পার্সেল আসার আগেই পিস্তল প্রেরক রাজীব দেশে, তাকে খুঁজছে পুলিশ
ইতালি থেকে ডাকযোগে পিস্তল ও কার্তুজ পাঠিয়ে দেশে ফিরেছেন রাজীব বড়ুয়া। পুলিশ তাকে খুঁজছে। অস্ত্রগুলো ডাকযোগে পাঠিয়ে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজীব দেশে এসেছেন বলে দাবি পুলিশের।
বুধবার চট্টগ্রাম বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল কবির ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ইতালি থেকে অস্ত্রভর্তি পার্সেলের প্রাপক মজুমদার কামরুল হাসানকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার কাছে কিছু তথ্য পেয়েছি, এ বিষয়ে পরে জানানো হবে।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, রাজীব বড়ুয়া অস্ত্রগুলো ইতালি থেকে পাঠিয়ে দেশে এসেছেন বলে জানতে পেরেছি। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তাকে ধরতে পারলে জানা যাবে অস্ত্রগুলো কেন আনা হয়েছে, সব বিষয় মাথায় রেখে ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছি।
২০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ইতালি থেকে বৈদেশিক ডাকে আসা একটি চালান থেকে দুটি এইটএমএম পিস্তল ও ৬০টি কার্তুজ উদ্ধার করে। পার্সেলটি আসে সিজিএস কলোনির মজুমদার কামরুলের নামে।
অস্ত্রসমেত পার্সেলটি ধরা পড়লে কামরুল হালিশহরে শ্বশুরবাড়িতে আত্মগোপনে চলে যান। একপর্যায়ে মোবাইল ফোনও বন্ধ করে দেন। পরে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডবলমুরিং ও হালিশহর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে সোমবার ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার হয়।
গ্রেপ্তার মজুমদার কামরুল হাসান চট্টগ্রাম নগরের সিজিএস কলোনির বাসিন্দা। তিনি আগ্রাবাদের আয়কর বিভাগের কর্মচারী বলে জানা গেছে। গ্রেপ্তারের পর তাকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
পার্সেলে পিস্তল পাঠানোর ঘটনায় প্রেরক রাজীব বড়ুয়া ও প্রাপক মজুমদার কামরুল হাসানকে আসামি করে সোমবার মামলা করে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। বন্দর থানায় মামলাটি দায়ের করেন চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে রাজীব ইতালি থেকে চালানটি কামরুলের নামে বুকিং দিয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি দেশে চলে এসেছেন। গ্রেপ্তার কামরুল হাসানের স্ত্রী উম্মে সালমা সাংবাদিকদের বলেন, ইতালি থেকে রাজীব বড়ুয়ার গৃহস্থালির কিছু জিনিস পাঠানোর কথা ছিল। পার্সেলের ভেতরে যে কি আছে, তা আমরা জানতাম না। আমার স্বামী নির্দোষ। সে এসবের সঙ্গে জড়িত না।
তিনি বলেন, আমরা চাই রাজীব বড়ুয়া পুলিশের হাতে আটক হোক। সে ধরা পড়লে আসল কাহিনী বের হবে। রাজীব বড়ুয়া বর্তমানে দেশেই আছেন। তিনি ৪ ফেব্রুয়ারি দেশে এসেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজীব বড়ুয়ার বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার উড়কিরচর ইউনিয়নের আবুরখীল গ্রামে। তার বাবা ফণিভূষণ বড়ূয়া। মা গীতা রানী বড়ূয়া ছিলেন কাস্টমের কর্মকর্তা। তারা থাকতেন চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদে সিজিএস কলোনির সরকারি বাসায়।
রাজীব বড়ুয়ার বেড়ে ওঠা সিজিএস কলোনিতে। দেশে থাকা অবস্থায় নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন তিনি। যুবদলের রাজনীতিতেও যুক্ত ছিলেন তিনি। বিএনপি ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পর আত্মগোপনে চলে যান। এরপর ২০০৮ সালের দিকে ইতালি পাড়ি জমান।
রাজীব বড়ুয়ার যুবদলের সঙ্গে রাজনীতির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, রাজীব বড়ুয়া নামে কেউ আমাদের মহানগর যুবদল, থানা, ওয়ার্ড কিংবা ইউনিটের কোনো কমিটিতে নেই। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, এ নামে কেউ কখনো আমাদের কমিটিতে ছিলেন না।
কেএম/আরএইচ