জয়ের হাত ধরে বিজয়ের পথে
বিষয়টা কাকতালীয় মনে হতে পারে। কিন্তু তবু এটাই বাস্তবতা। বাংলাদেশ আজ দুর্দমনীয় গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে আজ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখছে তরুণ প্রজন্ম। এই স্বপ্নের সারথি একজন। যিনি আড়াল থেকে বদলে দিয়েছেন বাংলাদেশকে।
কাকতালটা হলো, এই স্বপ্নবান মানুষটি বাংলাদেশের সমান বয়সী। ৫২ বছরে বাংলাদেশ যেমন অনেক উত্থান-পতন দেখেছে, এই মানুষটির জীবনও বাংলাদেশের মতোই সংগ্রামমুখর। তিনি সজীব ওয়াজেদ, বঙ্গবন্ধু যার ডাক নাম রেখেছিলেন জয়। তা যেন বাংলাদেশেরই ডাক নাম।
বিজ্ঞাপন
বঙ্গবন্ধুর পাঁচ সন্তানের সবার বড় শেখ হাসিনা। সেই শেখ হাসিনার প্রথম সন্তান জন্মটা খুব উৎসবমুখর হওয়ার কথা ছিল। বাঙালি মায়েরা এই সময়টা মেয়ের পাশে থাকেন। গর্ভবতী মেয়ের জন্য থাকে নানা আয়োজন। সেই সময়টায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব শেখ হাসিনার পাশেই ছিলেন। কিন্তু উৎসব ছিল না, আনন্দ ছিল না।
আরও পড়ুন >>> জয় বাংলার, বাংলার জয়
বড় কঠিন সময় ছিল। মৃত্যু পরোয়ানা মাথায় নিয়ে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি। অবরুদ্ধ বাংলাদেশে নিজ গৃহে বন্দি বঙ্গবন্ধুর পরিবার। এই অবরুদ্ধ সময়েই আশার বারতা, বিজয়ের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আসেন শেখ হাসিনা-ড. ওয়াজেদ দম্পতির প্রথম সন্তান—সজীব ওয়াজেদ জয়।
সরাসরি দলীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত না হলেও সজীব ওয়াজেদ জয় দীর্ঘদিন ধরেই বুদ্ধি দিয়ে, পরামর্শ দিয়ে তার মা শেখ হাসিনার পাশে থাকছেন। এখন তিনি প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে উপদেষ্টা হওয়ার আগে থেকেই তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলস পরিশ্রম করছেন।
এখানেই আমি সজীব ওয়াজেদ জয়কে ব্যতিক্রম মানি। অনেক আগেই তিনি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ দেখতে পেয়েছিলেন। আসলে একটা দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে নেতৃত্বের ওপর। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এক সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ পাঁচ বছর পিছিয়ে গিয়েছিল।
এখানেই আমি সজীব ওয়াজেদ জয়কে ব্যতিক্রম মানি। অনেক আগেই তিনি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ দেখতে পেয়েছিলেন। আসলে একটা দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে নেতৃত্বের ওপর....
রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য পাচারের শঙ্কায় তিনি সাবমেরিন ক্যাবলে বাংলাদেশকে সংযুক্ত করেননি, পরে অনেক অর্থ ব্যয়ে সেটা করতে হয়েছে। আমি অবশ্য খালেদা জিয়াকে দোষ দেই না। সেই বয়সে প্রযুক্তিভীতি থাকতেই পারে। এখনো প্রবীণ অনেকে ঠিকমতো মোবাইল চালাতে পারেন না। সমস্যায় পড়লে নাতিকে ডাকেন, সেই শিশু সমাধান করে দেয়।
প্রযুক্তি নিয়ে শঙ্কা শেখ হাসিনারও ছিল। শেখ হাসিনা অনেকবার বলেছেন, সব ভয়-শঙ্কা কাটিয়ে তাকে প্রযুক্তিবান্ধব করে তোলা এবং তার মাথায় ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নটা দিয়েছিলেন সজীব ওয়াজেদ জয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে লিখতে গেলে, আলাদা মহাকাব্য লিখতে হবে। খালি একটা কথা বলি, আপনি যে আপনার মোবাইলে চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনোদন, পড়াশোনা, জুম মিটিং, ব্যাংকিং-শেয়ারবাজার, সিনেমা দেখা, গান শোনা, ছবি তোলা—সব করে ফেলতে পারছেন; তার জন্য হলেও সজীব ওয়াজেদ জয়কে একটা ধন্যবাদ দিতে পারেন।
জয় ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন না দেখলেও আপনি এই সুবিধা পেতেন। তবে তার জন্য হয়তো আরও এক যুগ অপেক্ষা করতে হতো। তবে ডিজিটাল বাংলাদেশ করেই থেমে থাকেননি তিনি। শুরুতে যেমনটি বলেছি, ডিজিটাল বাংলাদেশের শক্ত ভিতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশের পথে।
আরও পড়ুন >>> রাজনৈতিক সম্প্রীতির দেশ!
সজীব ওয়াজেদ জয় এখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হননি। তবে আওয়ামী লীগের অনেকে তাকেই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে মনে-প্রাণে আকাঙ্ক্ষা করছেন। সুশীলদের কেউ কেউ হয়তো একে পরিবারতন্ত্র বলবেন। হয়তো পরিবারতন্ত্রই। বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরসূরি, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে ধারণ করে এগিয়ে যাওয়ার নেতা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সম্ভাব্য নেতৃত্বকে আপনি পরিবারতন্ত্র বলতে পারেন। কিন্তু পারিবারিক উত্তরসূরিরা যদি সুশিক্ষিত হন, যোগ্য হন, দক্ষ হন, দেশপ্রেমিক হন, আদর্শে অটল থাকেন তাহলে পরিবারতন্ত্রে আপত্তি থাকার কোনো কারণ নেই।
সজীব ওয়াজেদ জয় দেশের বাইরে পড়াশোনা করেছেন। আমাদের দেশের অন্য অনেক রাজনীতিবিদের সন্তানের মতো বিলাসিতা দেখাতে দেশের বাইরে পড়েননি। ১৯৭৫ সালের পর বঙ্গবন্ধুর বেঁচে থাকা দুই কন্যা শেখ হাসিনা আর শেখ রেহানাকে উদ্বাস্তুর জীবনযাপন করতে হয়েছে। সঙ্গে উদ্বাস্তু হতে হয়েছে তাদের সন্তানদেরও।
জয়ের শৈশব ও কৈশোর কাটে ভারতে। সেখানকার নৈনিতালের সেন্ট জোসেফ কলেজে লেখাপড়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক করেন তিনি। পরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোকপ্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকা এবং বিভিন্ন দেশে পড়াশোনার কারণে তার দৃষ্টিভঙ্গিতে একটা আন্তর্জাতিকতা আছে। তাই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে তিনি তার আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতাকে দেশীয় স্টাইলে প্রয়োগ করতে পারছেন।
সজীব ওয়াজেদ জয় এখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হননি। তবে আওয়ামী লীগের অনেকে তাকেই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে মনে-প্রাণে আকাঙ্ক্ষা করছেন।
বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র, শেখ হাসিনার ছেলে; এই কারণেই তিনি অনেকের চক্ষুশূল। ১৯৭৫ সালে যারা বঙ্গবন্ধু এবং তার উত্তরসূরিদের নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল, তাদের কাছে জয় মূর্তিমান এক আতঙ্ক। কিন্তু এটা বাদ দিলে জয়ের বিরুদ্ধে বলা কঠিন। ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকার সুযোগ ফেলে তিনি বাস করেন যুক্তরাষ্ট্রে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ নেই। তিনি কোনো বাতাস ভবন বানাননি। তার নাম ভাঙিয়ে তার কোনো বন্ধু সম্পদের পাহাড় গড়েননি। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে তিনি তার মাকে সাহায্য করেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন; বিরক্ত করেননি, বিব্রত করেননি।
দূরে থাকলেও তিনি বাংলাদেশকে ভালোবাসেন। সুযোগ পেলেই তিনি দেশের টানে ছুটে আসেন। বাংলাদেশে এলেই তিনি মতবিনিময় করেন তরুণদের সাথে। তিনি জানেন, তারুণ্যই বাংলাদেশের মূল সম্পদ। এই তারুণ্যের হাত ধরেই উন্নতির নতুন ধাপে পৌঁছে যাবে বাংলাদেশ। তাই তাদের পেছনেই তিনি বিনিয়োগ করছেন বেশি সময়। নিশ্চয়ই এই বিনিয়োগ অনেক বেশি লাভ দেবে জাতিকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সক্রিয় থেকে তরুণদের সাথে যোগাযোগ রাখেন তিনি। দেশের নানা বিষয়ে ফেসবুকে তার মতামত তুলে ধরেন। ভার্চুয়ালি মতবিনিময় করেন তরুণদের সাথে।
আরও পড়ুন >>> আগামীর জয়
তবে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের মতো কৌশলী নন তিনি। যা বলার বলে দেন মুখের ওপর। কখনো মনে হয়, তিনি বাংলাদেশের আর দশটা রাজনীতিবিদের মতো না হলেই ভালো, যা মনে আসে তাই বলুক। পছন্দ-অপছন্দ স্পষ্ট করে বলাই ভালো। অন্তরে বিষ রেখে মুখে মধু আনার কৌশল না শিখুক জয়। আবার কখনো মনে হয়, বাংলাদেশের রাজনীতিতে সফল হতে হলে একটু কৌশলী হতেই হয়। আরও বেশি সহিষ্ণু হতে হবে।
সজীব ওয়াজেদ জয় জন্মেছেন অবরুদ্ধ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময়। বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীন হয়েছে দেশ। এখন তার কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চলছে অর্থনৈতিক মুক্তির লড়াই। উদার, গণতান্ত্রিক, উন্নত, সমৃদ্ধশালী, অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন নিয়ে স্বাধীন হয়েছে; তা এগিয়ে নেওয়ার লড়াই চলছে। এই লড়াইটাও কঠিন। লড়তে হবে দলের ভেতরে, বাইরে। এই লড়াই চালিয়ে যেতে হাল ধরতে হবে জয়দেরই।
শুরুতে যেমন বলেছি, জয়ের জন্ম অবরুদ্ধ বাংলাদেশে। বাংলাদেশের সমানবয়সী দূরদর্শী জয়ের নেতৃত্বেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে বিজয়ের পথে।
প্রভাষ আমিন ।। বার্তা প্রধান, এটিএন নিউজ