ঘূর্ণিঝড় মিধিলির ক্ষতিকর প্রভাব
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যমতে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ ঘনীভূত হয়ে ১৭ নভেম্বর সকালে ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয়, যার নামকরণ করা হয় ঘূর্ণিঝড় মিধিলি। ২০২৩ সালের উত্তর ভারত মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের পঞ্চম নামকৃত ঘূর্ণিঝড় এটি।
মিধিলির প্রভাবে দক্ষিণ অঞ্চলে ফসলের ক্ষতি:
ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে বরগুনা, পিরোজপুর ,ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পটুয়াখালী, বরিশাল, হাতিয়া উপজেলা, ভোলার চরাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে সকাল থেকে অবিরাম বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাসের কারণে ক্ষতি হয়েছে আমন ধানের। গাছের গোড়ায় পানি জমে শাকসবজিতে পচন ধরার আশঙ্কা রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
মিধিলির প্রভাবে ক্ষতির মুখে বোরোর বীজতলা, আমন ধান ও শীতকালীন সবজি। বরগুনা, পিরোজপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আমন ধান, পানের বরজ ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। কীভাবে ক্ষতি কাটিয়ে উঠবেন, তা নিয়ে চিন্তিত কৃষক। পটুয়াখালী বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর ধানের বীজতলা। বিপুল পরিমাণ ফসলি জমিও নিমজ্জিত রয়েছে পানিতে।
আরও পড়ুন
বেশকিছু এলাকায় আধাপাকা আমন ধান নুয়ে পড়েছে। বরিশালে পিরোজপুরের লক্ষ্মীপুরের নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট, হাতিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় হেলে পড়েছে পাকা ধান। প্রায় ২০ শতাংশ আমন ধান হেলে পড়েছে। এবার আমন ধানের ফলন ভালো হলেও সব ধান ঘরে তুলতে পারিনি কৃষক।
ভোলার চরাঞ্চলে মনপুরা, তজমুদ্দিন ও সদরের অবিরাম বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাসের কারণে ক্ষতি হয়েছে আমন ধানের। গাছের গোড়ায় পানি জমে শাকসবজিতে পচন ধরার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, হাতিয়া, ভোলা, বরগুনায়, পিরোজপুরের চরাঞ্চলে শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
মিধিলির প্রভাবে ক্ষতির মুখে বোরোর বীজতলা, আমন ধান ও শীতকালীন সবজি। বরগুনা, পিরোজপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আমন ধান, পানের বরজ ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। কীভাবে ক্ষতি কাটিয়ে উঠবেন, তা নিয়ে চিন্তিত কৃষক।
বিভিন্ন জেলায় বেশকিছু গাছপালার ক্ষতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে জেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া অনেক ট্রলার ও জেলে এখনো নিখোঁজ রয়েছে।
ঢাকার বায়ু দূষণে উন্নতি:
ঘূর্ণিঝড়ের মিধিলির প্রভাবে রাজধানীতে ১৬ নভেম্বর বিকেল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে থাকে। মিধিলি উপকূলে আঘাত হানার পর রাজধানী জুড়ে মাঝারি বৃষ্টি হয়েছে। এতে করে ধোঁয়াশায় ভরপুর নগরীর বায়ুর মান বেশ খানিকটাই উন্নত হয়েছে।
আরও পড়ুন
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুসারে, বায়ু দূষণের কারণে স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যানসার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের কারণে মৃত্যুহার বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষ মারা যায়।
মিধিলির প্রভাবে বাজারে স্বস্তি:
বৃষ্টির প্রভাবে কেরানীগঞ্জের জিনজিরা, আগানগর ও রাজধানীর কারওয়ানবাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায় কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে সবজির দাম।
ক্রেতারা না এলে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সবজির দাম আরও পড়ে যেতে পারে। ভোররাত থেকে বৃষ্টি হওয়ায় ক্রেতারা আসতে পারছেন না। মাছ-সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় ক্রেতা সংকটে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
বাজারে দেখা যায়, ১৭ নভেম্বর প্রতি কেজি বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৪০ টাকা, কহি ৫০ টাকা, পেঁপে ২৫ থেকে ৩০ টাকা, শসা ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বরবটি ৫০ টাকা, কচুর মুখী ৭০ টাকা, পটোল ৪০ থেকে ৫০ টাকা ও গাজর বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়।
এক বছরে চারটি ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’, ‘হামুন’, ‘বিপর্যয়’ এবং তারপর ‘মিধিলি’ আঘাত হেনেছে বাংলাদেশে, এটা স্বাভাবিক বলে মনে করেন না পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।
এছাড়া শিম ৪০ থেকে ৫০ টাকা, আলু ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, নতুন আলু ১০০ টাকা, শালগম ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও ধনেপাতার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। আর প্রতি পিস ফুলকপি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা ও লাউ ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মিধিলির ব্যতিক্রমী আচরণ:
এক বছরে চারটি ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’, ‘হামুন’, ‘বিপর্যয়’ এবং তারপর ‘মিধিলি’ আঘাত হেনেছে বাংলাদেশে, এটা স্বাভাবিক বলে মনে করেন না পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। ২০২৩ সালের জুলাই ও সেপ্টেম্বরের পর অক্টোবর মাসটিও ছিল সর্বোচ্চ উষ্ণ মাস।
আরও পড়ুন
প্রকৃতির এই ‘নেতিবাচক পরিবর্তনের’ পেছনে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সম্পর্ক খুঁজছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। কেউ কেউ মনে করেন, এতে খুব অস্বাভাবিকতা নেই।
অক্টোবর ও নভেম্বর ‘ঘূর্ণিঝড়প্রবণ’ মাস হিসেবে পরিচিত। বর্ষা ঋতুর শেষে কার্তিক মাসে একটানা কয়েক দিন সাধারণত বৃষ্টি হয়। এরপরই শীত জেঁকে বসে। এটা বরাবরই হয়ে আসছে। তবে সবকিছু বিবেচনায় ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সামগ্রিকভাবে আরও বেশি প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন।
সমীরণ বিশ্বাস ।। কৃষি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ
srb_ccdbseed@yahoo.com