বাংলাদেশে শ' খানেকের বেশি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিকেল কলেজ আছে, শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বেশি। অর্ধশতাধিক প্রাইভেট ব্যাংক আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শত শত পরিচালক আছে। বেসরকারি শিল্প-বাণিজ্যের প্রতিষ্ঠানে অন্তত এক কোটি শ্রমিক-কর্মী ও অফিসার আছে। কৃষি তো পুরোটাই বেসরকারি খাতে। এর কোথাও কি মুক্তিযোদ্ধা কোটা বা তাদের পুত্র-নাতি-পুতি কোটা আছে? 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সময়োপযোগী, সুন্দর ও অর্থপূর্ণ সংগঠনের নাম। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি কিংবা চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্য যেন না থাকে, সে দাবি সামনে এসেছে । কেউ বা বিষয়টিকে তুলে ধরছেন “কোটাবিরোধী আন্দোলন" হিসেবে। কেউ বা মনে করছেন, একটি মহল ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে যারা জানবাজি রেখে লড়েছেন, যে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চাকরিসহ কিছু ক্ষেত্রে যে কোটা চালু করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধেই এই আন্দোলন। কেউ বা বলছেন, ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে ঢাকা হাইকোর্টেও প্রধান বিচারপতি কসাই টিক্কা খানকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে গভর্নর পদে শপথ গ্রহণ করাতে রাজি হননি। এখন কেউ কেউ তার বদলা নিতে চায় সর্বোচ্চ আদালতকে অবমাননা করে ।

প্রচুর অসঙ্গতি ও বৈষম্য রয়েছে বাংলাদেশের সমাজে, এ নিয়ে সংশয় নেই। আয় বৈষম্য প্রকট। ধনবান ১০ শতাংশ লোকের হাতে প্রায় ৪০ শতাংশ সম্পদের মালিকানা, এটা ৩০ লাখ শহীদের আত্মদানে অর্জিত বাংলাদেশে ভাবা উচিত ছিল না। বাংলাদেশ ওয়ান ট্রিলিয়ন ডলার জিডিপি বা অর্থনীতির দেশ হতে চলেছে। কিন্তু ১ কোটি ৬০ লাখ লোকের হাতে যদি এর ৪০ শতাংশ অর্থাৎ ৪০ হাজার কোটি ডলার পুঞ্জিভূত থাকে, সেটা কাঙ্ক্ষিত হতে পারে না। এ বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্রছাত্রীরা সোচ্চার হতেই পারে। কিন্তু “মুক্তবাজার অর্থনীতির' জোয়ার যে অনেক মূল্যবোধ ও শুভচিন্তাকে সামনে আসতে দেয় না। 

বাংলাদেশে শিক্ষার বিস্তার ঘটেছে, সন্দেহ নেই। সরকারি ও বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হচ্ছে সরকারি তহবিল থেকে। যদিও বেতনের পরিমাণ এমন নয় যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষকতায় সহজেই আকৃষ্ট হবেন, কিন্তু একটি ইতিবাচক ধারা সূচিত হয়েছে এবং এটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার
উদ্যোগ কাম্য।  

বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার সকল ছাত্রছাত্রী ২০১০ সাল থেকে বিনামূল্যে পাঠ্যবই পাচ্ছে । ধনবান থেকে বস্তিবাসী, দিনমজুর, ক্ষেতমজুর, কাজের বুয়া, কারখানার শ্রমিক, রাস্তার ঝাড়ুদার- সব পরিবারের সন্তান একই মানের বই পাচ্ছে সরকারি ব্যয়ে, একটি জনবহুল ও অর্থনীতিতে পিছিয়ে থাকা দেশের জন্য এটা বড় অর্জন। ২০০৯ সালের জানুয়ারির প্রথম দিকে শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে এ যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন৷অতি ধনবান পরিবারের সন্তানদের এ সুবিধা প্রদান করা উচিত কী-না, বইয়ের বিষয়বস্তুর মান বাড়াতে কী কী পদক্ষেপ জরুরি,বইয়ের কাগজ ও ছাপা-বাঁধাই যথাযথ কী-না, এসব বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিষয় হতেই পারে।

বর্তমানে পাঠ্যসূচি, শিক্ষাদান ও পরীক্ষা বিষয়ে অন্তত তিনটি ধারা সক্রিয়, এক, সাধারণ শিক্ষা, মাদ্রাসা ও কিন্ডারগার্টেন। মাদ্রাসার আবার একাধিক ধারা। মাদ্রাসার একটি অংশ এবং কিন্ডারগার্টেনগুলো পাঠ্যবিষয় নির্বাচন ও পাঠদান পদ্ধতি নির্ধারণে “নিজস্ব পদ্ধতি' অনুসরণ করছে। তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয় মানতে চায় না। জাতীয় পতাকা তুলতে চায় না। আমার সোনার বাংলা... গাইতে চায় না। নারীকে সম্মান দিতে প্রবল আপত্তি । 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের' বড় ইস্যু হতে পারে এ বিষয়টি, “অভিন্ন পাঠ্যসূচি ও শিক্ষাদান পদ্ধতি' চালু কর।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল বৈষম্যহীন সমাজ কায়েম। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় পশ্চিম পাকিস্তানকেন্দ্রিক একটি কোটারি গোষ্ঠী। পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালিরা ছিল পাকিস্তানের জনসংখ্যার ৫৬ ভাগ। কিন্তু রাজধানী, সামরিক বাহিনী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সদর দফতর, কেন্দ্রীয় সরকারের সচিবালয়, সব পশ্চিম পাকিস্তানে। প্রশাসনের প্রায় সব পদে পশ্চিম পাকিস্তানিরা। সেনা-নৌ-বিমান বাহিনীতে বাঙালি ১০ শতাংশও ছিল না। জাতীয় বাজেটের সিংহ ভাগ ব্যয় হতো সামরিক খাতে এবং তার সুফল ভোগ করত পশ্চিম পাকিস্তান। শাসকরা এমনকি বাঙালিদের ভাষা ও সংস্কৃতিকেও নিঃশেষ করে দিতে চেয়েছিল। তাদের আরেকটি হাতিয়ার ছিল ধর্মীয় পরিচয়ে বিভেদ ও সাম্প্রদায়িক হানাহানি সৃষ্টি।

অর্থনীতিতেও প্রকট বৈষম্য। ২২টি ধনবান পরিবারের হাতে পুঞ্জিভূত হয়েছিল বিপুল সম্পদ। ব্যবসা-বাণিজ্য খাতে পশ্চিম পাকিস্তানের একটি গোষ্ঠীর একচেটিয়া কর্তৃত্ব। পশ্চিম পাকিস্তানের কোটারি গোষ্ঠী আমাদের দাসে পরিণত করেছিল। এ ভূখণ্ডে একটি গোষ্ঠী ছিল তাদের সহযোগী, উৎসাহী সমর্থক। এসবই ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাঙালির এজেন্ডা, তাদের প্রধান দল হয়ে ওঠা আওয়ামী লীগ এবং এ দলের প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এজেন্ডা। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের দুটি বাদে সব আসনে জয়ী হলেও তাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিবর্তে চাপিয়ে দেওয়া হয় নিষ্ঠুর গণহত্যা ।

বাঙালি রুখে দাঁড়ায় এবং এটাই নিষ্ঠুর বাস্তবতা যে অস্ত্র হাতে যারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং রাজাকার ও আলবদরদের মুখোমুখি হয়েছিল তাদের বেশিরভাগ ছিল “সাধারণ মানুষ" কৃষক, ক্ষেতমজুর, দোকানদার এবং স্কুল-কলেজ ছাত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ যেসব হাতেগোনা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল, সেগুলো থেকেই ছাত্র
আন্দোলনের নেতৃত্ব এসেছে। ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন ছাত্রসমাজ ও দেশবাসীকে স্বাধীনতার চেতনায় সংগঠিত করার জন্য প্রভূত অবদান রেখেছে। কিন্তু যখন শক্রর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরার সময় এলো, এমনকি শত শত কিলোমিটার হেঁটে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য পাশের দেশ ভারতে যাওয়ার ডাক এলো, বনে-জঙ্গলে থাকার প্রয়োজন পড়ল, খাবার জন্য মিলত সামান্য কিছু, সেই কঠিন কাজে দেখা গেল “কম লেখাপড়া জানা এবং কম আয়ের পরিবারগুলোর' সন্তানেরাই এগিয়ে। 

নিজের কথা বলি। আমাদের পরিবারে শিক্ষার আলো পৌঁছেছিল। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। অপর দুই ভাইও পড়ে। কিন্তু পরিবারের উপার্জন নেই। পড়াশোনার খরচ মেটে টিউশনি করে। আমি সামরিক প্রশিক্ষণ নিই ত্রিপুরার পালাটানা নামে একটি বনাঞ্চলে। প্রথম ব্যাচে যে ১৭০০ জন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে, তার মধ্যে মাত্র ২০ জনের মতো ছিল মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আমি একা। পরে মেলাঘর ও সাতক্ষীরা সীমান্তের বাগুনদিয়া ক্যাম্পে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজনকে পাই। কিন্তু অস্ত্রধারী যোদ্ধাদের মধ্যে “দরিদ্র-অশিক্ষিতরাই” বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ।

মুক্তিযোদ্ধা ভাতা তুলতে বরিশালের আগৈলঝাড়ার গ্রামে যাই। সেখানে অনেক মুক্তিযোদ্ধার দেখা মেলে। মাসে তারা ২০ হাজার টাকা ভাতা পান। প্রত্যেকের বয়স সত্তর বছর বা তদূর্ধ্ব। যারা ব্যঙ্গবিদ্রূপ করে বলেন, তালিকাভুক্ত লাখ দুয়েক মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে অন্তত ৫০ হাজারের জনা স্বাধীনতার পর, তারা সঠিক কথা বলেন না। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলোর বেশিরভাগের অর্থনৈতিক জীবনে গত ৫৩ বছরে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা কিংবা সরকারি চাকরিতে নিয়োগের জন্য যে কোটা রয়েছে তার সুবিধা তালিকাভুক্ত কতজন মুক্তিযোদ্ধা পেয়েছেন, সেটা নিয়ে গবেষণা হতেই পারে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্তরা মেধার ওপর জোর দিচ্ছেন এবং তা যথার্থ ৷তারা কিন্তু একটি গবেষণা কাজে উদ্যোগী হতে পারেন, উচ্চশিক্ষা, সরকারি চাকরি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে কতজন মুক্তিযোদ্ধা “কোটা সুবিধা" পেয়েছেন। কত মুক্তিযোদ্ধা অসহায়ের মতো জীবনযাপন করছেন, দেশের জন্য প্রাণ দিতে গিয়ে বীরের বেশে ফিরে আসার পর কত মুক্তিযোদ্ধা জীবনযুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন, সে তালিকাও প্রকাশ হতে পারে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, আবদুর রব সেরনিয়াবাত, খালেদ মোশররফ, এটিএম হায়দার, শেখ ফজলুল হক মণি, কর্নেল তাহের, শেখ কামাল, শেখ জামাল, আইভী রহমানসহ কত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে, কত মুক্তিযোদ্ধাকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে, কে তার তালিকা প্রকাশ করবে? মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক অপেক্ষা করে। মন্ত্রণালয়ের অফিসারদের অনেককেই চিনি, কিন্তু একজনেরও দেখা মেলেনি যিনি “মুক্তিযোদ্ধা কোটায়' চাকরি নিয়ে সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন।

বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বীর নিবাস করে দিচ্ছেন। স্বাধীনতার ৫০ বছরের বেশি অতিক্রান্ত হওয়ার পরও মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই বলেই এ ধরনের আশ্রয়স্থল নির্মাণের প্রশ্ন এসেছে, সেটা কজন উপলব্ধি করেন? মুক্তিযোদ্ধারা মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা পান, কিন্তু বাংলাদেশে এখন এক লক্ষের বেশি লোক রয়েছে যাদের প্রত্যেকের ব্যাংকে নগদ জমা এক কোটি টাকা বা তারও বেশি । শত কোটি টাকা বেশি সম্পদ রয়েছে এমন ব্যক্তির সংখ্যা নিশ্চিতভাবেই হবে তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার চেয়ে বেশি । অতি ধনবান মহল তো মনেই করে, মুক্তিযোদ্ধারা জীবনের মায়া তুচ্ছ করে মাতৃভূমিকে হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করেছেন এবং এ জন্য তাদের মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়েই তাদের সন্তুষ্ট থাকা উচিত। এখন অর্থনৈতিক উন্নয়নের সময়, সম্পদ বাড়ানোর সময়। আমরা কেউ ১০ হাজার কোটি টাকার মালিক হব, কেউ বা ১৫-২০ হাজার কোটি টাকার অধীশ্বর হব। আপনারা ১৯৭১ সালে দায়িত্ব পালন করেছেন, এখন আমাদের দায়িত্ব পালন করতে দিন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করে তাদের হাতে যেসব কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তুলে দিয়েছিলেন সেসব সঠিকভাবে পরিচালনা করা হলে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার ওপর নির্ভর করতে হতো না। কোথায় গেল সেসব প্রতিষ্ঠান? এ নিয়ে কে গবেষণা করবে? দুর্ভাগ্য, মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো সংগঠন নেই। একটি সংসদ কয়েক বছর কোনোক্রমে চলেছিল। এখন তারও অস্তিত্ব নেই। আমার মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও স্মার্ট কার্ডে ভুল থাকায় সংশোধন করার জন্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছিলাম। মাস ছয়েক খবর নেই। তারপর জানা গেলো বরিশাল ডিসি অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছে। দেড় বছর সেখানে পড়েছিল। সেখানে গিয়ে জানতে পারি, উপজেলায় চলে গেছে। ৭০ এর বেশি বয়সের মুক্তিযোদ্ধাদের এ ধরনের হাজারো কষ্ট-যন্ত্রণা-বিড়ম্বনার কথা কে তুলে ধরবে? কেন্দ্র ও জেলা-উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড থাকলে অন্তত কষ্টের কথা বলার একটি স্থান থাকত! কিন্তু হায়, কেমন করে তা হাতছাড়া আজ! এটা নিষ্ঠুর বাস্তব যে আগামী পাঁচ-সাত বছর পর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ গঠন করার জন্য কিংবা আর্থিক ও অন্যান্য সুবিধা প্রদানের জন্য একাত্তরে রণাঙ্গনে থাকা একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্ধানও সম্ভবত মিলবে না!

এটাও বলি, এই যে এত খণখেলাপি, এত অর্থ পাচারকারী, এত এত শত কোটি ও হাজার কোটি টাকার মালিক, তাদের মধ্যে কতজন একাত্তরে রণাঙ্গনের যোদ্ধা ছিলেন?

শিক্ষা ও চাকরির কোটা নয়, মুক্তিযোদ্ধাদের একটিই প্রত্যাশা, সম্মান। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে যারা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করেন, তাতে মুক্তিযোদ্ধাদের কষ্ট-যন্ত্রণা-অপমান হয়, কিন্তু এটাও আমদের মনে আছে- একাত্তরের সময়টি ছিল আরও অনেক যন্ত্রণার। মুক্তিযোদ্ধা শুধু নয়, তার পরিবারের সদস্য হলেও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হতো। আমার নিজের পরিবারের কথা বলতে পারি, একাত্তরে যেসব পরিবার আমার বাবা-মা ও বোনদের আশ্রয় দিয়েছে, তারাও নিষ্ঠুর অত্যাচারের শিকার হয়েছে ।

পরিশেষে বলি, অপমান করলে, অন্যায় আচরণ করলে সম পরিমাণ কিংবা তারও বেশি মাত্রায় অপমানিত হওয়ার শঙ্কা থাকে বৈকি।

অজয় দাশগুপ্ত।। একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা