ছবি : সংগৃহীত

২৫ ডিসেম্বর বড়দিন। এইদিন আমরা, খ্রিষ্টানরা মহাসমারোহে ক্রিসমাস অর্থাৎ বড়দিন উৎসব উদযাপন করি। আজ থেকে প্রায় দুই হাজার তেইশ বছর পূর্বে ঈশ্বর তনয় আশ্চর্যজনকভাবে ঐশ্বরিক শক্তিতে মেরির কোলে বেথলেহেমের জীর্ণ গোশালায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

মানব জাতির প্রতীক্ষিত মুক্তি দাতা প্রভু যিশু ত্রিশ বছর বয়সে প্রকাশ্যে প্রচার কাজ শুরু করেন। বাণী প্রচারের সাথে সাথেই চারিদিকে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। অনেক লোক তার অমৃত বাণী শোনার জন্য চারপাশে ভিড় জমায়।

শ্রোতাদের তিনি মন পরিবর্তনের আহ্বান জানান। পাপ, অসত্য, অন্যায় থেকে মন ফিরিয়ে সত্য, সুন্দর ও ভালো কাজে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানান।

তিনি শিক্ষা দেন আমরা যাতে পাপকে ঘৃণা করি, পাপীকে নয়। তিনি অবহেলিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত ও অস্পৃশ্যদের পক্ষ অবলম্বন করেন। তিনি বলতেন যে, অসুস্থদেরই ডাক্তার প্রয়োজন সুস্থদের জন্য নয়।

পৃথিবীতে থাকাকালীন অবস্থায় প্রভু যিশু অনেক আশ্চর্য কাজ করেছেন—অন্ধকে দিয়েছেন দৃষ্টি, বধিরকে দিয়েছেন শোনার ক্ষমতা, প্রতিবন্ধীকে দিয়েছেন হাঁটার শক্তি, এমনকি মৃতকে দিয়েছেন জীবন।

তিনি একে অন্যকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতে শিক্ষা দেন। শুধু পাড়া-প্রতিবেশী ও বন্ধুদেরই নয়, শক্রদেরও তিনি ভালোবাসতে বলেন। তিনি একে অপরকে ক্ষমা করতে শিক্ষা দেন।

পৃথিবীতে থাকাকালীন অবস্থায় প্রভু যিশু অনেক আশ্চর্য কাজ করেছেন—অন্ধকে দিয়েছেন দৃষ্টি, বধিরকে দিয়েছেন শোনার ক্ষমতা, প্রতিবন্ধীকে দিয়েছেন হাঁটার শক্তি, এমনকি মৃতকে দিয়েছেন জীবন।

প্রভু যিশু বলেছেন যে, সেবা পেতে নয় সেবা করতেই এই জগতে তার আগমন। অন্যকে সেবা করার মধ্য দিয়েই আমরা মুক্তি এবং পরিত্রাণ লাভ করি।

প্রতিবেশী ভাইবোনদের, বিশেষ করে ক্ষুধার্তদের অন্ন দান, তৃষ্ণার্তকে জল, বস্ত্রহীনকে বস্ত্র, অসুস্থের সেবা করি, অসহায় ও গরিব দুঃখী মানুষদের যখন আমরা সেবা করি তখন তিনিই সেই সেবা গ্রহণ করেন।

২০২৩ সালে আমরা যখন বড়দিন উদযাপন করছি তখন যিশুর জন্মস্থান, পুণ্যভূমিতে চলছে যুদ্ধ। ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইনের মধ্যে যুদ্ধের ফলে হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। যুদ্ধ চলছে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে, সাথে আমেরিকাসহ ইউরোপের অনেক দেশ জড়িয়ে পড়েছে।

একই সাথে কত দেশে নিজেদের জাতি-গোষ্ঠী ও ধর্মের লোকদের মধ্যে চলছে সহিংসতা, হানাহানি ও মারামারি। কত সংঘাত, টেনশন ও অশান্তির মধ্যে মানুষ জীবনযাপন করছে।

বাইবেলে বর্ণিত প্রভু যিশুর জন্মকাহিনিতে আমরা শুনি—‘জয় ঊর্ধ্বলোকে পরমেশ্বরের জয়। ইহলোকে নামুক শান্তি তার অনুগৃহীত মানবের অন্তরে’ (লুক ২:১৪)।

যিশু তার শিষ্যদের জন্য শান্তি দান করেছেন—‘শান্তি তোমাদের জন্য রেখে যাচ্ছি, আমারই শান্তি তোমাদের দান করছি’ (যোহন ১৪:২৭)। এই শান্তি হলো শক্তিশালী, ঐশ্বরিক ও চিরস্থায়ী।

শিষ্যদের প্রতি পুনরুত্থিত খ্রিষ্টের প্রথম এবং প্রধান উপহার হলো শান্তি। যিশুর দেওয়া এই সর্বজনীন শান্তি স্থাপন করা হোক আমাদের সবার পবিত্র কর্তব্য ও দায়িত্ব।

জগতের কষ্ট, বাধা বিপত্তি এই শান্তি কেড়ে নিতে পারে না। যিশু আমাদের প্রকৃত শান্তিদাতা। শান্তি স্থাপনকারীদের বাইবেলে অনেক উঁচুতে স্থান দেওয়া হয়েছে—‘শান্তি স্থাপন করে যারা ধন্য তারাই ঈশ্বরের সন্তান বলে পরিচিত হবে’ (মথি ৫:৯)।

যিশুর প্রচার ও শিক্ষার প্রধান বিষয়বস্তু ছিল এই জগতে ঐশ রাজ্যেও সুখবর ঘোষণা করা। আর এই ঐশ রাজ্যেও একটি গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধ হলো শান্তি (রোম ১৪:১৭)।

শিষ্যদের প্রতি পুনরুত্থিত খ্রিষ্টের প্রথম এবং প্রধান উপহার হলো শান্তি। যিশুর দেওয়া এই সর্বজনীন শান্তি স্থাপন করা হোক আমাদের সবার পবিত্র কর্তব্য ও দায়িত্ব। আমাদের পরিবারে, সমাজে ও দেশে আমরা সবাই হয়ে উঠি শান্তির দূত।

বড়দিন আমাদের আহ্বান করে হৃদয়-মন বড় করতে; উদার হতে, নিজের সংকীর্ণতা থেকে বেরিয়ে আসতে। এই বড়দিনে আমাদের প্রার্থনা হোক প্রভু যিশুর আগমনে সব সংঘাত, হানাহানি ও যুদ্ধ বন্ধ হোক, এই ধরাতে নেমে আসুক স্বর্গীয় শান্তি।

বড়দিন আপনাদের প্রত্যেকের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ, শান্তি, ভ্রাতৃত্ব, একতা ও সম্প্রীতি। সবাইকে বড়দিনের প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

বিজয় এন. ডি’ক্রুজ ।। আর্চবিশপ, ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশ