প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা/ ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মহান একুশের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়ন বিস্ময়। ‘অমর একুশে বইমেলা ও অনুষ্ঠানমালা ২০২২’ উপলক্ষে সোমবার দেওয়া এক বাণীতে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলনে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার সবসময়ই মন ও মননের প্রকাশ এবং সুচিন্তন কর্মকে সাধুবাদ জানিয়ে সব রকম সহযোগিতা দিয়ে থাকে। মুক্তবুদ্ধির চর্চা, স্বাধীন মত প্রকাশ এবং শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার জন্য বর্তমানে দেশে অত্যন্ত সুন্দর ও আন্তরিক পরিবেশ বিরাজ করছে।  

তিনি বলেন, অমর একুশে বইমেলা আয়োজিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ উপলক্ষে আয়োজক সংস্থা বাংলা একাডেমি, দেশি-বিদেশি প্রকাশক এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। 

জ্ঞান চর্চা ও পাঠের বিস্তারে অমর একুশে বইমেলার গুরুত্ব অপরিসীম উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, জাতির মনন গঠনে এ বইমেলা সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রেখে চলেছে। পাশাপাশি বইমেলা আমাদের জীবনবোধ ও চেতনাকে প্রতিনিয়ত শাণিত করছে। বইয়ের মাধ্যমে মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে হবে 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর—এমন মাহেন্দ্রক্ষণে এ বছর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা। এবারের মেলার প্রতিপাদ্য ‘জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’। তাই এ বছরের মেলা এক ভিন্নমাত্রা নিয়ে আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছে।  

তিনি বলেন, এ মহান দিনে  সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিকসহ সব ভাষা শহীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। শ্রদ্ধা জানাই বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অন্যতম নেতৃত্বদানকারী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সব ভাষা সৈনিকের প্রতি। 

শেখ হাসিনা বলেন, ভাষা আন্দোলনের হাত ধরেই আমাদের স্বাধিকার আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল। নানা লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ভাষার সংগ্রাম পরিণত হয়েছিল আমাদের স্বাধিকার ও স্বাধীনতার সংগ্রামে। এজন্য অমর একুশে আমাদের শেকড়ের সন্ধান দেয়। বাংলা ভাষা আজ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী মানুষের প্রাণে অনুরণিত হয়। 

তিনি বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি এখন ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। এ স্বীকৃতি আদায়ের জন্য কানাডা প্রবাসী সালাম ও রফিকসহ কয়েকজন বাঙালি উদ্যোগ নেন। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এ বিষয়ে জাতিসংঘে প্রস্তাব উত্থাপন করে। ফলে ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের অন্যতম সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতিদানের জন্য আমি ইতোমধ্যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দাবি উত্থাপন করেছি। বিশ্বের সব ভাষাগোষ্ঠীর মাতৃভাষা সংরক্ষণ, বিকাশ ও চর্চার লক্ষ্যে আমরা ঢাকায় ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠা করেছি।   
তিনি বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জীবন ও কর্মের বিভিন্ন দিক নিয়ে পর্যায়ক্রমে ১০০টি নতুন গ্রন্থ প্রকাশ করছে। ইতোমধ্যে ৪০টিরও অধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এসব বই পড়ে আগামী প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে সঠিকভাবে চিনতে পারবে এবং তাঁর আদর্শে নিজেদের জীবন গড়ে তুলবে।

তিনি বলেন, আসুন, সকলে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলি। মহান একুশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা জাতির পিতার আজীবন লালিত স্বপ্ন ‘সোনার বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে কাজ করে যাব- এ হোক আমাদের অঙ্গীকার।’ প্রধানমন্ত্রী ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২২’ এর সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।

আরএইচ