ছবি : সংগৃহীত

বাংলায় প্রবাদ আছে ‘বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ এই ডিজিটাল যুগে নারীরা কোনোভাবে পিছিয়ে নেই। পুরুষদের সাথে তাল মিলিয়ে তারাও বিভিন্নভাবে সফলতা অর্জন করছেন এবং এগিয়ে যাচ্ছেন।

অন্যান্য প্রতিবন্ধকতার মধ্যে অন্যতম শিক্ষার অভাবে তারা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে পারেন না। ক্ষমতায়নের জন্য এটা বড় প্রতিবন্ধকতা। রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ সমাজের চোখে স্বাভাবিকভাবে গৃহীত হয় না। শিক্ষা বা আত্মবিশ্বাস কম থাকায় নারীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। নারীর সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যাপক হারে নারীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। তবেই তারা শুধু নারীদের উন্নয়ন নয়, দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন।

তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোয় নারীর ক্ষমতায়ন সন্তোষজনক নয়। নারীর প্রতি সনাতন দৃষ্টিভঙ্গি, শিক্ষা ক্ষেত্রে অসহযোগিতা, অপর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও আইনি পদক্ষেপ, সংকীর্ণ চিন্তা-চেতনা ক্ষমতায়নের পথে অন্তরায়। এখনো অনেক পরিবারে নারীকে তার মত প্রকাশের স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা হয়। নারী নিজ পরিবারে কোনো না কোনোভাবে সহিংসতার শিকার হয়।

বর্তমানে মেয়েদের মধ্যে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর তাই নিজের একটি ব্যবসা শুরু করার মাধ্যমে অনেক নারীই হয়ে উঠছেন উদ্যোক্তা। নারীর ক্ষমতায়নের আরেক প্রতিবন্ধকতা প্রচারমাধ্যমে তাদের স্বল্প ও নেতিবাচক উপস্থাপন। একজন নারী যখন প্রতিনিয়ত এই ধরনের প্রচারণার সামনে পড়েন, তখন নিজেকে অন্যদের তুলনায় হেয় ভাবতে শুরু করেন, যা তার ভবিষ্যৎ বিকাশের প্রধান বাধা।

ক্ষমতায়ন হচ্ছে মানুষের বস্তুগত, দৈহিক, মানবিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের ওপর আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, যার সঙ্গে দক্ষতার প্রশ্নটি জড়িত। কাজেই নারীর ক্ষমতায়ন বলতে এমন একধরনের অবস্থাকে বোঝায়, যে অবস্থায় নারী তার জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বাধীন ও মর্যাদাকর অবস্থায় উন্নীত হতে পারে।

রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ সমাজের চোখে স্বাভাবিকভাবে গৃহীত হয় না। শিক্ষা বা আত্মবিশ্বাস কম থাকায় নারীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। নারীর সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যাপক হারে নারীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

এটি একটি প্রক্রিয়া, যার মানে হলো একদিনে হঠাৎ করে কারও ক্ষমতায়িত হয়ে ওঠার সুযোগ নেই। এজন্য দীর্ঘ ও অব্যাহত উদ্যোগ দরকার হয়। নারীর ক্ষমতায়নের আওতাকে প্রধানত সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক—এই তিন ভাগে দেখানো হয়। এই সময়ে পরিবর্তন এসেছে নারীর অবস্থা ও অবস্থানেও।

বর্তমানে সমাজের প্রায় সব খাতেই নারীর অংশগ্রহণ দৃশ্যমান হচ্ছে। শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে মেয়েদের উপস্থিতি এখন শতভাগ। পোশাক শিল্পের কৃতিত্বের সিংহভাগই নারীর। সফল ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বড় অংশই নারী। পাশাপাশি নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে সরকারি-বেসরকারি ও আধাসরকারি অফিস-আদালত, কলকারখানা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল-ক্লিনিক এবং বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মতো আনুষ্ঠানিক কর্মস্থলেও।

আরেকটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা খাতে। দেশে বর্তমানে ছোট-বড় কয়েক লাখ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার অর্ধেকেরও বেশি নারী। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে তাদের ভূমিকা অপরিসীম। ক্ষুদ্রঋণে নারীর অংশগ্রহণ আজ সারা বিশ্বে স্বীকৃত।

বাংলাদেশের একজন ব্যক্তিত্ব যে ক্ষুদ্রঋণের ধারণাকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছিলেন, তার নেপথ্যে ছিল নারীর ব্যাপক অংশগ্রহণ। তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ গ্রামীণ অর্থনীতি বিশেষ করে ‘ক্যাশ ইকোনমি’র বড় চালিকাশক্তি।

এছাড়া সরকার পরিচালনায়, রাজনীতিতে, প্রশাসনে, সামরিক বাহিনীতে, আইনশৃঙ্খলা বিভাগেও নারীর অবস্থান ক্রমশ উজ্জ্বল হচ্ছে। এসব পরিবর্তনের ছাপ পড়েছে পথেঘাটেও। কারণ চার দেয়ালের বাইরে নারীর চলাফেরা এখন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশ্বব্যাংকের বিশেষ তহবিল চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, তা কতটা প্রান্তিকে যাবে? বা সবার জন্য এই তহবিল কি না? ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাতীয় সংসদ ভবনে সাক্ষাৎ করেন বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অপারেশনস) আন্না বেজার্ড।

বর্তমানে সমাজের প্রায় সব খাতেই নারীর অংশগ্রহণ দৃশ্যমান হচ্ছে। শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে মেয়েদের উপস্থিতি এখন শতভাগ। পোশাক শিল্পের কৃতিত্বের সিংহভাগই নারীর। সফল ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বড় অংশই নারী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাংকের কাছে আর্থসামাজিক অগ্রগতির জন্য আরও বেশি নারী উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে বিশেষ তহবিল চেয়েছেন। আইসিটি থেকে শুরু করে কৃষি ও ক্ষুদ্র হস্তশিল্প পর্যন্ত নারীরা কাজ করছেন এবং সরকার তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করছেন।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান (এসএমই), উদ্যোক্তা, বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়ন, উৎসাহ প্রদান এবং তাদের ব্যবসাকে ত্বরান্বিত করার নিমিত্তে অনুদান প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করে আইসিটি মন্ত্রণালয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ২০২২ সালে সারাদেশের একেবারে প্রান্তিক থেকে সম্ভাবনাময় ১২০০ নারী উদ্যোক্তাদের ৫০ হাজার টাকা করে এককালীন অনুদান দিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের আওতাধীন আইডিয়া প্রকল্পের মাধ্যমে।

২০২৪ সালে আরও পাঁচ হাজার নারী উদ্যোক্তাদের জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এর মাধ্যমে দেশের আনাচে-কানাচে ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তারা তাদের উদ্যোগকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। কারণ নারীরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।

হার পাওয়ার প্রজেক্ট (Her Power Project)-এর মাধ্যমে সারা বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন সময় উপযোগী ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে সম্ভাবনাময় ক্ষুদ্র এবং কুটির শিল্পকে সব দিয়ে এগিয়ে নিতে সাহায্য করছে। এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে।

সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে নারী ক্ষমতায়ন, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং জেন্ডার সমতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বা রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে। নারী ক্ষমতায়নের ও কর্ম সৃজনের অগ্রদূত শেখ হাসিনা। তারই নিরলস পরিশ্রম এবং দূরদৃষ্টি সম্পন্ন চিন্তাধারা, সংবেদনশীলতা এবং সবকিছুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নারীরা দৃশ্যমানভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছে। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশও তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ সুবর্ণ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

নাসিমা আক্তার নিশা ।। প্রেসিডেন্ট, ওমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই)
nishabd2012@gmail.com