ছবি : সংগৃহীত

শিক্ষা এমন এক পরশ পাথর যার সংস্পর্শে আমাদের আত্মিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে। কিন্তু বর্তমান শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষাব্যবস্থা কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারছে আমাদের আত্মিক ও মানসিক উৎকর্ষ সাধনে?

আমরা একটা সময় দেখতাম শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর মধ্যে মধুময়, শ্রদ্ধার এবং ভালোবাসার সম্পর্ক। কিন্তু কোথায় আজ আমাদের সেই ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার সম্পর্ক?

গণমাধ্যমে চোখ রাখলেই দেখতে পাই, শিক্ষার্থী দ্বারা শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা কিংবা শিক্ষকের নির্মম প্রহারে অকালে ঝরে যাওয়ার কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা যার কোনোটিই আমাদের কাম্য নয়। কিন্তু এই দায় কার?

আরও পড়ুন : এই লজ্জা রাখব কোথায়?

আমাদের শিক্ষক সমাজের নাকি শিক্ষার্থীদের? অভিভাবকদের নাকি বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার? আমরা যদি ব্যক্তি পর্যায়ের কথা বলি, তাহলে এর দায় আমাদের সকলের।

কেননা আমরা সবাই যদি যার যার অর্পিত দায়িত্ব সুনাগরিক হিসেবে যথার্থভাবে পালন করি তবেই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারব।

এবার আসা যাক বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা দিয়ে, ঘনঘন সিলেবাস পরিবর্তন, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব, বর্তমান শিক্ষা বাজেটের অপ্রতুলতা যেন বর্তমান শিক্ষাকে সোজা হয়ে দাঁড়াতেই দিচ্ছে না।

আরও পড়ুন : শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন : বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ 

বিশেষ করে করোনার প্রভাবে আমাদের শিক্ষা খাতের যে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা যেন কোনো ভাবেই কাটিয়ে উঠতে পারছি না, যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি অশনি সংকেত।

আমাদের ভাবনার আরেকটি বিষয়, বর্তমানে পাশের হার বেড়েছে কিন্তু বাড়েনি শিক্ষার গুণগত মান ও গুণগত মানের শিক্ষার্থী। বর্তমানে আমরা অনেকেই শিক্ষাকে সেবা হিসেবে নয় বাণিজ্যি হিসেবে গ্রহণ করেছি।

ব্যক্তিগত মালিকানাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পাওয়া শিক্ষার বাণিজ্যিক দিকের ইঙ্গিত বহন করছে। কিন্তু আমরা যদি সফল এবং সার্থক ব্যক্তিদের তালিকা সাজাই তাহলে দেখতে পাব অধিকাংশ সফল এবং সার্থক ব্যক্তিরা সরকারি স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন।

আরও পড়ুন : শিক্ষক লাঞ্ছনায় সবাই নিশ্চুপ কেন? 

বর্তমানে একটি পরিবারের ব্যয়ের সর্বোচ্চ খাত হচ্ছে শিক্ষা। এত ব্যয় করার পরও কি অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের সফলতায় খুশি কিংবা শিক্ষার্থীরাই কতটুকু সফল?

আমাদের সময় ব্যাঙের ছাতার মতো এত কোচিং সেন্টার বা ব্যক্তিগত মালিকানাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না। তাই বলে কি আমরা পরীক্ষায় ভালো করিনি? তাই বলে কি কবি শামসুর রাহমান, বেগম সুফিয়া কামাল, মুনীর চৌধুরী, শহীদুল্লা কায়সার, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্ম হয়নি?

তাই আমি বলি সর্বোচ্চ ব্যয় নয়, বরং অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস, কঠোর পরিশ্রম ও আন্তরিকতা এবং আমাদের সমন্বিত প্রচেষ্টাই এনে দিতে পারে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য ও সার্থকতা।

সানোয়ার ।। প্রভাষক, শহীদ রওশন আলী খান কলেজ