বয়স শুধু সংখ্যা মাত্র
বয়স শুধু সংখ্যা মাত্র। আসলেই তাই? আপনি কি বলেন? আমরা যারা জীবনের হাফ ইনিংস খেলছি—বয়সটাকে শুধু কী একটা সংখ্যাই মনে হয়? কোভিডে হাসি-খুশি দিব্যি ভালো বন্ধুদের পটাপট হারিয়েছি। আর আমরা বাকিরা কোভিডকে জিতলেও আয়নায় যখন নিজেকে দেখি তো চুল কমছে, ভুরু পাতলা হচ্ছে, চোখের কোণে ত্রুস ফিট, হাসলে লাফিং লাইন, গলায়ও তো দেখছি ভাঁজ পড়ছে! কানে কম শুনি।
চোখে রিডিং গ্লাস ছাড়া অন্ধ, হুটহাট সব ভুলে যাই! টিভি দেখতে বসলে রাজ্যের ঘুম। আর বিছানায় শুতে গেলে—ঘুম তুই কই! কোমরে মেদের কয়েক ভাঁজ। ব্লাউজের তলা দিয়ে টিটকারি মারে। এমন বহুতর লক্ষণ।
বিজ্ঞাপন
কোমরে ব্যথা, হাঁটুর ব্যথা, দাঁতের ব্যথা, নির্ঘুম রাত, হুদাই দুশ্চিন্তা, হুদাই প্যানিক অ্যাটাক, পেটে গ্যাসের নিউক্লিয়ার ফ্যাক্টরি, সুগার হাই, ফ্যাটি লিভার, কিডনি স্টোন, হার্টের ধুকপুকানি কোনো হার্টথ্রব ছাড়াই ইত্যাদি ইত্যাদি।
শরীরের চামড়াও তো কুঁচকে যাচ্ছে। কুঁজোও হয়ে যাচ্ছি। আগের মতো টান টান করে দাঁড়াতে বেশ কষ্টই হয়। হাই হিল কবে শেষ পরেছি—ওয়েট মনে করতে হবে! আর মেজাজ? সেটাতো সপ্তমে চড়েই থাকে। অনেকের ওপর আবার ডিপ্রেশনের ভূত সওয়ার আছে।
আরও পড়ুন : ‘টিকা’ টিপ্পনী
নিজ বাড়ি, ব্যাংক ব্যাল্যান্স, বুড়ো স্বামী থাকা সত্ত্বেও ওনাদের কীসের জানি অভাব। সমাজে শো-অফের মুকুট পরে ছেলেমেয়েদের বলিউড স্টাইলে বিগ-ফ্যাট-ইন্ডিয়ান ওয়েডিং দিয়েও মনে শান্তির অভাব! অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট বড়ি বেলায় বেলায়। ইনসিকিউরিটি।
আমার তো আজকাল মিনারেল বোতলের মুখের প্যাচ খুলতেই সমস্যা হয়। তারপরও বলবেন বয়সটা কিছুই না? কমপক্ষে আমাদের দেশে তো কথা সত্য নয় অবশ্যই। আমার তো মাঝেমাঝে মনে হয় যে, বয়স সংখ্যা ব্যতীত কিছুই নয় এই মহান বাণী যিনি দিয়ে গেছেন। টাইম মেশিনে চড়ে ফিরে গিয়ে তাকে কষে একটা থাপ্পড় দিয়ে আসি।
এই বাণী আরেক দল নিজেদের সুবিধামতো ভীষণ ব্যবহার করেন। সেই দলে আছেন ডাক্তাররা। অসুখ হলেই বলবে (নিজেদের সুবিধা মতো) ‘আর কত ভাই? বয়স তো হলো। এবার শরীরকে নিয়মে আনেন। এই বয়সে কি আর লম্ফ-ঝম্প মানায়। রেস্ট নিন।’
আবার একই ডাক্তার (নিজেদের সুবিধা মতো) ঠিক উল্টোটা বলবে। ‘আরে আর কী বয়স আপনার। ব্যায়াম-ট্যায়াম করুন। ঘুরে বেড়ান। এনজয় ইওর লাইফ। চিন্তার কি আছে।’ কোন দিকে যাবেন বলুন তো? আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি।
সামাজিক নিন্দা
আরে বাহ্। সমাজ তো আপনার পেছনে হাত ধুয়ে লেগে আছে। নারী বা পুরুষ সবাই ভুগি। কম বা বেশি। বেশিটাই বেশি। কারণ ড্যামকেয়ার পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষের অভাব আছে। বাজারে যাবেন আপনার টাক মাথা দেখে মাছওয়ালা নির্দ্বিধায় আপনাকে ‘চাচা’ সম্বোধন করবে।
আরও পড়ুন : মেয়েতো কালো
আমার এক ক্লাসমেট তো রাগ করে মাছ না কিনেই বাড়ি ফিরে গিয়েছিল। আর আমরা নারীরা মার্কেটে গেলে- ‘আন্টি’, ‘খালা’, ‘নানি’ সব উপাধি ফ্রিতে পেয়ে যাই। আমাদের শরীর দেখে ওদের এসব ডাক ডাকার অধিকার কে দিল? যা না রে বাপ-সরকারি নারী অফিসারদের আন্টি বা নানি বলে ডেকে দেখা!
তার মানে কি পদমর্যাদা ডিসাইডিং ফ্যাক্টর আমাদের বয়স পরিমাপের? নাকি সেটাও না? একদিন কী মনে করে আমার হেয়ারস্টাইল চেঞ্জ করে করলাম। প্রায়ই করি। পারফেক্ট লেডি টাইপ না করে কিছুটা ডিফারেন্ট। ব্যস শুরু হয়ে গেল কমেন্ট।
‘কী রে খুকি সাজতে চাস নাকি?’, ‘মেয়েদের এমন ছোট চুলে লাগে কেমন? তার উপর কী রঙ দিয়েছিস রে। শাশুড়ি হয়েছিস একটু ইয়ে তো করবি!’ আমাদের বয়স্ক পুরুষেরাও বলিহারি—বেশিরভাগ মন্ত্রী/এমপি (ব্যতিক্রম অন্তর্ভুক্ত নয়) থেকে ৭০-এর ব্যবসায়ী এমনকি ৭০-এর নানি-দাদিরাও চুলে কলপ দিয়ে কুচকুচে কালো করে রাখেন। সেলিব্রেটিরাও।
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা’র কুচকুচে কালো কেশের বাহার ছাড়া ইউটিউবে কোনো ছবি খুঁজে পাবেন কি? এর মানেটা কী? বারাক ওবামা বা বাইডেন বা আমাদের নরেন্দ্র মোদি বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা ইমরান খান বা মেরিল স্ট্রিপ কি কালো কলপ লাগাচ্ছেন? বয়স লাবণ্যময়। পরিবারের সাপোর্ট জরুরি।
আরও পড়ুন : কৈশোরবান্ধব যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা কেন জরুরি
আমাদের দেশের একদল সাহসী নারীরা বরং এগিয়ে—মাননীয় প্রধানমন্ত্রী থেকে দীপুমনি বা সারা যাকের বা শম্পা রেজা বা সামিয়া জামান এসব থেকে বের হয়ে এসে ট্রেন্ড সেটার হয়েছেন। ব্রাভো! নতুন জেনারেশনকেও দেখছি সাদা-পাকা চুল নিয়ে দিব্যি ফ্যাশন করতে এখন।
ডায়েট
প্রথম কথা নিজের জিহ্বার লাগাম না টানলে কিন্তু ডায়েট বা ব্যায়ামের কোনো রোল নেই আপনার শরীরে। আবারও একই কথা—মনের জোর না থাকলে কিছুই করতে পারবেন না। এবং যা করবেন নিয়মিত করতে হবে। মনে করে দেখুন আমাদের নানি-দাদিরা কিন্তু হোম রেমেডি খুব খেতেন। যেমন আমার নানি আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকে দেখে এসেছি—রাতে ভেজানো চিরতার পানি খালি পেটে খেতেন সারা জীবন। ওনার কখনো পেটের সমস্যা শুনি নাই।
গ্যাসের সমস্যায় আজকাল ৯০ শতাংশ ভোগেন। কেনরে বাবা—প্রতিদিন ১ গ্লাস ইসবগুলের ভুষি খান। গরম পানিতে লেবুর রসের সাথে মধু খেয়ে দিন শুরু করেন। আমলকী চিবান দিনে ২/৩টা। প্রতিদিন কাঁচা হলুদ বাটা ১ চামচ খান।
মেথি + কালিজিরা + সিনামেন একসাথে বেটে বা গুড়া করে ডেইলি ১ চামচ খান। ফ্রিজের পানি বাদ দিন। চাইনিজদের মতো গরম পানি পান করুন। চা'য়ে চিনি বাদ দিন। খাবারে আলাদা লবণ কমান। ডিপ ফ্রাই বাদ দিন। ভাতের পরিমাণ কমান। লাল আটার রুটি। ব্রাউন ব্রেড। এসব চাইলেই করতে পারেন প্রতিদিন যদি আপনি চান। আমি করি।
১০ বছরের বেশি ধরেই করছি। শুধু চিরতা বাদে। সেটার জন্য গিল্টি ফিলিংক্সও হয় খুব। মাত্র তো কয়টা লিখলাম। যাকে বলে আপনি যা অনুশীলন করেন তা অভ্যাস করুন। শুরুটা করেন আগে অভ্যাস আপনাআপনি হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন : বাল্যবিবাহ উপসর্গ মাত্র, মূল ব্যাধি পিতৃতন্ত্র
কোনোভাবেই শুরু করতে দেরি নয়। আর গুগলে সার্চ করলেই এসব খাবারের উপকারিতা জানতে ২ মিনিট লাগবে। দেরি করলে কপাল চাপড়াবেন। যাই হোক, স্রষ্টার আশীর্বাদে আমার এখনো কোভিড হয়নি। হয়তোবা এসব অভ্যাসের ফল! আর বাকিগুলো তো বললামই না যেমন—রসুন / আদা/ অ্যালোভেরা জুস ইত্যাদি।
আমি তো দেখি যাদের যা অসুখ সেসব বারণ খাবারগুলোই বন্ধ করেন না! কারণটা কী? বাচঁতে চান না? খাবেন অবশ্যই তবে বুঝে। বয়সের সাথে জিহ্বায় লাগাম টানা জরুরি। সুস্থতা জরুরি নাকি বেসামাল কাচ্চি / ভাত/ মাংস / মিষ্টি / পিজ্জা এসব প্রতিদিন?
নারীদের বয়স ফোবিয়া কি একটু বেশিই?
নিজের গল্প দিয়েই শুরু করি। প্রায় ২০ বছর আগে গুলশানে আমাদের ফ্ল্যাট কেনা হবে। বাবা-মা’র সাথে আমিও গেছি। ফর্ম ফিলাপের সময় বাবা মায়ের বয়সের ঘরে ৫০ লিখল। ব্যস। আমার মা তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠল। সামনে বসা ডিরেক্টরের সামনেই মা শুরু করল। আমি ৪৯। তুমি কেন ৫০ লিখলে? কেন লিখলে?
আমি ভাবছি সমস্যা কোথায়? ১ বছর নিয়ে কেউ ঝগড়া করে। বাবা রীতিমতো বিব্রত। শেষপর্যন্ত ডিরেক্টর সাহেব চুপিচুপি বললেন—ভাই ৪৯ই লিখে দেন। বাবা আবার ৫০ কেটে ৪৯ লিখল। এরপর গুলশান থেকে ধানমন্ডি বাসা তারপর আরও ২ দিন আমার মায়ের ঝগড়া শেষ পর্যন্ত কান্নাকাটিতে থামল।
আমিও কম যাই না। লুকিয়ে দেখে ফেললাম পাসপোর্টে মায়ের বয়স। জন্মসাল হিসাব করে বের করলাম বাবাও ভুল ছিল। মায়ের বয়স তখন ৫১। তখনই প্রতিজ্ঞা করলাম আমি জীবনে বয়স কমাব না। যা হওয়ার তাই হবে। এখন বুঝি এটা আমার মায়ের ইনসিকিউরিটি বৈকি আর কিছুই ছিল না।
সমাজই শিখিয়েছে ‘আসল বয়স বলা বারণ।’ লোকে কী বলবে? আমার পেছনেও মা কম পরিশ্রম করত না। নিজের বোনদের ডেকে ডেকে হা-হুতাশ করতো আমাকে নিয়ে। বলতো—‘৩ বাচ্চার মা শাড়ি না পরুক অন্তত কামিজ-ওড়না তো পরতে পারে। ছিঃ এখনো জিন্স-শার্ট / ফতুয়া।’
আরও পড়ুন : গর্ভবতী নারীর করোনা ভ্যাকসিন কেন জরুরি
আমার বয়স তখন ৩০/৩৫! অবশ্য আমি বদলাতে পারিনি নিজেকে। ছোটবেলা থেকে যে কাপড় পরে অভ্যাস। এখনো সেখানেই লটকে আছি। অশ্লীলতায় না গেলেই হলো। শাড়ি খুব ভালো লাগে। অনেক পরি। কিন্তু প্রতিদিনের পোশাক সেই জিন্স-টপস-ফতুয়া। কি করব? বয়স বেড়েছে সেটাও কি পোষাকেও দেখাতে হবে? তাহলে বয়স শুধু নম্বর এই প্রহসন কেন?
আরেকটা মজার কথা বলি, আমার বাকেটলিস্টে ‘এভারেস্ট বেইস ক্যাম্প ওয়ান’ টপে। এটা কাউকে বললেই হাসতে হাসতে শেষ হয়ে যায়। তুই এই বয়সে ট্রেকিং করবি? তাও এভারেস্ট? আমি গম্ভীরভাবে বলি—এভারেস্ট না। এভারেস্ট বেইস ক্যাম্প ওয়ান। ১৯ দিনের ট্রেকিং।
সব খবর নেওয়া হয়ে গেছে। নেপালি এজেন্টও রেডি। আর পারব না কেন? বন্ধুরা বলে—‘শোন পাগলামি ছাড়। বয়সটা দ্যাখ।’ উফ! আবারও বয়স! বাকি সব নাই-ই লিখলাম। সমস্যা কি সবার? যদি বয়স শুধু নম্বরই হয় তবে এসব আসছে কেন?
পুরুষেরা রঙিন শার্ট পরবেন ঘরের বউই প্রথম বলবে—এই বয়সে এই! কী করতে মন চাইবে তখন আপনার? ছেলের সাথে পিএস ফোর খেলতে বসবেন। তো ছেলের জবাব, ‘বাবা যাও তো এটা কি তোমার খেলার বয়স।’ গেলেন ক্লাবে। গল্পের টপিক ঘুরে-ফিরে কার বিপি হাই। কার হার্টে স্ট্রেন বসানো হয়েছে। কে পটল তুলল অকারণে। কার ডায়ালাইসিস চলছে, এইসব।
পৃথিবীর সব নেগেটিভ গল্প শুনে বাসায় ফিরে নিজেই চিন্তায় পড়ে যান—হায় হায় ৫০ বা ৬০ বা ৭০ পার। এরপর কি? জীবন তো শেষ। নারীরা আগেই মহিলা বা বুড়ি বনে যান। জমকালো পছন্দের শাড়িটা হাতে নিয়েও পরেন না। পাছে লোকে কি বলে! হয়তো স্বামীই মন্তব্য করে বসবে—আর কত?
ছেলেমেয়ের বিয়ে দিয়েছো আর এই শাড়ি? মাথা ঠিক আছে তো? মনটা কুঁচকে যায়। এমন কি ছেলেমেয়েরাও লুক দেয়। জন্মদাত্রী নন। কিন্তু আমি ডাকি মা। আমার ‘মা’ কে আমি লাল বা ব্রাইট কালারের শাড়ি দেই যেকোনো অনুষ্ঠানে। আর তার ছেলে ভ্রু কুঁচকাবে।
কেন তুই লাইট কালার আনতে পারস না? মায়ের বয়স ৭০। কিন্তু এত সুন্দরী। বড্ড ভালো লাগে লালে। কিন্তু ছেলের ভয়ে বাদ দিয়েছেন। ৭০-এ মা বুড়ি নন। সমাজ বা পরিবার বানাচ্ছে। যুগ পরিবর্তন হলেও মানসিকতা বদলায়নি এখনো।
আরও পড়ুন : তুমি অকুণ্ঠিতা
এখনো আমার মেয়ে ক্লাসমেটরা নির্দ্বিধায় আমার সামনে বয়স কমায়। আমি হাঁ হয়ে থাকি! সেদিন এক নিমন্ত্রণে কেউ একজন ক্যাজুয়ালি আমার এক ফ্রেনডকে বলল—আপনারও তো ৫০! ব্যস আর যায় কোথায়! ঘর ভর্তি অন্য গেস্টদের সামনেই বলা শুরু করলো—হ্যাঁ আমি কেন ৫০ হব? আমি অনেক ছোট।
৫০ তো বহু দূরের কথা। ৪৫-ই তো এখনো দূরে। অথচ রুমের সবাই জানে ওর বয়স ৫০ বা একটু বেশিই! সবচেয়ে হাস্যকর যখন ক্লাসমেটরা বয়স লুকায়। বলি—কী রে, তুই কি ১২ বছরে SSC দিয়েছিলি নাকি? কেন? কেন এই ইনসিকিউরিটি? এটা কি সমাজ / পরিবার বা বন্ধুরাই চাপিয়ে দিচ্ছে না?
৫০-এরপর ভালো থাকতে হলে শুরু করুন ২৫ থেকে
৫০ এই যুগে নিউ গোল্ডেন এইজ বিশ্বজুড়ে। তবে এটা ঠিক—পঞ্চাশে বা পরে ভালো থাকতে হলে সেটার প্র্যাকটিস শুরু করতে হবে ২৫ বা তার আগের থেকেই। কিশোর বয়স থেকেই ডায়েট আর খেলাধুলা আর হাঁটা। কাজের চাপে সংসারের ফাঁদে পড়ে খেলাধুলা বাদ দিলেও হাঁটা / জিম / যোগ ব্যায়াম আর সাঁতারটা চালু রাখেন সপ্তাহে মিনিমাম ৩ থেকে ৪ দিন। তার সাথে ডায়েট।
বয়স বাড়তেই থাকবে। নারীদের বলছি, পার্লারে সময় আর টাকার গচ্চা না দিয়ে ঘরে প্রতিদিন স্কিন কেয়ার করুন। মায়েদের বলছি, কন্যার এই অভ্যাস এখনই গড়ে তুলুন। চুলের যত্ন নেওয়া। রোদে সান ব্লক ছাড়া কখনোই না। প্রতিদিন কড়া মেকাপ একেবারেই না।
কাঁচা হলুদ মুখে মাখানো নয়। বরং প্রতিদিন কাঁচা হলুদ খাবারের অভ্যাস গড়ে তুলুন। ভুলবেন না—আপনার সৌন্দর্য সুন্দর ত্বকে আর পজিটিভ মনে। মেকারে নয়। যারা বিদেশ যাবেন বা বাচ্চাদের পাঠাচ্ছেন বিদেশে—সেখানে পার্লার পাবেন কোথায়? পেলেও বিল দেখলে মাথা নষ্ট হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন : বিবাহিত ছাত্রীরা হলে থাকতে পারবে না কেন?
কাজেই আগের দিনের হাজার বছর পুরানো হোম রেমিডিতে ফিরে আসুন। আমি তো আজও চেষ্টা করি সপ্তাহে একবার হলেও চন্দন বা শঙ্খের গুড়োর পেস্ট মুখে লাগাতে। মাত্র ১০ মিনিটের কাজ। তার সাথে অন্যান্য ফেসিয়াল প্যাক। টিভি দেখতে বসলে প্রায়ই ছোট গামলায় হ্যান্ড সোপ আর নারকেল তেল দিয়ে গরম পানিতে পা চুবিয়ে বসে থাকি।
এসব শুধু নারীরা কেন—পুরুষেরাও শুরু করুন। এবং কেন নয়? শরীরের চামড়া কুঁচকে যাচ্ছে-হাইড্রেটিং ক্রিম মালিশ করুন। আরও ভালো হয় নারকেল তেল।
আমাদের নারীদের শরীরে বিরাট একটা ধকল যায়—সন্তানের জন্মের সময়। যাদের নরমাল ডেলিভারি তো বেঁচে গেলেন। আমার ৩ বাচ্চা সিজারিয়ান। তারপরেও নিয়মিত হেটেঁছি। তখন ধানমন্ডির রাস্তা থাকতো ফাঁকা। কাজেই ভোরে উঠেই হাঁটা। তারপর ৩ বাচ্চাকে রেডি করে স্কুলে ড্রপ করতাম।
আরও পড়ুন : মুক্তনীলের মুক্ত বিহঙ্গ
নিজেই ছিলাম ড্রাইভার। সক্রিয় থাকতাম। কাজেই শরীরটাও এখনো বেইমানি করেনি। আজকাল এসব ভাবাই যায় না। কাজেই বাসায় থেকে সবাই ওজন বাড়াচ্ছি। এরও বিকল্প আছে। সময় বের করে জিমে চলে যাবেন। যেতে না পারলে বাসাতেই ইউটিউব দেখে ব্যায়াম / ইয়োগা করেন স্টার জলসা বাদ দিয়ে।
বাইরে যেতে সমস্যা ছাদে হাঁটুন। আই ফোনে স্টেপসগুলোও তো জানতে পারবেন। নিজের জন্য ২৪ ঘণ্টায় কি আধা ঘণ্টা দিতে পারি না? তবে মনের ইচ্ছে সবচেয়ে বড়। মনে রাখবেন—৩৫ এরপর একজন নারীর সবচেয়ে ভালো বন্ধু হলো ‘হাঁটা’।
এখন ৭০ বছর বয়সেও আমাদের বৃদ্ধ ডাকা যাবে না
মনে আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ বাংলা সাহিত্যে বয়স্কদের বর্ণনায় লেখা হতো—পঞ্চাশের বৃদ্ধ মানুষটি। অথবা সাদা-কালো ছবির বয়স্ক সাদা চুলের মানুষকে বছর পঞ্চাশের কোঠায় বলা হতো। কেন আমাদের জটায়ু। ফেলুদা কাহিনির অন্যতম জনপ্রিয় চরিত্র। তার বয়স দেখানো হয়েছে পঞ্চাশের কোঠায়। পোশাক ষাট।
আমার তো এসব দেখে রক্ত হিম হয়ে যেত। আর হিসাব করতাম বুড়ো হতে কয়দিন বাকি। ১৯২০-এর দশকে বৃদ্ধ বয়সের সীমা ছিল বয়স ৫৫। আজকের দিনে বৃদ্ধাদের বয়স সীমা বৃদ্ধি পেয়ে ৭৩-এর কাছাকাছি বয়সে বৃদ্ধা গণ্য করা হয় যা ১৯২০-এর দশকে ছিল ৫০-এর শেষ ঘরে।
আরও পড়ুন : সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন কেন জরুরি
হাততালি দিন সেই যুগ আমরা পাড় করে এসেছি। স্বাগতম। সরকারি সংজ্ঞায় বৃদ্ধ ডাকতে পারবেন শুধুমাত্র বয়স ৭০ বা অধিক।
আসলেই কি বয়স শুধু সংখ্যা মাত্র?
নিজেকেই প্রশ্ন করুন না? আমাদের মন কী বলে? মন কী চায় বুড়ো শরীরে আটকে থাকতে? কিন্তু আবারও শরীর ছাড়া মন কী? আমরা বুড়ো নই। আমাদের মন এখনো চায় ছুটে চলতে। প্লাস্টিক সার্জারি নয়। বয়স সুন্দর, শোভন। চলুন সহজভাবে গ্রহণ করি আমাদের শরীরের সব সমস্যা।
বয়স শুধু নম্বর হিসেবেই থাকুক না। লজ্জা নয়। নিজের যত্ন নেব। সুন্দরভাবে চলব। সাদা শাড়ি। সাদা পাঞ্জাবি আর না। জীবন একটাই। সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার আনন্দই আলাদা। নিজের যত্ন নিন। নিজের শখ খুঁজে বের করুন।
শুধু সমবয়সী কেন তরুণদের সাথেও বন্ধুত্ব করুন। টাকা থাকলে গ্রুপ করে বিশ্ব দেখতে বের হয়ে যান। আর নয় গিল্ট ট্রিপ। নিজের শখে। নিজের ইচ্ছেয় চলব। বাচ্চাদের জন্য, সমাজের জন্য পুরো জীবন উৎসর্গ করেছি। এখন নিজের বুঝে নেওয়া উচিত।
করভী মিজান ।। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব