ছবি : সংগৃহীত

বেশ কিছুদিন ধরেই দেশের প্রায় সব জায়গায় বাচ্চাদের ‘হ্যান্ড ফুট মাউথ ডিজিজ’ নামক ভাইরাসজনিত রোগটির কথা শোনা যাচ্ছে। কক্সাকি নামক ভাইরাস এই রোগের জীবাণু এবং এটি খুবই ছোঁয়াচে।

সাধারণত শিশুদের মধ্যে এই রোগ হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। তবে যেকোনো বয়সীরা বিশেষ করে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারাও আক্রান্ত হতে পারেন।

বয়স্কদের তুলনায় বাচ্চাদের লক্ষণ বেশি এবং বাচ্চারাই বেশি কষ্ট পেয়ে থাকে। বিশেষ করে একদমই খেতে পারে না এবং কান্নাকাটি করে।

গবাদি পশুর ‘ফুট অ্যান্ড মাউথ’ নামে একটি অসুখ রয়েছে যা এই রোগ থেকে ভিন্ন ধরনের।

যেভাবে ছড়ায়:

কক্সাকি ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের ফোসকা থেকে নির্গত রস, সরাসরি স্পর্শ, হাঁচি, কাশি, সর্দি, মুখের লালা, ব্যবহৃত পোশাক, স্পর্শ করা যেকোনো জিনিস এবং মলের মাধ্যমেও এটি ছড়ায়।

আক্রান্ত হওয়ার ৫-৭ দিনের মধ্যেই মূলত রোগের লক্ষণ দেখা যায় এবং ফোসকা ওঠার প্রথম সপ্তাহেই বেশি ছড়ায়। এই রোগ একটি বাচ্চার একাধিকবার হতে পারে।

রোগের লক্ষণ:

হালকা থেকে তীব্র জ্বর সেইসাথে গলাব্যথা, শরীরের বিভিন্ন স্থানে পানি ভর্তি ছোট বড় ফোসকা, মুখের ভেতরে ফোসকা থেকে ক্ষত, সর্দি, কাশি, ছোট বাচ্চাদের মুখ দিয়ে ক্রমাগত লালা নিঃসরণ, অস্থিরতা, খাবারে অরুচি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়।

হাত, পা, কনুই, হাঁটু, হাত-পায়ের তালু ও জিহ্বাতে সাধারণত ফুসকুড়ি দেখা দেয় তবে উরু, পেট, পিঠ এবং নিতম্বেও হতে পারে। প্রথমে হালকা লাল অথবা কালো রঙের উঁচু গোটা দেখা দেয় যা পরে পানিযুক্ত ফোসকার মতো হয়ে ওঠে। ত্বকের ফোসকা বা ফুসকুড়ি অনেকটা জলবসন্তের মতো দেখতে হলেও দুইটা আলাদা ভাইরাস দিয়ে হয়ে থাকে।

‘হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ’ ডিজিজে প্রথমে গলা ব্যথা, জ্বর এবং খাবারে অরুচি শুরু হয়ে কয়েকদিন পর মুখ ও জিহ্বায় পানিপূর্ণ বা পুঁজযুক্ত ফুসকুড়ি হয়। মুখে ক্ষত হয় বলে ব্যথা হয় এবং বাচ্চাদের খেতে কষ্ট হয় বলে খেতে চায় না। এরপরে আস্তে আস্তে হাত-পা এবং অন্যান্য স্থানে দেখা দেয়।

জটিলতা:

এই রোগে মারাত্মক কোনো জটিলতার সম্ভাবনা কম। তবে খেতে না পারার কারণে কখনো কখনো শিশুর শরীরে পানির ঘাটতি এবং অপুষ্টি দেখা দিতে পারে। কখনো কখনো এই ভাইরাস মস্তিষ্কে প্রবেশ করে সংক্রমণ করতে পারে। যদিও এমনটি ঘটার সম্ভাবনা খুবই কম।

চিকিৎসা:

এই রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে রোগের লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে। তবে সাধারণত ৭-১০ দিনের মধ্যে এই রোগ এমনিতেই ভালো হয়ে যায়।

বাচ্চাদের পর্যাপ্ত পানীয়, নরম, পুষ্টিকর এবং কম মশলাযুক্ত খাবার দিতে হবে। তেলেভাজা খাবার না দেওয়াই উত্তম। এমনকি ফলের জুসও নিষেধ করা হয়। অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের এখানে কোনো ভূমিকা নেই।

প্রতিরোধ:

আক্রান্ত ব্যক্তি বা শিশুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং আলো-বাতাস পূর্ণ আলাদা ঘরে রাখতে হবে। রোগীর সংস্পর্শ, ব্যবহার করা কাপড় এবং হাঁচি-কাশি থেকে দূরে থাকতে হবে।

আক্রান্ত শিশুকে ৫-৭ দিন স্কুলে পাঠানো যাবে না। জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। কোনো কিছু স্পর্শ করে সাবান দিয়ে হাত না ধুয়ে বা স্যানিটাইজার ব্যবহার না করে চোখ-নাক-মুখে হাত দেওয়া যাবে না।

ফল এবং শাকসবজি ভালোভাবে ধুয়ে খেতে হবে। খাবার খাওয়ার আগে ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। হাঁচি-কাশিতে রুমাল বা টিস্যু ব্যবহার করতে হবে।

রোগীর পরিচর্যাকারীকে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার করা জিনিসপত্র বা জামাকাপড় স্পর্শ করে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে অথবা গ্লাভস ব্যবহার করা যেতে পারে।

ডা. কাকলী হালদার ।। সহকারী অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ