ডেভিড বার্গম্যানকে বাংলাদেশের বিচারে কোনোভাবেই নিরপেক্ষ বলা যায় না। অন্তত পারিবারিক সম্পর্কের ভিত্তিতে। ডেভিড বার্গম্যানের শ্বশুর ড. কামাল হোসেন গত সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার সরাসরি প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

বিএনপি’র সিনিয়র নেতা এবং দলের অন্যান্য সদস্যদের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে জিয়া পরিবার নির্বাচনী জোটের নেতৃত্ব তুলে দেয় একজন প্রাক্তন আওয়ামী লীগ সমর্থকের হাতে? কেন? কারণ তারা জানে বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে বিপথে নিয়ে যেতে জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ড. কামালের গত কয়েক দশকের আক্রোশই যথেষ্ট। অথচ ড. কামাল সবসময় নিজেকে প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রতিনিধি বলে দাবি করে আসছেন।

ক্ষমতার স্বাদ পেতে নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দেওয়ার ঘটনা কামাল হোসেনের পরিবারে অবশ্য নতুন কিছু নয়। ২০০৬ সালে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলকে আইনি বৈধতা দিতে ছুটে গিয়েছিলেন ড. কামাল।

সেনাবাহিনীর এই পদক্ষেপের পেছনে ঢাকার ‘অভিজাত’ সমাজ ও আন্তর্জাতিক কিছু শক্তির হাত ছিল। সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে ফেলে জারি হয়েছিল জরুরি অবস্থা।

নির্বাচন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয় আর এর পক্ষে পত্রপত্রিকায় কথা বলতে থাকেন ড. কামাল হোসেন। সে নির্বাচনের প্রাক্কালে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় দেখতে পেয়েছিল সকলেই।

ড. কামালের কন্যা ও ডেভিড বার্গম্যানের স্ত্রী সারা হোসেন একজন স্বনামধন্য মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী। সামরিক সরকার যখন ‘রাজনীতিকে পরিষ্কার’র অভিযান চালিয়েছিল শেখ হাসিনাসহ দেশের বরেণ্য ও জনপ্রিয় রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে, তখন ফুলে-ফেঁপে যান সারা হোসেন।  

বাংলাদেশে সাংবাদিকতা শুরুর আগে ডেভিড বার্গম্যানের প্রিন্ট মিডিয়ায় কাজ করার কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না। কিন্তু দেশের সবচেয়ে নামকরা আইনজীবীর মেয়ে-জামাই হওয়ার সুবিধা নিশ্চয়ই আছে। এই পরিচয়ের ফলে যে প্রভাব খাটানো যায়, প্রবেশাধিকার পাওয়া যায় তা খুব কম বিদেশিই পেয়ে থাকেন।

ফলশ্রুতিতে দেশের সেরা ইংরেজি দৈনিকগুলোতে সহজেই উচ্চপদে নিয়োগ পেলেন কিন্তু প্রতিবারই খুব বেশিদিন টিকতে পারেননি। কিন্তু ড. কামাল হোসেনের জামাতা বলে কথা। বারবার ব্যর্থ হলেও সুযোগের কোনো অভাব হয়নি বার্গম্যানের।

তিনি তখন বাংলা বলতে পারতেন না এবং তার সকল তথ্যের উৎস ছিলেন ডিপ্লোম্যাটিক ককটেল পার্টিতে পরিচয় হওয়া অভিজাত বাংলাদেশিরা।

এধরনের অভিজাত বাংলাদেশিদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিও তার শ্বশুর ড. কামালের মতো সংকীর্ণ এবং ব্যক্তি স্বার্থ প্রণোদিত। চাকরি আজ আছে, কাল নেই এমন একটা অবস্থায় শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন বার্গম্যান। শ্বশুরই তার হাতখরচ চালাতেন কি না এমন প্রশ্ন উঠলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।

বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে ডেভিড বার্গম্যানের দৃষ্টিভঙ্গি ড. কামাল হোসেন দ্বারা প্রভাবিত এবং বার্গম্যান আদতে তার শ্বশুরের লড়াইটাই লড়ছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের প্রতি বার্গম্যানের ঘোরতর বিদ্বেষ এটাই প্রমাণ করে। কোনো প্রতিষ্ঠান যদি ডেভিড বার্গম্যানকে বাংলাদেশ নিয়ে লিখতে দায়িত্ব দেয় তাহলে এই স্বার্থগত দ্বন্দ্বটা আমলে নেওয়া সে প্রতিষ্ঠানের নৈতিক দায়িত্ব হওয়া উচিত।

তন্ময় আহমেদ ।। কো-অর্ডিনেটর, সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন