বাংলাদেশ রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজশে টাকা ও ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে অভিজ্ঞতা ছাড়াই আসল ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করত একটি চক্র।

চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে এভাবে লাইসেন্স তৈরি করে আসছিল। চক্রটির মাধ্যমে এভাবে অপরাধীরাও লাইসেন্স করিয়ে নিচ্ছেন। এমন সুনির্দিষ্ট অভিযোগের এই দালাল চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগ।

গ্রেপ্তাররা হলেন লিটন পাইক (৪০), সুজন পাইক (২৯), হাসান শেখ ওরফে আকচান (৪১), মোহাম্মদ আলী ওরফে মিস্টার (৫১), হুমায়ুন করিব (৩৮), আব্দুল খালেক (৩১), আব্দুল্লাহ রনি (২৩), সোহেল রানা (২৩), সোহাগ (২৩), মো. নুরনবী (৩৮) ও হুমায়ুন করিব।

ডিবি সূত্রে জানা যায়, ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ স্কুলের আড়ালে বিভিন্ন অপরাধীরা কোনো ধরনের পুলিশ ভেরিফিকেশন ও ডোপ টেস্ট ছাড়াই দালালদের মাধ্যমে লাইসেন্স সংগ্রহ করছে। এসব লাইসেন্স ব্যবহার করে অনভিজ্ঞ চালকদের হাতে সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা, বিভিন্ন খাদ্য পণ্য ও গার্মেন্টস পণ্য চুরি এবং সড়কে দুর্ধর্ষ ডাকাতি করছে।

বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, সম্প্রতি কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা ও চুরি, ডাকাতির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে দালালের মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহের তথ্য বেড়িয়ে আসে। পরে রাজধানীর মিরপুরের মাজার রোড এলাকায় একটি বাড়ির সন্ধান পাওয়া যায়। যেখানে কয়েকজন দালাল মিলে নিজেরাই বিআরটিএ অফিস খুলে বসেছে। এই অফিসে বসে তারা, ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনের পুলিশ ভেরিফিকেশন, ডোপ টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করে জমা দিত। আর এই সকল ভুয়া নথি দিয়েই দালালরা টাকার বিনিময়ে বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স বানিয়ে নিত।

তিনি বলেন, এই সকল লাইসেন্স আসল হলেও ব্যবহারকারী ঠিকানা ও অন্যান্য তথ্য ছিল ভুয়া। ফলে তারা সড়কে গাড়ি চালানোর নাম করে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে যেত। এই দালাল চক্রের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে নানান অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। 
ডিবির অভিযানে দালালদের কাছ থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনের প্রায় দুই শতাধিক ফরম জব্দ করা হয়। জব্দ হওয়া ফরমের আবেদনকারীদের ছবি সংবলিত তথ্য ও বিআরটিএর মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল মান্নান, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা নাঈমা বেগম, এনামুল হক ইমন নামের কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর ও সিলমোহরের সিল রয়েছে। এসব গুরুত্বপূর্ণ ভুয়া নথি তৈরিতে ব্যবহৃত কম্পিউটার, প্রিন্টার ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেপ্তাররা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, বিআরটিএ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সিল মোহরযুক্ত ও স্বাক্ষরিত পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট তৈরি করে সেগুলো দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করে আসছিল। সারা বাংলাদেশে ১৪২টি ড্রাইভিং লাইসেন্স স্কুল আছে এবং এদের অধিকাংশ এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত। নিয়মকে অনিয়মে পরিণত করে এই দালাল চক্র। বিআরটিএ কিছু অসাধু কর্মকতার সঙ্গে যোগসাজস করে কোনো প্রকার ট্রেনিং ছাড়াই অদক্ষ ড্রাইভারদের ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করে দিতো। এর ফলে লাইসেন্স পাচ্ছে অদক্ষ ড্রাইভার, দিন দিন বাড়ছে দুর্ঘটনার সংখ্যা।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, ড্রাইভিং স্কুলগুলো প্রশিক্ষণের প্যাকেজ হিসেবে অনেক সময় লাইসেন্স করে দেওয়ার চুক্তি করে। এই সুযোগে বিভিন্ন অপরাধী চক্র লাইসেন্স করে নিচ্ছে। এর প্রমাণ আমরা পেয়েছি।

বিআরটিএর কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েকজন কর্মকর্তার নাম আমরা পেয়েছি। তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং বিআরটিএর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে বিষয়টি অবহিত করা হবে।

এমএসি/আইএসএইচ