ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা রোববার (১৪ জুলাই) দিবাগত রাতে বিভিন্ন হল থেকে বের হয়ে নিজেদের ‘রাজাকার-রাজাকার’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭১ সালে ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল, মুক্তিকামী মানুষ সমস্ত আবেগ দিয়ে তারা স্লোগান দিয়েছিলেন ‘তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি’, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর সেই পবিত্র বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে আজ ছাত্র-ছাত্রীরা ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ এই স্লোগানে ক্যাম্পাস প্রকম্পিত করেছে।

স্বাধীন বাংলাদেশে এরকম পরিস্থিতি দেখবো সেটি কোনোদিন কল্পনাও করতে পারিনি। ভিডিও ক্লিপ কয়েকবার দেখার পরও এখনও আমি সেটি বিশ্বাস করতে পারছি না। এরকম ঘৃণ্যতম, দেশ বিরোধী ঘটনা দেখবো সেটি কোনোদিন দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি। নিজেদের ‘রাজাকার’ বলে পরিচয় দিতে এসব ছেলে-মেয়েদের একবারও লজ্জা হলো না? কলঙ্কিত হওয়ার ভয়ে একবারও তাদের বুক কাঁপল না?

এ কোন বাংলাদেশ দেখছি আমরা? স্বাধীনতার শত্রু রাজাকাররা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ গণহত্যা করেছে, যে বিশ্ববিদ্যালয়ে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে, ছাত্র-শিক্ষক কর্মচারীদের লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। ছাত্রীহলে ঢুকে ছাত্রীদের ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছে। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের ‘রাজাকার’ বলে স্লোগান দেন!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন ছাত্র এবং প্রাক্তন অধ্যাপক হিসেবে আজ আমি এটি কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছি না, কোনোভাবেই এটি মেনে নিতে পারছি না। নিশ্চিত করে বলতে পারি, এই ঘটনায় আমার মতো লক্ষ কোটি মানুষের আজ হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।

রাষ্ট্রের ওপর এই ভয়ংকর আঘাত কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। কারণ এই বাংলাদেশের জন্য ৩০ লাখ মানুষ নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিল। ২ লাখ মা-বোন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন এই বাংলাদেশের জন্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সারা জীবন সংগ্রাম করে এই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে জাতির পিতা এই দেশের জন্যই জীবন দিয়েছিলেন।

পিএইচ