ছবি : সংগৃহীত

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের রূপকল্প এবং অভিলক্ষ্য হলো—প্রবাসী বাংলাদেশিদের কল্যাণ, নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিতকরণ; তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন। এছাড়া নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধান এবং বিদ্যমান শ্রমবাজার সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ; অভিবাসন ব্যয় হ্রাসসহ অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, ইত্যাদি।

‘বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন, ২০১৩’, যা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে ‘বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী (সংশোধন) আইন, ২০২৩’ অনুসারে ‘অভিবাসী’ বা ‘কর্মী’ বা ‘প্রবাসী’ হলেন বাংলাদেশের কোনো নাগরিক যিনি কোনো কর্ম বা পেশায় নিযুক্ত হওয়ার উদ্দেশ্যে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন বা বিদেশে গমন করেছেন এবং কোনো বিদেশি রাষ্ট্রে অবস্থানরত আছেন অথবা কোনো কর্মে নিযুক্ত থাকার পর বা নিযুক্ত না হয়ে বাংলাদেশে ফেরত এসেছেন।

অভিবাসী কর্মীদের অধিকার ও দায়-দায়িত্ব বিষয়ে এই আইনে সুস্পষ্ট বিধান আছে যেমন—‘তথ্য অধিকার’ যেখানে বলা আছে বিদেশ যাওয়ার পূর্বে অভিবাসন প্রক্রিয়া এবং কর্মসংস্থান চুক্তি বা কর্ম পরিবেশ সম্পর্কে তথ্য বা বিভিন্ন আইনগত অধিকার সম্পর্কে জানার অধিকার যেমন—অভিবাসী কর্মী এবং অভিবাসনের নামে প্রতারণার শিকার ব্যক্তিদের যুক্তিসঙ্গত আইনগত সহায়তা পাওয়ার অধিকার বা দেওয়ানি মামলা দায়েরের অধিকার এবং দেশে ফিরে আসার অধিকার।

অভিবাসী কর্মী এবং তাদের পরিবারের কল্যাণ ও উন্নয়নের জন্য ব্যাংক ঋণ, কর রেয়াত, সঞ্চয়, বিনিয়োগ, আর্থিক সহায়তা, বৃত্তি, দক্ষতাভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও সনদায়ন, পুনরায় একত্রীকরণ ইত্যাদি সরকার কর্তৃক সহজলভ্য করার ব্যবস্থা গ্রহণের অধিকার। নারী অভিবাসী কর্মীদের সম্মান, মর্যাদা, অধিকার, নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সরকার কর্তৃক নিশ্চিত করণের অধিকার ইত্যাদি।

এছাড়া অভিবাসী কর্মীদের অধিকার আদায়ের পাশাপাশি কিছু দায়-দায়িত্ব আছে যেমন—প্রত্যেক অভিবাসী কর্মীকে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে ও বিদেশে যাওয়ার জন্য বৈধ পন্থা অবলম্বন করতে হবে এবং বিদেশে অবস্থানকালে আইন বহির্ভূত কোনো কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করতে পারবে না এবং অভিবাসন বা বৈদেশিক কর্ম সংক্রান্ত বিষয়ে সব তথ্য প্রদান করতে বাধ্য থাকবে। অন্যথায়, এই আইনের অষ্টম অধ্যায় অনুযায়ী দণ্ডপ্রাপ্ত হবে।   

এই আইনে প্রবাসীদের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেমন—বিদেশে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে শ্রমিক প্রেরণ সংক্রান্ত বিধান যার সব কার্যক্রম যথা—বাংলাদেশ হইতে কর্মী নির্বাচন এবং তাদের নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি সরকার বা সরকার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্তৃপক্ষের ওপর ন্যস্ত হবে এবং কর্মী রিক্রুটমেন্ট সংক্রান্ত কার্যক্রম ব্যুরো বা সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সংস্থা, কোম্পানি বা রিক্রুটিং এজেন্ট পরিচালনা করতে পারবে।

অভিবাসনে আগ্রহী কর্মীকে ব্যুরোর নিকট হইতে বা প্রবাসী কর্মীকে বাংলাদেশ বা অবস্থানরত দেশে বাংলাদেশ মিশন বা দূতাবাস হইতে অবশ্যই নিজ পেশা উল্লেখ করে নির্ধারিত পদ্ধতিতে নিবন্ধন করতে হবে যাতে কর্মীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করার দায়িত্ব এই আইনের আওতায় সঠিকভাবে পালন করা যায় এবং নির্বিঘ্নে অভিবাসীদের বহির্গমন ছাড়পত্র প্রদান করা সম্ভব হয়।

বৈদেশিক কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে অভিবাসনের জন্য সরকার, আদেশ দ্বারা, অভিবাসন ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করতে পারবে। সরকার ‘অভিবাসন বিষয়ক দ্বিপাক্ষিক চুক্তি’ সম্পাদন করতে পারবে সংশ্লিষ্ট বৈদেশিক কর্মসংস্থান দেশের সাথে যার উদ্দেশ্য হবে বাংলাদেশি নাগরিকের অভিবাসনের সুযোগ বৃদ্ধি, অভিবাসন ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, প্রত্যাবাসন, পুনর্বাসন, অভিবাসী বা তাদের পরিবারের সদস্যদের কল্যাণ ও অধিকার নিশ্চিত করন।

এছাড়া ‘কর্মসংস্থান চুক্তির’ ক্ষেত্রে রিক্রুটিং এজেন্ট বৈদেশিক নিয়োগকারীর প্রতিনিধি হিসেবে গণ্য হবে এবং নির্বাচিত কর্মী ও নিয়োগকারীর মধ্যে কর্মসংস্থান চুক্তি সম্পাদন করবে যেখানে কর্মীর বেতন, আবাসন সুবিধা, কাজের মেয়াদ, মৃত্যু বা জখম-জনিত কারণে প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ, বিদেশ গমন এবং ফেরত আসার খরচ ইত্যাদি উল্লেখ থাকবে এবং চুক্তি বলবৎ বা ভঙ্গের ক্ষেত্রে রিক্রুটিং এজেন্ট এবং নিয়োগকারী যৌথ ও পৃথকভাবে দায়ী হবে।

সরকার বিদেশে শ্রমবাজার সম্প্রসারণ ও অভিবাসীদের স্বার্থ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে বা বাংলাদেশ মিশন বা দূতাবাসে ‘শ্রম কল্যাণ উইং’ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে এবং এই আইন ও বিধি মেনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দ্বারা নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করবে যেমন—কর্মরত অভিবাসীদের কর্মস্থল পরিদর্শন করে তার অবস্থা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ সরকারের নিকট একটি বার্ষিক প্রতিবেদন প্রেরণ করবে যাতে অভিবাসী কর্মীদের তালিকা সহ কর্মের বিবরণ, পরিবেশ, সুবিধা, সমস্যাবলী বা কর্মীদের বিরুদ্ধে আনিত মামলার তালিকা ও বিবরণ, যদি থাকে, এবং আটককৃত বা কারাদণ্ড প্রাপ্ত কর্মী সম্পর্কে তথ্য বা মৃত কর্মীর তালিকা, মৃত্যুর কারণ ও দাফন, ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত তথ্য বা বাংলাদেশ মিশন বা দূতাবাস কর্তৃক প্রদত্ত সেবা, পরামর্শ, আইনি সহায়তা বা অভিবাসী কর্মীর অধিকার বিষয়ক বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক চুক্তির বাস্তবায়ন সংক্রান্ত ব্যবস্থা বা পাসপোর্ট, ভিসা, কনস্যুলার সেবা সংক্রান্ত সুবিধাদি ইত্যাদি।

অন্যান্য আইন এবং বিধানের পাশাপাশি সরকার এই আইন দ্বারা বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মীদের জন্য সুরক্ষা ব্যবস্থা প্রদান করেছেন বা করতে চেষ্টা করেছেন তবে এই আইনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ অভিবাসী কর্মীদের নিজের অধিকার এবং দায়িত্ব সম্পর্কে আরও অনেক বেশি অবগত এবং সচেতনতার প্রয়োজন কারণ যে তার অধিকার সম্পর্কে অজ্ঞ বা অচেতন আইন তাকে সাহায্য করে না। 

মো. মাহমুদুল ইসলাম শাকিল ।। শিক্ষানবিশ আইনজীবী, ঢাকা জজ কোর্ট