সর্বজনীন পেনশন প্রত্যয় স্কিম
ক্লাস বাদ দিয়ে শিক্ষকরা কেন কর্মবিরতিতে?
আমাদের সংবিধানে শিক্ষাকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে শিক্ষার কথা বলা আছে। সংবিধান যদিও শিক্ষাকে অধিকারের মর্যাদা দেয়নি। তবে, রাষ্ট্রের অবশ্য কর্তব্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোয় বিশেষ করে ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার সংবিধানে শিক্ষাকে অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আর এই কারণেই হয়তো সার্কভুক্ত বেশিরভাগ দেশগুলোর তুলনায় আমাদের দেশে শিক্ষকদের বেতন অনেক কম।
শিক্ষিত জাতি মানেই উন্নত জাতি, স্মার্ট জাতি। আর উন্নত জাতি গঠনে উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণের উৎকর্ষ সাধন ও প্রসার খুবই জরুরি। বিশেষ করে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্মার্ট জাতি গঠনে যুগোপযোগী ও উন্নত শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। আর, তার জন্য দরকার মেধাবী, অভিজ্ঞ, ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক সমাজ। কিন্তু, আমাদের দেশে শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষককে প্রাথমিক স্তরে কিংবা উচ্চ পর্যায়ে কখনোই তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
বিজ্ঞাপন
শিক্ষকদের যা করার কথা
শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে একদিকে যেমন এর অবকাঠামো ও উপকরণের উন্নয়নে বিশেষ বিনিয়োগ দরকার, অন্যদিকে তেমনি শিক্ষকদের দক্ষতা ও আর্থিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি করাও খুবই জরুরি। আমরা সবাই বলি, ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড’। তাই, শিক্ষার উৎকর্ষ সাধনে বিশেষ করে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে মেধার চর্চা, মেধার বিকাশ, মেধার গবেষণা সর্বাগ্রে। আর এগুলোর জন্য দরকার উন্নত শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ।
আরও পড়ুন
শিক্ষকরা সমাজে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়লে কিংবা অনিশ্চয়তায় থাকলে তাদের দ্বারা উন্নত, চৌকস ও দক্ষ জনগোষ্ঠী উপহার দেওয়া কখনোই সম্ভব নয়। তাই, উন্নত রাষ্ট্রগুলোয় শিক্ষকরা যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা কিংবা অনিশ্চয়তায় না থেকে জ্ঞানচর্চা, জ্ঞানদান ও জ্ঞানের বিকাশ করতে পারে তার দেখভাল করে রাষ্ট্র স্বয়ং। আর, এই কারণেই তারা সর্ব ক্ষেত্রেই আরও এগিয়ে যায়।
একটি শিক্ষিত সমাজে চলমান আর্থিক নিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয় তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কোনো আন্দোলন কাম্য নয়। সুবিধা বৃদ্ধির জন্য আবেদন বা অনুযোগ করা যেতেই পারে! শিক্ষকদের আন্দোলন হবে শিক্ষার উৎকর্ষ সাধনে শ্রেণিকক্ষে, গবেষণাগারে, গবেষণার ফলাফল প্রকাশে কিংবা মাঠ প্রশিক্ষণে। কিন্তু, কয়েকদিন যাবৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের নতুন ভবিষ্যৎ পেনশন ব্যবস্থা ‘প্রত্যয়’ স্কিম প্রত্যাহারের আন্দোলন করছে।
দেশের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের পেনশন কর্মসূচির আওতায় আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। প্রাথমিকভাবে চারটি পেনশন স্কিম—'প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা এবং প্রবাসী'-এর উদ্বোধন করা হয়। প্রগতি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মচারীদের জন্য। সমতা নিম্নআয়ের মানুষের জন্য। প্রবাস শুধু প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য। আর সুরক্ষা রিকশাচালক, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি ইত্যাদি স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য। অন্য দুটি কর্মসূচি পরবর্তীতে চালু করা হবে বলে জানান।
একটি শিক্ষিত সমাজে চলমান আর্থিক নিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয় তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কোনো আন্দোলন কাম্য নয়। সুবিধা বৃদ্ধির জন্য আবেদন বা অনুযোগ করা যেতেই পারে! শিক্ষকদের আন্দোলন হবে শিক্ষার উৎকর্ষ সাধনে শ্রেণিকক্ষে, গবেষণাগারে, গবেষণার ফলাফল প্রকাশে কিংবা মাঠ প্রশিক্ষণে।
এরই ধারাবাহিকতায় স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের জন্য চলতি জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে ‘প্রত্যয়’ নামে একটা স্কিম চালু হয়েছে এবং আগামী ২০২৫ এর জুলাই ১ থেকে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য অন্য একটা স্কিম ‘সেবক’ নামে চালু হওয়ার কথা রয়েছে।
চলতি বছরের ২০ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রত্যয় স্কিমের রূপরেখা প্রকাশ করে। এরপর থেকেই স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একে অন্যায্য ও চলমান আর্থিক স্বার্থ ক্ষুণ্নকারী হিসেবে আখ্যায়িত করে এর বিরোধিতা করে এবং তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছে।
‘প্রত্যয়’-এর ব্যাপারে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েব পোর্টালে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনের ১৪(২) ধারা অনুযায়ী বিগত ১৩ মার্চ ২০২৪ তারিখে জারীকৃত এস.আর.ও নং ৪৭-আইন/২০২৪ এর মাধ্যমে রাষ্ট্রায়ত্ত, স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং এদের অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানসমূহের চাকরিতে যে সকল কর্মকর্তা বা কর্মচারী, (তারা যে নামেই অভিহিত হোক না কেন) ১ জুলাই, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ তারিখ ও তৎপরবর্তী সময়ে নতুন যোগদান করবেন তাদেরকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনার সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এস. আর.ও নং ৪৮-আইন/২০২৪ তারিখ ১৩ মার্চ ২০২৪ খ্রি. এর মাধ্যমে জারীকৃত বিধিমালায় ‘প্রত্যয়’ স্কিমের রূপরেখা ঘোষণা করা হয়।”
পেনশন কেন জরুরি?
এবার পেনশন নিয়ে দু-একটি কথা বলা যাক। ইংরেজি pension কথাটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ penfen থেকে। যার ইংরেজি অর্থ হচ্ছে payment অর্থাৎ বাংলায় ‘প্রদান’ বুঝায়। অনেক জায়গায়, পেনশনকে ‘অবসরোত্তর বেতন’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। কেননা, এটা একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র কর্ম-অবসরোত্তর তার বয়স্ক ব্যক্তিকে আজীবন বা তার মৃত্যুর পর নমিনিকে আজীবন বা নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত অর্থ প্রদান করে থাকে।
আরও পড়ুন
এতে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক কিংবা স্বেচ্ছায় হতে পারে। কোনো পেনশন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করা যখন বাধ্যতামূলক হয় তখন ওই কর্মসূচি থেকে ভবিষ্যতে প্রাপ্ত অর্থ পেনশনকারীর ‘সুবিধা’ না হয়ে ‘অধিকার’ হিসেবেই গণ্য হওয়া উচিত। আর এই কারণেই হয়তো পেনশন আইনে উল্লেখ থাকে—‘rights to pensioners’.
তাই, চাকরিজীবীদের জন্য পেনশন একটি অধিকার। আর, মানবিক ও টেকসই জাতি গঠনে নিঃসন্দেহে আমাদের সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি ভালো ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ। বয়স্কদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে অন্তর্ভুক্তিকরণ একটি মানবিক সরকারেরই প্রতিফলন। সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা সূচক যে আরও উন্নত হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
তবে, এমন উদ্যোগ নেওয়া উচিত নয় যাতে করে বর্তমানে বা ভবিষ্যতে কোনো পেশাজীবী গোষ্ঠীর পেনশন থেকে প্রাপ্ত পাওনা বা স্বার্থ ক্ষুণ্ন কিংবা হ্রাস পায়। শিক্ষকরা মনে করছেন, এই ‘প্রত্যয়’ স্কিমে অন্তর্ভুক্তিকরণের মাধ্যমে তাদের আর্থিক ও মানবিক স্বার্থ দুটোই ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন হবে। যদিও ১ জুলাই তারিখের আগে নিয়োগ প্রাপ্ত চাকুরীজীবীদের ক্ষেত্রে এটি বাধ্যতামূলক করা হয়নি। তা সত্ত্বেও, ১০ বছর চাকরির মেয়াদ আছে এমন ব্যক্তি বর্তমান পেনশন ব্যবস্থা সমর্পণ করে স্বেচ্ছায় এই প্রত্যয় স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
‘প্রত্যয়’-পেনশনে ব্যত্যয়
বর্তমান পেনশন ব্যবস্থার সাথে প্রত্যয় স্কিমের তুলনামূলক আলোচনায় শিক্ষকরা বলছেন যে, আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়গুলো বিবেচনায় নিলে প্রত্যয় স্কিমে নিট আর্থিক প্রাপ্তি বিদ্যমান ব্যবস্থা থেকে অনেক কম। কেননা, বর্তমান ব্যবস্থায় তারা যে মাসিক পেনশন পান তার জন্য তাদের বেতন থেকে কোনো টাকা কর্তন করা হয় না।
বর্তমানে একজন শিক্ষক প্রতি মাসে তার ভবিষ্যৎ তহবিলে মূল বেতনের ১০ শতাংশ হারে জমা রাখেন। এই টাকার ওপর নির্ধারিত হারে সুদ জমা হতে থাকে। চাকরি শেষে অবসর গ্রহণের সময় তিনি এককালীন সুদসমেত এই টাকা ফেরত পান।
সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, বর্তমান অবস্থায় পেনশন থেকে প্রাপ্ত অর্থের অর্ধেক এককালীন নগদায়ণ করা যায়, বাকি অর্ধেক মাসিক পেনশন হিসেবে পাওয়া যায়। এককালীন পাওয়া অর্থ কোনো বড় খরচ যেমন-স্থায়ী সম্পদ কিংবা দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করা যায় যা তার ভবিষ্যতে পরিবারের কাজে আসে। যদিও ২০১৫ সালের আগে কেউ চাইলে প্রাপ্ত অবসরভাতার সমূদয় অর্থ একসঙ্গে তুলে নিতে পারতেন।
এছাড়া, বর্তমান ব্যবস্থায় পেনশনারের মৃত্যু হলে তার নমিনিও আজীবন পেনশন সুবিধা পান। কিন্তু প্রত্যয় স্কিমে পেনশনারের মৃত্যু হলে তার ৭৫ বছর বয়স যেদিন হতো, সেইদিন পর্যন্ত পেনশন পাবেন তার মনোনীত ব্যক্তি, আজীবন নয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান ২০২২ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭৪ বছর ৩ মাস দেখানো হয়েছে। কাজেই, ৭৫ বছর বয়সের পরেও যারা বেঁচে থাকবেন তাদের আর্থিক নিরাপত্তা কোথায়!
আরও পড়ুন
অধিকন্তু, বর্তমানে প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে পেনশনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। নতুন ব্যবস্থায় দেশে মূল্যস্ফীতি যাই হোক না কেন পেনশন বাড়বে না। অর্জিত ছুটির বিপরীতে অবসরকালে এখনকার মতো টাকা পাওয়া যাবে না। কিংবা, অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটির বিষয়ে ‘প্রত্যয়’-এ কোনো দিক নির্দেশনা নেই।
পরিশেষে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ৬৫, কর্মকর্তারা ৬২ ও কর্মচারীরা ৬০ বছর বয়সে অবসরে যান। কিন্তু, প্রত্যয় স্কিমে ৬০ বছর বয়সের পর পেনশন পাওয়ার কথা বলা হয়েছে যা বড় একটা অসঙ্গতি। আরও চিন্তার বিষয় হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকেরা এখন পেনশনের সঙ্গে বছরে দুটি উৎসব ভাতা ও একটি বৈশাখী ভাতা এবং প্রতিমাসে চিকিৎসা ভাতাও পেয়ে থাকেন। এই বিষয়েও প্রত্যয় ব্যবস্থায় কিছু বলা নেই।
বর্তমানে প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে পেনশনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। নতুন ব্যবস্থায় দেশে মূল্যস্ফীতি যাই হোক না কেন পেনশন বাড়বে না। অর্জিত ছুটির বিপরীতে অবসরকালে এখনকার মতো টাকা পাওয়া যাবে না। কিংবা, অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটির বিষয়ে ‘প্রত্যয়’-এ কোনো দিক নির্দেশনা নেই।
এবার মানবিক বিষয়টিতে আসা যাক। শিক্ষিত ও উন্নত জাতি গঠনের পাশাপাশি আমাদের ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৭১ এর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ, কিংবা তৎপরবর্তী প্রতিটি স্বৈরাচার বিরোধী বা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমাজ অগ্রণী ভূমিকাই পালন করেছে। আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, কারাবরণ করেছে, এমনকি জীবন দানও করেছে। এত বড় ভূমিকা থাকার পরেও এদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আর্থিক অবস্থা কখনোই বিশেষ বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা বা অন্য যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতাকে মহান পেশা বলা হলেও কালের বিবর্তনে তা খুবই গৌণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পেশায় না আছে প্রশাসনিক ক্ষমতা, না আছে আর্থিক নিরাপত্তা। যদিও এখন পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে মেধাবীরাই সাধারণত এই পেশায় যোগদান করে থাকেন।
দেশে প্রতিবছর জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে করে শিক্ষকরা যে বেতন পান তা দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে সাধারণ মানের জীবনযাত্রা পালন করাই কঠিন। কেননা, বেতন ছাড়া অন্যান্য প্রান্তিক সুযোগ-সুবিধা (fringe benefits) এই পেশায় নেই বললেই চলে।
তাই, চাকরিরত অবস্থায় বেশিরভাগ শিক্ষকদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে পরিবারে যাদের একজন মাত্র উপার্জনকারী থাকে তাদের পক্ষে বর্তমান উচ্চমূল্যের বাজারে কোনো স্থায়ী সম্পদ ক্রয় করা সম্ভব হয় না। যদিও বর্তমানে ২০ বছর মেয়াদি সরকারি ঋণের আওতায় অনেকে স্থায়ী সম্পদ ক্রয় করছেন। কিন্তু, তার জন্য প্রতিমাসে বেতন থেকে বড় অঙ্কের টাকায় ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হচ্ছে। এই অবস্থায় ভবিষ্যতে পেনশন থেকে প্রাপ্ত অর্থ যদি কমে যায় তা খুবই কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তার জন্য শিক্ষকরা বলছেন, ভবিষ্যতে যারা এই পেশায় আসবেন, তাদের স্বার্থকে মাথায় রেখেই তারাই আন্দোলন করছেন।
আরও পড়ুন
শিক্ষা ও শিক্ষকের উন্নতিকল্পে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা। তা না করে, ‘প্রত্যয়’ পেনশন স্কিমে নতুনদের বাধ্যতামূলক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে এই পেশায় আরও সুযোগ-সুবিধা হ্রাস করা হচ্ছে। এটা মোটেই কাম্য নয়। অনেকেই বলছেন, এই পেনশন স্কিম চালু করার আগে কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল শিক্ষক প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে এর অসঙ্গতি কিংবা বিচ্যুতিগুলো সমাধানের চেষ্টা করা। কেননা, ভুক্তভোগীদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে কোনো কর্মসূচি শুরু করলে তা অধিক টেকসই ও গ্রহণযোগ্য হয়।
কাজেই, সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের উচিত শিক্ষক প্রতিনিধিদের সাথে অতি দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে এর সুরাহা করা। আর, প্রত্যাশা রইল শিক্ষকরা অতি দ্রুত তাদের স্বকর্মে ফেরত আসুক। শিক্ষার্থীরা আসুক ক্লাসে, পরীক্ষা হলে কিংবা গবেষণাগারে। ক্যাম্পাস ফিরে পাক স্মার্ট জনবল তৈরি নতুন উদ্যম। অনাবিল শান্তি ও স্বস্তির পরিবেশ বজায় থাকুক সর্বত্র।
নীলাঞ্জন কুমার সাহা ।। অধ্যাপক, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ ও প্রাক্তন ডিন, ফ্যাকাল্টি অব বিজনেস স্টাডিজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়