চীনের ‘তিন সন্তান নীতি’ এবং অতঃপর
চীনা মাইক্রোব্লগ সিনা উইপো-তে (Sina Weibo) সাংহাইয়ের ৩৬ বছর বয়সী ছেং ইয়ুওয়েনের ফলোয়ারের সংখ্যা ২৪ লাখ। তিনি সাধারণত মা ও শিশু বিষয়ক কনটেন্ট পোস্ট করে থাকেন। তার দুই ছেলে। বড়টির বয়স ৮ এবং ছোটটির ৪। বাচ্চাদের জন্মের পর তিনি মাইক্রোব্লগে লেখালেখি শুরু করেন। একসময় তিনি বিশ্বের সেরা ৫০০টি কোম্পানির একটিতে প্রকল্প ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করতেন।
মাইক্রোব্লগেই তিনি একবার তৃতীয় সন্তান নেওয়ার ব্যাপারে তার আগ্রহের কথা প্রকাশ করেছিলেন। দ্বিতীয় সন্তান জন্মের পর তার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। তিনি মনে করেন, আরেকটি সন্তান হলে মন্দ হয় না। তিনি দুই ছেলেকে চোখের সামনে হেসে খেলে বড় হতে দেখেছেন। তৃতীয় সন্তান হলে সেও একসময় বড় হয়ে যাবে এবং তিন ভাই-বোন একে অপরকে দেখে রাখবে—এমনটাই তিনি বিশ্বাস করেন। তিনি অবশ্য তৃতীয় সন্তান হিসেবে একটি কন্যা চান কি না, তা প্রকাশ করেননি।
বিজ্ঞাপন
গত ৩১ মে, সোমবার, চীনের সরকার ‘তিন সন্তান নীতি’ ঘোষণা করে। এই নীতি অনুসারে এখন থেকে চীনের যেকোনো দম্পতি তিনটি পর্যন্ত সন্তান নিতে পারবে। বলা বাহুল্য, খবরটি ছেং ইয়ুওয়েনের আড়াই মিলিয়ন ফলোয়ারের দৃষ্টি এড়ায়নি। সেদিন বিকেলেই তার ফোন অনবরত বাজতে শুরু করে। ফলোয়ারদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়, কে সবার আগে এই সুখবর তাকে দিতে পারেন, তার।
ছেং ইয়ুওয়েনকে সবার আগে সুখবরটি কেউ দিতে পেরেছিলেন কি না, তা জানি না। খবরটি শুনে তিনি তৃতীয় সন্তান নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন কি না, তাও আমার অজানা। তবে, এটা জানি যে, চীনে ছেং ইয়ুওয়েনের মতো একাধিক সন্তান নিতে আগ্রহী নারীর সংখ্যা বেশি নয়। ‘তিন সন্তান নীতি’ গৃহীত হওয়ার পরপরই সিনহুয়া বার্তা সংস্থা উইপো অ্যাকাউন্টে একটি জরিপ চালিয়েছিল। জরিপে একটি প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয়েছিল, ‘আপনি কি তৃতীয় সন্তান নিতে তৈরি?’ খুব অল্প সময়ের মধ্যে ৩১ হাজার ব্যবহারকারী সাড়া দেন। তাদের মধ্যে ২৯ হাজারই বলেছেন, তারা এ নিয়ে ভাবতেও রাজি নন। বাকিদের মধ্যে কেউ বলেছেন, ‘আমি খুব আগ্রহী’, কেউ বলেছেন, ‘আমার এজেন্ডায় বিষয়টি আছে’, কেউ বলেছেন, ‘দ্বিধায় আছি, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অনেক বিষয় বিবেচনা করতে হবে’। আর একজন উইপো ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘আমি তিনটি সন্তান নিতে রাজি, যদি কেউ আমায় ৫০ লাখ ইউয়ান দেয়!’
আমি নিজেও কয়েকজন চীনা মায়ের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের অধিকাংশের এজেন্ডায় তৃতীয় সন্তান তো দূরের কথা, দ্বিতীয় সন্তানও নেই। এসব মা তাদের একমাত্র সন্তান নিয়েই সন্তুষ্ট। জানতে চাইলাম, কেন তারা একাধিক সন্তান চান না? জবাব মোটামুটি একই, সন্তান লালন-পালন করা খুবই ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য। চীনা মায়েদের অধিকাংশই বাইরে কোনো না কোনো কাজ করেন। চাকরি করে সন্তান লালন-পালন করা অনেক কষ্টের ব্যাপারও বটে। তাই তারা দ্বিতীয় বা তৃতীয় সন্তানের কথা চিন্তাও করতে পারেন না।
একজন মা আরেকটি ইন্টারেস্টিং পয়েন্ট তুলে ধরলেন। তিনি বললেন, বহুকালের অভ্যাসও একটা ব্যাপার। সেই ১৯৮০ সালে চীনে ‘এক সন্তান নীতি’ কার্যকর হয়। প্রায় চার দশক এই নীতির বলয়ে থেকেই অভ্যস্ত চীনারা। আজকের যেসব চীনা নারী সন্তান জন্মদানক্ষম, তারা এই বলয়ে থেকেই বড় হয়েছেন। তাদের চিন্তা-চেতনায় এক সন্তান ছিল এবং এখনো আছে। এর বাইরে তারা ভাবতে পারেন না। গোটা বিষয়টাই অভ্যাসের ব্যাপার!
চীনা মায়েদের অধিকাংশই বাইরে কোনো না কোনো কাজ করেন। চাকরি করে সন্তান লালন-পালন করা অনেক কষ্টের ব্যাপারও বটে। তাই তারা দ্বিতীয় বা তৃতীয় সন্তানের কথা চিন্তাও করতে পারেন না।
আমি যাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের সবাই যে একাধিক সন্তানের ব্যাপারে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন, তা নয়। ২০১৬ সালে যখন চীন সরকার ‘দুই সন্তান নীতি’ ঘোষণা করেছিল, তখন তাদের কেউ কেউ দ্বিতীয় সন্তানের মা হতে দ্বিধা করেননি। দৃশ্যত, চীন সরকারের প্রাথমিক লক্ষ্য সমাজের এই গ্রুপটিই, যারা ‘দুই সন্তান নীতি’র সুবিধা গ্রহণ করেছিলেন। বলা বাহুল্য, তাদের সংখ্যা খুবই কম। এদের মধ্যে আবার ‘তিন সন্তান নীতি’র সুবিধা গ্রহণ করবেন বলে ভাবছেন—এমন মায়ের সংখ্যা আরও কম হওয়ারই কথা। এ অবস্থায় ‘তিন সন্তান নীতি’ গ্রহণের মূল কারণ, আমার মনে হয়, চীনাদের চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন আনা, যেই চিন্তা-চেতনার জন্ম হয়েছিল ‘এক সন্তান নীতি’র কারণে।
‘এক সন্তান নীতি’ গ্রহণ করা হয়েছিল চীনের জনসংখ্যার বিস্ফোরণ ঠেকাতে। তখনকার পরিস্থিতিতে সেটার প্রয়োজনও ছিল। কিন্তু বিগত চার দশকে সেই পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। ‘এক সন্তান নীতি’র কারণে চীনের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে থেকেছে। পাশাপাশি, চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।
২০২০ সালে চীন নিজের মাটি থেকে হতদরিদ্রকে ঝেটিয়ে বিদায় করেছে; জ্ঞান-বিজ্ঞানের জগতে চীন রাখছে অভাবনীয় উন্নতির ছাপ; চীন এখন এগিয়ে যাচ্ছে সকল নাগরিককে ধনী করার উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে। কিন্তু এতসব অর্জনের জন্য শুরুতে যে ‘এক সন্তান নীতি’ চীন গ্রহণ করেছিল, তার কিছু নেতিবাচক প্রভাব এখন দেখা যাচ্ছে চীনা সমাজে অবধারিতভাবেই।
চীনে প্রবীণদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে এবং জন্মের হার ক্রমশ কমছে। ২০২০ সালের আদমশুমারি অনুসারে, চীনে ৬০ বছর বা তারচেয়ে বেশি বয়সী নাগরিকের সংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার (১৪১ কোটি) ১৮.৭ শতাংশ (২৬ কোটি ৪০ লাখ)। তুলনা করার জন্য ২০১০ সালের হিসেব উল্লেখ করা যায়। ওই বছর চীনে ৬০ বছর বা তারচেয়ে বেশি বয়সী নাগরিকের সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার ১৩.৫ শতাংশ। বর্তমান প্রবণতা অনুসারে, ২০৫০ সালে চীনে ৬০ বা তারচেয়ে বেশি বয়সী নাগরিকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৩১ কোটি ১০ লাখে তথা মোট জনসংখ্যার ২৬ শতাংশে।
একটি দেশে প্রবীণদের সংখ্যা বৃদ্ধি ইতিবাচক ইঙ্গিতও বহন করে। এতে বোঝা যায় যে, দেশটির মানুষের জীবনমান উন্নত হয়েছে, চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটেছে, সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটেছে, ইত্যাদি। চীনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। সুতরাং, এক বিচারে সমাজে প্রবীণদের সংখ্যাবৃদ্ধি কোনো খারাপ খবর নয়। তবে, প্রবীণদের সংখ্যাবৃদ্ধি সমাজের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জও বয়ে আনে। বর্ধিত প্রবীণ মানেই, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর ওপর অতিরিক্ত চাপ। আর যদি কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমশ কমে আসে, তবে তো বিপদ আরও বেশি। চীনেরও হয়েছে একই দশা। প্রবীণদের সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু জন্মের হার কমছে। ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে চীনে জনসংখ্যা বেড়েছে ৭ কোটি ২০ লাখ, যা আগের দশকের তুলনায় কম। আবার শুধু ২০২০ সালে চীনে নতুন শিশু জন্ম নিয়েছিল এক কোটি ২০ লাখ, যেখানে তার আগের বছর তথা ২০১৯ সালে জন্ম নিয়েছিল এক কোটি ৪৬ লাখ নতুন শিশু। অন্যভাবে বললে, ২০২০ সালে চীনে প্রতিজন সন্তান জন্মদানক্ষম নারী গড়ে মাত্র ১.৩টি সন্তান জন্ম দিয়েছেন। সমস্যা এখানেই।
একটি দেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ঠিক রাখতে হলে, সে দেশের প্রতিজন সন্তান জন্মদানক্ষম নারীকে গড়ে ২.১টি করে সন্তান জন্ম দিতে হবে। বলাই বাহুল্য, চীন বর্তমানে এই লক্ষ্যমাত্রার অনেক নিচে অবস্থান করছে। আরও বিপদের বিষয় হচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে জন্মের হার কমার এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে বলেই বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা। অনেকেই আশা করেছিলেন, ২০১৩ সালের আংশিক ‘দুই সন্তান নীতি’ (যদি দম্পতির যেকোনো একজন বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান হয়, তবে সেই দম্পতি দুটি সন্তান নিতে পারবে) এবং ২০১৬ সালের পূর্ণাঙ্গ ‘দুই সন্তান নীতি’ (সকল দম্পতি দুটি করে সন্তান নিতে পারবে) চীনের জন্মহার বাড়াবে। কিন্তু সেই আশা পূরণ হয়নি। জন্মহারের নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত আছে।
চীনে প্রবীণদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে এবং জন্মের হার ক্রমশ কমছে। ২০২০ সালের আদমশুমারি অনুসারে, চীনে ৬০ বছর বা তারচেয়ে বেশি বয়সী নাগরিকের সংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার (১৪১ কোটি) ১৮.৭ শতাংশ (২৬ কোটি ৪০ লাখ)।
এমনি এক প্রেক্ষাপটে চীনের সরকার ‘তিন সন্তান নীতি’ গ্রহণ করল। এটা সত্য যে, ছেং ইয়ুওয়েন হয়তো তৃতীয় সন্তান নেবেন এবং তার মতো যারা আছেন, যাদের সংখ্যা বেশি নয়, তাদের কেউ কেউ একই পথে হাঁটবেন। কিন্তু এতে বিদ্যমান সমস্যার খানিকটাও দূর হবে না। চীনা নীতি-নির্ধারকরা বিষয়টা বোঝেন না, তা নয়। বোঝেন বলেই তারা আনুষঙ্গিক আরও সহায়ক ব্যবস্থাদি গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। ‘তিন সন্তান নীতি’-কে সফল করতে আরও যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে আছে—শিক্ষার ব্যয় কমানো; বিভিন্ন কর কমানো (ইতোমধ্যেই যা অনেক কমানো হয়েছে) ও বাসস্থান সহজলভ্য করা; কর্মরত নারীদের আইনি স্বার্থ রক্ষার ওপর জোর দেওয়া; বিয়ের ক্ষেত্রে বাহুল্য ব্যয় রোধ করা; তরুণ-তরুণীদের বিয়ে ও পারিবারিক মূল্যবোধ শেখাতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এবং অবসরের বয়স বাড়ানো।
চীনে ২০১৭ সালের এক জরিপে দেখা গিয়েছিল, চীনা নারীরা (সন্তান জন্মদানক্ষম) গড়ে ১.৯টি করে সন্তান নিতে চান। কিন্তু সে বছর বাস্তবে তারা গড়ে ১.৭টি করে সন্তান নিয়েছিলেন। এই যে ইচ্ছা ও বাস্তবতার মধ্যে পার্থক্য, এর কারণ আর্থ-সামাজিক সমস্যা। তাই এসব সমস্যা সমাধানের দিকে নজর দিচ্ছে চীনের সরকার। দম্পতিদের একাধিক সন্তান নিতে উৎসাহিত করাই মূল লক্ষ্য। পাশাপাশি, ক্রমবর্ধমান প্রবীণ সংকট দূর করতেও নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ব্যবস্থা। এসব ব্যবস্থার মধ্যে আছে অবসরের বয়স বৃদ্ধি। এখন চীনে নারীরা সর্বোচ্চ ৫৫ বছর পর্যন্ত কাজ করতে পারেন, পুরুষরা পারেন সর্বোচ্চ ৬০ বছর। অথচ চীনাদের অনেকেই ৬০-এর পরেও যথেষ্ট কর্মক্ষম থাকেন। তারা যদি ৬০-এর পরেও কাজ করে যান, তবে জাতীয় পেনশন-ব্যবস্থার ওপর চাপ কমে; চাপ কমে ক্রমহ্রাস সম্পন্ন কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর ওপর। এ বিবেচনায় সরকার অবসরের বয়স, নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য, ধাপে ধাপে বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যতদূর জানি, চলতি চতুর্দশ পাঁচশালা পরিকল্পনা বাস্তবায়নকালেই অবসরের বয়স ধাপে ধাপে বাড়িয়ে ৬৫ করা হবে।
এ কথা সত্য যে, ‘দুই সন্তান নীতি’-র মূল উদ্দেশ্য সফল হয়নি। এরই মধ্যে ‘তিন সন্তান নীতি’ এসেছে সহায়ক বিভিন্ন ব্যবস্থার সঙ্গে হাতে হাত রেখে। চীনের প্রদেশ হেইলুংচিয়াংয়ের স্থানীয় সরকার সেখানে ‘তিন সন্তান নীতি’ পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করেছিল। ফলাফল আশানুরূপ ছিল না। তবে, সেই পরীক্ষা থেকে অনেককিছু শেখাও হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে সে অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো হবে বা হচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য। আমার বিশ্বাস, ‘তিন সন্তান নীতি’র সফলতা-ব্যর্থতার ওপর নির্ভর করবে চীনা নীতি-নির্ধারকদের পরবর্তী পদক্ষেপ।
জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায়ও জনসংখ্যার কাঠামোগত সমস্যা প্রকট। দেশ দুটিতে জন্মহার প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। ফলে বাড়ছে প্রবীণদের সংখ্যা, কমছে কর্মক্ষম মানুষ। এই সমস্যা মোকাবিলায় জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে। সেখানে নাগরিকদের বেশি সন্তান নিতে উৎসাহ দেওয়া হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে পুরস্কৃতও করা হয়। সেই দিন হয়তো বেশি দূরে নয়, যখন চীনে সন্তান গ্রহণের ক্ষেত্রে সবধরনের বাধা নিষেধ উঠে যাবে। তখন তিনটি সন্তানের সীমাবদ্ধতা থাকবে না, বরং প্রতিটি অতিরিক্ত সন্তানের জন্য সরকার সংশ্লিষ্ট দম্পতিকে আর্থিকভাবে পুরস্কৃত করবে।
নয়াচীন প্রতিষ্ঠার পর থেকে চীনা কমিউনিস্ট পার্টিকে তথা চীনা সরকারকে অসংখ্য নতুন নতুন সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়েছে। কোনো কোনো সমস্যার কোনো রেডিমেড সমাধান ছিল না বিশ্বের কোথাও। চীনা সরকারকে সেসব সমস্যা সমাধানের নিজস্ব পথ খুঁজে বের করতে হয়েছে। সেসব পথ ধরেই চীনের বহু সমস্যার সমাধানও হয়েছে। মাত্র চার দশকে ৮০ কোটি মানুষকে হতদরিদ্র মুক্ত করা এবং হালে করোনা মহামারি সাফল্যের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে চীনের নিজস্ব পথ ধরেই। জন্মহার হ্রাসের সমস্যাও চীনের জন্য নতুন। আগে এ সমস্যা চীনকে মোকাবিলা করতে হয়নি। দৃশ্যত, চীন সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজছে। আমার বিশ্বাস, দেশটি ভবিষ্যতে সেই পথ খুঁজে পাবে এবং বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে সমস্যার সমাধানও করে ফেলবে। এখন যেমন মহামারি মোকাবিলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ চীনা মডেল অনুসরণ করছে, তখন জন্মহার হ্রাসের সমস্যা মোকাবিলায়ও চীনা মডেল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনুসৃত হবে।
আলিমুল হক ।। বার্তা সম্পাদক, চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি)