প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আজ শুরু হয়েছে অমর একুশে বইমেলা। মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) নির্দিষ্ট সময়ের আগেই মেলায় আসতে শুরু করেন বইপ্রেমীরা। বই বিক্রিও হয়েছে কিছুটা। তবে, উদ্বোধন হয়ে গেলেও অনেক স্টল ও প্যাভিলিয়নের নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। শুধু তাই নয়, মেলার অভ্যন্তরে বিভিন্ন জায়গা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা। ফলে মেলার সৌন্দর্যে বিঘ্ন ঘটেছে। করোনা সংক্রমণ রোধে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি পালনের যে ঘোষণা দিয়েছিল বাংলা একাডেমি, প্রথম দিনে তা বাস্তবায়নের তেমন উদ্যোগ ছিল না। প্রথম দিন শেষ হলেও এখনও ‌‌‘ফিটফাট’ হতে পারেনি বইমেলা।

মঙ্গলবার বিকেল থেকে সন্ধ্যায় পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলার অংশ ঘুরে দেখা গেছে, অন্যপ্রকাশ, পাঞ্জেরি পাবলিকেশন্স, দেশ পাবলিকেশন্স, অন্যধারা পাবলিকেশন্স, আজকাল প্রকাশনী, শব্দকোষ, অয়ন প্রকাশনী, বাঁধন পাবলিকেশন, নাগরা, আকাশ ও আগামী প্রকাশনীসহ অর্ধশতাধিক স্টল-প্যাভিলিয়ন নির্মাণকাজ এখনো চলছে।

অনেক স্টলে বই বিক্রির পাশাপাশি প্যাভিলিয়ন নির্মাণের কাজও চলছে। আবার কোনো কোনো স্টলে চলছে সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ।

তবে, স্টল-প্যাভিলিয়ন নির্মাণকারী প্রকাশকরা জানিয়েছেন, এবার মেলার স্টল-প্যাভিলিয়নের স্থান নির্ধারণে লটারি হওয়ার পর তা তৈরিতে সময় কম পাওয়া গেছে। তাই অনেক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সঠিক সময়ে স্টল-প্যাভিলিয়নের নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেনি। মেলার উদ্বোধনের পরও নির্মাণ কাজ চলছে। তাদের আশা, আজকের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে যাবে। আগামীকাল (বুধবার) থেকে সব স্টল-প্যাভিলিয়নে পুরোদমে বই বিক্রি চলবে।

দেশ পাবলিকেশন্সের কর্ণধার অচিন্ত্য চয়ন বলেন, আমরা মেলা প্রস্তুতির সময় কম পেয়েছি। তাছাড়া এবার মেলা হবে কি-না এটা নিয়েও দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিলাম। যার কারণে নির্ধারিত সময়ে স্টল নির্মাণের কাজ শেষ করতে পারিনি।

পাঞ্জেরি পাবলিকেশন্সের ম্যানেজার ইফতেখার আহমেদ আজিজ বলেন, লটারি হওয়ার পর প্যাভিলিয়ন তৈরিতে যে সময় দেওয়া হয়েছিল, সেটি যথেষ্ট না। ফলে আমরাও সঠিক সময়ে কাজ শেষ করতে পারিনি। আশা করছি, আগামীকালের (বুধবার) মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব। তবে, আমরা নতুন অনেক বই এনেছি, বইও বিক্রি হচ্ছে।

এ পি পি এল প্রকাশনীর কর্ণধার ওমর ফারুক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা সময় কম পেয়েছি, এ কারণে স্টল নির্মাণের কাজ শেষ করতে পারিনি। আশা করছি, আজকের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব। আগামীকাল (বুধবার) থেকে স্টলে বই তুলতে পারব।

ঐতিহ্য প্রকাশনীর ম্যানেজার আমজাদ হোসেন কাজল ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুধু মেলার স্টল নির্মাণের কাজ শেষ হয়নি এমন নয়, মেলার অভ্যন্তরে বিভিন্ন জায়গায়  ময়লা-আর্বজনা ছটিয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এতে মেলার সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে।

আগামী প্রকাশনীর কর্ণধার ওসমান গণি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখনো অনেক স্টল তৈরি হয়নি। বাংলা একাডেমিও অনেক কাজ করতে পারেনি। আমরা প্রকাশকরাও অনেক কাজ করতে পারিনি। তাই প্রথম দিন মেলার সৌন্দর্য কিছুটা নষ্ট হয়েছে।

বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নির্বাহী পরিচালক খান মাহবুব বলেন, এখনো মেলা গোছানো হয়নি। আশা করছি আজকের মধ্যে গুছিয়ে উঠবে।

গতকাল সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, এবার মেলার অভ্যন্তরে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি পালনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। যাতে কেউ মাস্ক খুলে ঘোরাফেরা করতে না পারেন। আর মেলার খাবারের স্টলে কেউ খেতে চাইলে ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। 

কিন্তু, মেলার প্রথম দিন সেসবের দেখা মেলেনি। কোনো ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতেও দেখা যায়নি। অনেক দর্শনার্থীদের মেলার অভ্যন্তরে মাস্ক খুলে ঘুরে-বেড়াতে দেখা গেছে। আর কোনো ধরনের ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট ছাড়াই খাবারের স্টলে খাওয়া যাচ্ছে।

মেলার চটপটি ও ফুচকা বিক্রেতা মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, আজকে প্রথমদিন তো, দোকানও পুরোদমে শুরু হয়নি। তাই আজকে যারা খেতে এসেছেন তাদের কাছে ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট চাওয়া হচ্ছে না। আগামীকাল (বুধবার) থেকে যারা খেতে আসবেন তাদের কাছে ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট চাইব। যারা দেখাতে পারবেন শুধু তাদের কাছেই বিক্রি করা হবে।

মেলার সময় বাড়ানো নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে খুশি প্রকাশরা

অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যেহেতু দেরিতে শুরু হলো বইমেলাটা, এক মাস করা যেতে পারে। অনেকে অনুরোধ করেছেন, মেলার সময় বাড়িয়ে দেওয়া যায় কি-না। আমার মনে হয় এক মাস চলতে পারে। বাকিটা আপনারা দেখবেন কতটা করতে পারেন।’ মেলার সময় বাড়ানোর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে খুশি প্রকাশকরা।

প্রকাশরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহের বিষয়টি অনেকটা আইনের মতো। তিনি যেহেতু মেলার সময় বাড়ানোর কথা বলছেন, ফলে বাংলা একাডেমি সেটি বাস্তবায়ন করবেন বলে আশা করছি। কারণ ১৪ দিন মেলার সময় যথেষ্ট নয়।  

বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নির্বাহী পরিচালক খান মাহবুব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহের বিষয়টি অনেকটাই আইনের মতো। তিনি মাসব্যাপী বইমেলা চলার যে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তাতে প্রকাশকরা খুশি। আশা করছি, এবারের মেলা ভালো হবে।

তার সঙ্গে সুর মিলেয়ে আগামী প্রকাশনীর কর্ণধার ওসমান গনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের মনের কথা শুনছেন, এজন্য তাকে ধন্যবাদ। আমরা মেলা প্রস্তুত করতে সময় অনেক কম পেয়েছিলাম। আবার মেলা কতদিন চলবে, তা নিয়েও দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিলাম। তবে এখন আমরা একটি আশার আলো দেখতে পারছি।

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার বিষয়ে মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী একটা ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা এর সম্ভাব্যতা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করব। প্রকাশক-মন্ত্রণালয়সহ মেলার সঙ্গে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করে যদি মেলা এক মাস চালানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয় আমরা সেটির চেষ্টা করব।

এএইচআর/ওএফ