অনলাইনে চাকরির কথা বলে নারীদের প্রলোভন দেখাত আল ফাহাদকে (১৯)। চাকরি নামে এসব নারীর গোপনে অশ্লীল ভিডিও ধারণ করত। পরে এসব ভিডিও দেখিয়ে ভিকটিমদের নানাভাবে ব্ল্যাকমেইলিং করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয় ফাহাদ।

এসব সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর গুলশানের নদ্দা এলাকা থেকে ফাহাদকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। এ সময় তার কাছ থেকে একটি দামি ক্যামেরা, দুটি ক্যামেরার লেন্স, একটি মোবাইল ফোন, ছয়টি সিম কার্ড, একটি এক্সটারনাল মেমোরি কার্ড ও ৪০৩ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গত রাতে র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-১ এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নদ্দা এলাকায় অভিযান চালায়। পরে ‘ভার্চুয়াল মেডিকেল স্ক্যানিং’-এর নামে গোপন ভিডিও চিত্র ধারণ করে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অপরাধে আল ফাহাদকে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফাহাদ র‌্যাবকে জানিয়েছে, অসংখ্য নারীর সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রথমে ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে অল্প বয়সী নারীদের দেশি-বিদেশি আন্তর্জাতিক সংস্থায় যেমন গুগল-উইকিপিডিয়াতে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখাত। চাকরির আশায় অনেক নারী প্রলোভনে পড়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করত। পরে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে সাড়ে তিনশ থেকে ৫০০ টাকা ‘রেজিস্ট্রেশন ফি’ নেওয়া হতো।

এরপর মোবাইলে বিশেষ অ্যাপসের মাধ্যমে নারীকণ্ঠে চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হতো। এছাড়া বিভিন্ন কৌশলে প্রার্থীদের করোনাকালে ‘ভার্চুয়াল মেডিকেল’ করা হবে বলে জানাত ফাহাদ। এছাড়া প্রার্থীদের বিভিন্ন সামাজিক চ্যাটিং অ্যাপসের মাধ্যমে ভিডিও কলে যুক্ত করত। এ সময় নিজের মোবাইলের ক্যামেরা বন্ধ রেখে ভিডিও কলে মেডিকেল পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলে কৌশলে ভিকটিমদের গোপন ভিডিও ধারণ করত। পরে গোপনে ধারণ করা ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা দাবি করা হতো। এভাবে অভিযুক্ত ফাহাদ শতাধিক নারীকে ব্ল্যাকমেইল করেছে।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রত্যাশীদের অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হতো। ফাহাদ নিজেই বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে ভয়েস পরিবর্তন করে নারীকণ্ঠে চাকরিপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলে ‘ভুয়া নিয়োগ’ প্রক্রিয়া শেষ করত। এক্ষেত্রে বিভিন্ন নারীর নাম ব্যবহার করে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছে প্রথমে নিজেকে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিত। একই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চাকরিতে যোগদান করেছে বলে জানাত। পরে নিজেই ওই কোম্পানির অ্যাডমিন অফিসার হিসেবে বিভিন্ন নামে পরিচয় দিত এবং ভিকটিমদের ইন্টারভিউ নিত। পুনরায় ওই অ্যাপসের মাধ্যমে ভয়েস পরিবর্তন করে নিজেই মেডিকেল অফিসার হিসেবে ভিকটিমদের ভার্চুয়াল মেডিকেল করানোর নামে ভিডিও করত। যেহেতু করোনাকালে হাসপাতালে গিয়ে মেডিকেল করা সহজ ছিল না, সেক্ষেত্রে গ্রেপ্তার ফাহাদ এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কৌশলে ভিডিও করে ভিকটিমদের ব্ল্যাকমেইল করত।

তিনি আরও বলেন, গোপনে ভিডিও ধারণ করে ও চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে শতাধিক নারীর সঙ্গে প্রতারণা করেছে ফাহাদ। যারা তার ফাঁদে পা দিয়েছে তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা নেওয়া হতো। এভাবে দেড় বছর ধরে শতাধিক নারীকে গোপন ভিডিও দেখিয়ে প্রতিনিয়ত ব্ল্যাকমেইলিং করা হতো।

গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলমান বলেও জানান খন্দকার আল মঈন।

ফাহাদের কাছ থেকে ইয়াবা জব্দের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, তিনি ইয়াবার কারবারের সঙ্গে জড়িত না থাকলেও নিয়মিত ইয়াবা সেবন করতেন।

এমএসি/এসএসএইচ