শেখ হাসিনা যখন উন্নয়নের ধারক-বাহক
এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭৬৫ মার্কিন ডলার।
মানবসম্পদ সূচকে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৯, জলবায়ু ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ২৭ দশমিক ২ পয়েন্টসহ সব বিষয়ে বাংলাদেশ আজ বিস্ময়। এই বিস্ময়ের কারিগর একজনই দেশনেত্রী শেখ হাসিনা। তার হাতে থাকলে, পথ হারাবে না বাংলাদেশ।
বিজ্ঞাপন
তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। ক্ষুদ্র আয়তনের একটি উন্নয়নশীল দেশ হয়েও বাংলাদেশ ইতিমধ্যে সারা বিশ্বে প্রাকৃতিক দুর্যোগের নিবিড় সমন্বিত ব্যবস্থাপনা এবং দারিদ্র দূরীকরণে ভূমিকাসহ বিবিধ খাতে এগিয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন
‘যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আজকের এই উত্তরণ—যেখানে রয়েছে এক বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়ার ইতিহাস’ সরকারের রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের এটি বড় অর্জন। এসবই সম্ভব হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাহসী এবং অগ্রগতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ও উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে নিয়ে এসেছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পোশাক শিল্প, ওষুধ শিল্প, রপ্তানি আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচক আজ সমৃদ্ধ।
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ জনগণের মাঝে স্বস্তি নিয়ে এসেছে। এতকিছুর পরও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদাত্ত আহ্বান, ‘আসুন দলমত নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’
করোনা যখন সারা বিশ্ব গ্রাস করে নিয়েছে তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতটুকু বিচলিত না হয়ে টিকা আনলেন। বিনামূল্যে করোনার টিকা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে দিলেন এইভাবেও দেশকে মহামারিমুক্ত করা যায়। উন্নত অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে ছিলাম আমরা মহামারি মুক্ত করার ক্ষেত্রে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন, পোশাক শিল্প, ওষুধ শিল্প, রপ্তানি আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচক আজ সমৃদ্ধ।
নবজাতকের মৃত্যুহার হ্রাস এবং ৫ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুহার হ্রাসের ক্ষেত্রেও ২০২১ সাল পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জন বেশ সন্তোষজনক। এইডস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণেও বাংলাদেশ সফল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশকৃত ২টি টিকাপ্রাপ্ত শিশুদের জীবিত থাকা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের সাফল্যের হার ৯৭, যা এসডিআর রিপোর্ট অনুযায়ী সন্তোষজনক।
জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল চালু করায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রাচীন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্রাউন ইউনিভার্সিটি বিশেষ সম্মাননা দিয়েছে।
কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে ভালো করেছে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালে ১৬৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০১তম। যা ২০২২ সালে ১৬৩টি দেশের মধ্যে ছিল ১০৪তম অবস্থানে। জনবহুল দেশে নির্বাচন পরিচালনায় স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুতা আনয়ন, বৃক্ষরোপণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকের ইতিবাচক পরিবর্তন প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন
দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করেন দিনরাত। তাই তিনি ১৯৯৭ সালে শুরু করেন গৃহহীনদের জন্য বাসস্থান তৈরির উদ্যোগ। ‘আশ্রয়ণ’ প্রকল্পের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিহীন-গৃহহীন ছিন্নমূল মানুষকে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের আওতায় আনছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা ঘোষণা দিয়েছেন, ‘বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না।’
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলিত সম্প্রদায়, গৃহহীন, আশ্রয়হীন, অসহায়, দরিদ্র মানুষের জন্য থাকার ঘর করার যে পরিকল্পনা শুরু করেছিলেন। আশ্রয়ণ প্রকল্প-১, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর পর এখন আশ্রয়ণ প্রকল্প-৩ এর কাজ শেষ হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৯ আগস্ট ২০২৩ আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে ২২ হাজার ১০১টি বাড়ি হস্তান্তরের মধ্যদিয়ে আরও ১২ জেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত করেছেন।
২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি প্রথম পর্যায়ে ৬৩ হাজার ৯৯৯টি, ২০ জুন দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫৩ হাজার ৩৩০টি এবং মুজিববর্ষ-এর সময় তৃতীয় পর্যায়ে ২ ধাপে মোট ৫৯ হাজার ১৩৩টি বাড়ি বিতরণ করা হয়। আরও ২২ হাজার ১০১টি ঘর বিতরণের মাধ্যমে, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৮৫১টি।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে এই পর্যন্ত মোট ৮ লাখ ২৯ হাজার ৬০৭টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পুনর্বাসিত মানুষের সংখ্যা ৪১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫ জন (আনুমানিক এক পরিবারে ৫ ব্যক্তি হিসাবে)।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প ইতিমধ্যে ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৬১৭ পরিবারকে সরাসরি পুনর্বাসন করেছে এবং ভূমি মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের বেশকিছু কর্মসূচির অধীনে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৯৯০ পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ পরিণত করার প্রধান হাতিয়ার হবে ডিজিটাল সংযোগ। তিনি বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার মূল চাবিকাঠি হবে ডিজিটাল সংযোগ। স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজের জন্যে ডিজিটাল সংযোগ মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।’
স্মার্ট বাংলাদেশ হলো বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রতিশ্রুতি ও শ্লোগান যা ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের পরিকল্পনা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বপ্রথম এই প্রতিশ্রুতি ও স্লোগান দেন।
এক যুগ আগেও নারীরা যেখানে ঘর থেকে বের হতো না, এখন সেইসব নারীরা শহর থেকে প্রান্তিক সব জায়গায় অর্থনীতি নিজের হাতে নিয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণেই।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন একটি বাস্তবতা। স্মার্ট বাংলাদেশ ও স্মার্ট জাতি গঠনই আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য পূরণে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই।'
প্রধানমন্ত্রীর এই স্বপ্ন আজ বাস্তবায়নের পথে। সবার হাতে এখন মুঠোফোন, ইন্টারনেট। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে আমাদের কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব ক্ষেত্র উন্নতি করেছে। তথ্য প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের অর্জন বর্তমানে দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের আয় ১০০ কোটি ডলার।
স্বাধীনতা-পরবর্তী ৫০ বছরে বাংলাদেশে অর্থনীতির পট পরিবর্তনে একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ। এই পাঁচ দশকে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের সফলতায় বড় অবদান রেখেছেন নারীরা। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের হার ৩৮ শতাংশ, যা পাকিস্তানে ২৩ শতাংশ।
আরও পড়ুন
এক যুগ আগেও নারীরা যেখানে ঘর থেকে বের হতো না, এখন সেইসব নারীরা শহর থেকে প্রান্তিক সব জায়গায় অর্থনীতি নিজের হাতে নিয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণেই।
বাংলাদেশে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতিবাচক বিষয় হচ্ছে, গ্রামীণ নারীদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের হার শহরের নারীর তুলনায় বেশি। আবার পোশাক খাত ছাড়াও এখন হোটেল, রেস্টুরেন্ট, যোগাযোগ খাত, রিয়েল স্টেট সেবা, টেলিকমিউনিকেশন, ব্যাংকিং, ইনস্যুরেন্স খাতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের মোট পোশাক শ্রমিকের মধ্যে নারীর সংখ্যা বেশি। পোশাক খাতের পরই প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশি নারী শ্রমিকরা দেশের অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে গঠিত জয়িতা ফাউন্ডেশনের অধীন ১৮০টি সমিতির মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ের ১৪,৯৬০ জন নারী উদ্যোক্তার পণ্য বাজারজাত করা হচ্ছে যা আগে কখনো চিন্তা করা যেত না। শুধু তাই নয়, নারীর উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ৩৩.৪৩ লক্ষ নারীকে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে; সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির উপকারভোগী ৪৮,৮৬,৪৮২ জন নারীকে পুষ্টি, মা ও শিশুর মৃত্যুহার হ্রাস, মাতৃদুগ্ধ পানের হার বৃদ্ধি, ইপিআই, প্রসব ও প্রসবোত্তর সেবার গুরুত্ব ও পরিবার পরিকল্পনা এবং আয়বর্ধক ও সামাজিক সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে যে দূরদর্শিতা, সাহসিকতার প্রয়োজন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে সবই বিদ্যমান। শেখ হাসিনার হাতে দেশ থাকলে দেশ এগিয়ে যাবে উন্নয়নের মহাসোপানে। কবি দুলাল বিশ্বাসের মতো বলতে চাই—
যে কাণ্ডারি, সৎ, যোগ্য নেতৃত্বের প্রয়োজন তা
শেখ হাসিনা, তুমি তো পিতার সূর্যের নিচে এই বাংলাদেশ
তুমি তো শোনাও রূপান্তরের রূপকথা গান পাহাড়ের গাঁয়ে
কল্পলতায় বিছিয়ে দাও একটি ছবি, সোনার বাংলা, স্বর্ণভূমি
রমিজা মায়ের মুখের হাসি, তুমি এনে দাও, ঘর বেধে দাও অনাশ্রিতের
অন্ন যোগাও প্রান্তবাসী, লক্ষ-হাজার প্রাচীন চাষীর, নর-নারীর।
ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ।। আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট