত্রদের কোথাও দেখা যায়নি এই হামলায়। দেখা যায়নি কোনো সংক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষকেও। বাকি ছিল রাজনীতি।
হ্যাঁ, রাজনীতি যুক্ত। রাজনীতিই সব নির্ধারণ করে। কিন্তু এই দেশ অসাম্প্রদায়িক দেশ নয়, এটা প্রমাণ করতে পারলে কাদের লাভ বেশি? প্রশ্নটা ছিল কার লাভ? বিএনপির নাম এসেছে সবার আগে, নানা জায়গায় পাওয়া গেছে সেই প্রমাণও। কিন্তু এখানে আসলে শেষ নয়।
সবগুলো হামলায় দেখা গেছে, ১৫ থেকে ২৫ বছরের কিশোর যুবকদের, যাদের অনুভূতি নিয়ে, অন্তত ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে এত উত্তেজিত বা এত উগ্র হওয়ার কথা নয়।
বিএনপি করেছে, তারা ধরা পড়েছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া গেছে, এই সুখে কেউ যদি আনন্দ নিয়ে বসে থাকে তার বা তাদের মতো বোকা আর কেউ নেই। বিএনপি এত বড় কাণ্ড করেছে একা? পুরো দিন? ৫ দিন ধরে? পুরো দেশে? সম্ভব!
যখন হামলা হয়েছে তখন তা একবার হয়নি, দফায় দফায় হয়েছে। পুরো দিন ধরে। এখন নাকি ঘরে ঘরে আওয়ামী লীগ, শক্তিশালী তাদের অবস্থান। পুরো মাঠ তাদেরই দখলে। অন্যদিকে বিএনপির কর্মী খুঁজে পাওয়া যায় না। তাহলে লাখ লাখ আওয়ামী কর্মী ঐ সময় কী করেছে তা জানা জরুরি। হামলার সময় তারা কোথায় ছিল সেই অবস্থানও জানা জরুরি। আমি নিশ্চিত, জানলে বিস্ময়কর তথ্য পাওয়া যাবে।
প্রতিটি জেলাতে কেবল সরকারি সাংসদদের অবস্থান যে আছে তা-ই নয়, আছে জেলা, থানা কমিটিও। স্থানীয় এইসব নেতার দাপটে আতঙ্কে থাকেন মন্ত্রীরাও। তাদের অজান্তে একটা পাতাও সরে না, তাদের কর্মীবাহিনী যত, তত নেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার লোকজনও। তাদের সোর্সের কাছে থাকে সব তথ্য। এত বড় হামলার কিছু তারা টেরই পাননি আগে, আসলেই কি সম্ভব?
যদি ধরে নেই সম্ভব। তাহলে এমন হাজার হাজার কর্মীর সামনে ভাঙচুর করা কেমন করে সম্ভব হলো? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজলেই পাওয়া যাবে অসংখ্য তথ্য।
ভাগ বাটোয়ারা চলছে রাজনীতির প্রতিপক্ষদের সাথে। কে কত পারসান্টেজ পাবে এখন চলছে শুধু সে হিসাব।
প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার লোকজন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে বলে বিতর্ক উঠে সবসময়। তাই যদি হয়, তাহলে তারা এই হামলার সময় কী করেছে? মাঠের খবর বলে ভিন্ন কথা। অভিযোগ আছে, ডেকে পাওয়া যায়নি পুলিশকে, ৯৯৯ এ ফোন করেও কোনো সাড়া মিলেনি।
দিনব্যাপী দফায় দফায় আক্রমণে পাশে দাঁড়ায়নি পুলিশ, বলছে হামলার শিকার ভুক্তভোগীরা। বেশিরভাগ জায়গায় প্রায় একই অভিযোগ, একই কাহিনি। কারা যায়নি, কেন যায়নি কারণটা বের করা জরুরি। খুব জরুরি বের করা, এই দেশের জন্যই।
মাঠে মাঠে নিজের স্বার্থের কাছে বিসর্জিত হচ্ছে নীতি, আদর্শ। সেই স্বার্থ এখন এত বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, তা রক্ষায় বলী দেওয়া হচ্ছে দলকে। একদিন সেই বলীতে পড়ে যাবে সরকারও।
ভাগ বাটোয়ারা চলছে রাজনীতির প্রতিপক্ষদের সাথে। কে কত পারসান্টেজ পাবে এখন চলছে শুধু সে হিসাব। অনেক জায়গাতেই বিএনপি আওয়ামী লীগ এখন একাকার। লাভের টাকা ভাগাভাগি করা ভাই ব্রাদার তারা।
কে বলেছে, এই দেশের সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে? আমি তো সরেজমিনে দেখে এলাম দারুণ এক রাজনৈতিক সম্প্রীতির দেশ এখন বাংলাদেশ।
নাজনীন মুন্নী ।। সাংবাদিক