১৮৬৩ সালে লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ডে মেট্রোরেল চালু হয়েছিল, যেটি বিশ্বের প্রাচীনতম মেট্রো সিস্টেম। মেট্রো ব্যবস্থাটি প্রথম বিদ্যুতায়িতকরণ করা হয় ১৮৯০ সালে। টোকিও মেট্রো হলো, সবচেয়ে ব্যস্ততম গণপরিবহন, যেখানে দৈনিক গড়ে ৬.৮৪ মিলিয়ন যাত্রী চলাচল করেন।

দক্ষিণ এশিয়ায়, ভারতের প্রথম মেট্রো কলকাতায় ১৯৮৪ সালে শুরু হয়েছিল এবং পাকিস্তানের প্রথম মেট্রো, লাহোর মেট্রো কাজ শুরু করেছিল ২০২০ সালে।

আমাদের ধীরগতির শহর ঢাকায় আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল আধুনিক গণপরিবহন মেট্রোরেল। ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশ উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।

এরপর ২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয় আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ। উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর প্রতিদিন দুই লাখ ৭০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করত।

সাম্প্রতিক মিরপুর-১০ এবং কাজীপাড়া স্টেশনে হামলায় বন্ধ হয়ে যায় মেট্রো সেবা। মেট্রোরেল বন্ধ থাকায় নগরবাসীর জীবনে নেমে এসেছে সেই পুরোনো দুর্ভোগ। এই রেল বন্ধ থাকায় আড়াই লাখের বেশি মানুষকে ফিরে যেতে হয়েছে এক বছর আগের ভোগান্তির জীবনে।

আমাদের ধীরগতির শহর ঢাকায় আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল আধুনিক গণপরিবহন মেট্রোরেল। ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

টানা দেড় সপ্তাহ থমথমে সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করেছে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। শিথিল হয়ে এসেছে চলমান কারফিউর বিধি-নিষেধও। এ অবস্থায় জীবন-জীবিকার তাগিদে সড়কে নেমেই মেট্রোরেলের শূন্যতা টের পেতে শুরু করেছে রাজধানীবাসী।

বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতে সঙ্গী হয়েছে যানজটের ভোগান্তি। যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে আগের মতো দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় হাতে নিয়ে বের হতে হচ্ছে। সাশ্রয়ী খরচে অফিস-আদালতে পৌঁছাতে একমাত্র ভরসা হয়ে ওঠে গণপরিবহন। শুধু সড়কে গাড়ির লম্বা সারিই নয়, প্রতিটা বাসের ভেতরও চোখে পড়ে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়।

উত্তরায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন সৌমিক দেবনাথ। সৌমিক বলেন, শাহবাগ থেকে থেকে উত্তরা পর্যন্ত যেতে এই লক্কড়-ঝক্কড় বাসের ভোগান্তি ভুলেই গিয়েছিলাম। বাসে উঠে এক ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কারওয়ান বাজার পার হতে পারিনি। তখনকার ভোগান্তি বলে বোঝানো যাবে না। এতদিন পর এভাবে যাতায়াত করতে গিয়ে আর যেন কষ্টের শেষ নেই। তার ওপর পড়েছে গরম।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সেই মেট্রোরেল দিত যাতায়াতে স্বস্তি। এদিকে নিয়মিত মেট্রোরেল ব্যবহার করে উত্তরা থেকে অফিস করতেন  রাইসা। তিনি বলেন, এই মেট্রোরেলের জন্যই খরচ বাঁচাত বিধায় উত্তরাতেই থাকছি। অফিস লালবাগে। একদিকে খরচ বাঁচে, অন্যদিকে সময় বাঁচে, সবকিছু চিন্তা করে বাসা পরিবর্তন করিনি। মেট্রোরেল বন্ধ থাকায় যাতায়াতে অনেক বেশি খরচ হচ্ছে। অফিসে পৌঁছাতেও দেরি হচ্ছে। এখন সময় বাঁচাতে সিএনজি ভাড়া করলেও চালক ভাড়া নিলেন ৬০০ টাকা। মেট্রোরেল কবে আবার চালু হবে, তাও বোঝা যাচ্ছে না। এভাবে যদি বন্ধই থাকে মেট্রোরেল, খুব কষ্ট হয়ে যাবে টেকা।

অর্থনৈতিক দিক থেকে, MRT6 দৈনিক ভ্রমণের সময় ব্যয়ে ৮.৩৮ কোটি টাকা এবং যানবাহন পরিচালনার খরচে ১.১৮ কোটি টাকা সাশ্রয় করবে বলে অনুমান করা হয়েছে, যার ফলে বার্ষিক ৩৪৮৯.৪০ কোটি সাশ্রয় হবে। 

বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতে সঙ্গী হয়েছে যানজটের ভোগান্তি। যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে আগের মতো দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় হাতে নিয়ে বের হতে হচ্ছে।

মেট্রোরেল ব্যবস্থার প্রবর্তন পরিবর্তন এনেছে বহুরূপী, বিশেষ করে উত্তরা এবং মিরপুরের মতো এলাকা উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের দিকে পরিচালিত হয়েছে। এই উন্নয়ন অসংখ্য কাজের সুযোগ তৈরি করেছে, স্থানীয় ব্যবসায় নতুন প্রাণ দিয়েছে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রসারিত করেছে এবং আবাসন বাজারকে উদ্দীপিত করেছে। উন্নত কানেক্টিভিটি ভ্রমণের সময় কমিয়ে নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছে, ইতিবাচক অর্থনৈতিক ফলাফল এনেছে।

মেট্রোরেল চালুর ব্যাপারে মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয় দুটি ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশন পুনরায় চালু করতে এক বছরেরও বেশি সময় লাগতে পারে। বিলম্বের জন্য নতুন যন্ত্রপাতি আমদানি প্রয়োজন, কারণ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত সামগ্রী মেরামতের জন্য বিদেশে কাস্টম-অর্ডার করা আবশ্যক।

ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে মিরপুর-১০-এ টেলিকমিউনিকেশন, এয়ার কন্ডিশনার, ফায়ার ডিটেকশন এবং সাপ্রেশন সিস্টেমসহ প্রায় সব সিস্টেমই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাজীপাড়ায় বিভিন্ন সিস্টেমেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

ধ্বংসের মধ্যে রয়েছে প্রবেশ ও প্রস্থান গেট, সাইনবোর্ড, স্টেইনলেস স্টিলের বেড়া এবং বিশেষ কাঁচের দরজা এবং জানালা। তবে মেট্রোরেলের কোম্পানি সেক্রেটারি মো. আব্দুর রউফ জানান, জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে এক মাসের মধ্যে মিরপুরের দুটি স্টেশন আবার চালু করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন।

মেট্রোরেল এদেশের জনগণের সম্পদ। এসব সম্পদ রক্ষায় জনগণের সহযোগিতা অপরিহার্য। এই ধরনের ধ্বংসাত্মক ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সরকার এবং জনগণকে একত্রে কাজ করতে হবে।

সুদীপ্ত সাহা ।। প্রভাষক, এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট, বুয়েট