ছবি : সংগৃহীত

দেশের পর্যটন খাত খুবই সম্ভাবনাময়। করোনাভাইরাসের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পর্যটন শিল্প। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে এখনো উজ্জীবিত হতে পারেনি পর্যটন। ঈদকে কেন্দ্র করে পর্যটন সংশ্লিষ্ট সবার মনে আশার সঞ্চার হয়েছে। চলমান মন্দা কাটিয়ে পর্যটন ব্যবসা আবার পুনর্জীবিত হবে।

বাঙালি বরাবরই ভ্রমণপিপাসু। প্রাচীনকাল থেকে মানুষ নানাবিধ প্রয়োজনে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ভ্রমণ করে। বাঙালি জাতি ইতিমধ্যে ভ্রমণের প্রেমে পড়েছে। নান্দনিক বাংলাদেশ এখন অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যটকদের ভ্রমণ গন্তব্য আনন্দঘন পরিবেশে সময় কাটানোর জন্য দেশে এখন অনেক পর্যটন স্পট রয়েছে, যা অভ্যন্তরীণ পর্যটকদের ভ্রমণে উৎসাহিত করে।

নানারকম কৃষ্টি-কালচার এদেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করে। ঈদের সময় প্রায় সকল শ্রেণি, পেশার মানুষের মধ্যে ভ্রমণ প্রবণতা বৃদ্ধি পায় ও বিভিন্ন উৎসবে যোগদানের জন্য আন্তঃজেলা ভ্রমণ বৃদ্ধি পায়।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ঈদ হচ্ছে পরিবার-পরিজন নিয়ে অবকাশ যাপনের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় সময়। ঈদের ছুটিতে গ্রাম হয়ে ওঠে প্রাণচঞ্চল আর শহর থাকে জনশূন্য। বন্ধুবান্ধব একসঙ্গে ঈদ আনন্দ উপভোগ করার জন্য শহরের কৃত্রিম ব্যস্ততা ঘেরা পরিবেশ ছেড়ে নাড়ির টানে ছুটে চলে বাড়ি।

বিশেষ করে ঈদের সময় মানুষ ভ্রমণ ও বিনোদনের জন্য আলাদা বাজেট রাখে। অনেকে দেশের অভ্যন্তরে ঘোরাঘুরি করে, আবার অনেকে দেশের বাইরে যেতে পছন্দ করে। এদিকে ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে আকাশপথে বাড়ি যাওয়া-আসার টিকেট বুকিং প্রায় শেষ বললেই চলে।

ঈদের ছুটিতে মানুষ প্রিয়জনদের দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় ভ্রমণ করে এবং বিনোদনের জন্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় জমায়। ঈদের ছুটিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলা পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে।

অভ্যন্তরীণ পর্যটন সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন সমৃদ্ধ হবে। পর্যটকেরা যেন নিরাপদে তাদের অবকাশ যাপন করতে পারে, সে জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নানামুখী কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

পাহাড় ঘেরা বান্দরবানের বিভিন্ন পর্যটন আকর্ষণগুলোতে প্রকৃতি প্রেমীদের ঢল নামে। করোনার প্রভাব কমে আসায় ঈদকে কেন্দ্র করে বান্দরবানের পর্যটন আকর্ষণ উল্লেখ্য, মেঘলা, নীলাচল, নীলগিরি, চিম্বুক, সাজেক, আলুটিলা গুহা, কাপ্তাইলেক, ঝুলন্তসেতু, শৈল প্রপাতসহ অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলো পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠবে।

চলমান করোনা মহামারির ফলে পর্যটন খাতে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বাংলাদেশের (সূত্র: বিআইডিএস)। ট্যুর অপারেটরদের সূত্র অনুযায়ী ঈদকে কেন্দ্র করে বিশ্বের বৃহৎ সুমদ্র সৈকত কক্সবাজারে মানুষের উপচে পড়া ভিড় হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

প্রকৃতির নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগ করা ও সান্নিধ্য পেতে আমাদের কার না ভালো লাগে। আর যদি এটি হয় সমুদ্র তাহলে তো আর কথাই নেই। সমুদ্র সৈকতে সার্ফিং, সূর্যস্নান, সৈকতে হাঁটাহাঁটি, ঘড়ি ওড়ানো, প্যারাসেলিং, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করা পর্যটকদের কাছে অনন্য মাত্রা যুক্ত করে।

বিশ্বায়নের যুগে কর্মব্যস্ত জীবনে বিনোদনের বিকল্প নেই, তাই ঈদ আরও আনন্দময় করতে বাংলাদেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণের সুযোগ বেড়েছে।

ট্যুর অপারেটররা দেশ ও বিদেশ ভ্রমণের আকর্ষণীয় প্যাকেজ অফার করে তার মধ্যে মধ্যবিত্ত ও তরুণ পর্যটকদের কাছে প্রথম পছন্দ বাংলাদেশের কক্সবাজার, কুয়াকাটা, বান্দরবান, রাঙামাটি, সিলেট, খাগড়াছড়ি ও কুমিল্লা ছাড়াও ভারত (কলকাতা, শিমলা, মানালি), নেপাল, ভুটান।

উচ্চবিত্তদের পছন্দ থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, দুবাই, মালয়েশিয়া, মিসর, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও অন্যান্য দেশ। ঈদের ছুটিতে যেহেতু পর্যটক সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়, তাই বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ‘পর্যটন-ব্যবস্থাপনা’ গুরুত্ব পায়।

বিনোদন পিপাসু মানুষ বাজেট প্যাকেজের সুযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে থাকে। যারা পরিবার-পরিজন নিয়ে এক দিনের ভ্রমণে যেতে আগ্রহী, তাদের কাছে ঢাকার নিকটবর্তী পর্যটনকেন্দ্র পদ্মা রিসোর্ট, গাজীপুরের ঢাকা রিসোর্ট, এলেঙ্গা রিসোর্ট, ড্রিমল্যান্ড রিসোর্ট, ভাওয়াল রিসোর্ট ও নড়াইলের অরুণিমা রিসোর্ট ও গলফ ক্লাবের পর্যটক চাহিদা বেশি।

অভ্যন্তরীণ পর্যটন সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন সমৃদ্ধ হবে। পর্যটকেরা যেন নিরাপদে তাদের অবকাশ যাপন করতে পারে, সে জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নানামুখী কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

দেশের অভ্যন্তরে কক্সবাজার, কুয়াকাটা, সেন্ট-মার্টিন, সুন্দরবন, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, রাতারগুল, বিছানাকান্দি ও সিলেটের চা-বাগান পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। সুতরাং উল্লেখ্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোর যাতায়াত ও অবকাঠামো উন্নয়নের প্রয়োজন।

ঈদকে কেন্দ্র করে পর্যটকদের জন্য আবাসন কক্ষগুলোর মূল্য, খাবারের দাম, পর্যটন পণ্যের মূল্য যেন অহেতুক বৃদ্ধি না পায় সেই লক্ষ্যে পর্যটন নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার একটি তদারকি কমিটি থাকা প্রয়োজন।

এই দিকে ঈদকে কেন্দ্র করে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউজ ব্যবসা পরিচালনাকারীদের নিজস্ব ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। সেই সাথে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে অতিরিক্ত টুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন করা যেতে পারে।

বাংলাদেশের প্রতিটি জেলার রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ঐতিহাসিক স্থাপনা। ছুটিতে মানুষ যখন পরিবার-পরিজন নিয়ে নিজ জেলায় ঘুরতে যায় তখন জেলা ভিত্তিক পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে বিনোদন প্রেমীদের ভিড় বাড়ে। তাই জেলা ভিত্তিক পর্যটন স্থাপনাগুলো উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করা খুবই প্রয়োজন।

দেশীয় পর্যটনকে প্রসারের লক্ষ্যে দেশের প্রাচীনতম ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর তথ্য, ভিডিও, স্থিরচিত্র, ডকুমেন্টারি ও ট্রাভেল শো প্রচারের মধ্য দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য জানতে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি ভ্রমণেও উৎসাহিত করা সম্ভব।

ঈদকে কেন্দ্র করে পর্যটকদের জন্য আবাসন কক্ষগুলোর মূল্য, খাবারের দাম, পর্যটন পণ্যের মূল্য যেন অহেতুক বৃদ্ধি না পায় সেই লক্ষ্যে পর্যটন নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার একটি তদারকি কমিটি থাকা প্রয়োজন

দেশের পর্যটন উন্নয়নে জেলা ভিত্তিক পরিকল্পনা প্রয়োজন যা টেকসই পর্যটন উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। দেশীয় পর্যটকের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যটক আকর্ষণের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজিকরণ ও পর্যটন আকর্ষণগুলোর ডিজিটাল ব্র্যান্ডিং করা প্রয়োজন।

ড. সন্তোষ কুমার দেব ।। চেয়ারম্যান, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়