প্রার্থীরা যেসব প্রতিশ্রুতি দেয় তা কি পূরণ করে?

ছবি : সংগৃহীত

ভোট উৎসবের শেষপ্রান্তে বাংলাদেশ। চলছে প্রচারের শেষ মুহূর্ত। দিন রাত এক করে প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারের দুয়ারে। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। একবারে প্রান্তের মানুষটির সঙ্গে হাসিমুখে কথা বিনিময়, জড়িয়ে ধরা, ভোটারের সঙ্গে বসে খাবার ভাগাভাগি করাসহ নানা বৈচিত্র্যময় দৃশ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে প্রতিদিনই।

ভোটারের সঙ্গে প্রার্থীর এমনভাবে দাঁড়ানো, মিলেমিশে একাকার হয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে বড় ভালো লাগছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এই তো সকলের চাওয়া।

নেতার সঙ্গে কর্মীর, ভোটারের সঙ্গে প্রার্থীর, এলাকার মানুষের সঙ্গে জনপ্রতিনিধির আনন্দ বেদনা সুখে-দুঃখে একাকার হয়ে যাওয়া। কিন্তু যেটা এখন এই প্রচারের সময় দেখা যাচ্ছে, এইটাই কি বাস্তব? অথবা এইটাই কি পুরো বাস্তবতা? নাকি এর পেছনেও আছে অন্য কথা, অন্য দৃশ্য?

নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে যেসব রাজনৈতিক দল, তারা সবাই এরই মধ্যে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে। ইশতেহারে সবাই ভালো ভালো কথা বলেছে। নির্বাচিত হলে জনগণ এবং দেশের কল্যাণে কী করবে, কতটা করবে—সেইসব কথা অত্যন্ত মার্জিত এবং মনোহর ভাষায় প্রকাশ করেছে দলগুলো।

দলের বাইরে অনেক প্রার্থীও নিজের এলাকার মানুষের জন্য, নিজের ভোটারের জন্য ব্যক্তিগত ইশতেহার ঘোষণা করেছে। সেইখানেও একই রকম সুন্দর ও কল্যাণকর অঙ্গীকার করেছে প্রার্থীরা।

কেন আমরা শিক্ষা ও চিকিৎসার মতো দুটি মৌলিক চাহিদা সারাদেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে পারলাম না? সেই সুযোগ কিন্তু ছিল এবং এখনো আছে। শুধু প্রয়োজন একটু সদিচ্ছা।

ইশতেহার মূলত কী? ইশতেহার হচ্ছে ভোটারের সঙ্গে দলের কিংবা প্রার্থীর চুক্তি কিংবা অঙ্গীকারনামা। ব্যাপারটা অনেকটা এমন—‘যদি আপনারা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন, তাহলে আপনার / আপনাদের জন্য এই এই কাজ করবো আমি।’

এখন সেইসব আশ্বাস কিংবা প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হয়ে, বিশ্বাস স্থাপন করে ভোটার তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন কি করবেন না, সেই সিদ্ধান্ত ভোটরদের। কিন্তু নির্বাচিত হলে প্রার্থীরা কি সেইসব প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন? করলেও কতটুকু করেন?

এত বছরের বাংলাদেশ নানা ক্ষেত্রেই এগিয়েছে অনেক। যোগাযোগ ব্যবস্থা কিংবা অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা বাদই দিলাম। এসব ছাড়াও আরও নানা ধাপে উন্নয়ন ঘটেছে দেশের মানুষের জীবন মানে।

একটা সময় ছিল যখন দেশের মানুষের বড় অংশ তিনবেলা খাবারের জোগান নিয়ে অনিশ্চয়তায় থাকতেন। বেশিরভাগ মানুষেরই দুইটার বেশি জামা ছিল না। আজকের দিনে শুনতে অবাক লাগতে পারে, কিন্তু এইটাই সত্য।

একটা সময় দেশের অনেক মানুষের স্যান্ডেল কিংবা জুতা পরার সঙ্গতি ছিল না। অনেকের কাছে এই কথাগুলো অবিশ্বাস্য লাগতে পারে, রূপকথা মনে হতে পারে। এসবই বাস্তব সত্য কথা। কিন্তু এই যে সেইসব অবর্ণনীয় দিন আমরা পেছনে ফেলে অনেক জায়গায় এগিয়ে গেলাম, তারপরেও কিছু মৌলিক জায়গায় কেন বড় ধরনের পরিবর্তন এলো না?

ধরা যাক, রাজধানী ঢাকায়, যেসব পণ্য এবং সেবা মেলে তার বেশিরভাগই এখন জেলা শহর কিংবা উপজেলা শহরেও পাওয়া যায়। কিন্তু ওই যে বলছিলাম কিছু মৌলিক পরিবর্তনের কথা। ঢাকার বাইরে কোনো জেলা শহর কিংবা বিভাগীয় শহরে কি কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবার নিশ্চয়তা এখনো আছে? বড় ধরনের রোগ শোক হলেই এখনো ছুটে আসতে হয় রাজধানী ঢাকায়।

একটু ভালো পড়াশোনার জন্যও ঢাকা কিংবা অন্য কোনো বড় শহরে যেতে হয়। হ্যাঁ, এখন অনেক জেলা শহরেও বেশকিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, কিন্তু সেইগুলো কি যথেষ্ট মান সম্পন্ন?

কেন আমরা শিক্ষা ও চিকিৎসার মতো দুটি মৌলিক চাহিদা সারাদেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে পারলাম না? সেই সুযোগ কিন্তু ছিল এবং এখনো আছে। শুধু প্রয়োজন একটু সদিচ্ছা। প্রয়োজন একটু উদ্যোগ।

বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে এবার সবচেয়ে বেশি নারী প্রার্থী সরাসরি ভোটে লড়ছেন। তাদের কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি।

অন্য প্রসঙ্গে যাই। এবারের নির্বাচনে পোড়খাওয়া মাঠের রাজনীতিবিদ ছাড়াও, আরও অনেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যারা নানাভাবে সমাজের আলোচিত ও প্রশংসিত ব্যক্তি। এরা কেউ দলীয় প্রতীকে কেউ আবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোটের মাঠে আছেন।

এছাড়া অনেক রাজনৈতিক নেতাও আছেন, এবারের ভোটে যারা দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হয়েছেন। ভোটের মাঠ যেভাবে চষে বেড়াচ্ছেন তা দেখে মনে হয় এদের পেছনেও রয়েছে ব্যাপক জনসমর্থন। দেশের মানুষের অব্যাহত সমর্থন ও ভালোবাসার কারণেই তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে সাফল্যের শিখর ছুঁয়েছেন। হয়েছেন তারকা।

এবার ভোটের মাঠে জনগণ যদি তাদের নির্বাচিত করেন, তবে তাদের কাছে করজোড়ে অনুরোধ থাকবে, সেই ভোটের প্রতিদান আপনারা দেবেন প্লিজ।

অন্তত দেশের প্রান্তিক মানুষগুলোর জন্য চিকিৎসা ও মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করার দিকে নজর দেবেন সবাই এইটুকু আশা নিশ্চয় করা যায়!

আরেকটা কথা। এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যার তরুণ প্রার্থী আছেন। এছাড়া বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে এবার সবচেয়ে বেশি নারী প্রার্থী সরাসরি ভোটে লড়ছেন। তাদের কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি।

সবশেষে একটাই কথা, ভোটার, প্রার্থী, জনগণ এবং নেতা সবাই মিলে এগিয়ে নেবো আমাদের বাংলাদেশ। নিশ্চিত হোক দেশের সব ধর্ম বর্ণ শ্রেণি-পেশার মানুষের অধিকার। নিশ্চিত হোক বাঙালি সংস্কৃতির অবাধ চর্চার অধিকার।

খান মুহাম্মদ রুমেল ।। গণমাধ্যমকর্মী