ছবি : সংগৃহীত

১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ পাকিস্তান ভেঙে দুই টুকরো হয়ে বাংলাদেশের সৃষ্টি। এই বিজয় দিবসে একটা প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসে তা হলো পাকিস্তান ভাঙার জন্য দায়ী কে! এতদিন পরেও পাকিস্তান ভাঙার জন্যে দায়ী করা হয় ভারত বা বঙ্গবন্ধুকে। কিন্তু বিভিন্ন তথ্য ও সাক্ষ্য থেকে প্রমাণিত যে ১৬ ডিসেম্বরের আত্মসমর্পণ দীর্ঘদিন লালিত একটি সম্ভাবনার রূপায়ন মাত্র এবং এই ঘটনার জন্য সবচেয়ে বেশি যদি কাউকে দায়ী করতে হয় তাহলে আসবে জেনারেল মোহাম্মাদ আইয়ুব খানের নাম। কেন?

রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল আইয়ুব খানের যোগসাজশে নির্বাচিত সংসদীয় সরকারকে উৎখাত করে পাকিস্তানে সামরিক আইন জারি করেন।

তিনি জেনারেল আইয়ুব খানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন। কিন্তু উচ্চাভিলাষী আইয়ুব খান এতেও সন্তুষ্ট ছিলেন না। এর মাত্র তিন সপ্তাহ পর, ২৭ অক্টোবর তিনি প্রেসিডেন্ট মির্জাকে উৎখাত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। এর পরেরদিন তিনি এক আদেশ জারির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর পদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই সাবেক দুইজন প্রধানমন্ত্রীসহ অনেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী, রাজনীতিবিদ, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনেন। ইস্কান্দার মির্জাকে বাধ্য করেন দেশত্যাগ করতে। আইয়ুব খান নিজের ক্ষমতা পাকাপাকি করার জন্য ১৩ জন জেনারেলকে বরখাস্ত করেন এবং নিজেকে ভূষিত করেন ফিল্ড মার্শাল উপাধিতে। তাছাড়া রাজধানী করাচি থেকে প্রথমে স্থানান্তর করেন রাওয়ালপিন্ডিতে, পরে ইসলামাবাদে।

জেনারেল আইয়ুব ১৯৬২ সালে ‘মৌলিক গণতন্ত্র’ বা ‘বেসিক ডেমোক্রেসি’ নামে নতুন একটা রাজনৈতিক ব্যবস্থা চালু করেন। মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থায় শাসনকাঠামোকে পাঁচটি স্তরে বিন্যস্ত করা হয়েছিল। ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা ছিল সর্বনিম্ন স্তরে এবং এর সদস্যদের বলা হতো ‘মৌলিক গণতন্ত্রী’।

১৯৬৫ সালে পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সব নাগরিক নয়, শুধুমাত্র নির্বাচিত ৮০ হাজার মৌলিক গণতন্ত্রী এই নির্বাচনে ভোটদানের অধিকার পান। এই নির্বাচনে বিরোধীদলীয় জোটের প্রার্থী ফাতেমা জিন্নাহকে পরাজিত করে আইয়ুব খান প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আইয়ুব খানের পতন হয় এবং তার পতনের মধ্য দিয়ে মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থার অবসান ঘটে। এই মোটামুটি আইয়ুব খানের ইতিহাস। কিন্তু তাকে কেন দায়ী করছি ১৯৭১ সালের যুদ্ধের জন্য, তা এইবার বিবৃত করা যাক। 

অনেকেই বলেন যে ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা ও পরবর্তীতে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে গুলি চালনোই বাংলাদেশ সৃষ্টির প্রণোদনা, তা কিন্তু নয়। ভাষা আন্দোলন বাঙালির মণিকোঠায় উচ্চাসনে জায়গা পেলেও তা স্তিমিত হতে পারত, যদি পরবর্তী সময়ে সুশাসনের সূত্রপাত ঘটত। বাংলাদেশ সৃষ্টির প্রণোদনার সূত্রপাত ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখল ও মার্শাল ল’ জারির মধ্য দিয়ে। 

১৯৬৫ সালে পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সব নাগরিক নয়, শুধুমাত্র নির্বাচিত ৮০ হাজার মৌলিক গণতন্ত্রী এই নির্বাচনে ভোটদানের অধিকার পান।

মেজর জেনারেল শের আলি খান পাতাউদি যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রথম চিফ অফ স্টাফ ছিলেন, তিনি তার বই ‘দ্য স্টোরি অফ সোলজারিং অ্যান্ড পলিটিক্স ইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড পাকিস্তান’-এ লিখেছেন যে, আইয়ুব খান মার্শাল ল’ জারি করার অনেক আগে থেকেই সেনাবাহিনীকে রাজনীতির সাথে সংযুক্ত করেছিলেন। চিফ অফ স্টাফ শের আলি খান পাতাউদি এই উদ্যোগ না নিতে বলায় আইয়ুব খান উত্তর দেন ‘রাজনীতি আমায় বুঝতে দাও। ব্লাডি পলিটিশিয়ান ও আমজনতা নিকম্মা, দুর্নীতিপরায়ণ ও অযোগ্য। এরা সব একই পাখির পাখার পালক। এদের শিক্ষা দেওয়া দরকার। (পৃষ্ঠা – ১৫৭)। এই বিবৃতি থেকে স্পষ্ট আইয়ুব খান রাজনীতিবিদ ও আমজনতাকে নিয়ে মনে কী বিরূপ ধারণা পোষণ করতেন।

এরপরে আইয়ুব খান আনলেন বেসিক ডেমোক্রেসি। তখন তার আইন মন্ত্রী ছিলেন এক বাঙালি নাম জাস্টিস (রিটায়ার্ড) মুহাম্মদ ইব্রাহিম। তিনি পরিষ্কার আইয়ুব খানকে বললেন যে, এই আইন সাধারণ মানুষ মেনে নেবে না এবং পাকিস্তানকে ভেঙে দেবে। সোফিয়া আহমেদ সম্পাদিত ‘ডায়েরিস অফ মুহাম্মদ ইব্রাহিম’ বইয়ে আইয়ুব খানের সাথে তার দাপ্তরিক তথ্য আদানপ্রদানে এই সাবধান বাণীর উদাহরণ আছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! ‘পাকিস্তান ভাঙার দায় নিতে আমি রাজী নই’ এই কথা বলে তিনি ১৫ এপ্রিল ১৯৬২ সালে মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করেন।

এবারে আইয়ুব খান এক পাঞ্জাবি বিচারক মুহাম্মদ মুনিরকে আইনমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন এবং তার মাধ্যমে এই বেসিক ডেমোক্রেসি আইন চালু করেন। এই মুহাম্মদ মুনিরের লেখা 'ফ্রম জিন্নাহ টু জিয়া' বইয়ে তিনি লেখেন যে—একদিন আইয়ুব খান  তাকে বলেন, এই বাঙালি নেতারা সবসময় বঞ্চনার অভিযোগ তোলেন। আমার মাথা ধরে যায়। এদের থেকে মুক্তি চাই। (পৃষ্ঠা ৯৩)

এরপরে তিনি লিখছেন ‘তখন একজন বাঙালি মন্ত্রী ছিলেন, নাম রমিজউদ্দীন। আইয়ুব খানের নির্দেশ অনুযায়ী আমি তার কাছে গেলাম। বললাম, ভাই আপসে কিছু মীমাংসা করা প্রয়োজন। তোমাদের বাঙালি নেতাদের অভিযোগ থেকে আমাদের মুক্তি দাও। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কেমন মীমাংসা! আমি বললাম, তোমরা পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে যাও, নয়ত কনফেডারেশন বানিয়ে নাও অথবা স্বায়ত্তশাসন নাও, কিছু একটা করো। তিনি উত্তর দিলেন, আমরা সংখ্যাগুরু প্রদেশ, তোমরা সংখ্যালঘু। আমরাই পাকিস্তান। আমরা পাকিস্তান ভাঙব কেন? বেরোতে হলে তোমরা বেরোও’। (পৃষ্ঠা ৯৩)

হারবার্ট ফেল্ডম্যান লিখিত 'দ্য অ্যান্ড দ্য বিগিনিং-পাকিস্তান-১৯৬৯-১৯৭১’ বইয়ে ১ এপ্রিল ১৯৭২-এ নেওয়া আইয়ুব খানের লন্ডনের দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকায় নেওয়া সাক্ষাৎকার লিপিবদ্ধ আছে। সেখানে আইয়ুব খান বলেছেন ‘আমি পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীনতা দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু মাঝে এমন কতগুলো বিষয় এসেছিল যে আমি তা দিতে ব্যর্থ হয়েছিলাম।’

এই সাক্ষাৎকার থেকে পরিষ্কার যে পাকিস্তান ভাঙার পরিকল্পনা বহু আগে থেকেই নেওয়া। ১৯৮১ সালে পাকিস্তানের বিরোধী নেতা বলি খান এক সাক্ষাৎকারে বলেন যে, ১৯৬৮ সালে আইয়ুব খান তাকে প্রস্তাব দেন যে পূর্ব পাকিস্তানকে আলাদা করার উদ্যোগে তিনি যেন আইয়ুব খানকে সমর্থন করেন। তাহলে প্রশ্ন ওঠে পূর্ব পাকিস্তানের নেতারা আইয়ুব খানের এই স্বাধীনতা দানের উদ্যোগ জানতেন না? নাকি সমর্থন করেননি? এককথায় বলা যায় যে তারা জানতেন এবং তারা মনে করতেন যে, পাকিস্তান তারা সৃষ্টি করেছেন, তার সংখ্যাগরিষ্ঠ, কাজেই পাকিস্তান তারা ভাঙবেন কেন? 

১৯৬৫ সালে আইয়ুব খান যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ালেন বেসিক ডেমোক্রেসি আইনের ছাতার তলায়, তখন উল্টো দিকে দাঁড়ালেন কায়েদ-ই-আজমের বোন ফতিমা জিন্নাহ। পশ্চিম পাকিস্তানের সব বিরোধী নেতারা ও পূর্ব পাকিস্তানে শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ ও আরও কিছু দল ফতিমা জিন্নাহকে সমর্থন করলেন। ফলে ভয় পেলেন আইয়ুব খান।

তিনি ডেকে পাঠালেন পূর্ব পাকিস্তানের ন্যাপের নেতা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে। কিনে নিলেন ভাসানীকে। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের ন্যাপের নেতা ছিলেন মহম্মদ আলি কসুরী। আবদুল্লা মালিক রচিত তার জীবনীতে উল্লেখিত আছে কসুরী সাহেবের ভাষ্যে—'আমি যখন জানতে পারলাম যে মৌলানা ভাসানী পয়সা খেয়ে আইয়ুব খানকে সমর্থন করছেন আমি লাহোর থেকে সোজা ঢাকা গেলাম। তারপরে ভাসানীর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম—আপনি পয়সা খেয়ে আইয়ুব খানকে সমর্থন করছেন? ভাসানী উত্তর দিলেন—চীনের প্রেসিডেন্ট চু এন লাইয়ের নির্দেশ মোতাবেক পূর্ব পাকিস্তানের ন্যাপ আইয়ুব খানকে সমর্থন করছে। তবে স্বীকার করছি যে দলের ছেলেদের জন্যে কিছু অর্থ আমি প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে নিয়েছি।’

হেসে ফেললেন কসুরী সাহেব। কী দুর্বল ও হাস্যকর যুক্তি! এরপরে হেরে গেলেন ফতিমা জিন্নাহ যার চিফ পোলিং এজেন্ট ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। মৌলানা ভাসানীর কীর্তি ও আইয়ুব খানের বেসিক ডেমোক্রেসির অভিঘাত শেখ মুজিবকে বাধ্য করল ছয় দফা দাবি আনতে।

পাকিস্তানের সাংবাদিক আলতাফ হুসেন কুরেশি ১৯৬৯ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের একটি সাক্ষাৎকার নেন। সেইখানে তিনি প্রশ্ন করেন—আপনি কি পাকিস্তান থেকে আলাদা হতে চান? উত্তরে শেখ মুজিব বলেন—পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তান কেন আলাদা হতে যাবে যেখানে আমরাই পাকিস্তানের ৫৬ শতাংশ জনসংখ্যায়। পশ্চিমারা যদি আলাদা হতে চায় তারা পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। কিন্তু আমরা পাকিস্তানেই থাকব। (পাকিস্তান এক টুটা হুয়া তারা, লেখক : আলতাফ কুরেশি)।

ইতিমধ্যে ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের গণঅভ্যুত্থানের মুখে ১১ বছরের রাষ্ট্রপতি ক্ষমতার অবসান ঘটিয়ে পদত্যাগ করেন আইয়ুব খান এবং জেনারেল ইয়াহিয়া খানের আগমন ঘটে সেই বছর ২৫ মার্চ। ইয়াহিয়া খান নির্বাচনের তারিখ দিলেন ৫ অক্টোবর ১৯৭০। পরে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে নির্বাচনের তারিখ ৭ ডিসেম্বর পুনরায় নির্ধারণ করা হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ইস্পাত দৃঢ় ভূমিকায় এই নির্বাচনে অবতীর্ণ হলেন। এই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নিরঙ্কুশ জয়ের ফলে অনেকের ধারণা এই নির্বাচন অবাধ ও ষড়যন্ত্রহীন হয়েছিল। একেবারেই ভুল ধারণা। এই নির্বাচনে শেখ মুজিবকে হারাতে জেনারেল ইয়াহিয়া খান তার অধস্তন মেজর জেনারেল গুলাম উমরের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রের জাল পাতলেন।

পাকিস্তানের সাংবাদিক আলতাফ হুসেন কুরেশি ১৯৬৯ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের একটি সাক্ষাৎকার নেন। সেইখানে তিনি প্রশ্ন করেন—আপনি কি পাকিস্তান থেকে আলাদা হতে চান? উত্তরে শেখ মুজিব বলেন—পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তান কেন আলাদা হতে যাবে যেখানে আমরাই পাকিস্তানের ৫৬ শতাংশ জনসংখ্যায়...

ইয়াহিয়া খানের এডিসি আরশাদ সামি খান তার বই 'থ্রি প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড অ্যান এইড' বইয়ে লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ২ কোটি টাকা দিয়েছিলেন কাইয়ুম খান, সবুর খান ও মৌলানা ভাসানীকে।

ব্রিগেডিয়ার এ আর সিদ্দিকী তার বই 'ইয়াহিয়া খান'-এ, উল্লেখ করেন যে আওয়ামী লীগ পূর্ব বাংলায় ৬০ শতাংশের বেশি আসন পাবে না, এই গ্যারান্টি দিয়েছিলেন মৌলানা ভাসানী। কিন্তু বাস্তবে দুটি বাদে সব আসন পেল আওয়ামী লীগ।

পাকিস্তান ইন্টেলিজেন্সের কর্মী সুজা নওয়াজের লেখা ‘ক্রসড শোর্ডস’ বইয়ে (২৬০ পৃষ্ঠায়) লিখেছেন যে শেখ মুজিব নির্বাচনের আগে পশ্চিম পাকিস্তানের মুসলিম লীগের নেতা মিয়া মুমতাজ দৌলতানার কাছে প্রস্তাব পাঠান পাকিস্তানকে অবিভক্ত রাখার স্বার্থে তাদের নির্বাচনী জোট গড়া প্রয়োজন। কিন্তু সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন মিয়া মুমতাজ দৌলতানা। এখানেও প্রমাণ হয় পাকিস্তান ভাঙার কোনো পরিকল্পনা শেখ মুজিবের চিন্তায় ছিল না।

বাংলাদেশ সৃষ্টির পরেও অনেক বাংলাদেশি প্রবীণেরা কিছুটা গ্লানিতে ভুগতেন তাদের আন্দোলন থেকে আদায়কৃত পাকিস্তান ভেঙে যাওয়ায়। এর ফলে বারবার টালমাটাল হয়েছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। কিছুটা এই গ্লানি থেকে সৃষ্টি হয়েছে ভারত বিরোধিতা। কিন্তু বাস্তব চিত্র অন্য।

ভারতের ভূমিকা আলোচনা এখানে না করলেও এককথায় বলা যায় যে, ভারতের সংবিধান অনুযায়ী ভারত কখনোই কোনো দেশকে আক্রমণ করতে পারে না। করতে পারলে কাশ্মীরে একটা অংশ আজও পাকিস্তানের অধীনে থাকতে পারত না।

ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সাহায্য করেছিল অবশ্যই। তার কারণ ছিল শরণার্থীর চাপ ও পার্শ্ববর্তী ভূখণ্ডে গণহত্যা লীলা। কিন্তু ১৯৭১ সালে জেনারেল ইয়াহিয়া খান ধৈর্য হারিয়ে ভারতকে শিক্ষা দিতে আক্রমণ করায় ভারতের সুবিধা হয় যুদ্ধে লিপ্ত হতে।

মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতের সামরিক বাহিনীর সম্মিলিত যুদ্ধ বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন করে পাকিস্তান থেকে, যা চেয়েছিলেন আইয়ুব খান। কাজেই পশ্চিম পাকিস্তানিদের নিজেদের দীর্ঘদিনের অপকর্মের ফলশ্রুতি বাংলাদেশ সৃষ্টি ও বাঙালির বিজয়।

অমিত গোস্বামী ।। কবি ও কথাসাহিত্যিক