কে কাকে বিয়ে করলো, কি করলো না তা নিয়ে আমার মোটেও মাথাব্যথা নেই। এটি পুরোপুরি ব্যক্তিগত বিষয়। কেউ যখন অন্যের অধিকার নষ্ট করে তখনই আমার আপত্তি। আর বিপত্তিও ঘটে তখনই। লোকে কি প্রেম করছে না? বিয়ে করছে না? করছে তো। করবেই তো। করাটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু অন্যের প্রেমিকা বা প্রেমিক কিংবা অন্যের স্ত্রী বা স্বামী নিয়ে টানাহেঁচড়া রীতিমতো অশ্লীল বিষয়।

আর সেই অশ্লীল কাজটি করেছেন ক্রিকেটার নাসির। নাসির জাতীয় দলের ক্রিকেটার। অনেকের কাছে ক্রিকেটাররা আইকন। ক্রিকেটারদেরতো আমরা বাড়তি গুরুত্বও দিচ্ছি। রাজনৈতিক পদ-পদবি দিচ্ছি। সাংসদ করছি। তাদেরওতো কিছু দায়িত্ব রয়েছে, সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। সেসব ভুলে গিয়ে অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলে লোকে ভালোভাবে নেবে না- এমনটাইতো স্বাভাবিক।

যদিও অসভ্যতা, অসামাজিকতা দিন দিন স্বাভাবিক হয়ে উঠছে সমাজে! এখন মোবাইলের ডাবল সিমের মতো ডুয়েল রিলেশনেরও ছড়াছড়ি। সিম যেমন সস্তা, সম্পর্ক তার চেয়েও সস্তা। শুধু ইনসার্ট করলেই হলো। এখন যে যার মতো ব্যবহার করে। কিছুদিন ব্যবহারের পর এবার ছুঁড়ে ফেলে। মুহূর্তেই সব শেষো। কিন্তু সম্পর্ক কি আসলে তাই? কোন দায় নেই, দায়িত্ব নেই- এটাই কি সম্পর্ক?

টাকা আর ভোগবাদিতার বাইরে চিন্তাও করা যায় না। রিলেশন আছে কমিটমেন্ট নেই। অন্যের বউকে যে বিয়ে করা যায় না, ডির্ভোস নিতে হয়- এই বোধটিই বিদায় নিয়েছে।

এখন অনেকের কাছে ডুয়েল রিলেশন রীতিমতো- ক্রেডিট। ক্রেডিট সকল অর্থেই। মেয়েরা, ছেলেরা এখন একই সঙ্গে দুটো রাখতে আগ্রহী। এতে লাভও বেশি। একজন না হলে হাতের কাছে আরেকজনকে পাওয়া যায়, ডেট মিস হওয়ার সম্ভাবনা কম, একজন মাইন্ড করলে অন্যজনতো আছেই।

আজকাল এমন হয়েছে ডুয়েল রিলেশন ‘মেইনটেইন’ করতে না পারাটা- কারো কারো ভাষায় ‘ডিসক্রেডিট’। মেয়েরা, ছেলেরা এখন একটু অভিজ্ঞ লোক খোঁজে। বলে ‘ম্যাচিউর’ না হলে হয় না। ম্যাচিউর হলে ভালো, নতুন করে কিছু বোঝাতে হয় না। ফেন্ডরাও খুব এপ্রিসিয়েট করে বলে, তুই পারিস অনেক। ওহ্ ইয়েসস!

নাসির-তামিমার সম্পর্কটাও হয়তো অনেকটা এমনই। তামিমার স্বামী মিডিয়ায় এসে হঠাৎ করে হামলে পড়ে বলতে লাগলেন, তিনি ঘুম থেকে উঠে আবিষ্কার করলেন তার স্ত্রীর হাজব্যান্ড ক্রিকেটার নাসির। বলা নেই কওয়া নেই রাকিবের স্ত্রী হয়ে গেলেন পরের স্ত্রী। একই সঙ্গে দুজনের স্ত্রী। বিস্ময়কর হলো, রাকিবের সঙ্গে এখনও তামিমার ডিভোর্স হয়নি। নাসির যা করছেন তা নিশ্চিতই অন্যায়। বিয়ে তো তিনি করতেই পারেন, যাকে ইচ্ছে তাকে পারেন। তাই বলে তা অন্যের বউকে নয়- নিশ্চয়ই।

স্বামী সন্তান থাকাকালীন তামিমার ডিভোর্স না নিয়ে ‘নতুন স্বামী গ্রহণ’- একধরনের অনৈতিক কাজ। যদিও তামিমা এখন এই সময়ে এসে বলছেন, তিনি ডিভোর্স নিয়েছেন।

নাসিরও তার ফাঁস হওয়া অডিওতে বলেছেন- ‘আমি সবকিছু জেনেই করেছি’। তার মানে ‘পরের বউকে’ তিনি বিয়ে করেছেন জেনেশুনেই। এটা হয়তো নাসিরের কাছেও ক্রেডিট। এটা যে অসভ্যতা ও আইনত দণ্ডনীয় সেটাও জ্ঞাত থাকা উচিত জাতীয় পর্যায়ের এই ক্রিকেটারের। যদিও তিনি তার তোয়াক্কা করেননি।

এদিকে রাকিবও তার স্ত্রী তামিমার আরও বয়ফেন্ড, কার সঙ্গে কি ছিল বা আছে টাইপ ন্যারেশন বেইজড ইন্টারভিউ দিয়েই যাচ্ছেন একের পর এক ইউটিউব চ্যানেলে। সে বেচারাও ভাইরাল। তারা আসলে অফিসিয়ালি হাসব্যান্ড বা ওয়াইফ ব্যাপারটা নিজেদের মধ্যে ধারণ করেন কি না সেটাও ভাববার বিষয়।

‘তামিমা-নাসির’ কিংবা ‘তামিমা-রাকিব’ টাইপ সম্পর্কের ছড়াছড়ি এ শহরে। এইসব দেখে অন্যায়কে অন্যায় মনে হয় না। এই ‘না হওয়া’ যে সুস্থতা নয় তা বুঝতে পারি না। টাকা আর ভোগবাদিতার বাইরে চিন্তাও করা যায় না। রিলেশন আছে কমিটমেন্ট নেই। অন্যের বউকে যে বিয়ে করা যায় না, ডির্ভোস নিতে হয়- এই বোধটিই বিদায় নিয়েছে। সম্পর্কের নৈতিকতা বলে এখন কিছু নেই, নেই কমিটমেন্টও।

সোকল্ড নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী, যারা তামিমার পক্ষে ‘নারী স্বাধীনতা’, ‘নারীর অধিকার’ বলে চিৎকার করছেন, তাদের জানা উচিত- স্বামীকে ডির্ভোস না দিয়ে অন্য আরেকজনকে বিয়ে করা রীতিমতো ক্রিমিনাল অফেন্স। দণ্ডবিধির ৪৯৪ ও ৪৯৭ ধারানুযায়ী, কেউ জেনেশুনে, অন্যের স্ত্রীকে বিয়ে করলে সেই বিয়ে দণ্ডবিধির ৪৯৪ ধারা অনুযায়ী সম্পূর্ণ বাতিল বিয়ে। ৪৯৭ ধারায় ব্যভিচার হিসেবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড সঙ্গে অর্থদণ্ডও হতে পারে। এই আইন কেবল নারীর জন্য নয় পুরুষের জন্যও প্রযোজ্য। স্বামী সন্তান থাকাকালীন তামিমার ডিভোর্স না নিয়ে ‘নতুন স্বামী গ্রহণ’- একধরনের অনৈতিক কাজ।

যদিও তামিমা এখন এই সময়ে এসে বলছেন, তিনি ডিভোর্স নিয়েছেন। কিন্তু কোন তথ্য-প্রমাণ বা কাগজপত্র হাজির করতে পারেননি। তিনি ক্রিকেটার নাসিরের পেজ থেকে তার আপডেট জানিয়েছেন।

সম্পর্কের স্বচ্ছতার আগে ব্যক্তির নিজের স্বচ্ছতা প্রয়োজন। প্রয়োজন আত্মজিজ্ঞাসা, জবাবদিহিতা। যদিও মানুষ মিথ্যা বলে সবার আগে নিজের সঙ্গেই।

জব্বার হোসেন ।। সম্পাদক, আজ সারাবেলা