জনসংযোগ কর্মীর কাজ ও সময়ের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই! ২৪ ঘণ্টায় এক দিন। মাঝে মাঝে মনে হয় দিনটি যদি ৩৬ ঘণ্টায় হতো তাহলে ভালোই হতো। জনসংযোগ পেশাটাই ধৈর্যের টেস্ট ম্যাচ। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমহারে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া। আর যদি কোনো সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের জনসংযোগ পেশা হয়ে থাকে, তবে তো আপনাকে যেকোনো সময়ে যেকোনো বিষয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

জনসংযোগ পেশাটাই এমন, আপনাকে প্রতিষ্ঠানের সব বিষয়ে কিংবা আপনার প্রতিষ্ঠান যে ধরনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, সেই ব্যবসা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকতে হবে। উদাহরণ হিসেবে এভিয়েশন সেক্টরের ব্যবসার কথাই উল্লেখ করা হলো— একজন সেলস কিংবা মার্কেটিং প্রতিনিধির সেলস অথবা মার্কেটিং বিষয়ক জ্ঞান থাকলেই যথেষ্ট, অ্যাকাউন্টিং কিংবা রেভিনিউ ডিপার্টমেন্টের কাজের ধরন ও হিসাব নিকাশ সংক্রান্ত যেখানে কাজের সীমাবদ্ধতা রয়েছে, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা পাইলট উভয়েরই নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বিশেষায়িত হতে হবে।

জনসংযোগ কর্মী যেকোনো সময় যেকোনো বিষয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারেন। প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করতে হয়। খুব বেশি সচেতনতার সঙ্গে বক্তব্য রাখতে হয়। ভুল বক্তব্য প্রতিষ্ঠানকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে। কঠিন সময়ে সাবলীলভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করতে হয়, এতে একজন জনসংযোগ কর্মী যে অন্যদের থেকে আলাদা, তাই প্রকাশ করে।

অ্যাডমিন কিংবা এইচআর ডিপার্টমেন্টেরও কাজের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য বিভাগ যেমন পারচেজ, ইন-ফ্লাইট সার্ভিস, কাস্টমার সার্ভিস, সিকিউরিটি, ক্লিনিং, ট্রান্সপোর্ট প্রত্যেকেরই নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আলাদা আলাদা দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু পাবলিক রিলেশন ডিপার্টমেন্টে কাজের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই।

জনসংযোগ কর্মী যেকোনো সময় যেকোনো বিষয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারেন। প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করতে হয়। খুব বেশি সচেতনতার সঙ্গে বক্তব্য রাখতে হয়। ভুল বক্তব্য প্রতিষ্ঠানকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে। কঠিন সময়ে সাবলীলভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করতে হয়, এতে একজন জনসংযোগ কর্মী যে অন্যদের থেকে আলাদা, তাই প্রকাশ করে।

একজন জনসংযোগ কর্মীর প্রয়োজনীয়তা একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন প্রয়োজন ভালো সময়ে, তেমনি প্রয়োজন মন্দ সময়ে। তবে ভালো সময়ের চেয়ে মন্দ সময়ে তাকে খুব বেশি প্রয়োজন বলেই মনে হয়। প্রতিষ্ঠানের যেকোনো খারাপ সময়ে তিনি তার কমিউনিকেশন দিয়ে প্রতিষ্ঠানকে ভালো সময়ের দিকে এগিয়ে নিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখতে পারেন। তার সাবলীল উপস্থাপনা দিয়ে গণমাধ্যমের সাহায্যে সকল স্তরের নাগরিকের কাছে সঠিক বার্তা পৌঁছানোর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানকে তুলে ধরতে পারেন। যা অন্য কর্মকর্তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না।

প্রয়োজন থাকলেই সংবাদকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করা আর প্রয়োজন শেষ হলেই সম্পর্ক শেষ— এই নীতি যারা বিশ্বাস করেন তাদের জন্য জনসংযোগ পেশা নয়। যারা নির্দিষ্ট সময় মেনে জনসংযোগ পেশায় কাজ করতে চান, তাদের জন্যও এই পেশা খুব বেশি মানানসই নয়।

সরকারি কিংবা বেসরকারি উভয় খাতেই জনসংযোগ কর্মীর অফিসের বাইরেও সেবা দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হয়। আপনি হয়তো রাত-বিরাতে ফোন কল পেতে পারেন। আপনার পরিচিত কিংবা অপরিচিত কেউ যেকোনো মাধ্যমে জরুরি একটা সেবার জন্য আপনার দ্বারস্থ হয়েছেন, ঘুমিয়ে না পড়লে প্রয়োজন বুঝে সহায়তা দেওয়া উচিত। এটাও জনসংযোগ কর্মীর সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে। কারো সঙ্গে পরিচয় হবে প্রফেশনালি, কিন্তু সম্পর্ক তৈরি হবে পারসোনালি। যে সম্পর্কটা থাকবে আজীবন। ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে লাভবান হবে প্রতিষ্ঠান।

জনসংযোগ কর্মীর প্রয়োজনীয়তা একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন প্রয়োজন ভালো সময়ে, তেমনি প্রয়োজন মন্দ সময়ে। তবে ভালো সময়ের চেয়ে মন্দ সময়ে তাকে খুব বেশি প্রয়োজন বলেই মনে হয়। প্রতিষ্ঠানের যেকোনো খারাপ সময়ে তিনি তার কমিউনিকেশন দিয়ে প্রতিষ্ঠানকে ভালো সময়ের দিকে এগিয়ে নিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখতে পারেন। তার সাবলীল উপস্থাপনা দিয়ে গণমাধ্যমের সাহায্যে সকল স্তরের নাগরিকের কাছে সঠিক বার্তা পৌঁছানোর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানকে তুলে ধরতে পারেন। যা অন্য কর্মকর্তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না।

শুধুমাত্র এক্সটারনাল রিলেশন ভালো রাখতে হবে ব্যাপারটা আসলে তা নয়, আপনার ইন্টারনাল রিলেশনও অনেক ভালো হতে হবে। ইন্টারনাল রিলেশন যত বেশি শক্তিশালী হবে, জনসংযোগ কর্মী হিসেবে প্রতিষ্ঠানে আপনার ভূমিকা তত বেশি গ্রহণযোগ্য হবে। আপনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কোনো বার্তা খুব সহজেই মিডিয়ার মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারেন, যা প্রতিষ্ঠানের অন্য কোনো কর্মীর পক্ষে সম্ভব নয়।

ডিজিটাল মিডিয়ার যুগে বড় মিডিয়া কিংবা ছোট মিডিয়া বলতে কিছু নেই। একজন জনসংযোগ কর্মী হিসেবে আপনাকে সব মিডিয়া সম্পর্কে সমান ধারণা পোষণ করতে হবে। কোনো ঘটনা কিংবা দুর্ঘটনার সংবাদ প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র হিসেবে সত্য ঘটনা তুলে ধরাই হবে কাম্য, নতুবা ডিজিটাল মিডিয়ার যুগে নানাবিধ কল্পকাহিনির সম্মুখীন হতে পারেন, যা ব্যবসার সুনাম ক্ষুণ্ণ করবে। ভবিষ্যৎ ব্যবসার জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

সত্য সংবাদ প্রকাশে দীর্ঘমেয়াদে প্রতিষ্ঠান লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রত্যেকটি মিডিয়া হাউজের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এমনকি সংবাদকর্মীদের কমিউনিটি নির্ভর অনেক প্রতিষ্ঠান থাকে, তাদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে, যেমন জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্র্যাব) ইত্যাদি। একজন জনসংযোগ কর্মী হিসেবে সংবাদকর্মীদের মনোভাব অনুধাবন করা খুবই জরুরি।

জনসংযোগ কর্মীর কাজ রুটিন মাফিক হয় না। সবসময়ই ফ্রি, আবার সবসময়ই ব্যস্ত। প্রতি মুহূর্তেই ব্যস্ততার জন্য জনসংযোগ কর্মীকে প্রস্তুত থাকতে হয়।

মো. কামরুল ইসলাম ।। মহাব্যবস্থাপক, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স