আশুলিয়ার শহিদুল ইসলামের (৩২) পরিচয় হয় ববিতা নামে এক তরুণীর সঙ্গে। পরিচয় থেকে প্রেম। সেই প্রেমের সূত্র ধরে ববিতা একদিন ডেকে নিয়ে যান শহিদুলকে। 

ওই তরুণীর প্রেমের ডাকে সাড়া দিয়ে শহিদুল অপহৃত হন। মুক্তিপণ হিসেবে দাবি করা হয় এক লাখ টাকা। টাকা দিতে না পারায় হামলার শিকার হয়ে পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

শহিদুলের মৃত্যুর ঘটনায় আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন তার ভাই। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার রাতে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) টাঙ্গাইল, শেরপুর ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাতজনকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তাররা হলেন মো. আলমগীর (২৯), ববিতা খাতুন ওরফে আকলিমা (২৪), মো. সাগর হোসেন বাবু ওরফে কালা বাবু (২২), মো. মাসুদ রানা ওরফে মাসুদ (২০), মো. আফজাল হোসেন (২৬), মো. রফিকুল ইসলাম খান ওরফে সাগর (৩৯) ও মো. রাকিব শেখ (২২)।

র‍্যাব জানায়, শহিদুল ইসলাম ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার আশুলিয়ার বুড়ির বাজারে যৌথভাবে কর্ণফুলী শ্রমজীবি সমবায় সমিতি লি. পরিচালনা করে আসছিলেন। সমিতিতে তার পার্টনার ছিলেন একই এলাকার আলমগীর নামে এক ব্যক্তি। 

শুরু থেকেই শহিদুলের টাকা পয়সার ওপর লোভ ছিল আলমগীরের। তার পরিকল্পনা ছিল শহিদুলকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করবেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ববিতাকে প্রেমের অভিনয় করতে পাঠান আলমগীর। 

আলমগীরের পরিকল্পনা অনুযায়ী ববিতা প্রেমের ফাঁদে ফেলে ঘটনার দিন শহিদুলকে ডেকে নিয়ে যান। মুক্তিপণ নেওয়ার জন্য আলমগীর সন্ত্রাসীদের দিয়ে শহিদুলের ওপর হামলা করান। আর সেই হামলায় গুরুতর আহত হয়ে তার মৃত্যু হয়। 

রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।

তিনি বলেন, গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি শহিদুলের মোবাইল ফোন থেকে কল করেন তার পার্টনার মাসুদের ফোনে। মাসুদকে জানান, শহিদুল অসুস্থ হয়ে আশুলিয়ার নিরিবিলি এলাকায় পড়ে আছেন। 

মাসুদ সেখানে গিয়ে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে, আনুমানিক রাত সাড়ে ১১টায় আশুলিয়ায় ডেন্ডাবর কাঁঠাল বাগান ফয়েজের মোড় এলাকায় শহিদুলকে অসুস্থ অবস্থায় পান।

র‍্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, মাসুদ প্রথমে পলাশবাড়ীর হাবিব হাসপাতাল, পরে অবস্থা গুরুতর দেখে শহিদুলকে জারমিল ল্যাব-১ হাসপাতালে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি হলে ৯ ফেব্রুয়ারি তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ১০ ফেব্রুয়ারি শহিদুল মারা যান। 

এ ঘটনায় শহিদুলের ভাই মো. আবুল মনসুর বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে ছায়াতদন্ত শুরু করে র‍্যাব-১। তদন্তের এক পর্যায়ে শনিবার রাতে র‍্যাব-১ এর একটি দল টাঙ্গাইল, শেরপুর ও ঢাকা জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাতজনকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।

তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আলমগীর। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন ববিতা শহিদুলকে আশুলিয়া পলাশবাড়ী তালতলা মাঠে নিয়ে যান। সেখানে আগে থেকেই লুকিয়ে থাকা বাকি আসামিরা শহিদুলের হাত-পা ও চোখ বেঁধে হাতুড়ি এবং লাঠি দিয়ে শরীরের এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকেন। এক পর্যায়ে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। মুক্তিপণ দিতে রাজি না হওয়ায় শহিদুলকে পিটিয়ে গুরুতর অসুস্থ করে ফেলেন আসামিরা।
পরে শহিদুলকে আশুলিয়ার নিরিবিলি বাসস্ট্যান্ড নিয়ে তার ব্যবসায়িক পার্টনার মাসুদকে ফোন দেন আসামিরা। বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি অটোরিক্সায় আহত অবস্থায় তাকে রেখে পালিয়ে যান তারা। র‍্যব আসামিদের কাছ থেকে  রক্তমাখা জ্যাকেট (যা পরবর্তী সময়ে ধুয়ে ফেলা হয়েছে), ১১টি মোবাইল ফোন জব্দ করেছে।

এমএসি/আরএইচ