বছরে অনেক বই প্রকাশিত হলেও তা পাঠকের কাছে পৌঁছাতে পারছে উল্লেখ করে লেখক জাফর ইকবাল বলেছেন, অনেক লেখক আছেন, যারা ভালো লিখতে পারেন না, কিন্তু নিজের পকেটের টাকা খরচ করে বই ছাপান (প্রকাশ করেন)। এটা তো ঠিক না। তাকে বইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রকাশকে দিতে হবে। প্রকাশক পড়ে যদি দেখেন ভালো হয়েছে, তাহলে তিনি নিজের টাকা খরচ করে বই প্রকাশ করবেন। বইটা বিতরণ করবেন। তাহলে বুঝতে হবে বইটার কিছুটা হলেও মান উন্নয়ন হয়েছে।

শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলা একাডেমিতে অমর একুশে বইমেলায় সাস্ট ক্লাব লিমিটেডের স্টল উদ্বোধনকালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

জাফর ইকবাল বলেন, যতদিন পর্যন্ত লেখকরা নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে নিজের জন্য প্রকাশ করবে, বন্ধুদের সেই বই দেবে, তারা সেই বইটা পড়বে, ততদিন মান উন্নয়ন হবে না। এটাতে যেমন প্রকাশকদের দায়িত্ব আছে, তেমনি লেখকেরও দায়িত্ব আছে। তাই আমি নতুন লেখকদের বলি নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে বই প্রকাশ করতে পারবে না। আগে পত্র-পত্রিকায় লেখেন, ব্লগে লেখেন। তারপর বই করেন। 

তিনি বলেন, আমাদের ভাষা আন্দোলনটা হয়েছে বহু বছর আগে। সবাই কিন্তু লক্ষ্য করছেন যে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেকে বিতর্ক করছে। কিছু পক্ষের লোক আছে, আবার রাজাকারও আছে। কিন্তু ভাষা আন্দোলন নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। সবাই ভাষা আন্দোলনের পক্ষে। তাই আমাদের ভাষা আন্দোলন নিয়ে অনেক কাজ হয়েছে।

যারা ভাষা আন্দোলন করেছে, তারা অনেকে তো বেঁচে নেই উল্লেখ করে এ লেখক বলেন, কাজেই ভাষা নিয়ে প্রথম যাদের অভিজ্ঞতা আছে, সেই রকম কেউ নেই। ফলে এটা নিয়ে কাজ কমে আসছে, তা অস্বাভাবিক কিছু না। কিন্তু ভাষা তো থেকে যাবে। মানুষগুলো থাকবে না। ভাষার ওপর কাজ হচ্ছে না, বিষয়টি এমন নয়। হচ্ছে, সেটা হয়ত কম।

তিনি আরও বলেন, আগে মানুষের ধারণা ছিল ভাষা নিয়ে কাজ করবে শুধু কবি, সাহিত্যিকরা, লেখক ও ভাষাবিদরা। কিন্তু এখন ভাষা নিয়ে বিজ্ঞানীরাও কাজ করছে। কম্পিউটারের ভাষাটাকে ঢুকানোর জন্য অনেক কাজ হচ্ছে। 

বাংলা ভাষাটা পৃথিবীর ষষ্ঠ বা সপ্তম অবস্থানে আছে উল্লেখ করে জাফর ইকবাল বলেন, কম্পিউটারের লোকজনকে বাংলা ভাষা নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে বলেন, এটা নিয়ে খুব কম গবেষণা আছে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়। কাজে আমাদের বাংলা ভাষার গবেষণা বাড়াতে হবে। এটা নিয়ে কাজ হলে, আমার মনে হয় নতুন অধ্যায় শুরু হবে।

তিনি বলেন, শিশুরা যদি ভূত, পেতনি পছন্দ করে তাহলে তো কিছু করার নেই। শিশুদের বই পড়াটাই গুরুত্বপূর্ণ। একটা বই পড়ার জন্য যে সময়টা দিতে হয়, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। আর সেটা করার জন্য আমি যদি ভূত, প্রেত, রোবট দিয়ে শুরু করি, তাতে কোনো সমস্যা নেই। শিশু বড় হলে তখন তার নিজস্ব একটা পছন্দ দাঁড়াবে। তখন সে হয়ত আমাদের দেশের বড়-বড় মানুষ সম্পর্কে জানতে চাইবে। ফলে তাকে জোর করে একটা বিষয়ের ওপর ঠেলে দিয়ে তো লাভ নেই। পৃথিবীর সব জায়গায় শিশুরা ভূত-প্রেত, সুপারম্যান পড়ে। কিন্তু পড়তে হবে, এটাই আমার কথা। শুধু বসে বসে টেলিভিশন দেখবে, কার্টুন দেখবে এটা হবে না। শিশুর বিকাশ হবে না।

নিজের সঙ্গে নতুন লেখকের তুলনা প্রসঙ্গে জাফর ইকবাল বলেন, কেউ আমার সঙ্গে তুলনা করলে খারাপ লাগে। আমি তাদের জন্মের আগে থেকে বই লিখি। তারা নতুন লেখা শুরু করেছে। অনেকে ভালো লেখেন। কিন্তু লিখলে তো হবে না, লেখার জন্য পরিশ্রম করতে হবে। প্রচুর পড়তে হবে। সবাই তো সব জায়গায় সফল হবে না। অনেকের লেখা কিছু ভালো হয়, কারও লেখা অল্প ভালো হয়। তবে নতুন লেখকদের যদি উৎসাহ দেন, তখন তারা আরও ভালো লিখবে।

এএইচআর/এসএসএইচ