চার মন্ত্রীর সঙ্গে প্রথমদিনই টিকা নিলেন উপমন্ত্রী-সচিবও
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশে আজ থেকে শুরু হলো গণটিকাদান কর্মসূচি। সকাল ১০টায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সভাকক্ষে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এর মধ্যে দিয়ে ১ হাজার ৫টি কেন্দ্রে একযোগে টিকাদান শুরু হয়ে গেল।
টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধনের পর ইতোমধ্যে টিকা নিয়ে ফেলেছেন বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও সচিব। বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে তারা করোনার টিকা নিয়েছেন। বাংলাদেশে দেওয়া হচ্ছে কোভিশিল্ড নামে টিকাটি। এই টিকাটি অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার আবিষ্কার করা এবং ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি করা। ভারত থেকে আনা এই ভ্যাকসিন ঘিরে বাংলাদেশে নানামুখী আলোচনা রয়েছে। সমালোচনার জেরে টিকা গ্রহণের জন্য মানুষের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ সাড়াও দেখা যায়নি বলে অনেকে মনে করেন।
বিজ্ঞাপন
আজ মন্ত্রীদের মধ্যে প্রথম টিকা নিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বেলা ১১টা ২০ মিনিটে রাজধানীর মহাখালীতে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে গিয়ে টিকা নেন তিনি। টিকা নেওয়ার পর অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, টিকা নেওয়ার পর আরও শক্তিশালী হয়ে গেছি। কোনো ধরনের সমস্যা বোধ করছি না।
একই হাসপাতালে টিকা নেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। বেলা সাড়ে ১১টায় তিনি টিকা নেন। এসময় গুজব ও অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিরাপদ রাখতে জনগণকে টিকা গ্রহণের আহবান জানান মন্ত্রী ।
দুপুরে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে সস্ত্রীক টিকা নেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। টিকা নেওয়ার পর তিনি বলেন, আমি টিকা নিয়েছি, কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। সবাইকে টিকার বিরুদ্ধে অপপ্রচার থেকে দূরে থাকার অনুরোধ করেন তিনি।
দুপুর ১টায় সচিবালয়ে ‘সচিবালয় ক্লিনিক’ এ টিকা নেন রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন। টিকা নিয়ে তিনি বলেন, অনুভূতি অন্যান্য টিকার মতোই। সকল পর্যায়ে টিকাদান ব্যবস্থাপনা সন্তোষজনক। মন্ত্রী-এমপিরা অনেকেই টিকা নিচ্ছেন, অপপ্রচারকারীরা ব্যর্থ হয়েছে। জনগনকে নির্দ্বিধায় টিকা নেওয়ার আহ্বান জানান মন্ত্রী।
বেলা পৌনে ১১টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টিকা নেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। টিকা নেওয়ার পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, যেকোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। তবে এ ভ্যাকসিন নেওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী আধাঘণ্টা অপেক্ষা করেছি। কোনো রকম সমস্যা অনুভব করিনি।
এছাড়া শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে টিকা নিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকও। বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্রে টিকা নেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী।
টিকা নেওয়ার পর প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে টিকার ব্যবস্থা করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এসময় গুজব ও অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকতে জনগণকে টিকা নেওয়ার জন্য আহ্বানও জানান তিনি।
দুপুরে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে টিকা নেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। সাংবাদিকদের তিনি জানান, টিকা নেওয়ার পর সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছেন। কোনো ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বোধ করছেন না। প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই টিকাটি অত্যন্ত নিরাপদ। তাই টিকা নিয়ে কোনো ধরনের আতঙ্ক বা ভয়ের কিছু নেই। এ সময় তিনি জনগণকে নির্ভয়ে টিকা নেওয়ার আহ্বান জানান।
এদিকে, সচিবদের মধ্যে প্রথম ধাপেই টিকা নিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে টিকা নেন তারা। আর সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনার টিকা নেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম।
এক বছরের কম সময়ে বেশ কয়েকটি টিকা বিজ্ঞানীরা মানুষের ব্যবহার উপযোগী করে তুলেছেন। এত অল্প সময়ে আর কোনো টিকা মানুষের ব্যবহার উপযোগী হয়ে ওঠেনি। ভারত থেকে যে টিকাটি দেশে এসেছে সেটি উদ্ভাবন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা।
টিকা নেওয়া শেষে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমার কোনো সমস্যা হয়নি। যাদের সম্ভব টিকা নিয়ে নেওয়া উচিত। দেশের ৭০ শতাংশ লোক টিকা নিলে করোনা ভাইরাস ছড়াবে না। এছাড়া সকালে সচিবালয় ক্লিনিকে টিকা নেন বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান।
শুরুতে সরকারের লক্ষ্য ছিল গণটিকাদানের প্রথম মাসে ৬০ লাখ মানুষকে টিকার আওতায় আনার। তবে পরে কর্মপদ্ধতিতে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন ৬০ লাখ টিকা ৬০ লাখ মানুষকে না দিয়ে প্রথম দফায় ৩৫ লাখ মানুষকে টিকার দুটি ডোজ দিয়ে দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলছেন, এতে অন্তত ৩৫ লাখ লোককে আমরা কমপ্লিট ভ্যাকসিনেশনে আনব। একটা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে আমরা সুরক্ষিত করে দেই। প্রথম ডোজ দিলাম, কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ যদি পেতে দেরি হয়, তাহলে পুরো বিষয়টি নষ্ট হয়ে যাবে। এর মধ্যে যদি আমাদের দ্বিতীয় লট চলে আসে, তাহলে আগের পরিকল্পনায় চলে যাব।
এসএইচআর/এনএফ