ছবি : সংগৃহীত

কেন্টাকির লুইসভিলে আবারও বন্দুক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। সোমবার সকালে কেন্টাকির লুইসভিলের ওল্ড ন্যাশনাল ব্যাংকে বন্দুকধারীর হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত ও নয়জন আহত হয়েছেন। লুইসভিল মেট্রো পুলিশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান জ্যাকলিন গুইন জানিয়েছেন, বন্দুকধারীর নাম কনর স্টারজন, যিনি ওল্ড ন্যাশনাল ব্যাংকের কর্মী।

কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের পর পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। ন্যাশভিলের একটি স্কুলে হামলা, যেখানে তিনশিশু ও তিনজন প্রাপ্তবয়স্ক নিহত হয়েছে এবং সোমবার কেন্টাকিতে গুলিবর্ষণসহ কমপক্ষে ১৪৬টি গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে।

বন্দুক সহিংসতা ও গণহত্যা

বন্দুক সহিংসতা একটি সমসাময়িক বৈশ্বিক মানবাধিকার ইস্যু। বিশ্বব্যাপী আগ্নেয়াস্ত্র সহিংসতায় যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে, তবে বেশ কয়েকটি রাজ্যে বন্দুক-সম্পর্কিত আঘাতের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উদ্বেগজনক।

আরও পড়ুন >>> কূটনীতির নতুন মাত্রা 

২০২০ এবং ২০২১ সালে বন্দুক কেনার হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় দেশটিতে বন্দুক সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২২ সালে গণহত্যার ঘটনা আগের বছরের তুলনায় কমলেও ২০২৩ সালে তা ভয়াবহভাবে বাড়ছে। এমনকি বন্দুকের গুলিতে মারা যাওয়া মার্কিন শিশুদের সংখ্যাও বাড়ছে।

তিন বছরে ৬০০টিরও বেশি গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘গণহত্যার’ কোনো একক সংজ্ঞা নেই, বন্দুক সহিংসতা আর্কাইভ, গণহত্যাকে এমন একটি ঘটনা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে যেখানে চার বা ততধিক লোক আহত বা নিহত হয়।

আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সংঘটিত সহিংসতার কারণে প্রতিদিন ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা যায়। এটি কেবল ভুক্তভোগী এবং তাদের পরিবারের ওপর স্থায়ী প্রভাব ফেলছে না বরং দেশের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতিরও অবনতি ঘটাচ্ছে।

এটি রাজনৈতিক ইস্যু। প্রতি বছর বন্দুক দ্বারা নিহত মানুষের সংখ্যা বাড়লেও, ফেডারেল প্রবিধানের অভাব রয়েছে। যার কারণে হাজার মানুষ বাঁচাতে পারে।

আরও পড়ুন >>> জঙ্গিবাদ : যেভাবে আমরা ব্যর্থ হয়েছি 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থাগুলো বন্দুক সহিংসতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি উপেক্ষা করছে, যার ফলে প্রতি বছর আরও বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটছে।

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক সহিংসতা কেন বন্ধ করতে হবে?

আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যাপক প্রবেশাধিকার এবং শিথিল বিধির কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ৩৯,০০০-এরও বেশি পুরুষ, মহিলা এবং শিশু বন্দুক দিয়ে হত্যা করা হয়। বন্দুক সংস্কৃতির কারণে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেসামরিক আগ্নেয়াস্ত্রের শীর্ষে রয়েছে।

দেশটিতে এখন প্রতি ১০০ জনসংখ্যার মধ্যে ১২০টি বন্দুক রয়েছে, যা ইয়েমেনের চেয়েও বেশি, যা সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে রয়েছে।

আনুমানিক ২,০০০ মানুষ প্রতিদিন গুলির আঘাতে আহত হয় এবং বিশ্বজুড়ে কমপক্ষে ২ মিলিয়ন লোক আগ্নেয়াস্ত্রের আঘাতে বেঁচে থাকে। তাদের মধ্যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক সহিংসতার হার অন্যান্য দেশ, প্রধানত উন্নত দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি।

আরও পড়ুন >>> পাকিস্তানের বিপজ্জনক রাজনীতি 

অসংখ্য মানুষ এবং তাদের বৃহত্তর সম্প্রদায়ের ওপর বন্দুক সহিংসতার গুরুতর এবং দীর্ঘমেয়াদি মানসিক প্রভাব রয়েছে। ডেটা, পরিসংখ্যান এবং র‍্যাঙ্কিংয়ের ওপর অনেক বেশি মনোনিবেশ করতে হবে। আমরা প্রায়শই প্রতিটি সংখ্যার পেছনে দুঃখজনক গল্পগুলো ভুলে যায়। প্রতিটি জীবনই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা গল্প আছে।

বন্দুক সহিংসতা কেবল ব্যক্তি হত্যা বা গণহত্যার পর্যায়ে থাকছে না; এটি একটি দুষ্টচক্রে পরিণত হচ্ছে, যেখানে বন্দুক সহিংসতার ক্রমবর্ধমান সংখ্যা মানুষের মনে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই কার্যকর বন্দুক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতিতে মার্কিন কর্তৃপক্ষের আরও কাজ করা উচিত। পাশাপাশি, বেঁচে যাওয়া এবং ভুক্তভোগীদের পরিবারকে তাদের প্রিয়জন হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করার জন্য একটি ভিকটিম সাপোর্ট মেকানিজম প্রতিষ্ঠা করা উচিত।

এগিয়ে যাওয়ার উপায়

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, বন্দুক সহিংসতা অবশ্যই মোকাবিলা করতে হবে, কিন্তু বারবার গুলি বর্ষণের ঘটনা ইঙ্গিত দেয় যে সমস্যাটি আরও খারাপ হচ্ছে। কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত বন্দুক নিয়ন্ত্রণ এবং সহিংসতা প্রতিরোধ প্রকল্পগুলো হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে পারে।

প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে, রাষ্ট্রগুলোর আগ্নেয়াস্ত্র সহিংসতাকে মানুষের মানবাধিকার, বিশেষত তাদের জীবনের অধিকার ও ব্যক্তির সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। এজন্য প্রয়োজন কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ।

আরও পড়ুন >>> আফগান পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য কী ইঙ্গিত দেয়?

মার্কিন প্রশাসনের উচিত অন্যদের পরামর্শ বা পরামর্শ দেওয়ার চেয়ে প্রথমে নিজের দেশের পরিস্থিতি ঠিক করার দিকে মনোনিবেশ করা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই মানবাধিকার সুরক্ষা সর্বাধিক করতে হবে, বেশিরভাগ মানুষের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ সম্ভাব্য পরিবেশ তৈরি করতে হবে, বিশেষত যারা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকিতে রয়েছে।

ইরিনা হক ।। গবেষক