১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পদার্পণের পরপরই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। আকাশপথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য আকাশে ‘শান্তির নীড়’ স্লোগান নিয়ে ১৯৭২ সালের ০৪ জানুয়ারি প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডার-১২৬ জারীর মাধ্যমে একটি ডিসি-৩ এয়ারক্রাফট দিয়ে শুরু হয় বিমানের যাত্রা। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় ১৯৭২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে প্রথম অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে বাংলাদেশে বিমান পরিবহনের শুভ সূচনা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার, সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চার বছরের কম সময় পেলেও এই স্বল্প সময়ে বহরে যুক্ত করেন সর্বমোট ১২টি উড়োজাহাজ। এই ১২টি উড়োজাহাজের মাধ্যমে তিনি পাঁচটি অভ্যন্তরীণ, চারটি আঞ্চলিক ও একটি দূরবর্তীসহ মোট ১০টি গন্তব্যে নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেন।

জাতির পিতার যোগ্য উত্তরসূরি, বিচক্ষণ ও দূরদর্শী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উড়োজাহাজ ক্রয়ের জন্য রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি প্রদানের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের ২১টি উড়োজাহাজ বিমান বহরে যুক্ত করেছেন এবং ওয়ার্ল্ড এভিয়েশন সেক্টরে বাংলাদেশের অবস্থানকে শক্তিশালী ও সুসংহত করেছেন। বিমানের প্রতি অপরিসীম ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ তিনি নিজস্ব উড়োজাহাজসমূহের মনোরম ও চিত্তাকর্ষক নামকরণ করেছেন।  

বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ রূপকল্পের সাথে সংগতি রেখে এবং তার সার্বিক দিকনির্দেশনায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কার্যক্রম বাস্তবে প্রতিফলিত হচ্ছে। যার মাধ্যমে বিমানের সকল কার্যক্রমে সর্বাধুনিক প্রযু্ক্তি ও কার্যকরী ব্যবস্থাপনার সমন্বয়, যাত্রী সেবা, ফ্লাইট অপারেশন ও সার্বিক এয়ারলাইন্স পরিচালনার গুণগত মান উন্নয়নের মধ্য দিয়ে ‘স্মার্ট এয়ারলাইন্স’ করার পরিকল্পনা ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের কার্যক্রম চলমান আছে। 

স্মার্ট টিকিটিং সিস্টেম : কম্পিউটারাইজড এয়ারলাইন্স রিজারভেশন সিস্টেম, Sabre PSS বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স একটি প্রযুক্তি ইকোসিস্টেমের মাধ্যমে একজন যাত্রীর টিকেট ক্রয় থেকে শুরু করে যাত্রার সমাপ্তির সকল কার্যক্রম যুগোপযোগী ও যাত্রীবান্ধব হয়েছে। বিমানের ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপস, কল সেন্টার, বিমান সেলস সেন্টার, অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সিসহ (OTA) সকল GDS / ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে যাত্রীগণ বিমানের যেকোনো ফ্লাইটের সময়সূচি ও প্রাপ্যতা যাচাই, পছন্দের আসন বুকিং ও ক্রয় করা এবং ওয়েব চেক-ইন করতে পারেন।

ইন্টিগ্রেটেড পেমেন্ট সিস্টেম : ৩৪টি ব্যাংকিং চ্যানেলের Visa/Master/Amex, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, আই-ব্যাংকিং ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সিস্টেম, ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঘরে বসে Website এবং Call Center এর মাধ্যমে টিকিট ক্রয় করা যায়। এছাড়া ক্রয়কৃত টিকিটের তারিখ পরিবর্তন ও অতিরিক্ত ব্যাগেজ অ্যালাউন্স ক্রয় করা যায়। এছাড়া, IATA Financial System এর মাধ্যমে যাত্রীগণ বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে টিকিট ক্রয় করতে পারেন। বিমান IATA এর স্মার্ট উদ্যোগ ব্যবহার করে প্রযু্ক্তি ইকোসিস্টেম (BSP, ICCAS, CASS, ICH, IBCS, ASD, ARC সিস্টেম) এর মাধ্যমে ক্রয়কৃত টিকেটের পেমেন্ট নিষ্পত্তি করে থাকে। যা VERDI সিস্টেমের মাধ্যমে অটোমেটেড অডিট করা হয়।

ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন স্মার্ট সলিউশনের সফল বাস্তবায়ন : ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন স্মার্ট সলিউশনের সফল বাস্তবায়ন করে বিমান ‘National Carrier’ হিসেবে বাংলাদেশ এভিয়েশন ব্যবসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিমানে ইতোমধ্যে ব্যবসায়িক প্রক্রিয়ায় IATA Billing Settlement System (BSP), IATA Currency Clearance System (ICCS), Cargo Accounting Settlement System (CASS), IATA Clearing House (ICH), IATA BSP Consulter System (IBCS), Air Desk Seminar (ADS) এবং Airline Reporting Corporation (ARC) দক্ষতার সাথে ব্যবহার করে বিশ্বের অন্যান্য স্বনামধন্য এয়ারলাইন্সের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে আছে। যাত্রীদের কাঙ্ক্ষিত সময়ে সঠিক উড়োজাহাজ নির্ধারণ, ডেটানির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণ, দক্ষ অপারেশন এবং গ্রাহকের সম্পৃক্ততা নিশ্চিতকরণে বিমান IATA এর Direct Data Solution(DDS) চালু করেছে। Direct Data Solution(DDS) সিস্টেমের Big Data টেকনোলজি ব্যবহার করে তথ্য-উপাত্ত এর সাহায্যে মার্কেট রিসার্চ করার মাধ্যমে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত দ্রুত ও সঠিকভাবে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে।

ডিজিটাল গ্রাহক সেবা : Sabre ডিপার্চার কন্ট্রোলের সহযোগিতায় বিমান একটি প্রযুক্তি ইকোসিস্টেমের মাধ্যমে ভ্রমণকারীদের চেক-ইন সম্পন্ন করা ও ভ্রমণকারীর গন্তব্য দেশের নিয়ম অনুসারে প্যাসেঞ্জার APIS সিস্টেমের মাধ্যমে অগ্রিম তথ্য প্রেরণ করা হয়, যা তাকে গন্তব্য দেশে প্রবেশে সহায়তা করে থাকে। আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রীদের জন্য ‘ওয়েব চেক-ইন’ সেবা চালু রয়েছে। যার ফলে যাত্রীরা নিজেদের মোবাইল অ্যাপস ও ওয়েবের মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে ফ্লাইট চেক-ইন করতে পারেন। বিমানের রিজারভেশন সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন করে প্যাসেঞ্জার নোটিফিকেশন সিস্টেমের মাধ্যমে ফ্লাইটের তারিখ ও সময় পরিবর্তিত হলে দ্রুততার সাথে ই-মেইল ও বাংলাদেশি মোবাইল নম্বরে এসএমএস প্রদান করে সম্মানিত যাত্রীদের অবহিত করা হয়। যার ফলশ্রুতিতে যাত্রী সেবার মান উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে।

স্মার্ট কল সেন্টার : যাত্রীদের সার্বক্ষণিক সেবার জন্য বিমান ১৩৬৩৬ শর্ট কোডের মাধ্যমে স্মার্ট Call Center চালু করেছে। যাত্রীরা স্মার্ট Call Center এর মাধ্যমে নতুন টিকিট ক্রয়, টিকিটের তারিখ পরিবর্তন ও অন্যান্য সেবা পেয়ে থাকেন। স্মার্ট Call Center সাথে ভিসা, মাস্টার, এমেক্স কার্ড, বিকাশ, নগদসহ প্রায় সকল ধরনের কার্ড এবং মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস এর মাধ্যমে অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম যু্ক্ত করা হয়েছে, যা বাংলাদেশে এই প্রথম।

অপারেশনে প্রযুক্তিগত ইন্টিগ্রেশন : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে স্মার্ট এয়ারলাইন হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ হিসেবে জার্মানির লুফথানসা সিস্টেমের বিশ্বখ্যাত ফ্লাইট ডিসপ্যাচ সল্যুশন ‘LIDO Flight 4D’ চালু করা হয়েছে। ডেটা ইন্টিগ্রেশন করে NOTAMs, AIP, এবং ATM সীমাবদ্ধতাগুলোকে একটি ডিজিটাল, মেশিন-পাঠযোগ্য বিন্যাসে রূপান্তরের মাধ্যমে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স (AI) ও মেশিন লার্নিং (ML) টেকনোলোজি ব্যবহার করে ‘LIDO Flight 4D’ সফটওয়্যারটি নিখুঁত এবং সাশ্রয়ীভাবে ফ্লাইট প্ল্যানিং করে থাকে। ‘LIDO Flight 4D’ এয়ারলাইন্সের অপারেশনাল দক্ষতা এবং নিরাপত্তা উন্নত করার সাথে সাথে সাশ্রয়ীভাবে ফ্লাইট প্ল্যানিং করার মাধ্যমে জেট ফুয়েল খরচসহ বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয়ী করে। সফটওয়্যারটি নতুন প্রজন্মের উড়োজাহাজের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত ও নতুন রুট সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিমান বহরে বর্তমানে মোট ছয়টি অত্যাধুনিক নতুন প্রজন্মের বোয়িং ৭৮৭-৮/৯ ড্রিমলাইনার এয়ারক্রাফট আছে, যা e-Enabling বা ডিজিটাল এয়ারক্রাফট। অত্যাধুনিক নতুন প্রজন্মের বোয়িং ৭৮৭-৮/৯ ড্রিমলাইনার এয়ারক্রাফটে ২০ হাজার ফুট ওপরে আকাশ থেকে Internet, XPhone ও Live TV পরিষেবা গ্রহণ করা যায়। এসব অত্যাধুনিক নতুন প্রজন্মের বোয়িং-এ অপটিক্যাল ক্যাবলের মাধ্যমে নেটওয়ার্কিং করা আছে। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের সার্ভার ও যন্ত্রাংশ পরিচালনার জন্য সফটওয়্যার ইনস্টল করা আছে। বিমানে দক্ষ Engineer-গণ অপটিক্যাল ক্যাবল, সার্ভার ও সফটওয়্যার পরিচালনা এবং অন্যান্য উড়োজাহাজ মেরামতের কারিগরি দক্ষতা অর্জন করায়, ইতিমধ্যে পাঁচটি বোয়িং ৭৮৭-৮/৯ ড্রিমলাইনার এয়ারক্রাফটের ‘সি-চেক’ সফলভাবে পরিচালনা করেছে, যার মাধ্যমে প্রতিটি ‘সি-চেক’-এ ২০ লাখ মার্কিন ডলার সাশ্রয় হয়।

ডেটা-পরিচালিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ : Big Data, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI), মেশিন লার্নিং (ML) ব্যবহার করে ফ্লাইট প্রফিটেবিলিটি বৃদ্ধি করার জন্য Revenue Management System-এর মাধ্যমে টিকেটের বিভিন্ন আরবিডি (রিজারভেশন বুকিং ডেজিগনেটর) নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া Revenue Integrity সিস্টেমের মাধ্যমে মেশিন লার্নিং (ML) টেকনোলোজি ব্যবহার করে বিভিন্ন ‘ব্যাড-বুকিং’ ও বিমানের টিকেট বিক্রয় পলিসি বহির্ভূত বুকিংগুলোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রিজার্ভেশন সিস্টেম হতে মুছে ফেলা হয়। ফলে টিকেটের প্রাপ্যতা বৃদ্ধি পায়।

টেকসই উদ্যোগ : স্মার্ট ডিভাইস (বডি ক্যামেরা) যুক্ত করার মাধ্যমে ব্যাগেজ পরিষেবার আধুনিকায়ন ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। 5G টেকনোলজি ব্যবহার করে বডি ক্যামেরাসহ অন্যান্য পরিষেবাগুলোর আরও আধুনিকায়ন ও সেন্ট্রাল মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের কাজ চলমান আছে। বৈশ্বিক বাণিজ্যে কার্গো পরিষেবাগুলোর গুরুত্ব অনুধাবন করে বিমান একটি স্বয়ংক্রিয় কার্গো ব্যবস্থাপনা এবং ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু করার পথে রয়েছে। এই সিস্টেমটি দক্ষ এবং স্বচ্ছ কার্গো বুকিং, ট্র্যাকিং এবং হ্যান্ডলিং প্রক্রিয়া প্রদান করবে, যার ফলে পরিষেবার গুণগতমান উন্নত হবে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্গো অপারেশন থেকে আয় বৃদ্ধি পাবে।

স্মার্ট ব্যাক অফিস : বর্তমানে বিমানের Back Office এর প্রকৃতি data processing এর জন্য RAPID, Cargo Data Processing এর জন্য Cargo Spot System দক্ষতার সাথে ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া Routine Performance Evaluate করার নিমিত্তে Finess FPS System এর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত ব্যবস্থাপনাকে লাভজনক রুট চিহ্নিতকরণসহ রাজস্ব বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে। এছাড়া Cargo Handling সেবার বিলিং পদ্ধতি ও সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে Fineness MBS System ব্যবহার করে ICH বিলিং কার্যক্রম সম্পন্ন করছে। এছাড়া বিশ্বের স্বনামধন্য Acceleya Company এর Revenue MST System  Air RM ব্যবহার করে রাজস্ব ব্যবস্থাপনাসহ যাত্রী প্রতি রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বুকিংয়ের সকল ধরনের অনিয়ম রোধকল্পে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া এজেন্ট কর্তৃক টিকেট ভাড়া কম দেখিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে বিমানের আর্থিক ক্ষতি বন্ধে বিশ্বের স্বনামধন্য IATA Strategic Partner Accelya হতে VERDI নামক সিস্টেম যা Sales Audit (BIDT) এ যুগান্তকারী সিস্টেম। সিস্টেমটি এই পর্যন্ত টিকেটের আর্থিক অনিয়ম চিহ্নিত করে প্রায় ইউএসডি ৩.০০ মিলিয়ন ডলারের সাশ্রয় করেছে।   

ডিজিটাল ট্রেনিং ও উন্নয়ন : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ডিজিটাল ট্রেনিং প্ল্যাটফর্ম চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে কর্মীরা নিয়মিত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারেন, যা তাদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।

ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম : কর্মীদের দক্ষতা মূল্যায়ন এবং উন্নয়নের জন্য একটি ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে, যা কর্মীদের প্রফেশনাল গ্রোথ নিশ্চিত করবে।

পরিবেশ বান্ধব উদ্যোগ : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পরিবেশ বান্ধব এয়ারলাইন হিসেবে গড়ে ওঠার লক্ষ্যে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কার্বন নির্গমন কমানোর জন্য নতুন প্রজন্মের ফুয়েল-এফিশিয়েন্ট এয়ারক্রাফটের ব্যবহার এবং বিভিন্ন পরিবেশ সংরক্ষণ প্রকল্পে অংশগ্রহণ। কার্বন নির্গমন কমানোর জন্য বিভিন্ন গ্রিন অপারেশনাল প্র্যাকটিস চালু করা, যেমন কাগজহীন অফিস, ডিজিটাল ডকুমেন্টেশন এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণের ব্যবহার।

স্মার্ট লয়্যালটি প্রোগ্রাম : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যাত্রীদের জন্য একটি স্মার্ট লয়্যালটি প্রোগ্রাম চালু করেছে। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত যাত্রীরা বিশেষ সুবিধা এবং অফার উপভোগ করতে পারেন, যা যাত্রীদের সাথে সংস্থার সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করে।

মোবাইল ওয়ালেট ইন্টিগ্রেশন : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বিভিন্ন মোবাইল ওয়ালেট সেবা যেমন বিকাশ, নগদ, এবং অন্যান্য ডিজিটাল পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মের সাথে ইন্টিগ্রেশন করেছে, যা যাত্রীদের জন্য টিকিট ক্রয় এবং অন্যান্য পেমেন্ট কার্যক্রম আরও সহজ করেছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে যাত্রীদের সাথে সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে তারা নিয়মিত ফ্লাইট তথ্য, প্রমোশন, এবং অন্যান্য আপডেট প্রদান করে।  
ইনফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেম : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নতুন প্রজন্মের এয়ারক্রাফটগুলোতে উন্নত ইনফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেম (IFE) ইনস্টল করা হয়েছে, যা যাত্রীদের জন্য ফ্লাইট অভিজ্ঞতাকে আরও মনোরম করে তোলে।

রিয়েল-টাইম ফ্লাইট ট্র্যাকিং : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যাত্রীদের জন্য রিয়েল-টাইম ফ্লাইট ট্র্যাকিং সেবা চালু করেছে। যাত্রীরা তাদের ফ্লাইটের বর্তমান অবস্থান এবং সময়সূচি সহজেই ট্র্যাক করতে পারেন, যা তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা আরও সহজ করে তোলে।

সামাজিক দায়বদ্ধতা : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বিভিন্ন সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম (CSR) গ্রহণ করেছে, যা সমাজের কল্যাণে ভূমিকা রাখছে। এর মধ্যে শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম, স্বাস্থ্যসেবা উদ্যোগ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অন্তর্ভুক্ত।

অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সাথে অংশীদারিত্ব করেছে, যা তাদের প্রযুক্তিগত ও অপারেশনাল দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক হয়েছে।

রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ভবিষ্যতের চাহিদা পূরণের জন্য গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) কার্যক্রম পরিচালনা করছে। উদ্ভাবনী প্রযুক্তি এবং পরিষেবার উন্নয়নের জন্য তাদের নিজস্ব গবেষণা দল কাজ করছে।

উন্নত গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং : বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা উন্নত করার জন্য নতুন প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম সংযোজন করা হয়েছে, যা বিমানের পরিষেবা দক্ষতা ও যাত্রী সন্তুষ্টি বৃদ্ধি করেছে। 

বিমানবন্দরে ডিজিটাল সেবা : স্মার্ট এয়ারলাইন উদ্যোগের অংশ হিসেবে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন বিমানবন্দরে ডিজিটাল সেবা চালু করা হয়েছে, যেমন বায়োমেট্রিক চেক-ইন, স্বয়ংক্রিয় বোর্ডিং গেট এবং ডিজিটাল ব্যাগেজ ট্র্যাকিং। 

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। জাতীয় বাজেটে বিমানের জন্য কোনও বরাদ্দ থাকে না। অর্থাৎ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সম্পূর্ণ নিজস্ব আয়ে পরিচালিত একটি সংস্থা। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য রাজস্ব আয় করেছে এবং লাভের ধারা বজায় রেখে সরকারের লাভজনক কোম্পানিসমূহের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান ধরে রেখেছে। পাশাপাশি বিমানের নিজস্ব আয় থেকে বহরে থাকা উড়োজাহাজসমূহের কিস্তি পরিশোধসহ লিজে থাকা কয়েকটি উড়োজাহাজও ক্রয় করেছে, যা বিমান এর আর্থিক সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। দূরদর্শী পরিচালনা-পর্ষদ, নির্বাহী পরিচালকগণ, দক্ষ ও কর্মঠ জনবল, আধুনিক উড়োজাহাজ, ডিজিটাল সেবার অন্তর্ভুক্তি করণের মাধ্যমে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স হয়ে উঠেছে যাত্রীবান্ধব ও স্মার্ট এয়ারলাইন্স।

শফিউল আজিম।। ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স