ওয়াহিদুল হক : সংস্কৃতির বটবৃক্ষ
শহীদ আলতাফ মাহমুদের স্মরণে ওয়াহিদুল হকের একটি দীর্ঘ অনবদ্য লেখনীর প্রথমাংশের কিছুটা তুলে ধরছি কারণ তিনি যে কথাগুলো শহীদ আলতাফ মাহমুদের উদ্দেশে বলেছেন তা কোনো না কোনোভাবে ওতপ্রোতভাবে তার জন্যও প্রযোজ্য। তিনি এভাবে নিবেদন করেন—
“বেদ বলেছেন, আত্মসংস্কৃতিবারব শিল্পানি। শিল্পের দ্বারা মানুষ আত্মপরিমার্জনা করে। এই পরিমার্জনার ফলে সে যেমন ক্রমে তার দেহের সীমা ‘পারায়ে’ বিমূর্ত গভীর ও উচ্চ উপলব্ধির জগতকে পায় তেমনি অতীত উপস্থিত ও অনাগত সকল মানুষের সঙ্গে অনেক অধিক করে যুক্ত হয়।
বিজ্ঞাপন
সৃজনশীলতা শিল্প চর্চার মূল কথা—প্রধানত রূপঘটিত সৃজন কিন্তু যে অপরূপ বীণা রূপের আড়ালে লুকিয়ে বাজে তাও শিল্পেরই মূল ভিত। এইসব সৃষ্টি আর উপলব্ধি ব্যক্তি-মানুষকে চরিত্র দান করে, মানুষের সমাজকে নিয়ে যায় বিকাশের নবদিগন্তে। শিল্প অভ্যাসের মধ্য দিয়েই অভ্যস্তের অধীনতা থেকে ধীকে মননকে মুক্তি দিয়ে নবতর অভ্যাসকে ডেকে এনে সংস্কৃতির নদীকে বহতা রাখে। জীবনপ্রদায়ী করে তোলে।
আরও পড়ুন >>> মাস্টারদা সূর্য সেন : ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের মহানায়ক
শিল্প মাত্রই ব্যক্তির জন্য স্বাধীনতা গড়ে তোলে, আত্মবিকাশের মধ্য দিয়ে একটি অণাপেক্ষ চরিতার্থতা ও পূর্ণতার বোধ নিয়ে যায়। প্রত্যেক মানুষ শিল্পের সংসর্গে প্রকৃতভাবে এবং সর্বাধিকভাবে তার নিজের ভিতর থেকে ‘নিজ’ হয়ে উঠে। তার নিজের শিল্পের স্পর্শে সে তখন অন্য সকলের ভিতরে এই স্বাধীনতা ও আত্মবিকাশের প্রক্রিয়াকে সঞ্চারিত করে।” (মিলিত প্রাণের কলরব, পৃষ্ঠা - ২০৪, প্রকাশক - অনন্যা)
আমি ওয়াহিদুল হক অর্থাৎ সবার হক ভাইকে চিনি ৬৪/৬৫ সালের দিকে সেই সময় আমি অধ্যাপক অজিত গুহের বাসায় থাকি। অনেক বড় ঘটনা ছোট করে বলি—মা তার বিধর্মী দাদাকে (অধ্যাপক অজিত গুহ, ভাষাসৈনিক)-কে সেবা করার জন্য আমাকে দিয়ে দিয়েছিলেন সেই থেকে আমি ‘টয় হাউজে’ থাকি।
সেই সময় আমি কিছুদিনের জন্য ছায়ানটে রবীন্দ্রসংগীতের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। যারা রবীন্দ্রসংগীত শেখাতেন তাদের মাঝে জাহিদুর রহিম অঞ্জন, সন্জীদা খাতুন এবং ওয়াহিদুল হক উল্লেখযোগ্য।
পঞ্চাশ ষাট দশকে শিল্পী-সাহিত্যিকদের একটা মিলনকেন্দ্র ছিল এই টয় হাউজ। এই টয় হাউজ নিয়ে আমার লেখা বই ‘কাকাবাবুর টয় হাউজ’-এ বিস্তারিত লিখেছি। এই টয় হাউজেই আমি প্রথম দেখি ওয়াহিদ ভাই আর সন্জীদা খাতুনকে। কাকা বাবু মানে অজিত গুহ সেই সময় ছায়ানটের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তাই সভা বা কোনো অনুষ্ঠান হলে তিনি যেতেন। আমাকে কাকাবাবুর ঝোলা টানতে হতো বলে আমিও যেতাম। সেই থেকে এই যুগলের সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা।
সেই সময় আমি কিছুদিনের জন্য ছায়ানটে রবীন্দ্রসংগীতের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। যারা রবীন্দ্রসংগীত শেখাতেন তাদের মাঝে জাহিদুর রহিম অঞ্জন, সন্জীদা খাতুন এবং ওয়াহিদুল হক উল্লেখযোগ্য। ১৯৬৭ সালে ছেড়ে দিতে হলো কারণ সামনে মেট্রিক (এসএসসি) পরীক্ষা।
আরও পড়ুন >>> বীরের জাতি বাঙালি
আমার যত দূর মনে পড়ে ১৯৬৭/৬৮ সালে ছায়ানট আয়োজিত প্রথম বৈশাখী মেলার আয়োজন। সেটা হয়েছিল ‘বলধা গার্ডেন’-এ। টয় হাউজের পাশে অর্থাৎ ঢাকা নারায়ণগঞ্জ রেল লাইনের ওপারে। আমার এখনো মনে পড়ে সেই সময় বলধা বাগানের কিউরেটর ছিলেন শ্রী অমৃত লাল আচার্য রবীন্দ্র অনুরাগী এবং বৃক্ষ প্রেমিক তার সহযোগিতায় সেই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানটি পূর্ণতা পেয়েছিল।
সেই অনুষ্ঠানে ঢাকার স্বনামধন্য শিল্পী সাহিত্যিকদের আগমন ঘটেছিল। বৈশাখের প্রথম দিনের সকালের স্নিগ্ধ আলোয় আলোকিত হয়েছিল সেদিনের বলধা বাগান। ১৯৬১ সালের রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের পর প্রগতিশীল শিল্পী সাহিত্যিকের সবচেয়ে বড় মিলন মেলা।
আমার স্মৃতিতে যাদের কথা মনে পড়ে তারা হলেন—বেগম সুফিয়া কামাল, ড. নীলিমা ইব্রাহিম, মোখলেসুর রহমান (সিধু ভাই) শামসুন্নাহার রহমান, সাইদুল হাসান, ফরিদা হাসান, কবি শামসুর রাহমান, অধ্যাপক অজিত গুহ, আহমেদুর রহমান (ভীমরুল) সাইফউদ্দিন আহমেদ মানিক, শওকত আলী (কথাসাহিত্যিক), রণেশ দাশগুপ্ত, সত্যেন সেন, ড. আনিসুজ্জামান, ফজলুল করিম (সাংবাদিক), রোকনুজ্জামান খান (দাদা ভাই) প্রমুখ।
সেই সময় দেখেছি ওয়াহিদ ভাই কত নিষ্ঠার সাথে নিপুণভাবে কাজ করেন, ওই অনুষ্ঠানের বদৌলতে আমি ওয়াহিদ ভাইয়ের খুব কাছের হয়ে পড়লাম। স্বাধীনতাপূর্বে ছায়ানটের স্থান সঙ্কটের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। কোথাও স্থায়ী হয়ে কার্যক্রম চালাতে পারছিল না।
মনে পড়ে ইংলিশ প্রিপারেটরি স্কুল, উদয়ন বিদ্যালয়, আজিমপুর কিন্ডারগার্টেন (অগ্রণী বালিকা বিদ্যালয়), কলাবাগান লেক সার্কাস হাই স্কুল এমনকি মালিবাগ এলাকার হোয়াইট হাউস নামে একটি বাড়িতে কিছুদিনের জন্য ছায়ানটকে আসতে হয়েছিল। সেই দিনগুলোয় ওয়াহিদুল হক ভাইয়ের সাথে আমরা বেশ কয়েকজন হারমোনিয়াম, তবলা টেনেছি।
আরও পড়ুন >>> ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত : ভাষা আন্দোলন ও বাংলাদেশের ইতিহাস
১৯৬৯ সালের ১২ নভেম্বর অধ্যাপক অজিত গুহ আমাকে ছেড়ে অনন্তলোকে চলে গেলেন সেই সময় বহু গুণীজনের স্নেহমাখা আদর আর সমবেদনা পেয়েছি আর ওয়াহিদ ভাই আমাকে বুকে টেনে নিয়ে আদরের ডালা বিছিয়ে দিয়েছিলেন। এরপরের ইতিহাস সবার জানা। উত্তাল পূর্ব পাকিস্তানে নানা ঘটনার মাঝে কেমন করে যেন আমরা একে একে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লাম স্বাধীনতা সংগ্রামে। মুক্তিযুদ্ধে অনেক রক্ত আর স্বজন হারানো বেদনার ফসল এই স্বাধীনতা।
আমাদের পরিবারে স্বজন হারানোর সুরে শুধু বেহাগের সুর। ‘আলতু’ শহীদ আলতাফ মাহমুদের অন্তর্ধান আমাদের পরিবার বহুদিন মেনে নিতে পারেনি। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম দিকে রাজনীতি থেকে আরম্ভ করে সংস্কৃতি, শিল্প, সাহিত্য সবকিছুই দিশেহারা নাবিকের মতো। কোনো হাল না পেয়ে নানা মতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। আমরা যারা সদ্য মুক্তিযুদ্ধ শেষ করে ঘরে ফিরেছি তারাও কোনো সঠিক ঠিকানা পেলাম না।
আমি সেই সময় সমাজতান্ত্রিক চিন্তা চেতনায় উদ্ভাসিত হয়ে কিছুদিনের জন্য ভাসানী ন্যাপের সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী’ করেছি, নানা কলকারখানায় শ্রমিকদের সাথে গণসংগীত গেয়ে বেড়িয়েছি। সেই সময় আমাদের নেতা হলিডের সম্পাদক এনায়েতুল্লাহ খান আর কামাল লোহানী।
ক্রান্তি সংগঠন করার সময় আমরা কয়েকজন সমমনা শহীদ আলতাফ মাহমুদের স্মৃতিকে ধরে রাখতে ‘আলতাফ মাহমুদ সংগীত বিদ্যানিকেতন’ প্রতিষ্ঠা করি। আমাদের সাথে রাজনৈতিক মতাদর্শের বিভেদ থাকা সত্ত্বেও ওয়াহিদুল হক এগিয়ে এলেন। আবার ওয়াহিদ ভাইয়ের সাথে আমার নতুন করে যোগাযোগ এ যেন গঙ্গা যমুনার মিলন!
আরও পড়ুন >>> প্যারী মোহন আদিত্য : অল্পশ্রুত মহান দেশপ্রেমিকের প্রতিকৃতি
আমি এককভাবে সংগীত স্কুলটি চালাতাম তাই ওয়াহিদ ভাই আমাকে নানাভাবে সাহায্য করেছেন। পারিবারিক সমস্যার কারণে বেশ কিছুদিন ওয়াহিদ ভাই ছায়ানটের কর্মকাণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন ঠিক ঐ সময় আমি ওয়াহিদ ভাইয়ের খুবই কাছের মানুষ হয়ে পড়েছিলাম।
এমনিতেই ওয়াহিদ ভাই তার বোহেমিয়ান অর্থাৎ উদাসীনতায় বহুকাল কাটিয়েছেন, যা দেখতে পাই আলতাফ মাহমুদের সাথে তার আত্মার মিল। তিনি যখন আলতাফ মাহমুদকে নিয়ে এভাবে লেখেন তখন চিত্রটি ভেসে উঠে—
“অনেক কাল ঘুরলেন শিল্পী সংস্থার সতত ভ্রাম্যমাণ দলের সঙ্গে। জানতে ইচ্ছে করে, তখন খেয়াল করিনি, তার বিড়ির পয়সাটি আসতো কোথা থেকে। খাওয়া কোথাও জুটেই যায়, কিন্তু বিড়ি কিনতে নগদ পয়সা লাগে। আলতাফের পয়সার যোগানটি নিয়মিত এবং নির্ভরযোগ্য এবং যথেষ্ট উদার না হওয়ায় তার একটা কাজ ছিল ঢাকার সস্তাতম খাবারের দোকান খুঁজে বার করা।
সদরঘাটে রূপমহল সিনেমার উল্টো দিকে ফুটপাতে হকার্স মার্কেট সেই সকাল থেকেই। তার ভিতরে কয়েকটি ভাতের দোকান। চমৎকার গরম ভাপ-তোলা ভাত, লালঝোল মাংস সহযোগে রীতিমত লালা-ঝরানো। ছয় আনায় পেট পূর্তি।
তা ছয় আনাই বা কোথায় মেলে। ...কোনো কারণে তিনদিন এক শয্যায় এক নাগাড়ে কাটাতে হয় আমাকে তার সঙ্গে। সঙ্গে একটি কপর্দকও ছিল না। পাকিস্তানি প্রথম দিনগুলোর অপর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার সময়েও আমি, এক পরিবার পোষ্য নিয়ে, চূড়ান্ত নিঃস্ব ছিলাম। আবিষ্কার করলাম সধর্মীকে, তিনদিন একটানা উপোস দেবার পরে দুপুর নাগাদ আলতাফ কোথা থেকে দু’ আনার একটা মুদ্রা সংগ্রহ করলেন।
আরও পড়ুন >>> সংস্কৃতি খাতে বাজেট এত কম কেন?
প্রস্তিত দ্বিপ্রহরে আলতাফ এক গাল হেসে বললেন, কত কাল চা খাই না, চল চাঙ্গা হই। কাছের র্যাঙ্কিং স্ট্রিটের ধারের এক গলিমুখে ওয়েসাইড রেস্টুরেন্ট। দু’ আনায় বেশ কয়েক খানা কাগচা বিস্কুট আর দু’ কাপ চা মেরে তৃপ্তিতে চোখ বুজে আসতে চায়—আস্তানায় এসে শুয়ে পড়ি।” (মিলিত প্রাণের কলরব, পৃষ্ঠা - ২০৯/২১০, প্রকাশক - অনন্যা)
ক্রান্তি সংগঠন করার সময় আমরা কয়েকজন সমমনা শহীদ আলতাফ মাহমুদের স্মৃতিকে ধরে রাখতে ‘আলতাফ মাহমুদ সংগীত বিদ্যানিকেতন’ প্রতিষ্ঠা করি। আমাদের সাথে রাজনৈতিক মতাদর্শের বিভেদ থাকা সত্ত্বেও ওয়াহিদুল হক এগিয়ে এলেন।
ওয়াহিদ ভাইয়ের পারিবারিক সমস্যা ছাড়াও সেই দিনগুলোয় তার কোনো স্থায়ী চাকরি জুটেনি তাই দেখা যায় এক সংবাদ পত্র থেকে অন্য সংবাদ পত্রে যাওয়া। সেই ১৯৫৬ সাল থেকে তার সাংবাদিকতা শুরু এরপর ডেইলি মর্নিং নিউজ, ষাটের দশকে অবজারভার, ডেইলি স্টার, পিপলস, নিউনেশন কাজ করেছেন।
নিউনেশনে কাজ করার সময় ইত্তেফাক ভবনের নিচে আমি তখন পূবালী ব্যাংকে কর্মরত। আমার লেখা ‘১৯৭১ মৃত্যু ছায়াসঙ্গী’ গ্রন্থে এভাবে লিখেছি—“উপরতলার একটা ঘটনার কথা বলি-ব্যাঙ্কের নানা সমস্যা নিয়ে আমাকে প্রায়ই উপরে যেতে হতো আর কাজের ফাঁকে একটু আড্ডা মারার জন্য নতুন-পুরাতন বন্ধুদের কাছে চলে যেতাম। এমনি একদিন নিউনেশন চত্বরে ওয়াহিদুল হকের চেম্বারে ঢুকেছি চা খাব বলে। ভেতরে ঢুকে দেখলাম কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিকের সাথে বসে কথা বলছেন।
আমাকে ওয়াহিদ ভাই বসতে বললেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘এখানে সম্মান নিয়ে আর কাজ করা যাবে না।’ আমি কিছু বুঝে উঠার আগে ইত্তেফাকের সিনিয়র সাংবাদিক কাজী শাহাবুদ্দীন ভাই বললেন, ‘ভালোই আছেন ব্যাংকে থেকে, ইত্তেফাকের সাংবাদিক হলে বুঝতেন কত ধানে কত চাল।’
আরও পড়ুন >>> সন্জীদা খাতুন : স্থির প্রত্যয়ে যাত্রা
ওয়াহিদুল হক সেদিন নিউনেশনে একটা সম্পাদকীয় লিখেছিলেন যা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের পছন্দ হয়নি তাই চেম্বারে ডেকে নিয়ে কয়েকজন সাংবাদিকের সামনে যা ইচ্ছে তাই বলেছেন। পড়ে শুনেছি মইনুল হোসেন নাকি তার জুতা দেখিয়ে বলেছেন কিছু না পারলে আমার জুতা নিয়ে লেখেন। এরপর ওয়াহিদ ভাই চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে কিছুদিনের জন্য চট্টগ্রামে অন্য একটি ইংরেজি পত্রিকায় যোগদান করেন।” (পৃষ্ঠা - ১৯৭)
ওয়াহিদুল হককে নিয়ে এত অল্প পরিসরে লেখা মানে ওয়াহিদ ভাইকে মূল্যায়ন করা থেকে বঞ্চিত করা। কত কথা কত ঘটনার সাক্ষী আমি তা লিখতে গেলে উপন্যাস হয়ে যাবে তাই আপাত সংবরণ করছি।
দিনু বিল্লাহ ।। সাংস্কৃতিক সংগঠক ও লেখক