ঈর্ষান্বিত হয়ে সাংবাদিকের নামে অশ্লীল ভিডিও ছড়ায় চক্রটি
একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিকের চেহারার কিছু অংশ ফটোশপে এডিট করে নগ্ন ও অশ্লীল ভিডিও বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয় একটি চক্র। বিষয়টি ওই সাংবাদিকের নজরে আসলে এ বিষয়ে গুলশান থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেন ভুক্তভোগী।
মামলার পর গুলশান থানা একটি ফেসবুক আইডি ও একটি ব্লগ থেকে এ অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার প্রমাণ পায়। এরপর আইডি ও ব্লগের মালিককে শনাক্ত করে চট্টগ্রামের হালিশহর ও নরসিংদী থেকে গ্রেপ্তার করে গুলশান থানা পুলিশ।
বিজ্ঞাপন
গ্রেপ্তাররা হলেন— চট্টগ্রামের হালিশহরের বাসিন্দা নুর হোসাইন নুরু ও রাজধানীর সবুজবাগের বাসিন্দা সজীব মিয়া। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা পুলিশকে জানায়, সিনিয়র নেতাদের নির্দেশে তারা এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে ভাইরাল করার চেষ্টা করেছিলেন।
শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিক গত ৩ ফেব্রুয়ারি ডিএমপির গুলশান থানায় অভিযোগ করেন, একটি মৌলবাদী সম্প্রদায় ও কিছু রাজনৈতিক দলের কর্মীরা ঈর্ষান্বিত হয়ে তার চেহারার কিছু অংশ ফটোশপের মাধ্যমে এডিট করে নগ্ন ও অশ্লীল ভিডিও বানিয়ে ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে। তিনি অভিযোগে আরও বলেন, ‘নুর হোসাইন নুরু’ (https://www.facebook.com/nurhossain.nuro.3) নামে একটি ফেসবুক আইডিসহ আরও একাধিক ফেসবুক আইডি ও ব্লগ থেকে এই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর গুলশান থানা এ বিষয়ে কাজ শুরু করে। প্রথমে ‘নুর হোসাইন নুরু’ নামে আইডিটির মালিককে শনাক্ত করা হয়। আইডির নামেই মালিকের নাম। নুর চট্টগ্রামের হালিশহরের বাসিন্দা। সে হালিশহর থানার যুবদলের সক্রিয় কর্মী। পরিচয় শনাক্তের পর তাকে হালিশহর থেকে তার স্মার্টফোনসহ শুক্রবার গ্রেপ্তার করা হয়।
এছাড়া আমরা ‘জনগণের মুখোমুখি’ নামে একটি ব্লগকে শনাক্ত করতে পারি। এই ব্লগটি থেকেও সাংবাদিকের ছবি এডিট করে বানানো অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এই ব্লগটির মালিক হচ্ছেন সজীব মিয়া। তিনি রাজধানীর সবুজবাগ থানা ছাত্র অধিকার পরিষদের সক্রিয় কর্মী। তাকেও আমরা শুক্রবার নরসিংদী থেকে গ্রেপ্তার করি।
ডিসি গুলশান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নুর আমাদের কাছে স্বীকার করে যে তার ফেসবুক থেকে ভিডিওটি ছড়ানো হয়েছে। সে বলেছে তার সিনিয়র আরেক যুবদলের নেতা এই ভিডিওটি পোস্ট করতে বলেছিলেন। সিনিয়র নেতার আদেশে সে ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে ভাইরাল করার চেষ্টা করে। এছাড়া একই সিনিয়র নেতার আদেশে সে ফেসবুকে সরকারবিরোধী অনেক মিথ্যা পোস্টও দিয়েছে।
অন্যদিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সজীব মিয়া জানায়, সে ছাত্র অধিকার পরিষদের সবুজবাগ থানা কমিটির সক্রিয় কর্মী। সে ছাত্র অধিকার পরিষদের সবুজবাগ থানার সহ সভাপতি তারিকুল ইসলাম তন্ময়ের কাছ থেকে এ ভিডিওটি পেয়েছে। তার নির্দেশেই সে ভিডিওটি ব্লগে পোস্ট করে।
গুলশান ডিসি আরও বলেন, নুর ও সজীবকে গ্রেপ্তারের পর আমরা আজ আদালতে রিমান্ড আবেদন করে পাঠিয়েছি। আশা করছি রিমান্ড মঞ্জুর হলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ সম্পর্কে আমরা আরও জানতে পারব। এছাড়া নুরের সিনিয়র যুবদল নেতা ও ছাত্র অধিকার পরিষদের সবুজবাগ থানা কমিটির সহ সভাপতি তারিকুল ইসলাম তন্ময়কে গ্রেপ্তার করতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যেহেতু এ দুই জনের নির্দেশে তন্ময় ও সজীব ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছে, সেহেতু তাদের গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করলে ভিডিওটি কি উদ্দেশে তারা ভাইরাল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তা জানা যাবে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের কাছে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে ওই সাংবাদিকের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে অশ্লীল ও নগ্ন ভিডিও বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া গ্রেপ্তাররা সরকারবিরোধী চক্র। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন আইডিতে নিয়মিত সরকারবিরোধী পোস্ট দিয়ে আসছিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য অনুযায়ী, ভিডিওটি প্রথম পোস্ট হয়েছে নূরের মাধ্যমে। তবে ছাত্র অধিকার পরিষদের সবুজবাগ থানা কমিটির সহ সভাপতি তারিকুল ইসলাম তন্ময় ও নুরের সিনিয়র যুবদল নেতাকে গ্রেপ্তার করতে পারলে ভিডিও ভাইরাল করার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
এমএসি/এসএসএইচ