ছবি : সংগৃহীত

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে নিশ্চিত পরাজয় জেনে যখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলার মেধাবী সন্তানদের হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তখন তারা এটাই চেয়েছিল যে, বাংলাদেশ যুদ্ধে জিতলেও যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে। রাজাকারেরাও সেই সিদ্ধান্তকে কার্যকর করার জন্য বুদ্ধিজীবীদের খবর পৌঁছে দিয়েছিল পাকিস্তানিদের কাছে এই প্রত্যাশায় যে, বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও যেন তারা বাংলাদেশে নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে পারে।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে মূলত বাংলাদেশে পাকিস্তানপন্থীদের জয় জয়কার দেখলাম। এমনকি রাজাকারের গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়তেও দেখলাম। জাতি হিসেবে লজ্জিত হওয়ার জন্য এর চেয়ে বেশিকিছুর প্রয়োজন হয় না। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে তাদের (রাজাকার এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে যারা যুক্ত ছিল) বিচারের মাধ্যমে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার পদক্ষেপ শুরু করলেন। ধীরে ধীরে বিচার এবং রায় কার্যকর হওয়ার মাধ্যমে জাতি কলঙ্কমুক্ত হচ্ছে।

দুই দশক আগের ঘটনা। তখন পদ্মা সেতু ছিল না। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ ফেরিতে অথবা লঞ্চে করে পদ্মা পার হতেন; মাওয়া-জাজিরা, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি বা পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে। একদিন তোফায়েল আহমেদ বঙ্গবন্ধুর কবর জিয়ারত করে টুঙ্গিপাড়া থেকে ফিরছিলেন দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে। পাটুরিয়া থেকে ফেরিতে করে পার হচ্ছেন সরকারের একজন মন্ত্রী। নাম আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ। তার গাড়িতে জাতীয় পতাকা পদ্মার উদাসীন বাতাসে পতপত করে উড়ছে। সেই দিনের কথা মনে করে আজও আফসোস করেন আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ ও বরেণ্য নেতা, এই মুক্তিযোদ্ধা।

তার মতো অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা, অসংখ্য ছেলে হারানো মা-বাবার হাহাকার আমরা দেখেছি। তাদের বিচার হবে, তাদের বিচার দেখে যেতে পারবেন এমন ধারণা তখনো তাদের ছিল না। বাংলাদেশের মাটিতে তাদের বিচার হয়েছে। মানবতাবিরোধী ঐসব হয়েনাদের বিচার করতে পেরে জাতি কলঙ্কমুক্ত হওয়ার পথে।

মুজাহিদের ফাঁসির মাধ্যমে আমরা কিছুটা হলেও স্বস্তি খুঁজে পেয়েছি; শুধু কয়েকটি পরিবারর জন্য দুঃখ মোচন নয়, পুরো দেশের জন্য। গণহত্যা, অপহরণ-নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, বুদ্ধিজীবী হত্যা, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত থেকে মুজাহিদ ও তার সহযোগীরা এবং তার দল জামায়াতে ইসলামী এই দেশটির জন্মের বিরোধিতা করেছিল। বিলম্বিত এই বিচারও আজ আমাদের কাছে এক বড় ন্যায়বিচার হিসেবে হাজির হয়েছে।

সিরাজুদ্দীন হোসেন, আলতাফ মাহমুদ বা শহীদ বদিউল আলম, শাফী ইমাম রুমী, আবদুল হালিম চৌধুরী জুয়েল ও মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদের মতো তরুণ গেরিলা যোদ্ধারা শান্তিতেই ঘুমাতে পারেন এখন। রুমীর মা জাহানারা ইমাম বা আজাদের মা সাফিয়া বেগমও কী কবরে একটু বেশি শান্তি পান না! মুজাহিদের মতো অনেক মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। তাদের বিচার হয়েছে। অনেকের ফাঁসির রায় হয়েছে। রায় কার্যকরও হয়েছে। বাকিদের রায় কার্যকর হবে এই অপেক্ষায় গোটা জাতি।

শুধু কি বদি, রুমী, জুয়েল, ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সোনার ছেলেদের ওপর, বুদ্ধিজীবীদের ওপর নারকীয়, বর্বরোচিত, দানবীয়, জঘন্যতম, নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। বাংলাদেশের সূর্যসন্তানদের হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দেশকে মেধাশূন্য করায় ছিল তাদের এই হীন উদ্দেশ্য। আমরা যেন নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ি।

আমরা যেন আমাদের সৃজনশীলতা দিয়ে দেশকে গড়ে তুলতে না পারি। তারা তাদের উদ্দেশ্যের একটি অংশ সফলভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে আমাদের অনেক সূর্য সন্তানদের হত্যা করলেও বাংলাদেশ মেধাশূন্য করতে পারেনি। পারেনি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে রুখে দিতে।

১৪ ডিসেম্বরের দুই দিন পরই আমরা বহু আকাঙ্ক্ষিত বিজয় লাভ করেছিলাম। পৃথিবীর বুকে নতুন একটি দেশ হিসেবে সেই দিনই (১৬ ডিসেম্বর) প্রকৃতপক্ষে আত্মপ্রকাশ করতে পেরেছিলাম।

১৯৭১ সাল পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বৈষম্যের চূড়ান্ত রূপ প্রত্যক্ষ করেছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ স্বায়ত্তশাসন এবং তাদের ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক অধিকারের স্বীকৃতি চেয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার মানতে রাজি নয়, যার ফলে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয় এবং অবশেষে স্বাধীনতার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু হয়।

সংঘাত তীব্র হওয়ার সাথে সাথে, পাকিস্তানি মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর পরিকল্পনা অনুসারে তাদের সামরিক জান্তা একটি নৃশংস ক্র্যাকডাউন শুরু করে, শুধু রাজনৈতিক কর্মীদেরই নয়, স্বাধীনতা আন্দোলনের সম্ভাব্য অনুঘটক হিসেবে দেখা বুদ্ধিজীবীদেরও লক্ষ্য করে। মূলত বুদ্ধিজীবীদের হত্যার পরিকল্পনা ২৫ মার্চের আগেই তারা শুরু করেছিল এবং যুদ্ধচলাকালে তা একে একে কার্যকর করতে থাকে।

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতে, স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের চূড়ান্ত বিজয়ের প্রাক্কালে, একটি অন্ধকার অধ্যায় চিহ্নিত করে যখন অধ্যাপক, দার্শনিক, ডাক্তার, সাহিত্যিক, কবি, সাংবাদিক এবং অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গদের পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পরিকল্পিতভাবে অপহরণ, নির্যাতন এবং হত্যা করেছিল এবং তাদের সাহায্য করেছিল দেশের রাজাকার, আল বদর এবং আল শামস বাহিনী। রাজাকার, আল বদর এবং আল শামস বাহিনী পাকিস্তানিদের সাহায্য করার বড় কারণ হলো, পাকিস্তানিরা মুসলমান এবং রাজাকার, আল বদর এবং আল শামস তারাও মুসলমান।

এই গণহত্যায় এক হাজার থেকে পনের শতাধিক বুদ্ধিজীবী নিহত হন। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শহীদদের তালিকায় পূর্ব পাকিস্তানের কিছু উজ্জ্বল মনীষীও রয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন— জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্য, আনোয়ার পাশা, আবুল খায়ের, সিরাজুল হক খান, ড. ন আ ম ফয়জুল মহী, হুমায়ূন কবির, এস. এম. এ. রাশীদুল হাসান, সাজিদুল হাসান, ফজলুর রহমান খান, আ ন ম মুনীরুজ্জামান, এ মুকতাদির, শরাফত আলী, এ আর কে খাদেম, এম সাদেক, ড. মো. সাদত আলী, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, এস. এম. এ. রাশীদুল হাসান, এম মর্তুজা প্রমুখ।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের মধ্যে—হবিবুর রহমান, শ্রী সুখারঞ্জন সমাদ্দার, মীর আবদুল কাইউম প্রমুখ। চিকিৎসকদের মধ্যে মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি, আব্দুল আলিম চৌধুরী, শামসুদ্দীন আহমেদ, হুমায়ুন কবীর, আজহারুল হক, সোলায়মান খান, আয়েশা বদেরা চৌধুরী, কসির উদ্দিন তালুকদার, মনসুর আলী, মোহাম্মদ মোর্তজা, মফিজউদ্দীন খান জাহাঙ্গীর, নুরুল ইমাম, এস কে লালা, হেমচন্দ্র বসাক, ওবায়দুল হক, আসাদুল হক, মোসাব্বের আহমেদ, আজহারুল হক, মোহাম্মদ শফী প্রমুখ।

এছাড়া গোবিন্দ চন্দ্র দেব (দার্শনিক), শহীদুল্লাহ কায়সার (সাংবাদিক ও সাহিত্যিক), ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত (রাজনীতিবিদ), রণদাপ্রসাদ সাহা (সমাজসেবক এবং দানবীর), নিজামুদ্দীন আহমেদ (সাংবাদিক), যোগেশচন্দ্র ঘোষ (শিক্ষাবিদ, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক), সেলিনা পারভীন (সাংবাদিক), সিরাজুদ্দীন হোসেন (সাংবাদিক), আ ন ম গোলাম মুস্তফা (সাংবাদিক), আলতাফ মাহমুদ (গীতিকার ও সুরকার), জহির রায়হান (লেখক, চলচ্চিত্রকার), মেহেরুন্নেসা (কবি), আবুল কালাম আজাদ (শিক্ষাবিদ, গণিতজ্ঞ), নজমুল হক সরকার (আইনজীবী), নূতন চন্দ্র সিংহ (সমাজসেবক, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক), রমণীকান্ত নন্দী (চিকিৎসক ও সমাজসেবক) এবং আরও অনেক শিক্ষাবিদ।

১৯৭২ সালের ৩১ ডিসেম্বর, বাংলাদেশ সরকার শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এই দিনে বাংলাদেশের মানুষ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায় এবং তাদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে বিনম্র শ্রদ্ধায়।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক, সাংবাদিক, কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক ও অন্যান্য পেশাজীবী। তারা ছিলেন বাংলাদেশের হৃৎপিণ্ড, বাংলাদেশের হৃদয় এবং তাদের মৃত্যু বাঙালি জাতির জন্য একটি বড় আঘাত। মুক্তিযুদ্ধে তারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

যুদ্ধক্ষেত্রে এবং শরণার্থী শিবিরে ডাক্তার-নার্সরা আহত ও অসুস্থদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছেন। প্রকৌশলীরা মুক্তিবাহিনীর (বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধা) সারাদেশে চলাচলে সহায়তা করার জন্য সেতু ও রাস্তা নির্মাণ করেন। শিক্ষকগণ বাংলাদেশের জনগণকে যুদ্ধ ও স্বাধীনতার গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষা দেন। সাংবাদিকরা যুদ্ধ এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নৃশংসতার বিষয়ে দেশি বিদেশি সংবাদমাধ্যমে লিখেছেন।মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালির দুর্ভোগের কথা লিখেছেন লেখক। শিল্পীরা এমন শিল্প তৈরি করেছেন যা বাংলাদেশের মানুষদের অনুপ্রাণিত করেছে এবং বিশ্বকে যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখিয়েছে।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের মাধ্যমে অনেক বুদ্ধিজীবী নাম পরিচয় গোপন করেও তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে গিয়েছেন। তারা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা, পথপ্রদর্শক ও সংগঠক। তারা প্রথম থেকেই মানুষের মধ্যে স্বাধীনতার চেতনা জাগিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

তারা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সরবরাহ এবং অর্থ সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিদেশি জনমত গঠনেও তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশি বুদ্ধিজীবী গণহত্যায় লিপ্ত অপরাধীদের বিচার একটি জটিল এবং চ্যালেঞ্জিং বিষয়। মূলত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমেই তাদের হত্যার বিচার শুরু হয়েছে। ১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচার বিষয়ে ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে বাংলাদেশে বিশেষত তরুণ প্রজন্মের মাঝে ব্যাপক সচেতনতার সৃষ্টি হয়।

আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে এই গণদাবি অন্তর্ভুক্ত করে। ২০০৮-এর ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশভাবে বিজয় লাভ করার পর পরই নির্বাচিত দল আওয়ামী লীগ কর্তৃক গঠিত সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করে।

এরপর ২০০৯ সালের ২৯ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে এই বিষয়ে একটি প্রস্তাব পাস করা হয়। ১৯৭৩ সালে প্রণীত এই সংক্রান্ত আইনকে যুগোপযোগী করার জন্য ২০০৯ সালের ৯ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কিছু সংশোধনী জাতীয় সংসদে মৌখিক ভোটে পাস করা হয়।

২০১০ সালের ২৫ মার্চ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ প্রতিষ্ঠিত হয়। বিচারকে আরও গতিশীল করতে ট্রাইব্যুনাল-২ গঠিত হয় ২০১২ সালের ২২ মার্চ। তবে আইন তখনো ত্রুটিপূর্ণ থাকায় আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আপিল করা যাচ্ছিল না।

তখন এই দেশের তরুণ প্রজন্ম রাস্তায় নেমে আসে। গঠন করে গণজাগরণ মঞ্চ। সেই দিনে তরুণদের অবদান ভুললে চলবে না। তারই ফলে আইন সংশোধিত হয়। এবং সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি হয়। আপিলে আব্দুল কাদের মোল্লার (কবি মেহেরুন্নেসার খুনি) ফাঁসির রায় হয় এবং তা বাস্তবায়িতও হয় এবং তার মাধ্যমেই বাংলাদেশ দায়মুক্তির সুযোগ লাভ করে।

বিচার চলছে। এখন পর্যন্ত ১৫৫ জনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ৪৩ (আমৃত্যুসহ) জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১০১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশি বুদ্ধিজীবী গণহত্যার অপরাধীদের বিচার ভুক্তভোগী এবং তাদের পরিবারের জন্য ন্যায়বিচার আনার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

যাই হোক, এই অপরাধের জন্য দায়ী সবাইকে বিচারের আওতায় আনার জন্য আরও কাজ করা দরকার। শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচারের জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, যেমন পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার করা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চাওয়া এবং বিচার প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুত ও কার্যকর করা। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হলে তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধকে সুসংহত করবে।

বুদ্ধিজীবীদের গণহত্যা ছিল একটি ভয়ংকর ঘটনা যা জাতি কখনোই ভুলবে না। তাদের আত্মত্যাগ এই জাতি সবসময় স্মরণ করবে, তাদের আত্মত্যাগ বাঙালির অটল সংকল্পের প্রতীক।

বুদ্ধিজীবীদের গণহত্যা ছিল দেশের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করার একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা, কিন্তু তা ব্যর্থ হয়। বাংলাদেশের জনগণ এই ট্র্যাজেডি কাটিয়ে উঠেছে এবং একটি সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

ড. ফেরদৌস জামান ।। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সচিব