রিজেন্টের প্রতারক সাহেদের কথা নিশ্চয় আমাদের মনে আছে। বিলাসী কাপড় পরে বুদ্ধিজীবী সেজে আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির পরিচয় দিয়ে বেড়াত। সেই পরিচয়ে র‍্যাব প্রধান, পুলিশ প্রধান, গণভবন আর মিডিয়া সবাইকে বিভ্রান্ত করে বিশাল প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিল। এক সময়ে মন্ত্রী সচিবও যেন তার হাতের পুতুল বনে গিয়েছিল। শেষ অবধি, এই ভণ্ড করোনাকালে সারা দুনিয়ায় প্রিয় বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিল।

শেখ হাসিনা সজাগ না হলে, না জানি কত মন্ত্রী, নেতা আজও তার তোয়াজ করেই বেড়াতো। আর পাপিয়া কাণ্ডের সেই হেরেমখানা, সেটিও তো হঠাৎ গজিয়ে উঠা আওয়ামী নামেরই কলঙ্ক ছিল। শেখ হাসিনার দৃঢ়তা, সেক্ষেত্রেও আওয়ামী লীগের ইজ্জত রক্ষার উপায় হয়ে উঠেছিল।

অতীতে দেখেছি ছাত্রনেতারা আন্দোলন সংগ্রাম করে জাতীয় পরিচিতি পেয়েছে, ছাত্রজীবন শেষে রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে জাতীয় পর্যায়ে পরিচিতি অর্জন করেছে।

হেলেনা জাহাঙ্গীর, আওয়ামী লীগের কোনো এক উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন। এর আগে বিএনপি, জাতীয় পার্টিও করেছেন। চলনে, বলনে শেখ হাসিনা ছাড়া কাউকেই নেতা মানতেন না।

সুদীর্ঘ সাংগঠনিক জীবনে নিষ্ঠা, একাগ্রতা, আদর্শ, দেশপ্রেম আর নানা ক্যারিশমাটিক গুণাবলির কারণে সারাদেশে অগণিত ভক্ত/অনুসারীর সৃষ্টি হয়েছে। আর এসব নেতারাও সব সময় মানুষের শ্রদ্ধা ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছে। আর আজকাল কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসে কে যে কখন, কীভাবে প্রভাবশালী হয়ে ওঠে তা বোঝা মুশকিল। যেন তেন উপায়ে অর্থ বিত্তের মালিক হয়ে এরাই যেন রাষ্ট্রের চালিকাশক্তি হয়ে উঠছে। শেখ হাসিনা সচল না হওয়া অবধি অনেক সুবিধাবাদী মন্ত্রী নেতারাও তাদের তোয়াজ করে যাচ্ছে।

হেলেনা জাহাঙ্গীর, আওয়ামী লীগের কোনো এক উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন। এর আগে বিএনপি, জাতীয় পার্টিও করেছেন। চলনে, বলনে শেখ হাসিনা ছাড়া কাউকেই নেতা মানতেন না। জয়যাত্রার নামে বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক তৈরিতে লিপ্ত ছিলেন। বর্তমান কেবিনেটের বয়োজ্যেষ্ঠ এক মন্ত্রীকে সামনে রেখেই জয়যাত্রা টেলিভিশনের প্রচার, প্রসার চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

কানাডার কেলগেরিতে জয়যাত্রাকে কেন্দ্র করে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্কও গড়ে উঠেছিল। আলবার্টা আওয়ামী লীগের অনেক প্রভাবশালীরাও হেলেন জাহাঙ্গীরের ভক্ত হয়ে উঠেছিলেন। কেউ কেউ জয়যাত্রা টেলিভিশনকে একটি প্রভাবশালী মিডিয়া হিসেবেও ভাবতে শুরু করেছিলেন।

হেলেনা জাহাঙ্গীর কখনো ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ করেছেন এমন তথ্য আমার জানা নেই। আন্দোলন, সংগ্রামে রাজপথে থেকেছেন এমন তথ্যটিও আমার কাছে অজ্ঞাত।

হঠাৎ বিনা মেঘেই বজ্রপাত। হেলেনা জাহাঙ্গীর র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার। আদালতে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর। তার বিরুদ্ধে চাকরিজীবী লীগ আর সিনিয়র নেতৃবৃন্দের প্রতি অবজ্ঞাসূচক আচরণ ব্যতীত আর কী সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে তা এখনো আমার কাছে স্পষ্ট নয়। তবে সরকারি ভাষায়, জয়যাত্রা একটি অনুমোদনহীন টেলিভিশন মিডিয়া! যদি তাই হয়, তবে একজন কেবিনেট মন্ত্রী কী করে বারবার এই গণমাধ্যমটির অনুষ্ঠানে হাজির হন?

মন্ত্রী মহোদয়কে কখনোবা জয়যাত্রা টেলিভিশনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, কখনো চেয়ারম্যান আবার কখনোবা প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। উপস্থিত মহোদয়ের সাথে হাসি মুখের ছবি এর স্বীকৃতিও মেলে। তাহলে বঙ্গবন্ধুর অনুসারী কেউ যদি বলে বসে পতাকাধারী অনেকেই আজ আইনকানুন, নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেন না, সেটি কি খুব অন্যায় হবে?

আমি হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আওয়ামী লীগের একজন উপ-কমিটির সদস্য হিসেবেই জানতাম। কখনো ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ করেছেন এমন তথ্য আমার জানা নেই। আন্দোলন, সংগ্রামে রাজপথে থেকেছেন এমন তথ্যটিও আমার কাছে অজ্ঞাত। এর বাইরে তিনি একজন ব্যবসায়ী সেটিও জানতাম। তবে জয়যাত্রার শক্তিশালী নেটওয়ার্কের সুবাদে কেলগেরি শহরে তিনি বেশ পরিচিত ছিলেন। প্রায়শই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উনাকে দেখেছি।

মন্ত্রী নেতাদের সামনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দর্শক শ্রোতারা তাকে শেখ হাসিনার কাছের মানুষ হিসেবেই মনে করতেন। তবে যতবারই তাকে দেখেছি, তার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ আর ভাষাশৈলী আমাকে বিস্মিত ও বিব্রত করেছে। জানি না আজকের আওয়ামী লীগে এমন হেলেনার সংখ্যা কত? তবে এমন হেলেনার সংখ্যা বেড়ে গেলে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ যে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাতে সংশয় নেই।

মো. মাহমুদ হাসান ।। কলামিস্ট ও গবেষক