অনন্য নেত্রী শেখ হাসিনা
গত ১২ বছরের বাংলাদেশের অগ্রগতিকে যদি আপনি একপাশে সরিয়ে রাখেন- আর দেশের দিকে আবার ফিরে তাকান তাহলে দেখবেন জঙ্গিবাদে আক্রান্ত, ক্ষুধা-দারিদ্র্যে জর্জরিত, দুর্নীতিতে নিমজ্জিত এক ভঙ্গুর দেশ। যে দেশটি যখন তখন ব্যর্থ রাষ্ট্র ঘোষিত হওয়ার অপেক্ষায়। যে দেশের মানুষ তার নিজ দেশেই সবচেয়ে বেশি অবহেলিত।
ওই সময়কার বাংলাদেশের যে ধারা তা যদি আরও কয়েক বছর চলত, তাহলে দেশটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেত। কেননা তখন জঙ্গিবাদ যেভাবে দেশের আনাচেকানাচে দখল নিয়েছিল, তাতে দেশের সমস্ত সিস্টেম ধসে পড়ার আশঙ্কা ছিল। আর মানুষের জীবনমান, অর্থনৈতিক উন্নয়নে চরম ব্যর্থতার ফলে দেশ মুখ থুবড়ে পড়ে গিয়েছিল আগেই।
বিজ্ঞাপন
যদি ২০০৯ সালে নতুন একটি ভিশনারি সরকার দেশের হাল না ধরত, তাহলে ওপরে বর্ণিত দুর্দশা এখন বাস্তবে দেখতাম আমরা।
২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসা সেই ভিশনারি সরকারের গোড়াপত্তন হয়েছে ২০০৭ সালের ৭ মে। সেদিন শত প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গণতন্ত্র ও দেশকে বাঁচাতে সামরিক চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে দেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। দেশের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের এমন নজির এর আগেও স্থাপন করেছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
শেখ হাসিনা যেন দেশে ফিরতে না পারেন সে উদ্দেশ্যে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এক অবৈধ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। কারণ, তারা জানত শেখ হাসিনা দেশে থাকলে কোনো অবৈধ, অগণতান্ত্রিক সরকার এখানে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে পারবে না। শেখ হাসিনার দেশে আসা ঠেকাতে যে অবৈধ অগণতান্ত্রিক পন্থার আশ্রয় নিয়েছিল তৎকালীন সরকার— তাতে স্পষ্টতই বোঝা যায় শেখ হাসিনা ও গণতন্ত্র সমার্থক শব্দ।
শেখ হাসিনার লেখা প্রবন্ধগ্রন্থ ‘সবুজ মাঠ পেরিয়ে’ পড়লে সে সময়ের চিত্র জানা যায়।
এতে তিনি লিখেছেন, ‘ওয়াশিংটন থেকে লন্ডন চলে এলাম। ওয়ারেন্ট জারি করা হলো। এর পূর্বে সরকার থেকে একটা প্রেস ব্রিফিং দেয়া হলো যে আমাকে দেশে আসতে দেয়া হবে না। সাথে সাথে সকল এয়ারলাইন্সকে জানিয়ে দেয়া হল যে আমাকে যদি কোন প্লেন সিট দেয় অর্থাৎ আমি যদি কোন প্লেনে আসি, সেই প্লেনকে নামতে দেয়া হবে না।
লন্ডন এয়ারপোর্টে আমাকে প্লেনে উঠতে দেওয়া হল না। আমি ঢাকা আসতে পারলাম না। লন্ডনে বসেই প্রতিবাদ করলাম। দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রতিবাদের ঝড় উঠল। ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি গ্রুপ, কমনওয়লথ সেক্রেটারিসহ অনেকের সাথে মিটিং হল।
বাংলাদেশ সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ সকলেই করল। ফলে সরকার বাধ্য হল আমার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে। আমি দেশে ফিরলাম। সরকারি ও আমার দলের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ এয়ারপোর্টে এল। এয়ারপোর্ট থেকে বঙ্গবন্ধু ভবন ও সুধা সদন পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য।
৭ মে আমি দেশে আসলাম। মনে আছে এই দিনে আহসান উল্লাহ মাস্টারকে বিএনপি সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছিল। আমার দলের সংসদ সদস্য ছিলেন।’
[বই: সবুজ মাঠ পেরিয়ে; পৃষ্ঠা: ৫৩]
শেখ হাসিনা আধুনিক বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক মিরাকল। তিনি কী করেননি? কী পারেননি? আন্দোলন করে স্বৈরাচারী সরকার বিদায় করেছেন। ২৩ বছর পর স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি দেশের শাসনভার পায় তার নেতৃত্বে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন, জাতির জনকের হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে।
শেখ হাসিনা চাইলে তখন দেশের বাইরে থাকতে পারতেন। একইভাবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনকের হত্যাকাণ্ডের পর দেশে আসার ঝুঁকি না নিয়ে দেশের বাইরে থাকতে পারতেন। কিন্তু শেখ হাসিনা দুইবারই জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন, ঠিক যেমন একজন নেতার নেওয়া উচিত। বঙ্গবন্ধু যেমন ফাঁসির সেলেও আপস করেননি, তার কন্যাও তেমন জীবনের ঝুঁকিতেও পিছপা হননি।
যা বলছিলাম। শেখ হাসিনা চাইলে দেশের বাইরে বহাল তবিয়তেই থাকতে পারতেন। তিনি চাইলে উন্নত কোনো দেশে নিরাপদে থেকে দেশের জন্য কলাম লিখতে পারতেন। পারতেন সভা সেমিনারে ভাষণ-বক্তৃতা দিয়ে বেড়াতে। তাতে দেশের কিঞ্চিৎ লাভ হয়তো হতো, কিন্তু একজন দেশপ্রেমিক প্রকৃত নেতার অভাব থেকে যেত দেশে। শেখ হাসিনা দেশে ফিরেছেন বলেই আজকে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। শেখ হাসিনা দেশের হাল ধরেছেন বলেই আজ বাংলাদেশ প্রকৃত অর্থে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। না হলে ৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর যে বিদেশি তাবেদারি সরকার এদেশের ঘাড়ে জেঁকে বসেছিল তার ঘানি কতদিন যে টানতে হতো কে জানে।
শেখ হাসিনা আধুনিক বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক মিরাকল। তিনি কী করেননি? কী পারেননি? আন্দোলন করে স্বৈরাচারী সরকার বিদায় করেছেন। ২৩ বছর পর স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি দেশের শাসনভার পায় তার নেতৃত্বে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন, জাতির জনকের হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে। এমন অসাধ্য কাজ সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। ২৩ বছর ক্রমাগত নির্যাতন, নিপীড়নের পরেও একটি দল টিকে ছিল এটাই তো এক বড় বিস্ময়। শেখ হাসিনা হাল না ধরলে তা কতটুকু সম্ভব হতো তা ঐতিহাসিক আর রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছে বরাবরই বড় একটি আলোচনার বিষয়।
শেখ হাসিনাকে মিরাকল কেন বলছি? কারণ, তার এমন কিছু রাজনৈতিক গুণের প্রমাণ আমরা দেখেছি যেগুলো বিস্ময়ের উদ্রেক করে। তিনি দলের এমন এক অবস্থানে ছিলেন, যেখান থেকে চাইলেই শুধু নির্দেশ জারি করেও দল চালাতে পারতেন। এতো পরিশ্রম না করলেও পারতেন। কিন্তু এটা যে সাধারণ মানের নেতাদের ভাবনা। শেখ হাসিনার ভাবনা ভিন্ন, তিনি অসাধারণ, তার ভাবনা ও কাজও তাই। দেশের ৬৪টি জেলা, সাড়ে চার হাজার ইউনিয়নের সাংগঠনিক অবস্থা তার নখদর্পণে। তিনি জানেন কোথায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন, কোথায় তার কোন নেতাকর্মীর ত্যাগ, অবদান কতটুকু, কে বঞ্চিত আর কে আখের গুছিয়েছে। এমন বিচক্ষণ আর পরিশ্রমী না হলে হয়তো তিনি যে অসাধ্য সাধন করেছেন তা হতো না। এমন পরিশ্রমী না হলে হয়ত সাফল্যের চূড়ায় ওঠা যেত না। এজন্যই শেখ হাসিনাকে বাঙালি জাতির জন্য আল্লাহর রহমত বলে থাকি আমি। কেননা, সততা, দেশ প্রেম, এত ত্যাগ, এত পরিশ্রম, এত মেধা সবকিছুর সমান সমন্বয় বঙ্গবন্ধুর পর তার কন্যা শেখ হাসিনার মাঝে রয়েছে। তিনি আমাদের বিস্ময় নেত্রী।
শেখ হাসিনার বহু সিদ্ধান্ত সমকালের বিচারে সমকালীন বোদ্ধাদের বোধের অতীত। তাই সমালোচনাও সইতে হয় তাকে। কিন্তু একটি মহৎ সাহিত্য যেমন কয়েক যুগ না পেরোলে তার প্রকৃত প্রশংসা জোটে না, তেমনই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত যত সময় যায় ততো সঠিক বলে প্রতীয়মান হয়।
যেমন: ১৯৮৬ সালে এরশাদ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। অনেকেই সমালোচনা করেছিলেন সে সিদ্ধান্তের। কিন্তু পরে রাজনৈতিক বিচারে দেখা গেছে সেই সিদ্ধান্ত ছিল যুগান্তকারী। ১৯৯১ সালে শেখ হাসিনার কাছে তৎকালীন অনেক আমলা ও নেতাই এসেছিলেন রাজনীতি করতে। কিন্তু সেইসব নেতার অনেকেই ছিলেন স্বাধীনতাবিরোধী মনমানসিকতার। শেখ হাসিনা তাদের দলে ভেড়াননি। এতে হয়তো ওই নির্বাচনে বিএনপি জিতে যায়, কিন্তু আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক শুদ্ধতার কারণে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সকল প্রগতিশীল শক্তির ভরসা হয়ে সরকার গঠন করেন। দীর্ঘ ২৩ বছরে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, বাংলা সংস্কৃতি ছিল নিভু নিভু অবস্থায়। তার নব উত্থান ঘটান শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় গিয়েই প্রথমে গোটা বাঙালি জাতিকে আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সঠিক দিশায় ফেরানোর কাজ শুরু করেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ তখন নতুন যুগে পা রাখে। একই সাথে ছিল উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে যাত্রার শুভ সূচনা। এভাবে কখনোই স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে আপস না করা, কখনই বিদেশি শক্তির কাছে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে না দেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশকে আরও শক্তিশালী করেছেন শেখ হাসিনা।
২০০১ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের তুমুল জনপ্রিয়তা। তবে সেই নির্বাচনে বিদেশি শক্তির কাছে দেশের তেলগ্যাস বিক্রির মুচলেকা না দেওয়ায় নির্বাচনে কারচুপির শিকার হয়ে পরাজিত হতে হয়েছে তাকে।
তবে ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বাংলাদেশের মানুষ বুঝতে পারে বিদেশি ষড়যন্ত্র যদি এখানে বারবার জয়ী হয় তাহলে এদেশের পতন নিশ্চিত। তাই এর পরে আর কোনো চক্রান্ত ষড়যন্ত্র সফল হয়নি বাংলাদেশে।
২০০৭ সালে রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দেশে ফেরার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ওই বছরের ১৬ জুলাই শেখ হাসিনাকে সাজানো মামলায় গ্রেফতার করে। ২০০৮ সালের ১১ জুন প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে কারান্তরীণ রাখা হয়। এর পরে ইতিহাস। শেখ হাসিনার দুর্বার আন্দোলন ও পরে নির্বাচনে জিতে সরকার গঠন।
লেখাটি যা বলে শুরু করেছিলাম। শেখ হাসিনার মতো যোগ্য নেতৃত্ব যদি দেশের হাল না ধরতেন, তাহলে দেশ আজ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হতো। স্মরণ করুন ২০০১ সালের পর দেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের ভয়াবহ দিনের কথা। অনেক এলাকায় তখন জঙ্গিনেতা লাদেনের ছবি নিয়ে প্রকাশ্যে মিছিল করত উগ্রবাদীরা। বাংলা ভাই, আব্দুর রহমানের মতো পাষণ্ড জঙ্গিরা এদেশকে আফগানিস্তান বানানোর পণ করেছিল। জঙ্গিনেতাদের এসব পরিকল্পনা যেন ঠিক বিএনপি-জামায়াতের আদর্শেরই প্রতিফলন।
কেননা তারা সারাজীবন বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র, আফগানিস্তানের মতো জঙ্গিদের অভয়ারণ্য হিসেবে দেখতে চায়। তাই তৎকালীন সরকার জঙ্গিদের ছিল পৃষ্ঠপোষক। শেখ হাসিনা সরকারে থাকুন বা বিরোধীদলে— তিনি থাকলে উগ্রবাদীদের স্বপ্ন কখনই বাস্তবায়ন হবে না, তা তারা জানত। তাই শেখ হাসিনাকে প্রাণে মারার জন্য হামলা চালায় তারা। জোট সরকারের সহায়তায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা সেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জাতির জনককে হত্যারই ধারাবাহিকতা। সেই একই অপশক্তির একই উদ্দেশ্যে একই অপকর্ম।
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর বাংলাদেশের দিশা আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দিকে ঠিক করেন শেখ হাসিনা। জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার ও রায় কার্যকর, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর এই দুটি কারণে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এমন এক সুসংহত স্থানে নিয়ে গেছেন, যার সুফল আমাদের পরিবর্তী প্রজন্ম ভোগ করবে। কারণ, তখন আর স্বাধীনতাবিরোধী কোনো শক্তির এত আস্ফালন থাকবে না। শেখ হাসিনা তাদের নির্মূল করেছেন।
উন্নয়নের এক মহাকাব্য রচনা হয়েছে শেখ হাসিনার হাত ধরে। দেশের অর্থনীতির আকার এত দ্রুত বাড়ছে যে- এখন দাঁড়িয়ে আজ থেকে বারো বছর আগের বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা দেখলে অবিশ্বাস্য মনে হয়। সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানের সাফল্য চোখ ধাঁধানো নয়।
অবকাঠামো উন্নয়নে বাংলাদেশের তুলনা বাংলাদেশই। পদ্মাসেতুর মতো মেগাপ্রজেক্ট বাস্তবায়ন হচ্ছে নিজ অর্থায়নে। এ সেতু বাংলাদেশের সক্ষমতার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। এ সেতু নিয়ে বিস্তারিত লিখে লেখার কলেবর বাড়াতে চাই না। তবে এখানে একটা কথা আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।
সামাজিক উন্নয়ন খাতের অগ্রগতিতে বাংলাদেশ অন্য দেশের জন্য রোল মডেল বলে স্বীকার করেছে জাতিসংঘসহ অন্যান্য সংস্থা। এ খাতের অগ্রগতির চিত্র মানুষের জীবনযাত্রায় স্পষ্ট।
যখন পদ্মাসেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন করার কথা তখন এক দুর্নীতির অভিযোগ উঠল। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশের অনেক বিশেষজ্ঞ কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই ধরে নিলেন এখানে দুর্নীতি হয়েছে। এমন অবস্থায় আমাদের দলেরও অনেক লোক আশঙ্কা প্রকাশ করলেন—এ সেতু কীভাবে বাস্তবায়ন হবে। বিশ্বব্যাংক সরে গেলে এত টাকা কোথা থেকে পাবো।
কিন্তু এই পদ্মাসেতু করতে গিয়ে শেখ হাসিনার তিনটি বিজয় হয়েছে। এক. পদ্মাসেতু বাস্তবায়নে শেখ হাসিনার নৈতিক বিজয় হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেছিলেন এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি। পরে দেখা গেল কানাডার আদালতের রায়েও বলা হয়েছে এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি। বিশ্বব্যাংকও পরে মেনে নেয় যে—কোনো দুর্নীতি হয়নি। তারা অনুমানের ওপর বলেছিল। যদিও আমরা জানি কার হাত ছিল তাদের ওই অনুমানের পেছনে।
দুই. নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন করে দেশের সক্ষমতার এক সুস্পষ্ট চিত্র সবার কাছে পরিষ্কার হয়েছে। যতোই অস্বীকার, সন্দেহ ও বিরোধিতা করা হোক না কেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার চিত্র কিন্তু পদ্মার ওপরে চোখের সামনে। এত বড় বাস্তবতা তো অস্বীকার করা যায় না।
তিন. পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন করে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক বিজয় নিশ্চিত হয়েছে। এ সেতু যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার প্রমাণ, তেমনই শেখ হাসিনার নেতৃত্বের দৃঢ়তার প্রমাণ। কারণ, এ সেতু দেশের টাকায় হবে এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বড় এক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। তাছাড়া এই সেতু বাস্তবায়ন করে বিদেশি শক্তিকে সুস্পষ্ট বার্তা দেওয়া গেছে যে—আমরা কারো মুখাপেক্ষী নই। আমাদের নিজের ভালো নিজেই করতে পারি। বিশ্ব রাজনীতিতে শেখ হাসিনার অবস্থান দৃঢ় হয়েছে।
শেখ হাসিনার আরেকটি বড় সাফল্য বিশ্ব জলবায়ু সংকটে বাংলাদেশকে নেতৃত্বস্থানীয় দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়া। আগামী দিনের বিশ্বে মূলত জলবায়ু ও পরিবেশ ইস্যুই হবে বড় ইস্যু। আমরা নিজেও মারাত্মক সংকটে। জলবায়ু সংকট ইস্যুতে বাংলাদেশ অতি সোচ্চার হওয়ায় বিশ্বে মর্যাদা বেড়েছে। আগামী দিনের বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকবে।
এই ১২ বছরের উন্নয়নের সামান্যতম চিত্রও তুলে ধরতে হলে বড় পরিসর প্রয়োজন। বিদ্যুতায়ন, সড়ক যোগাযোগ এই দুটি খাতে আমরা ছিলাম সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর মধ্যে। কিন্তু এখন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। সড়ক ও যোগাযোগ খাতের উন্নয়নে দেশের চেহারা পাল্টে যাচ্ছে। ঢাকা শহরে ফ্লাইওভার, ওভারপাস ইত্যাদি অবকাঠামো উন্নয়নে অসহনীয় অবস্থার নিরসন সম্ভব হচ্ছে। মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বাস্তবায়ন ঢাকা শহরকে পতন থেকে রক্ষা করবে। তখন একটি সত্যিকারের মেট্রোপলিটন সিটির মতোই যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। এছাড়া সারা দেশে হাজার হাজার সড়ক, কালভার্ট, ব্রিজ দেশে মহা উন্নয়নযজ্ঞের সাক্ষী দিচ্ছে।
সামাজিক উন্নয়ন খাতের অগ্রগতিতে বাংলাদেশ অন্য দেশের জন্য রোল মডেল বলে স্বীকার করেছে জাতিসংঘসহ অন্যান্য সংস্থা। এ খাতের অগ্রগতির চিত্র মানুষের জীবনযাত্রায় স্পষ্ট।
আরেকটি বিষয় বাংলাদেশকে মানবিক, সহনশীল, শান্তিকামী দেশ হিসেবে সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত করেছে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীকে দেশের আশ্রয় দিয়ে শেখ হাসিনা মানবিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এই রোহিঙ্গারা আমাদের জন্য বোঝা একথা যেমন সত্য— তেমনই তারা ওই দেশে প্রাণ হারাচ্ছিল এটাও বাস্তবতা। আমাদের সামনে অসংখ্য লোক প্রাণ দিচ্ছে— আমরা একটু এগিয়ে গেলে তাদের প্রাণ বেঁচে যাবে— এমন অবস্থায় পিছপা হওয়া কোনো সভ্য সমাজের আচরণ হতে পারে না। বাংলাদেশ সভ্যতার এক চরম নজির স্থাপন করেছে। মানুষের প্রাণ রক্ষায় বাংলাদেশ এগিয়ে আসতে দ্বিধা করেনি।
এই যে বাংলাদেশের এত এত সাফল্য আর সমৃদ্ধির কথা—এসব কোনোটাই বলা হতো না যদি শেখ হাসিনা দেশের নেতৃত্ব না দিতেন। যদি শেখ হাসিনার মেধা দেশের তরে ব্যবহারের সুযোগ না হতো, তাহলে কত বঞ্চিত থাকতাম আমরা। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ হতো বিলীন, আর বাংলাদেশ হতো কোনো জঙ্গি সংগঠনের অভয়ারণ্য। সেই সংকটের চোরাবালি থেকে বাংলাদেশকে উদ্ধার করেছেন যে অনন্য নেত্রী তার দীর্ঘায়ু কামনা করছি। তার প্রতি বাঙালি হিসেবে আমরা কৃতজ্ঞ।
ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
সিলভিয়া পারভিন লেনি ।। সদস্য, আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ