বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ
আজ ৭ মার্চ। বাঙালি এবং বাংলাদেশের ক্যালেন্ডারে এই দিনটির গুরুত্ব, তাৎপর্য ইত্যাদি নিয়ে নতুন করে লেখা ও ব্যাখ্যা করা একেবারেই নিষ্প্রয়োজন। সেদিনের রেসকোর্সে লাখো জনতার উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ভাষণটি অনেক আগেই স্থান করে নিয়েছে ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম একশটি ভাষণের তালিকায়। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, পৃথিবীতে একমাত্র ভাষণ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণটির বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি অর্জন। এমনকি বঙ্গবন্ধুতে যাদের অবিশ্বাস, যাদের রাজনীতিই বঙ্গবন্ধু-বাংলাদেশ আর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নয়, তাদের বক্তব্যেও ইদানীং বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের স্তুতি। অবশ্য বলা মুশকিল, এটি তাদের সত্যিকারের উপলব্ধি, না স্রোতের বিপরীতে চলে ক্ষমতার ডাঙ্গায় তরী ভেড়ানোর সব আশা দেখে নতুন কোনো কপটতা। তবে যাই হোক না কেন, তাতে বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশের সামান্যই যায় আসে। ৭ মার্চ এখন বাংলাদেশের জাতীয় দিবস, ৭ মার্চ এখন বিশ্ববাসীর অনন্য ঐতিহ্যের ওতপ্রোত অংশ।
এই বছর আমরা স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তী উদযাপন করব। আজকের প্রেক্ষাপটে ৭ মার্চকে তাই আমাদের ভিন্নভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। কোথায় দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন-সাধের বাংলাদেশ? যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন তার এই অসামান্য ভাষণের মধ্য দিয়ে, সেই বাংলাদেশ এখন কোথায়? এ নিয়ে যখন লিখতে বসেছি, তখন বিশ্বনন্দিত সংবাদ সাময়িকী নিউজ উইকের সর্বশেষ সংখ্যাটির অনলাইন ভার্সন হাতের সামনে। আর তাতে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের চমৎকার একটি কলাম।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
পঞ্চাশ বছরের মাথায় কোথায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ, তার এক অনবদ্য বর্ণনা ছিল সজীব ওয়াজেদ জয়ের এই লেখাটিতে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণের অসমাপ্ত কাজটি নতুন করে শুরু করেছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে। দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি প্রধানমন্ত্রিত্বের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। সেই থেকে শুরু হয় ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রা। নেপথ্যে সজীব ওয়াজেদ জয়। একাত্তরে বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বঙ্গবন্ধুর ডাকে, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে পাকিস্তানি দখলদারিত্বের অবসানের অসামান্য স্পৃহায়।
২০০৯ সালে মাত্র বিশ লাখ মানুষের হাতে ছিল মোবাইল ফোন। সেখান থেকে যাত্রা শুরু করে আজ বারো কোটি মানুষের হাতে মোবাইল ফোন। হাইস্পিড ইন্টারনেটের আওতায় এখন দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল, যার প্রমাণ আমি প্রতিদিনই পাই আমার পেশার জায়গায় বসে। যখনই দেশের দূর-দূরান্ত থেকে রোগীরা এসে বলেন, তারা ইউটিউব কিংবা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমার কাজের বিষয়ে প্রথমবারের মতো জানতে পেরেছেন। তখন মন ভালো হয়ে যায়।
একাত্তরে বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বঙ্গবন্ধুর ডাকে, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে পাকিস্তানি দখলদারিত্বের অবসানের অসামান্য স্পৃহায়।
আমাদের সেই ডিজিটাল সক্ষমতায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট। ২০০৯-এ যখন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ক্যাম্পেইনটি লঞ্চ করা হয় তখন এর অন্যতম একটি লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ সরকারের সেবা প্রদানের পরিধিকে ইন্টারনেট আর স্মার্টফোনের আওতায় নিয়ে আসা।
আজ ২০২১-এর ৭ মার্চ সারা দেশে জালের মতো ছড়িয়ে আছে সাড়ে আট হাজার ডিজিটাল সেন্টারের নেটওয়ার্ক, যার সুফল বাংলাদেশ পেয়েছে করোনাকালে। লকডাউনে মুখ থুবড়ে পড়েনি বাংলাদেশ, বরং ছুটেছে ঊর্ধ্বগতিতে। টেলিমেডিসিন সেবা সচল রেখেছে স্বাস্থ্য খাতকে, আর কমিয়ে এনেছে কোভিডে হতাহতের সংখ্যা।
আরও পড়ুন
আমাদের বিচারব্যবস্থাও এখন ভার্চুয়াল জগতে, যা এক সময় ছিল চিন্তার অতীত। যেমন কেউ ভাবতেই পারেননি, আমাদের প্রান্তিক কৃষকেরা তাদের নানা প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত পেয়ে যাবে ঘরে বসে, অনায়াসে ডিজিটাল মাধ্যমে। বাংলাদেশের লক্ষ্য হচ্ছে স্মার্টফোনে পঁচাশি শতাংশ মানুষকে সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়া। শুধু পাঁচ শতাংশ দেশের মানুষকে সেবা গ্রহণের জন্য সরকারি দফতরে ধরনা দিতে হবে। সে কাজে আমাদের অগ্রগতিও দৃশ্যমান।
আজ ২০২১-এর ৭ মার্চ সারা দেশে জালের মতো ছড়িয়ে আছে সাড়ে আট হাজার ডিজিটাল সেন্টারের নেটওয়ার্ক, যার সুফল বাংলাদেশ পেয়েছে করোনাকালে। লকডাউনে মুখ থুবড়ে পড়েনি বাংলাদেশ, বরং ছুটেছে ঊর্ধ্বগতিতে।
বিনামূল্যে ৯৯৯-এ ডায়াল করে বাংলাদেশের মানুষ এখন দুর্ঘটনা, সাইবার অপরাধ ও নারীর প্রতি শ্লীলতাহানিসহ নানা অপরাধ, জরুরি স্বাস্থ্যসেবাসহ নানা জরুরি প্রয়োজনে সরকারি সেবা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন। আমাদের ন্যাশনাল হেল্প ডেস্ক প্রতি মিনিটে গড়ে ষাটটি ফোন কল রিসিভ করছে।
শুধুমাত্র ডিজিটালাইজেশনের কল্যাণে এদেশের মানুষ এখন পর্যন্ত দুই বিলিয়ন কর্মঘণ্টা বাঁচাতে পেরেছেন, আর সরকারি দফতরে এক বিলিয়ন ভিজিট, যার অর্থমূল্য আট বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। গত এক যুগে তের লাখের বেশি তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী আর দশ হাজারের বেশি তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা পেয়েছে বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন
পরিবর্তিত এবং পরিমার্জিত শিক্ষা ব্যবস্থাপনার কল্যাণে বাংলাদেশে শুধু গত বছরই তৈরি হয়েছে পঁয়ষট্টি হাজার তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী। এ খাতে আমাদের বার্ষিক আয় এখন ছাড়িয়েছে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার, আর ২০০৮-এর তুলনায় জিডিপি বেড়েছে গড়ে তিন শতাংশ। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবীরা এখন ভূমিকা রাখছেন প্রতিবেশী মালদ্বীপ, ভুটান আর শ্রীলংকার ডিজিটালাইজেশনেও।
যে দেশের জনংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশের বয়স পঁচিশের নিচে, সে দেশের মানুষের সামনে আছে ৭ মার্চের ভাষণের মতো দিকনির্দেশনা আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো অদ্বিতীয় নেতৃত্ব এবং সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের তথ্যপ্রযুক্তি দর্শন, সে দেশ যে সামনে ডিজিটাল পথ ধরে বিশ্ব কাঁপাবে-দাপাবে সে কথা বোধকরি বলা যায় অবলীলায়। অন্তত নিউজ উইকে সজীব ওয়াজেদ জয়ের অসামান্য যে লেখাকে অবলম্বন করে আমার এই কলামটি লেখা, সেই লেখাটি পড়ে আর সেটিকে আত্মস্থ করে আমার তেমনটাই মনে হয়েছে।
অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব ।। চেয়ারম্যান, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়