আফ্রিকান মুভির স্টাইলে ছিনতাই করত তারা
চট্টগ্রামে প্রাইভেটকার দিয়ে ছিনতাইয়ে জড়িতে চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চক্রটি আফ্রিকান একটি মুভি দেখে ছিনতাইয়ের কাজে উৎসাহিত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ওই সিনেমায় যেভাবে মারধর করে ভয়ভীতি দেখিয়ে ছিনতাই করা হয়, তারাও সেভাবে ছিনতাইয়ের আগে মানুষকে মারধর করে ভয়ভীতি দেখিয়ে ছিনতাই করত। এক রাতেই তারা ১০ থেকে ১২টি ছিনতাই করেছে।
বৃহস্পতিবার ( ১০ ফেব্রুয়ারি) নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মোখলেছুর রহমান।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, চক্রটি আগেও ছিনতাই করত। তারা ছিনতাই করা প্রাইভেটকার দিয়ে ছিনতাই করে আসছিল। চট্টগ্রাম নগরী ও সীতাকুণ্ড এলাকায় এ চক্রটি ছিনতাই করত। ছিনতাইয়ের আগে তারা মারধর করে ভয়ভীতি দেখাত। এরপর সবকিছু হাতিয়ে নিত। এ চক্রে আরও সদস্য থাকতে পারে। তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ছিনতাই চক্রটি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, তারা কিছুদিন আগে একটি আফ্রিকান মুভি দেখেছে। মুভিতে একদল ছিনতাইকারী প্রাইভেটকারে করে বিভিন্ন জায়গার গিয়ে মানুষকে মারধর করে সবকিছু ছিনিয়ে নিত। এ মুভি দেখে তারা উৎসাহিত হয়ে একই কায়দায় ছিনতাই করেছে।
বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ৫ ফেব্রুয়ারি বায়েজিদ থানার কোয়াইশ এলাকায় একটি ফার্মেসিতে প্রাইভেটকার যোগে গিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে নগদ ৬০ হাজার টাকা, ট্যাব ও মোবাইল ছিনতাই করে নিয়ে যায় চক্রটি। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বায়েজিদ থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকেই আমরা গ্রেপ্তারে কাজ শুরু করি।
তিনি বলেন, মামলার ঘটনাটি তদন্তকালে বিভিন্ন স্থানের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে প্রাইভেটকার নম্বর শনাক্ত করা হয়। প্রাইভেটকার শনাক্তের একপর্যায়ে জানতে পারি প্রাইভেটকারটি সীতাকুণ্ড থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি ছিনতাই করা হয়েছে। পরে সিসিটিভি ফুটেজ থেকে আসামিদের ছবি নিয়ে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে বায়েজিদ লিংক রোড থেকে প্রাইভেটকারসহ গ্রেপ্তার করা হয়। তারা এ দিনও ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিল। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি ওয়ান শুটারগান, ৪ রাউন্ড কার্তুজ, ছোরা, ১০টি মোবাইল, একটি ট্যাব ও নগদ ৪০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার চার জন হলেন— ছয় মামলার আসামি রোকন উদ্দিন (২৭), চার মামলার আসামি মো. সোহেল (৩০), তিন মামলার আসামি কামাল উদ্দিন মহিউদ্দিন (২৮) ও বেলাল হোসেন আসলাম (২৭)। এর মধ্যে বেলাল গাড়ি চালক। বাকি তিন জন গাড়ি থেকে নেমে ছিনতাই করত। চালক গাড়িতেই বসা থাকত। বাকি তিন জন প্রথমে গিয়েই অস্ত্র দেখিয়ে মানুষকে ভয় দেখাত। এরপর সবকিছু হাতিয়ে নিত।
আসামিদের অপরাধ করার প্রক্রিয়ার বর্ণনা দিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (পাঁচলাইশ জোন) মো. শাহ আলম বলেন, রাত ১০টার পর নগরীতে যানবাহন চলাচল সীমিত হয়ে আসলে আসামিরা প্রাইভেটকার যোগে নগরীর বিভিন্ন স্থানে পথচারী ও জরুরি প্রয়োজনে খোলা থাকা বিভিন্ন দোকানে অস্ত্রের মাধ্যমে ভয় দেখিয়ে টাকা পয়সা, গুরুত্বপূর্ণ জিনিস ও মোবাইল ফোন ছিনতাই করত। কেউ বাধা দিতে চাইলে তাদের ছুরি দিয়ে ভয়ভীতি দেখাত।
তিনি বলেন, আসামিরা ৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে সীতাকুণ্ডে যাওয়ার কথা বলে পাহাড়তলী থানার অলংকার মোড় থেকে একটি প্রাইভেটকার ভাড়া করে। একপর্যায়ে প্রাইভেটকারটি তারা ফৌজদারহাট বায়েজিন লিংক রোড এলাকায় নিয়ে আসে। এরপর প্রাইভেটকারের চালক ইলিয়াছের মোবাইল নম্বর দিয়ে তার বাবাকে ফোন করে প্রাইভেটকারটি ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। অল্পসময়ের মধ্যে এত টাকা দেওয়ার ব্যাপারে চালক অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে মারধর ও অস্ত্রের মাধ্যমে ভয় দেখিয়ে বায়েজিদ লিংক রোডে নিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। এ সময় বিকাশের পাসওয়ার্ড জেনে চালকের মোবাইলও নিয়ে যায় তারা।
এরপর আসামিরা প্রাইভেটকারসহ ফটিকছড়ি বাজারে চলে যায়। তারপর তারা নগরীতে ফিরে এসে ওই দিন রাতে অক্সিজেন এলাকায় ছিনতাই করে। এরপর থেকে তারা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরি করে মুরাদপুর এলাকা থেকে এক রিকশাযাত্রীর মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। সেই দিন ভোর হয়ে যাওয়ায় প্রাইভেটকারটি তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সামনে পার্কিং করে রাখে।
পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, মেডিকেল কলেজের সামনে গাড়িটি পার্কিং করে রাখলে কেউ সন্দেহ করবে না বলে জায়গাটি বেছে নেয় তারা। পরে ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে আবার ছিনতাই করার জন্য বের হয় চক্রটি। ওই দিন তারা ১০ থেকে ১২ স্থানে ছিনতাই করে।
কেএম/এসএসএইচ