ফুটবল বিশ্বকাপ ও বাংলাদেশ ব্র্যান্ডিং
ফুটবল বিশ্বকাপের সঙ্গে ‘বাংলাদেশ ব্র্যান্ডিং’ শব্দটা একটু অন্যরকম শোনালেও আমার এই শব্দচয়নের পেছনে কিছু যুক্তি আছে। ফুটবল বিশ্বকাপ শুরু হলেই আমাদের দেশের দর্শকদের মধ্যে দুটি ধারা খুবই স্পষ্ট হয়ে উঠে, আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিল।
সমর্থকদের মধ্যে খেলার মাঠের বাইরে রীতিমত জোরালো প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়ে যায়। কে কত বড় আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের পতাকা বানাতে পারে, নিজ বাড়ির ছাদে কত বড় পতাকা টাঙাতে পারে এই নিয়ে প্রতিযোগিতা।
বিজ্ঞাপন
আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের জার্সি, ক্যাপ বিক্রির হিড়িক পড়ে যায়, প্রত্যেক জেলা শহরে এই বছর তো জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বড় পর্দায় জমজমাট খেলা দেখার ব্যবস্থা করা হয়।
আরও পড়ুন >>> ফুটবলে বাংলাদেশ কোথায়?
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে এই সংবাদগুলো বেশ ফলাও করে প্রচার হচ্ছে, এই বছর তো আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের সাধারণ মানুষের নজরে এসেছে এই বিষয়।
আর্জেন্টিনা ফাইনালে ওঠার পর বাংলাদেশের যত মানুষ আর্জেন্টিনার জার্সি পরে খেলা দেখবে আমার ধারণা আর্জেন্টিনায়ও এই সংখ্যা হবে না কারণ তাদের জনসংখ্যা অনেক কম।
বাংলাদেশ ফুটবলে খুব বেশি এগোতে পারেনি। এর প্রধান কারণ আমাদের দেশে নিয়মিত বয়স ভিত্তিক ফুটবল টুর্নামেন্ট নেই বললেই চলে।
জাতীয় আন্তস্কুল প্রতিযোগিতায়ও মাঝে মধ্যে অনিয়মিতভাবে হয়ে থাকে। এর পেছনে হয়তো স্পন্সরের অভাব একটা কারণ হতে পারে।
একটা সুন্দর এবং সফল টুর্নামেন্ট করতে গেলে অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার প্রয়োজন, আর এটা কোনোভাবেই স্বেচ্ছাসেবা দিয়ে সম্ভব নয়। তার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন।
সরকারের পক্ষ থেকে অর্থের জোগান পাওয়া যায় দেখেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়, নিয়মিত ফেডারেশন কাপ, ক্লাব টুর্নামেন্ট দেখা যায়।
আরও পড়ুন >>> ফুটবল তারকা : যাদের শৈশব কেটেছে দারিদ্র্যে
আমার ধারণা ফুটবল ফেডারেশনের একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরির জন্য সেটা অপ্রতুল। খেলোয়াড় যারা ক্লাবে খেলে তারা সবাই নিজেরাই খেলোয়াড় হয়ে আসে, ততদিনে তাদের বয়সী বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিছুটা ভূমিকা রাখছে কিন্তু ফুটবল পেশা হিসেবে নিতে অনেকেই নিরুৎসাহিত হয়ে থাকে অর্থনৈতিক কারণে। তার উপর আবার ‘ফুটবল’ ক্রিকেটের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় তরুণদের আকৃষ্ট করতে পারছে না।
আমরা সবাই জানি ক্রিকেট আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ এগিয়ে আছে, ক্রিকেট বোর্ডের আর্থিক অবস্থা খুবই ভালো, পুলভুক্ত খেলোয়াড়রা আন্তর্জাতিক মানের পারিশ্রমিক পেয়ে থাকে। বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট নিয়মিতই হয়, অনূর্ধ্ব-১৯ একবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, তরুণরাও পেশা হিসেবে ক্রিকেট সহজেই বেছে নিচ্ছে।
তবে বাংলাদেশে এখন ছেলেদের ফুটবলে ইউরোপে বড় হওয়া কয়েকজন খেলোয়াড় নিয়মিতভাবে জাতীয় দলে খেলছে, তাদের দেখাদেখি হয়তো আরও অনেকেই আসতে থাকবে বলেই আমার বিশ্বাস।
তবে মহিলা ফুটবল বেশ এগিয়েছে। ফুটবল ফেডারেশনের বিশেষ তত্ত্বাবধানে, নিজস্ব আবাসনে রেখে মহিলা ফুটবল অনেক দূর এগিয়েছে। একেবারে প্রান্তিক থেকে আসা তরুণীদের দ্বারা গঠিত ‘বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল দল’ সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
আরও পড়ুন >>> অর্থনীতির বিশ্বকাপ!
আশার হাতছানি দিচ্ছে হয়তো, একদিন এরা বিশ্ব ফুটবলের অংশ হয়ে উঠবে। তবে ঐ যে কথা একটাই বয়স ভিত্তিক / স্কুল ভিত্তিক টুর্নামেন্ট নিয়মিত চালু রাখতে এবং বাছাই করা খেলোয়াড়দের বিশেষ তত্ত্বাবধানে বেশি বেশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে খেলাতে হবে।
আমাদের দেশের আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের দর্শকরা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিকভাবে একটা ‘ব্র্যান্ড’-এ পরিণত করেছে, আর তাইতো আর্জেন্টিনা এখন বাংলাদেশে একটি দূতাবাস খোলার ঘোষণা দিয়েছে।
আর এই ‘বাংলাদেশ ব্র্যান্ড’-এর মাধ্যমে আমাদের ফুটবল একদিন হয়তো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোক রশ্মি ছড়াতে থাকবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে চাই।
আব্দুল্লা রফিক ।। আলবার্টা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি