ছবি : সংগৃহীত

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার একসময় বাংলাদেশকে আখ্যায়িত করেছিল 'তলাবিহীন ঝুড়ি' হিসেবে। তৎপরবর্তী সময়েই নরওয়ের অর্থনীতিবিদ জাস্ট ফাল্যান্ড এবং মার্কিন অর্থনীতিবিদ জে আর পার্কিনসন লন্ডন থেকে ‘বাংলাদেশ দ্য টেস্ট কেস ফর ডেভেলপমেন্ট’ নামের একটি বইয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ হচ্ছে উন্নয়নের একটি পরীক্ষাক্ষেত্র। বাংলাদেশ যদি তার উন্নয়ন সমস্যার সমাধান করতে পারে, তাহলে বুঝতে হবে যেকোনো দেশই উন্নতি করতে পারবে।’

একসময় যে দেশটি তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে আখ্যায়িত ছিল, এখন বলা হচ্ছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে সেই দেশটি হতে যাচ্ছে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। স্বল্পোন্নত থেকে দেশটি এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠে এসেছে। সমৃদ্ধির এক অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ আজ ভূরাজনীতিতে এক নতুন শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পেরেছে।

তবে বাংলাদেশ নামক সেই ছোট্ট রাষ্ট্রটি এই অমসৃণ কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে আজকের শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে আসার দুঃসাহস একজনই দেখিয়েছেন। আর স্বপ্ন দেখিয়ে তার বাস্তবায়ন ঘটিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন উন্নয়নের মহাসড়কে। সেই নেপথ্য নায়ক জাতির  জনকের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।

আরও পড়ুন >>> বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা, পরম্পরায় বাংলাদেশ 

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করার পর থেকে টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে আওয়ামী লীগ। তার এই সময়ে রচিত হয়েছে নতুন এক বদলে যাওয়া বাংলাদেশের আখ্যান। বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে চারদিকে শত নেতিবাচক খবরের মাঝেও প্রবৃদ্ধিতে আশা জাগিয়েছে বাংলাদেশ।

করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলোয় বাঘা বাঘা অর্থনীতির দেশগুলো পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। আর এভাবে পরিবর্তিত বাংলাদেশকে নানাভাবে মূল্যায়ন করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্ব আর কৌশলী অবস্থানই উন্নতি শিখরে নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশকে।

আইএমএফের আউটলুকে ভারতকে পেছনে ফেলার পর বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. কৌশিক বসু বাংলাদেশের উত্থানের প্রশংসা করে বলেছিলেন, এমার্জিং ইকোনমির যেকোনো দেশের এগিয়ে যাওয়া ভালো সংবাদ।

মনে রাখতে হবে মাত্র ৫ বছর আগেও জিডিপিতে ভারত বাংলাদেশের চেয়ে ২৫ শতাংশ এগিয়ে ছিল। প্রায় একই সুরে সুর মিলিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক উপদেষ্টা আবিদ হাসান। তিনি পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনালে প্রকাশিত ‘এইড ফ্রম বাংলাদেশ’ শিরোনামের তার এক নিবন্ধে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার প্রশংসা করে লিখেছিলেন, ২০ বছর আগেও চিন্তা করা যেত না যে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় পাকিস্তানের দ্বিগুণ হবে। বাংলাদেশের বর্তমান অগ্রগতি অব্যাহত থাকলে এটি ২০৩০ সালের মধ্যে অর্থনৈতিক শক্তিকেন্দ্রে পরিণত হবে।

আরও পড়ুন >>> রাজনৈতিক সম্প্রীতির দেশ!

তিনি আরও লিখেছেন, পাকিস্তানের এখনকার পরিস্থিতির পরিবর্তন না ঘটলে ২০৩০ সালের দিকেই হয়তো বাংলাদেশের কাছে সাহায্য চাইতে হবে।

শুধু অর্থনৈতিক মুক্তিই নয়, শেখ হাসিনা এমন নেতা, যিনি উন্নতি করা যায় এমন কোনো খাতই অবহেলিত রাখেননি। প্রতিটি জায়গা নিজে ধরে ধরে উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান দেওয়ার সাথে সাথে নিশ্চিত করেছেন জীবনের নিরাপত্তা। স্বাধীনতার স্বাদ নিতে শিখিয়েছেন তিনি। এদেশের মানুষের চিন্তা-চেতনায় এনেছেন অভূতপূর্ব পরিবর্তন।

২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর 'ভিশন-২০২১' এর মূলভিত্তি হিসেবে ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দেওয়া হয়। অনেক সমালোচকই তখন ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণার কথা শুনে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু অকুতোভয় নেত্রী ছিলেন প্রত্যয়ী। তিনি তার প্রতিজ্ঞার ব্যত্যয় ঘটতে দেবেন না। ব্যাপক ও বহুমুখী উন্নয়নে একের পর এক পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন শুরু করা হয় এক সঙ্গে একাধিক মেগা প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে।

নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী সরকার ইতিমধ্যে সারাদেশে ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটি দিয়েছে এবং স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করেছে মহাকাশে। বর্তমানে ১৬ কোটি মানুষের হাতে ১৮ কোটি মোবাইল সিম ব্যবহৃত হচ্ছে। কল সেন্টারভিত্তিক সেবাপ্রাপ্তিতে ৯৯৯, যেকোনো তথ্য জানার জন্য ৩৩৩, কৃষক বন্ধু সেবা প্রাপ্তিতে ৩৩৩১সহ টেলিমেডিসিন সেবা এবং বেন্ডেড লার্নিং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এর মধ্যে। দেশকে ডিজিটাল চাদরে আচ্ছাদিত করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।

তবে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় থেমে নেই বঙ্গবন্ধু তনয়া। পিতার মতো স্বাধীন বাংলাদেশকে ঘিরে স্বপ্ন দেখার শেষ নেই যেন তার। তার উন্নয়ন যাত্রার নতুন অভিমুখ স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে। ডিজিটাল বাংলাদেশের ১৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে ডিজিটাল থেকে 'স্মার্ট বাংলাদেশে' রূপান্তরের ঘোষণা দিয়েছেন—যা বাস্তবায়িত হবে এই সময়ের মধ্যে।

২১ থেকে ৪১-এর মধ্যে কীভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি হবে এর একটি অবকাঠামো, তদনুযায়ী পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে সর্বস্তরের জনসাধারণের জন্য, যেন তারা নিজেদের অনুরূপভাবে গড়ে তুলতে পারে।

আরও পড়ুন >>> বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সত্যিই বেদনাদায়ক 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'আমাদের প্রত্যেকটা সিটিজেন, তারা প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবে। স্মার্ট সিটিজেন উইথ স্মার্ট ইকোনমি। অর্থাৎ, ইকোনমির সব কার্যক্রমে আমরা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করব। স্মার্ট গভর্নমেন্ট; ইতিমধ্যে আমরা অনেকটা করে ফেলেছি। সেটাও করে ফেলব। আর আমাদের সব সমাজটাই হবে স্মার্ট সোসাইটি।'

২০৪১ সাল নাগাদ একটি 'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়ে তোলার সরকারের নতুন রূপকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে সারা বছর ধরে বিভিন্ন সরকারি সেবা সহজীকরণ করতে এটুআই বেশকিছু ডিজিটাল প্রোগ্রাম উদ্ভাবন ও বাস্তবায়ন করেছে। বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে উন্নীত করার লক্ষ্যে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ'-এর সফল বাস্তবায়ন সরকারকে 'ভিশন-২০৪১' এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে একটি উদ্ভাবন ও জ্ঞানভিত্তিক 'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়ার নতুন লক্ষ্য গ্রহণ করতে উৎসাহ জুগিয়েছে।

২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ হবে সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিভিত্তিক, জ্ঞানভিত্তিক এবং উদ্ভাবনী বাংলাদেশ। স্মার্ট সিটি ও স্মার্ট ভিলেজ বাস্তবায়নের জন্য স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট ট্রান্সপোর্টেশন, স্মার্ট ইউটিলিটিজ, নগর প্রশাসন, জননিরাপত্তা, কৃষি, ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে।

করোনা থেকে শুরু করে ইউক্রেন যুদ্ধ, দুইয়ের কারণে আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে নানা সংকটের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিও প্রভাবিত। বিশেষ করে, প্রয়োজনীয় আমদানি সংগ্রহে খরচ বাড়া, ফলে দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়া এবং রপ্তানি বাজারে অনিশ্চয়তা। কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। ফলে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় কম।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, পায়রাবন্দর, মোংলা বন্দরের আধুনিকায়ন এভাবে একের পর এক বিস্ময়কর স্থাপনা শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বেরই জয়গান করে। এভাবে উত্থানের কারণে বাংলাদেশকে এখন ‘এশিয়ান টাইগার’ নামে অভিহিত করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন >>>  তোমাদের যা বলার ছিল, বলছে কি তা বাংলাদেশ?

সম্প্রতি ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী ডলার সংকট এবং মূল্যস্ফীতির কারণে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে পড়েছিল বাংলাদেশ। তবে সেই সংকটও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে দূর হয়েছে। জাহাজ ভর্তি কয়লা এসে ভিড়েছে দেশের বন্দরগুলোয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে কেন্দ্রগুলোয়।

বাংলাদেশে শেখ হাসিনার শাসনকাল একটি বিস্ময়কর যুগ, জাতির জন্য আশীর্বাদের কাল। দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে সোনার বাংলাদেশ। একসময়ের কথিত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আজ বিশ্ব দরবারে উদীয়মান অর্থনীতির রোল মডেল।

এই উন্নয়ন মহাযজ্ঞের পেছনে একটিই নাম ‘ক্যারিশমাটিক লিডার’ শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা মানেই বাংলাদেশ। তিনি জিতলেই জিতে যায় এ সোনার বাংলা।    .             

এন আই আহমেদ সৈকত ।। সাবেক ছাত্রনেতা