সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের দুই হেভিওয়েট মন্ত্রী এবং বিধায়কসহ চার সিনিয়র রাজনৈতিক নেতাকে নারদ স্টিং অপারেশন মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই) গ্রেপ্তার করে বিচারিক হেফাজতে নিয়ে ভারতের রাজনীতিতে এক বিরাট হৈচৈ বাধিয়ে দেয়। এই খবর পাওয়ার সাথে সাথেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় কোনোরকম প্রটোকল ছাড়াই চলে যান সিবিআইয়ের পশ্চিমবঙ্গের হেড অফিস নিজাম প্যালেসের পনেরো তলার সিবিআই কর্মকর্তার দপ্তরে। সাথে সাথেই লাইভ টেলিকাস্ট শুরু হয়ে যায় সর্বভারতীয় প্রায় সকল টিভি চ্যানেলগুলোতে। নিজাম প্যালেসের বাইরে ঝড়ের গতিতে জড়ো হতে থাকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। মুহূর্তের মধ্যে সেখান থেকে উত্তপ্ত আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে গোটা রাজ্যে। এ যেন বলিউডি সিনেমার উত্তেজনাময়  টানটান নাটকীয় দৃশ্য থেকে কোনো অংশে কম নয়। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা মুখ্যমন্ত্রী ধর্নায় কাটিয়ে দেন নিজাম প্যালেসের পনেরো তলার কক্ষে।

নারদ মামলাটি কী এবং কী করে সংগঠিত হয়েছিল, তা জানা জরুরি। ২০১৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে রাজ্যে দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে নারদ স্টিং অপারেশন পরিচালনা করেছিলেন নারদ সংবাদ প্রতিষ্ঠাতা ম্যাথিউ স্যামুয়েল। স্যামুয়েল তেহেলকা ডট কম’র প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা সম্পাদক এবং ২০১৪ সালে নিউজ ম্যাগাজিন তেহেলকা ডট কম’র ওয়েবসাইটে এই নারদ নিউজটি  প্রকাশিত হয়েছিল।

অভিযানের অংশ হিসেবে স্যামুয়েল ইমপেক্স কনসালটেন্সি সলিউশন নামে একটি কল্পিত সংস্থা গঠন করেছিলেন এবং বেশ কয়েকজন টিএমসির মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং নেতাদের কাছে গিয়ে অর্থের বিনিময়ে অনুগ্রহ চেয়েছিলেন। স্যামুয়েল এবং তার সহকর্মী অ্যাঞ্জেল আব্রাহামের গোপনে তোলা প্রায় ৫২ ঘণ্টার ফুটেজে টিএমসির তৎকালীন সাংসদ মুকুল রায়, সৌগতা রায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, প্রসূন ব্যানার্জি, শুভেন্দু অধিকারী, অপরূপা পোদ্দার এবং সুলতান আহমেদ (তিনি ২০১৩ সালে মারা গেছেন) এবং প্রতিমন্ত্রী মদন মিত্র, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম এবং ইকবাল আহমেদকে ইমেক্স পরামর্শের জন্য অনানুষ্ঠানিক আনুকূল্য বাড়ানোর পরিবর্তে নগদ অর্থের কথিত ঘুষ গ্রহণ করতে দেখা গেছে, যা স্যামুয়েল নিজেই প্রকাশ করেছিলেন।

আইপিএস অফিসার এইচএমএস মির্জা (এখন সাসপেন্ড) কেও স্যামুয়েলয়ের কাছ থেকে নগদ টাকা নিতে দেখা গেছে। টিএমসি নেতা শঙ্কু দেব পাণ্ডাকে প্রতিশ্রুত অনুগ্রহের বিনিময়ে স্যামুয়েলের ওই কল্পিত কোম্পানির শেয়ার চাইতেও দেখা গেছে।

যদিও মুকুল রায়কে (যিনি এখন বিজেপির জাতীয় সহ-সভাপতি) ভিডিওতে নগদ টাকা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি তবে স্যামুয়েলকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নগদ টাকা নিয়ে তার দলীয় কার্যালয়ে যেতে বলেছিলেন। আরও দেখা গেছে, শুভেন্দু অধিকারীকে যিনি এখন বিজেপি নেতা এবং রাজ্য বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা এবং শোভন চট্টোপাধ্যায় ২০১২ সালে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন, তবে বিধানসভা নির্বাচনের টিকিট প্রত্যাখ্যান করার পরে এই বছর তিনি দলটি ছেড়ে দেন। পাণ্ডা এখনও বিজেপির সাথে রয়েছেন।

পঞ্চাশ মিনিটের এই ভিডিওটি তেহেলকা ডট কম’এ প্রকাশের সাথে সাথেই ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল এবং পুরো ভারতবর্ষে সত্যি সত্যি তেহেলকা নিয়ে হৈচৈ পড়ে গিয়েছিল। সাথে সাথে রাজ্য সরকার নিজস্ব তদন্ত শুরু করেছিল এবং বিভিন্ন ধারায় স্যামুয়েলের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিল। ২০১৭ সালের ১৭ মার্চ কলকাতা হাইকোর্ট এই মামলার প্রাথমিক তদন্ত ভার সিবিআই-এর উপর ন্যস্ত করে এবং প্রয়োজনে যারা এই মামলায় জড়িত তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর নথিভুক্ত করার জন্যও আদালত সিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছিল। এরপর থেকে এই অতি আলোচিত নারদ মামলাটি সিবিআই তদন্ত করে আসছিল কিন্তু গত প্রায় চার বছর এই মামলা নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য শোনা যায়নি। এরমধ্যে গত ২ মে ২০২১ রাজ্যসভা নির্বাচনে বিপুলভাবে জনসমর্থন নিয়ে তৃতীয়বারের মতো তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পরেও রাজ্যকক্ষের স্পিকারের অনুমতি ছাড়াই সিবিআইয়ের অনুরোধে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখর সাংবিধানিক শক্তি প্রয়োগ করে রাজ্যের চার হেভিওয়েট নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্র এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়দের বিচারের অনুমোদন দিয়েছিল যা স্বাধীন ভারতবর্ষে নজিরবিহীন ও অগণতান্ত্রিক এবং বিজেপি ভোটে হেরে গিয়ে প্রতিশোধের রাজনীতি বলেই তৃণমূল মনে করছে।

পঞ্চাশ মিনিটের এই ভিডিওটি তেহেলকা ডট কম’এ প্রকাশের সাথে সাথেই ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল এবং পুরো ভারতবর্ষে সত্যি সত্যি তেহেলকা নিয়ে হৈচৈ পড়ে গিয়েছিল।

কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো মূলত জাতীয় সুরক্ষা সম্পর্কিত বিষয়গুলোর সাথে সম্পর্কিত এবং তুচ্ছ মামলায় হস্তক্ষেপ করে না। জাতির অভিজাত শক্তি হিসেবে দক্ষতার সাথে কাজ করার জন্য কাঠামোগত অভিজ্ঞতা এদের রয়েছে। যদিও রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল বিষয়গুলো বিরোধের ব্যাপারে এই সংস্থার অনেক বদনামও রয়েছে।

আসলে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মতো সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) হলো ভারতের প্রধান তদন্তকারী সংস্থা যা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে স্বাধীনভাবে কাজ করে। তবে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের অধীনে অপরাধের তদন্তের জন্য, এর সুপারিনটেনডেন্ট কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনের কাছে ন্যস্ত। এটি ভারতের নোডাল পুলিশ সংস্থাও যা ইন্টারপোল সদস্য দেশগুলোর পক্ষে তদন্তের সমন্বয় করে। এই সংস্থাটির বিশ্বাসযোগ্যতার হার প্রায় ৬৫ থেকে ৭০% এর বেশি এবং এটি বিশ্বের সেরা তদন্ত সংস্থাগুলোর সাথে তুলনীয়।

এই সংস্থাটি ঐতিহাসিকভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে, যুদ্ধ সম্পর্কিত তদন্তে ঘুষ এবং দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করার জন্য ১৯৪১ সালে ব্রিটিশ ভারতের যুদ্ধ বিভাগে একটি বিশেষ পুলিশ সংস্থা (এসপিই) হিসেবে গঠিত হয়েছিল। পরবর্তীতে, দিল্লির বিশেষ পুলিশ সংস্থা (ডিএসপিই) অধ্যাদেশ (১৯৪৬) কার্যকর করে ভারত সরকারের বিভিন্ন শাখায় দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের জন্য ভারত সরকারের একটি সংস্থা হিসেবে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবর্তিত হয়েছিল।

১৯৬৩ সালে ভারত রক্ষা, সরকারি উচ্চস্থানের দুর্নীতি, গুরুতর জালিয়াতি, প্রতারণা ও আত্মসাৎ এবং সামাজিক অপরাধ, বিশেষত হোর্ডিং, কালোবাজারি ও অর্থপাচার সম্পর্কিত গুরুতর অপরাধ তদন্তের লক্ষ্যে ভারত সরকার কর্তৃক সিবিআই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সময়ের সাথে সাথে সিবিআই হত্যাকাণ্ড, অপহরণ, ছিনতাই, উগ্রবাদীদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধ ইত্যাদির মতো প্রচলিত অপরাধেরও তদন্ত শুরু করে। সিবিআইয়ের ম্যানুয়ালটিতে বলা হয়েছে, ‘কেন্দ্রীয় সরকার কোনো রাজ্যে এই জাতীয় অপরাধ তদন্তের জন্য সিবিআইকে অনুমতি দিতে পারে তবে কেবলমাত্র সম্পর্কিত রাজ্য সরকারের সম্মতিতে। সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্ট দেশটির যেকোনো জায়গায় এই জাতীয় অপরাধ তদন্তের জন্য সিবিআইকে আদেশ দিতে পারে রাষ্ট্রের সম্মতি ছাড়াই।’

সম্প্রতি সিবিআইয়ের আইনি অবস্থা সম্পর্কে কলকাতা হাইকোর্ট প্রশ্ন তুলেছে যে, এটি জটিল এবং এর দিকে জরুরি মনোযোগের প্রয়োজন রয়েছে। ভারতীয় এই তদন্তকারী সংস্থার জন্য একটি উৎসর্গীকৃত এবং পৃথক আইন দরকার যা এটিকে দ্ব্যর্থহীনভাবে বিধিবদ্ধ করতে সহায়ক হতে পারে। কলকাতা হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর সাংবিধানিক এবং সংবিধিবদ্ধ বৈধতা বিবেচনা করার জন্য গত বছরের ২৯ মার্চ পাস হওয়া আদেশে আদালত বৃহত্তর বেঞ্চের বিবেচনার জন্য সিবিআইয়ের আইনি অবস্থান সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন গঠন করেছে।

সিবিআই এবং এর কার্যক্রম সম্পর্কে উদ্বেগ উত্থাপিত হওয়া ঘটনাগুলোর দীর্ঘ তালিকার সর্বশেষ ঘটনাগুলো বিবেচনায় আনা হয়েছে। ওই একই সময় কলকাতা হাইকোর্ট কিছু কিছু কেসের উদাহরণ টেনে বলে যে, সিবিআই নিজেকে একাধিক বিতর্কিত অবস্থায় জড়িয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এটি প্রায়শই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার হাতিয়ার হিসেবে দেখা হয় এবং বিরোধী দলগুলো দ্বারা শাসিত রাজ্য সরকারগুলো দ্বারা নিয়মিত সমালোচিত হয়।

২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট চাঞ্চল্যকর ভাবে এটিকে ‘caged parrot’  আখ্যা দিয়ে সিবিআইকে সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্রমবর্ধমান রাজনীতিকরণের উদাহরণ হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছিল। ২০১৩ সালের রায়ে বলা হয়েছিল যে, এই পদ্ধতিতে কেন্দ্র কর্তৃক সিবিআই প্রতিষ্ঠা অসাংবিধানিক ছিল এবং সিবিআইকে একটি বিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না কারণ এটি দিল্লির বিশেষ পুলিশ সংস্থা আইন দ্বারা বা এর অধীনে গঠিত হয়নি। এই রায়টি অবশ্য সুপ্রিম কোর্ট স্থগিত করেছিল এবং শেষ পর্যন্ত তার সিদ্ধান্ত এখনও অবধি হয়নি।

সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক চাঞ্চল্যকর ‘caged parrot’ হিসেবে পরিচিত হওয়ার পরে, অভিজাত বা ভিআইপি ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যেকোনো মামলা করার সময় সাধারণ জনগণ হতাশ হয়। জনগণের এই আস্থা ফিরে পেতে এবং সিবিআইয়ের অখণ্ডতা ফিরিয়ে আনার জন্য, এটির আর্থিক স্বায়ত্তশাসন থাকা দরকার তাছাড়া এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো যেমন ভারতের নিয়ন্ত্রক ও নিরীক্ষক জেনারেল এবং নির্বাচন কমিশনকে প্রদত্ত বিধিবিধানের মাধ্যমে চলে তাই এটিকেও অবশ্যই একটি কার্যকরী বিধিবদ্ধ ব্যবস্থার মাধ্যমে মর্যাদা অর্জন করতে হবে।

বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মতো সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) হলো ভারতের প্রধান তদন্তকারী সংস্থা যা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে স্বাধীনভাবে কাজ করে।

বিজেপি শাসনের বাইরের অনেক রাজ্য যেমন পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, রাজস্থান, ছত্তিশগড় এবং এখন কেরালার রাজ্য সরকারগুলো কেন্দ্রীয় তদন্তের জন্য কেন্দ্রীয় এজেন্সির দেওয়া সাধারণ সম্মতি প্রত্যাহার করে সিবিআইয়ের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের অঞ্চলগুলোতে এখন, সিবিআইয়ের এখতিয়ারভুক্ত মামলাগুলোতে তদন্তের জন্য ওই রাজ্যগুলোর অনুমতি প্রয়োজন পরে।

দিল্লি বিশেষ পুলিশ সংস্থা আইন ১৯৪৬ এর ৬ ধারার অধীনে, দিল্লি ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলো বাদে সমস্ত রাজ্যেরই রাজ্যে একটি মামলা তদন্তের জন্য সিবিআইয়ের সম্মতি দেওয়ার বিকল্প রয়েছে এবং এই সিদ্ধান্তগুলোর জন্য কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের বৃহত্তর সমস্যা এখানে পরিলক্ষিত হয়। যেমন কোনো রাজ্য সরকার যখন মামলার তদন্তের জন্য সিবিআইয়ের সাধারণ সম্মতি দেয়, তখন প্রত্যেক মামলার তদন্তের দায়িত্ব সিবিআইকে সেই রাজ্যের কাছ থেকে নতুন অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু যখন কোনো রাজ্য সরকার সিবিআইয়ের কাছে তার সাধারণ সম্মতি প্রত্যাহার করে, তখন এজেন্সি প্রতিবার সেখানে কোনো মামলা তদন্ত করতে চাইলে রাজ্য সরকারের সম্মতি প্রয়োজন পড়ে, যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংবেদনশীল কয়েকটি মামলা তদন্ত করে দেখা গেছে যে, এই বিষয়গুলো সিবিআইয়ের কার্যক্রমে ব্যাপক প্রভাব ফেলে এবং এইজন্য কোর্ট বা আইনজ্ঞরা কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলোর মধ্যে এটি সমন্বয়ের জন্য জরুরি সংলাপের প্রয়োজন দরকার বলে মতামত দিয়ে আসছেন। তবে, ম্যানুয়ালটিতে বিধান দেওয়া হয়েছে যে সুপ্রিম কোর্ট বা কোনো হাইকোর্ট সিবিআইকে তদন্ত করার নির্দেশ দিলে তা রাজ্যের সম্মতি ছাড়াই এ জাতীয় রাজ্যে মামলাগুলো তদন্ত করতে পারে যেমন পশ্চিমবঙ্গ সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারকের সংবিধান বেঞ্চ পর্যবেক্ষণ করেছে যে, সুপ্রিম কোর্ট এবং উচ্চ আদালতগুলো তাদের বিচারিক পর্যালোচনার ক্ষমতা প্রয়োগ করে সিবিআইকে এই পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিতে পারে। যেমনটা এই বর্তমানের নারদ স্টিং মামলায় পরিলক্ষিত হচ্ছে।

আলোচিত দুর্নীতির মামলায় নেতাদের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করার বিষয়ে দ্বি-বিচারকের বেঞ্চকে দ্বিধাবিভক্ত করার পর ২১ মে শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্ট চার হেভিওয়েট বেঙ্গল রাজনীতিবিদকে গৃহবন্দী রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রবীণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং সুব্রত মুখোপাধ্যায়, তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) বিধায়ক মদন মিত্র এবং কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে গৃহবন্দী করা হবে বলে আদালত জানিয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দালের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারকের বেঞ্চে প্রধান বিচারপতি (ভারপ্রাপ্ত) রাজেশ বিন্দাল, বিচারপতি আই.পি. মুখার্জি, বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন, বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি অরিজিৎ ব্যানার্জি প্রমুখ আগামী সোমবার এই বিষয়ে শুনানি করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ২০১৬ সালের নারদ ঘুষ স্টিং অভিযানের সাথে জড়িত কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই) তাদের গ্রেপ্তারের পর গত এক সপ্তাহ থেকে এই চারজন বিচারিক হেফাজতে রয়েছেন।

ভারতীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যে ভারতের প্রধান তদন্তকারী সংস্থার যথাযথ সংবিধিবদ্ধ এবং সাংবিধানিক সমর্থন ছাড়াও একটি সু-সংজ্ঞায়িত ম্যান্ডেট রয়েছে। ফেডারেল অপরাধ চিহ্নিত করার জন্য ব্যবহৃত মানদণ্ডগুলো সিবিআইয়ের এখতিয়ারটি খুব বেশি বিস্তৃত বা তাৎপর্যপূর্ণ না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য, যত্ন সহকারে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য। অ-ফেডারেল অপরাধের জন্য, পুলিশের প্রাথমিক এখতিয়ার থাকার সাথে, রাষ্ট্রের সম্মতি প্রয়োজনের বর্তমান ব্যবস্থাটি বজায় রাখতে হবে। এটি কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলোর মধ্যে ফেডারেল ভারসাম্য রক্ষা করার সময় সিবিআই এবং রাজ্য পুলিশের সংশ্লিষ্ট ভূমিকার মধ্যে একটি স্পষ্ট সীমানা প্রতিষ্ঠা করবে। এটি সিবিআইকে যে ধরনের মামলাগুলোর তদন্ত করা উচিত সে সম্পর্কেও নির্দেশনা দেবে, যা আরও নীতিভিত্তিক এবং স্বচ্ছ হস্তক্ষেপের দিকে পরিচালিত করবে।

নুরুল ইসলাম বাবুল ।। শিক্ষক ও গবেষক