ছবি : সংগৃহীত

প্রতি বছর শীতকালে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে কয়েক দফা শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। কখনো কখনো এটা মাঝারি এবং বেশ তীব্র হয়। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশের উত্তরের জেলাগুলো, বিশেষ করে নীলফামারী, সৈয়দপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁওসহ আরও অনেক এলাকার ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

এরই মধ্যে দেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড স্থাপিত হয়েছে। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দেশের ইতিহাসে এই যাবতকালের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

সব এলাকার ওপর দিয়ে শীতল হাওয়া অনবরত বয়ে যাওয়ায় তীব্র শীতে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। শীতে খেটে খাওয়া মানুষজন বিশেষ করে, কৃষি শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশা ও ভ্যান চালকসহ নিম্ন আয়ের মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। শীতজনিত অসুস্থতায় শিশু ও বয়স্ক মানুষের হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাও বেড়েছে।

আরও পড়ুন >>> হঠাৎ এত শীত কেন? 

বাংলাদেশের উত্তরের শুষ্ক ও শীতল বায়ু আমাদের দেশের উপর দিয়ে প্রবাহের ফলে শীতকালে তাপমাত্রা কখনো কখনো অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়।

সাধারণত সমতল এলাকার কোনো অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যদি ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে হয় এবং স্বাভাবিক থেকে তার পার্থক্য ন্যূনতম ৫ ডিগ্রি হয়, তাহলে আবহাওয়ার সেই পরিস্থিতিকে শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। 

সাধারণত সমতল এলাকার কোনো অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যদি ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে হয় এবং স্বাভাবিক থেকে তার পার্থক্য ন্যূনতম ৫ ডিগ্রি হয়, তাহলে আবহাওয়ার সেই পরিস্থিতিকে শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।

বাতাসে তাপমাত্রা সাধারণত ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে এবং ৮ ডিগ্রি মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে। এছাড়া তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রিতে নেমে এলে মাঝারি এবং ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর নিচে নামলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। 

শীতকালে সূর্য বিষুব রেখার দক্ষিণে অবস্থান করে। বাংলাদেশের অবস্থান বিষুব রেখার উত্তরে, প্রায় সাড়ে ২৩ ডিগ্রি অক্ষাংশে। তাই আমাদের দেশে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত শীতকাল।

আরও পড়ুন >>> শীতে যেসব রোগের তীব্রতা বাড়ে 

এই সময়ে সূর্যকে দক্ষিণে হেলে থাকতে দেখা যায় এবং তির্যকভাবে কিরণ দেয়। তখন দিন ছোট, রাত বড় হয় এবং শীতের প্রকোপ বাড়ে।

আমাদের দেশে যখন শীতকাল, পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলো, যেমন নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ায় তখন গ্রীষ্মকাল। এই সময় দক্ষিণ গোলার্ধে বাতাস উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এর ফলে উত্তর গোলার্ধ থেকে ঠান্ডা বাতাস দক্ষিণে প্রবাহিত হয়।

আমাদের দেশের উত্তর দিকে বরফাচ্ছন্ন হিমালয় পর্বতমালা। সেখান থেকে বরফ শীতল বায়ু আমাদের দেশের ওপর দিয়ে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়। এই জন্যই আমাদের দেশে শীতকালে উত্তর দিক থেকে এবং গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ দিক থেকে বাতাস প্রবাহিত হয়।

আমরা দেখি, শীতকালে উত্তরের হিমেল হাওয়া আমাদের দেশের উপর দিয়ে বয়ে যায়। শীতের সময় আমরা ঘরের উত্তর দিকের দরজা-জানালা বন্ধ রেখে শীতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করি। এগুলো হলো সাধারণ শীতের কথা। 

আরও পড়ুন >>> শীতে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়

আবহাওয়ার আকস্মিক পরিবর্তনের কারণে উত্তর ও উত্তর পশ্চিমাঞ্চল থেকে ঠান্ডা বাতাসের প্রবল প্রবাহ সৃষ্টি হয়। এটাই শৈত্যপ্রবাহ। এটা ক্রমশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে সরে যায়। এই সময় শীতল বায়ুপ্রবাহের কারণে হাড় কাঁপানো শীত অনুভূত হয়। 

শীতকালে সূর্য বিষুব রেখার দক্ষিণে অবস্থান করে। বাংলাদেশের অবস্থান বিষুব রেখার উত্তরে, প্রায় সাড়ে ২৩ ডিগ্রি অক্ষাংশে। তাই আমাদের দেশে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত শীতকাল।

শুধুমাত্র বাংলাদেশে নয় ভারত, পাকিস্তান, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে এই সময় শৈত্যপ্রবাহ দেখা দেয়। শৈত্যপ্রবাহ সাধারণত কয়েক দিন স্থায়ী হয়।

বায়ুপ্রবাহের গতি মন্থর বা কমে গেলে শীত থাকলেও সেটা হিমশীতল ঠান্ডা অনুভূতি সৃষ্টি করে না। যেমন, ঢাকায় শীতকালে সাধারণ অবস্থায় তাপমাত্রা যদি ১০ ডিগ্রিতে নেমে যায় সেটা হয়তো সহ্য করা যাবে, কিন্তু সেই সঙ্গে যদি ঠান্ডা বাতাস থাকে, তাহলে সেই ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মনে হবে যেন হিমশীতল ৬-৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা।

আরও পড়ুন >>> কপ-২৭ ও বাংলাদেশের প্রত্যাশা 

কারণ এই সময়ে প্রবহমান বাতাস শরীর থেকে অনবরত তাপ শুষে নিয়ে চলে যায় এবং তাই শীতের অনুভূতি তীব্র হয়। এই জন্যই শৈত্যপ্রবাহ শীতের প্রকোপ বাড়ায়।

জলবায়ুগত পরিবর্তন প্রভাবে বাতাসের একটানা উন্মুক্ত প্রবাহ শৈত্যপ্রবাহে প্রভাব বিস্তার করে। শৈত্যপ্রবাহে কুয়াশার প্রকোপ বেড়ে যাওয়া, ফসলের নতুন চারা মরে যাওয়াসহ শস্য উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে।

শৈত্যপ্রবাহে যেহেতু ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন ধরনের রোগ বেশি হয় তাই এই সময়টায় আমাদের সকলের, বিশেষ করে শিশু এবং বয়স্কদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন। 

অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার ।। প্রাণিবিদ্যা বিভাগ,  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
professorkabirul@gmail.com