২০২৩ থেকে ২০২৪ : এ যাত্রা হোক মঙ্গলময়
২০২৪ সালে চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের জন্য শেখ হাসিনা, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’—এই স্লোগানে নির্বাচনী প্রচারণায় বক্তব্য দিচ্ছেন। 'স্মার্ট' শব্দটি ইংরেজি, তবে তরুণ সমাজে প্রতিনিয়ত কিছু ইংরেজি শব্দ চয়নের মাঝে শব্দটি সহজবোধ্য।
সত্যিকার অর্থে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক মতাদর্শ বা চিন্তা ভাবনা অনেকের চেয়ে বহুগুণ এগিয়ে এবং সেই কারণে তিনি আগামী প্রজন্মের জন্য 'স্মার্ট', আগামী বাংলাদেশের গল্প সবার সাথে বিনিময় করছেন। ইংরেজি 'স্মার্ট' শব্দটির বাংলায় একাধিক সুঅর্থ আছে। যেমন—উজ্জ্বল, সুবেশ, পরিছন্ন, নবীন দর্শন, দক্ষ, পটু, তীক্ষ্ণ, বুদ্ধিমান, চটপটে, ক্ষুরধার-এর মতো শক্তিশালী বিশেষণ সমূহ।
বিজ্ঞাপন
সুতরাং খুব সহজে বুঝে নেওয়া যায় যে, বাংলাদেশের অবকাঠামোগত কঠিন কাজগুলো শেষ হয়েছে, কিছু কাজ শেষের দিকে এবং আগামীতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের কল্যাণ, সমৃদ্ধি ও বিকশিত হওয়ার জন্য কাজ করবে।
আরও পড়ুন
২০২৩ সালের ইশতেহারে দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়া ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মতো ১১টি বিষয়ে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের ২০২৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের মাঝে অগ্রাধিকারে আছে—
১. দ্রব্যমূল্য সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।
২. কর্মপোযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা।
৩. আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা।
৪. লাভজনক কৃষির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি।
৫. দৃশ্যমান অবকাঠামোর সুবিধা নিয়ে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে শিল্পের প্রসার ঘটানো।
৬. ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
৭. নিম্নআয়ের মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা।
৮. সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সবাইকে যুক্ত করা।
অসাম্প্রদায়িকতা নিয়ে খুব একটা কাজ করা হয়নি বা প্রাধান্য পায়নি। বরং সারা বছর জুড়েই দেখা যায় যে সাম্প্রদায়িকতা আমাদের তৃণমূলে রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকানো হয়েছে।
৯. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
১০. সাম্প্রদায়িকতা এবং সব ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রোধ করা।
১১. সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার ঘটানো।
ইশতেহারের প্রথমটি বর্তমান সময়ে দেশের সাধারণ জনগণের একজন হিসেবে আমারও প্রথম চাওয়ার মাঝে একটি। খাদ্যদ্রব্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ। 'খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি আমার দেশের মাটি'র মতো এমন অনেক গান আছে যেগুলো বাংলার মাটিকে সোনার চেয়েও মূল্যবান প্রতীকী হিসেবে তৈরি করা হয়েছে।
পলিমাটিতে তৈরি এই ব-দ্বীপে একটি শুকনো ডাল মাটিতে গেঁথে রাখলে, তিন চারদিনে সবুজ পাতা বের হয়। তা না হলে সতেরো কোটি মানুষের এই ছোট্ট ভূখণ্ডটি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার কথা ছিল না। বর্তমান সময়ে না খেয়ে কেউ মরেছে তার দৃষ্টান্ত নেই কিন্তু কিনতে না পেরে অভুক্ত থাকছে তার উদাহরণ বেড়েছে দ্বিগুণ।
খাদ্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির কারণে ব্যবসায়ী, দালাল এবং সিন্ডিকেটের মরণ ছোবলে জনগণ আজ অসহায়। তার থেকেও বড় সমস্যা ব্যবসায়ীরা যখন সরকারি রাজনৈতিক দলে ভারি পদ নিয়ে বসে থাকে।
আরও পড়ুন
আওয়ামী লীগের ওপর ত্যক্ত বিরক্ত ছেলেটি, মেট্রোরেলে মাত্র চল্লিশ মিনিটে দিয়াবাড়ি পৌঁছে গিয়ে জানায়, শেখ হাসিনাই আসুক, আমাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। শুধু খাওয়ার দামটা কমাতে বলেন। আর কিছু চাই না আমরা। এই নির্দিষ্ট ইশতেহারটি যথা নিয়মে বাস্তবায়ন করা বর্তমান সময়ে সব থেকে জরুরি বলে মনে হয়েছে।
আমার আরেকটি পছন্দের ইশতেহার, কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা। আধুনিক পৃথিবীতে এই ইশতেহারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শ্রমমুখী শিক্ষা, যা যেকোনো অতিরিক্ত জনসংখ্যা সমৃদ্ধ দেশে খুবই প্রয়োজনীয়। গ্র্যাজুয়েট শিক্ষা শুধুমাত্র দাপ্তরিক কর্মভিত্তিক কাজ, কখনোই এমন দেশগুলোয় বেকারত্ব দূর করতে পারে না বিধায় কারিগরি শিক্ষাকে প্রাধান্য দিতে হয়।
ব্যক্তিগত কারণে কয়েক বছর অস্ট্রেলিয়ায় থাকা হয়েছিল। তখন এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলাম। সেইখানে সরকার চালিত কর্মমুখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অত্যন্ত জনপ্রিয়, সারা বছরই ভরপুর থাকে শিক্ষার্থী দিয়ে। তরুণ, যুবক, মধ্যবয়সী বা পড়াশোনা করার সুযোগ হয়নি বা গৃহিণী এমন যে কেউ বেকার হয়ে আছেন, তারা সেই শিক্ষামুখী প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে ডিপ্লোমা করতে পারেন।
সরকার তাদের সামান্য অর্থের বিনিময়ে কারিগরি কাজ শিখে ডিপ্লোমা নেওয়ার জন্য সহযোগিতা করে থাকেন। সেইখানে কাঠের কাজ থেকে আরম্ভ করে ওয়েল্ডিং করার ডিপ্লোমা করা যায় এবং ডিপ্লোমা শেষে সার্টিফিকেটটি তার সারা জীবনের জন্য যেকোনো কোম্পানি বা অফিসে বা নিজস্ব উদ্যোগে কাজ করার পথ খুলে দেয়। বেকার থাকার অসহায়ত্ব দূর হয়।
শেখ হাসিনার 'স্মার্ট' বাংলাদেশ আশা করছি এই ইশতেহারটি সেই ধরনের ভাবনা থেকেই তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এবং এই কাজটি সম্পন্ন করতে পারলে, আগামী প্রজন্ম সরকারকে দোষারোপ করা বাদ দিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সম্ভাবনার পথ খুঁজে পাবে।
...ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত মাখা মাটিতে প্রত্যেক নাগরিক তার নিজ ধর্ম, বর্ণ বা শ্রেণি নিয়ে স্বাধীনভাবে বসবাস করার অঙ্গীকারে শপথ নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে উদাহরণ সৃষ্টি করেছিল স্বাধীন বাংলাদেশ।
আওয়ামী লীগের প্রাধান্যে থাকা এগারোটি ইশতেহারের মাঝে ব্যক্তিগতভাবে সব থেকে ভালো লেগেছে, সাম্প্রদায়িকতা এবং সব ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রোধ করা। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রোধে আওয়ামী লীগ বহু বছর ধরেই কাজ করছে। তবে অসাম্প্রদায়িকতা নিয়ে খুব একটা কাজ করা হয়নি বা প্রাধান্য পায়নি। বরং সারা বছর জুড়েই দেখা যায় যে সাম্প্রদায়িকতা আমাদের তৃণমূলে রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকানো হয়েছে। আমার মতো শহীদ সন্তানের কাছে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ, আমাদের শহীদ পিতামাতার স্বপ্ন সফলতার প্রধান সোপান।
ভাষা আন্দোলনে যখন গাফ্ফার চৌধুরী কবিতা লিখেছিলেন, আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি—তখন উনি কি ভাই বলতে মুসলিম বা হিন্দু বুঝিয়েছিলেন? তা কখনোই নয়, ভাই শব্দটি হচ্ছে এই ভূখণ্ডে থাকা সব বাঙালির জন্য বলা।
আরও পড়ুন
আলতাফ মাহমুদ যখন শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে কণ্ঠে সুর তুলেছেন, ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন করিলি রে বাঙালি তোরা ঢাকার শহর রক্তে ভাসাইলি।’ তিনি বাঙালি বলতে মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ সবার কথা বলেছেন। একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধারা যখন একত্র হয়ে চিৎকার করে গান গেয়েছেন, জয় বাংলা বাংলার জয়। তখন তারা এই ছোট্ট স্বাধীন দেশে থাকা ধর্ম বর্ণ শ্রেণি নির্বিশেষে সব নাগরিকের একাত্মতার কথায় তুলে ধরেছেন।
ভাষা আন্দোলন আমাদের মাতৃভাষা দিয়েছিল, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীন একটি ভূমি দিয়েছিল। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত মাখা মাটিতে প্রত্যেক নাগরিক তার নিজ ধর্ম, বর্ণ বা শ্রেণি নিয়ে স্বাধীনভাবে বসবাস করার অঙ্গীকারে শপথ নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশ।
অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে উদাহরণ সৃষ্টি করেছিল স্বাধীন বাংলাদেশ। এই ইশতেহার আমাকে স্বপ্ন দেখায়, শেখ হাসিনার হাত ধরে আওয়ামী লীগ সেই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে আবারও অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করবে।
সবশেষে বলতে চাই, সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার ঘটানো—এই ইশতেহার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিষয়। তৃণমূল থেকে রাজনৈতিক চর্চা শুরু হোক।
রাজনীতিবিদের সাথে একাত্ম হয়ে জনগণ এগিয়ে যাক স্বাধীন বাংলাদেশের অঙ্গীকারবদ্ধ পটভূমির হাত ধরে। বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিক তার দায়িত্ব পালন করুক এবং আগামীতে সরকার থেকে শুরু হোক সেই সুখ বার্তা।