নীলক্ষেতের আগুন নিয়ন্ত্রণে
রাজধানীর নীলক্ষেতে বইয়ের মার্কেটে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ফায়ার সার্ভিসের ১০ ইউনিটের চেষ্টায় রাত ৮টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রোজিনা আক্তার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মার্কেটটিতে আগুন লাগে বলে জানা গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।
বিজ্ঞাপন
আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। শুরুতে তিনটি ইউনিট কাজ শুরু করে। পরে একে একে আরও ইউনিট যুক্ত হয় আগুন নেভানোর কাজে। মোট ১০ ইউনিটের চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন।
কীভাবে আগুনের সূত্রপাত সে সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কোনো তথ্য পাওয়া না গেলেও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, একটি দোকানে আগুন লাগার পর তা দ্রুত অন্যান্য দোকানে ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ বলছেন খাবারের দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত, আবার কেউ কেউ বলছেন বইয়ের দোকান থেকেই আগুনের সূত্রপাত।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় আজ এ মার্কেটের মূল গেট বন্ধ ছিল। তবে ভেতরে এবং গেটের বাইরের দিকে কিছু দোকান খোলা ছিল।
এদিকে খাজা স্টেশনারি দোকান থেকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেন মায়ের দোয়া বুক হাউজের বিক্রয়কর্মী সুমন মিয়া। তিনি বলেন, দোকানটিতে গ্যাস সংযোগের কাজ চলছিল। সেখানে হঠাৎ আগুনের ফুলকি দেখা যায়। পরক্ষণেই সেই আগুন পাশের দোকানগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রায় ১ ঘণ্টার আগুনে অনেক ব্যবসায়ী রাস্তায় বসেছেন। দোকানের লাখ লাখ টাকার বই পুড়ে যাওয়ায় আহাজারি করছেন তারা।
এ ব্যবসায়ীরা বলছেন, মুহূর্তের মধ্যে আগুন কীভাবে সারা মার্কেটে ছড়িয়ে পড়ল তা তারা বুঝতেই পারেননি। তারা আতঙ্কিত হয়ে জীবন বাঁচিয়ে কোনো মতে মার্কেট থেকে বের হয়েছেন। টাকা পয়সা বা কোনো মালামাল নিয়ে বের হতে পারেননি। এক ঘণ্টার আগুনে দোকানে থাকা লাখ লাখ টাকার বই পুড়ে যায়। কয়েকজন ব্যবসায়ী কিছু বই বের করে নিয়ে আসার চেষ্টা করলেও আগুনের তীব্রতার কারণে তারা ভেতরে যেতে পারেননি।
ব্রাইট কালেকশন নামে একটি দোকানের বিক্রয়কর্মী রুবেল হোসেন বলেন, হঠাৎ আগুনে অনেক বড় ক্ষতি হলো। মঙ্গলবার অতিরিক্ত বই মজুদ করা ছিল ভেতরে।
নীলক্ষেতের এই বই মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সমিতি ইসলামিয়া বণিক বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের পরিচালক মো. গিয়াসউদ্দিন মিয়া বলছেন, আগুনে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকার ক্ষতি হতে পারে। ১০০ এর বেশি বইয়ের দোকান আগুনে পুড়ে গেছে। মঙ্গলবার সাপ্তাহিক ছুটি হওয়ায় ভেতরে কেউ ছিলেন না। এ কারণে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হবে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের পাশপাশি আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সহায়তা করেছেন রোভার স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট ও বিএনসিসির স্বেচ্ছাসেবকরা। ঢাকা কলেজ রোভার স্কাউট গ্রুপ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর ঢাকা কলেজ প্লাটুন, যুব রেড ক্রিসেন্ট ঢাকা কলেজ ইউনিট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপ, ইডেন মহিলা কলেজ রোভার স্কাউট গ্রুপসহ আশপাশের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোও আগুন নেভাতে এগিয়ে আসে।
আব্দুল আজিজ নামে এক দোকানদার বলেন, ঋণ ও ধারদেনা করে লক্ষাধিক টাকায় কেনা নতুন বছরের ক্যালেন্ডার ও ডায়রি আগুনে পুড়ে শেষ হয়েছে। যা কিছু অবশিষ্ট ছিল সেগুলো পানিতে নষ্ট হয়েছে। একেবারে পথের ফকির হয়ে গেলাম।
এদিকে আগুনের পাশপাশি ফায়ার সার্ভিসের পানিতেও বইয়ের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ফুটপাতের বই বিক্রেতা আলাউদ্দিন বলেন, আগুনে হয়তো আমার বই পুড়ত না, তবে এখন সব শেষ। অন্তত এক লাখ টাকার বই পানিতে ভিজে গেল।
আহাজারি করতে করতে এক নারী বলেন, সরকারের কারণেই আজকে এই অবস্থা। প্রতি বছর আগুন লাগে এখানে, তবুও সরকারের দৃষ্টি নেই। আজ আমার ছেলের বইয়ের দোকানে শেষ হয়ে গেছে। আমি সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করছি এবং আগামীতে যেন এমন ঘটনা না ঘটে সেটা যেন সরকার নিশ্চিত করে।
তিনি বলেন, ৯ লাখ টাকা লোন নিয়ে আমার ছেলে এই দোকান দিয়েছে। এখন এই লোন কে দেবে? সরকার কেন এটা বিল্ডিং করে দেয় না, এই দায় সরকারের। আমরা ক্ষতিপূরণ চাই।
এমএসি/এইচআর/আরএইচটি/এনএফ