প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের লক্ষ্যে যোগ্য ব্যক্তিদের নাম সুপারিশের জন্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক গঠিত সার্চ কমিটি ১২ থেকে ১৩ জনের নাম চূড়ান্ত করেছে। এখান থেকেই ১০ জনের নাম বাছাই করে রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়া হবে। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ প্রক্রিয়া শেষ করার আশা করছে সার্চ কমিটি। 

রোববার সন্ধ্যায় ৬ষ্ঠ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন সার্চ কমিটির প্রধান আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন আইনের আওতায় সার্চ কমিটি হওয়ার পর ছয়টি মিটিং করেছি। আরেকটি মিটিং বাকি আছে। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে চারটায় সপ্তম মিটিং করার মধ্য দিয়ে আপাতত কাজ শেষ করতে পারব। 

তিনি বলেন, চারটি মিটিং করেছি সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। আপনারা জানেন, প্রথমে ৩২২ জনের একটি নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। এ তালিকার পর আরও চারজন বিশিষ্ট সাংবাদিক আমাদের সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেন। আমরা তাদের ডাকি। তারাও কিছু নাম দিয়ে গেছেন। 

তিনি আরও বলেন, নাম দেওয়ার জন্য একদিন সময় বাড়িয়েছিলাম। এরপরও বলেছিলাম যদি কোনো রাজনৈতিক দল নাম পাঠায়, তাহলে বিবেচনায় নেব। সময় বাড়ানোর পর কিছু রাজনৈতিক সংগঠন আরও কিছু নাম পাঠিয়েছে। সব নাম বিবেচনায় নিয়ে পঞ্চম সভায় আমরা ২০ জনের নাম চূড়ান্ত করি।

সার্চ কমিটির প্রধান বলেন, আজকের সভায় আমরা ১০টি নাম চূড়ান্ত করতে পারিনি। তবে কাছাকাছি এসেছি। ১২/১৩ জনের মধ্যে ১০ জনের নাম খুঁজে বেড়াচ্ছি। আশা করি, ১০টি নাম পেয়ে যাব। ২২ তারিখ সর্বশেষ মিটিং করে রাষ্ট্রপতির কাছে নামগুলো পাঠিয়ে দেব। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করবে সার্চ কমিটি। আমরা একটি শপথ নিয়েছি। যেখানেই যাই, সেই শপথ আমাদের সঙ্গে থাকে। সংবিধান ও আইন রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। আইনে বলা আছে কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করব আমরা। আমরা নির্ধারণ করেছি। 

আরেক প্রশ্নের জবাবে সার্চ কমিটির প্রধান বলেন, ১০ জনের নাম প্রকাশ করব না। এটা রাষ্ট্রপতির ডোমেইন। রাষ্ট্রপতির কাছে দিলে পরে তিনি যদি বলেন আপনারা প্রকাশ করুন, তাহলে প্রকাশ করব। এটা তার সম্পত্তি, তার কাছেই দিতে হবে। আমাদের প্রকাশ করার কোনো আইন নেই। 

রাষ্ট্রপতির কাছে দেখা করে নামগুলো জমা দেবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা চাইলেই তো রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে পারি না। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার দুটি শর্ত, একটা হলো করোনামুক্ত হতে হবে, আরেকটি হলো তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে হবে।

সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে সার্চ কমিটির বৈঠক শুরু হয়। শেষ হয় সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে। কমিটির প্রধান আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এতে সভাপতিত্ব করেন। 

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, কমিটির সদস্য বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন, লেখক-অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক, মহাহিসাব নিয়ন্ত্রক ও নিরীক্ষক (সিএজি) মুসলিম চৌধুরী এবং সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন। 

গত ১২, ১৩ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি তিন দিনে চার দফায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মোট ৪৭ জন বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে বৈঠক করে সার্চ কমিটি। বিশিষ্টজনরা নির্বাচন কমিশনার হিসেবে কাদের নাম দেয়া যেতে পারে সে ব্যাপারে সার্চ কমিটিকে পরামর্শ দেন।

এর আগে সার্চ কমিটি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও আগ্রহী ব্যক্তিদের নির্বাচন কমিশনার হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের নাম পাঠানোর অনুরোধ করেছিল। সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং ব্যক্তি ও সংগঠন মোট ৩২২ জনের নাম পাঠায়।

গতকাল শনিবার সার্চ কমিটির বৈঠকে ৩২২ জনের তালিকা থেকে ২০ জনের নাম বাছাই করা হয়। আজ ওই তালিকা ১২-১৩ জনে নিয়ে এসেছে কমিটি। 

সর্বশেষ নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ গত ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়েছে। স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম আইন অনুযায়ী ইসি গঠিত হচ্ছে। এ জন্য গত ২৭ জানুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২ জাতীয় সংসদে পাস হয়।

আইনানুযায়ী ইসি গঠনে যোগ্য ব্যক্তি বাছাইয়ের জন্য গত ৫ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে সভাপতি করে ছয় সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। কমিটিকে ১০ জনের নাম সুপারিশের জন্য সময় দেওয়া হয়েছে ১৫ কার্যদিবস।

১০ জনের নাম বাছাই করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবে সার্চ কমিটি। সেখান থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করবেন রাষ্ট্রপতি।

এমএইচডি/আরএইচ/জেএস