শিশুদের বইমেলা নিঃসন্দেহে চমৎকার একটি বিষয়। এমন বিষয়ে আমাকে কিছু একটা লিখতে হবে। প্রস্তাব পেয়ে আমি এক নিমিষে লুফে নেই। কারণ বিষয়টিতে এক ধরনের ভালোলাগা কাজ করে। তাই মূল বিষয়ে যাওয়ার পূর্বে আমার নিজের কিছু কথা শেয়ার না করে পারছি না। তাহলে দেরি না করে শুরু করা যাক- 

প্রিয় পাঠক, আমি শিশুকাল কৈশোরের অনন্য সময়গুলো উপভোগ করেছি আমার নিজের মত করে। জানি না অন্যদের কেমন ছিল। ভালো ছিল নিশ্চয়ই? তবে আমার ছিল স্বপ্ন রঙিন ও আলোয় ঘেরা। সেই আমিই জীবনের ফেলে আসা সুন্দর মুহূর্তগুলো পেরিয়ে এখন পরিণত বয়সে পৌঁছেছি। এতে আক্ষেপ নেই আমার। তবে মনে কিছু আকাঙ্ক্ষা কিছু অতৃপ্তি তো রয়েছেই। আমি মাঝেমধ্যে ভাবি শিশুকালের সেই অমূল্য স্মৃতিময় দিনগুলোর কথা। হারিয়ে যাই রাঙানো অতীতে। বারে বারে দোল খায় মনে অতীতের নানা রকম আনন্দ আয়োজন। মনে হয় সেই সময়টা যদি ফিরে পেতাম! কিন্তু তাকি সম্ভব! তবে সময় হারিয়ে গেলেও অতীতের সেই দিনগুলো সত্যিই নিরেট আনন্দের ছিল এ কথা দ্বিধাহীনভাবে বলা যায়। প্রশ্ন হচ্ছে, তাই বলে অতীতকে ধরে বসে থাকতে হবে? মনে হয় তেমনটা ঠিক হবে না। তাহলে এবার মূল বিষয়ে আসি। 

সম্মানিত পাঠক, আমি আজ দু-কলম লিখতে বসেছি শিশুদের বইমেলা নিয়ে। ভাবছি কি লিখব! তখন মনে হল আসলে শিশুদের জন্যই তো বইমেলা। শিশুরাই আসল পাঠক। তারাই বই পড়ে বেশি। বিশেষ করে বড়দের তুলনায় বেশি এবং যা পড়ে মুগ্ধতা নিয়েই পড়ে। সুতরাং তাদের জন্যই বইমেলা এ কথা নির্মোহ সত্য। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন পরিবারের বড়দের সঙ্গে তাদের হাত ধরে মেলায় যেতাম। এরপর কৈশোরে বন্ধুদের সঙ্গে দলবেঁধে গিয়েছি। তখন মেলায় পৌঁছে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতাম ফিরতাম, আড্ডা দিতাম সবশেষে পছন্দের বই সংগ্রহ করতাম। 

সময়ের পরিক্রমায় এখন সন্তানদের নিয়ে মেলায় আসি। দেখি মেলা কেন্দ্রিক তাদের কৌতূহল, আনন্দ, উচ্ছ্বাস, উদ্দীপনা। অবাক হয়ে আরও দেখি সকল শিশুরা বই কিনে বইয়ের বিষয়, বইয়ের ধরণ দেখে ভেবে চিন্তে। ব্যাপারটা সত্যিই অদ্ভুত! কল্পনা করুন একবার শিশুদের বই ভাবনার বিষয়ে! শিশুরাও কতটা সিরিয়াস বই সিলেক্টের বিষয়ে! ফলে আমরা বুঝতে পারি এবং মেনেও নিই শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। এই শিশুরা দেশকে দেশের সাহিত্য সংস্কৃতিকে হৃদয়ে ধারণ করে যেহেতু আগামীর পথ দেখাবে সেই শিশুরা বইমুখী না হয়ে বই বিমুখ হলে এ দেশ, এ জাতির ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি এগোবে কি করে! 

এ কারণে আমাদের চাওয়া বইমেলা থাকুক শিশুদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। এমনটা ভাবতে চাই সর্বদা। মজার ব্যাপার হলো আমাদের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মিলে যায় মেলা আয়োজনের কিছু বিষয়। আমরা দেখতে পাই বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে গ্রন্থমেলায় স্টল বরাদ্দের ক্ষেত্রে শিশুদের জন্য রাখা হয় আলাদা শিশু কর্নার। সেথায় শুধুমাত্র শিশুদের জন্য নানা বিষয়ে বইয়ের স্টল সাজিয়ে বসেন শিশুতোষ বইয়ের প্রকাশকরা। 

ফলে শিশুকর্ণারে বইপ্রেমী শিশুরা অভিভাবকদের নিয়ে মেলায় এসে ঝামেলাহীনভাবে পছন্দসই বই সংগ্রহ করতে পারে মেলা কালীন সময়। এছাড়াও শিশু প্রহরে শিশুদের জন্য থাকে বিশেষ আয়োজন 'শিশুপ্রহর'। এ সব আয়োজনের ফলে শিশুরা মেলার প্রতি আরও আগ্রহী হয়ে উঠছে দিন দিন। 

সবশেষে বলবো, অমর একুশে গ্রন্থমেলা শিশু ভাবনাকে শানিত করুক, বিকশিত হোক তাদের মেধা ও মনন।

এমএসএ